পুজো পরিক্রমা ২০২৩ : আলিপুর সার্বজনীন
নমস্কার বন্ধুরা,
মগের মুলুক, প্রবাদের আমরা সকলেই সুপরিচিত। মূলত অরাজক অবস্থা বোঝাতে প্রবাদটির ব্যবহার করা হয়ে থাকে তবে মগের মুলুক কথাটির সাথে জড়িয়ে রয়েছে ইতিহাস। কয়েকশো বছর পিছিয়ে ১৬২৫ সালের বাংলায় পৌঁছে গেলে জানা যায় আসল ইতিহাস। সেই সময়ে মগ জলদস্যুরা বাংলার মাটিতে লুঠপাট চালাতো। সেই অত্যাচারে বাংলার সাধারণ মানুষের দুর্দশা চরমে পৌঁছায়। সেই থেকে মগের মুলুক প্রবাদটির উৎপত্তি। আজ ৪০০ বছর পেরিয়ে গেলেও এই প্রবাদটির আমরা ভুলে যাইনি।
সময় বদলেছে, মগ জলদস্যুরা আর না থাকলেও অরাজকতা চলছেই। জলদস্যুরা ১৬২৫ সালে ধন সম্পদ লুঠপাট চালাতো, প্রাণহানি করতো। আজ সেই মগেরা নেই তবে আমাদের শিক্ষা, খাদ্য, বস্ত্র, আশ্রয়, স্বাস্থ্য এর মতো মৌলিক চাহিদাগুলো পাবার জন্য আধুনিক মগদের সাথে লড়াই করতে হচ্ছে। মা দুর্গা আমাদের সেই চাহিদাগুলোই অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে রক্ষা করে চলেছেন। সেই ভাবনা থেকেই ৭৪ বছরে পর্দাপন করা আলিপুর সার্বজনীনের এবছরের পুজোর থিম, "মগের মুলুক"।
চেতলা অগ্রণীর পুজো দেখার পর হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে গেলাম আলিপুর সার্বজনীনের পুজোতে। মন্ডপ সজ্জা পুরোটাই ছিলো জাহাজের মতো। মণ্ডপে প্রবেশ করা মাত্র দেখতে গেলাম জাহাজের নোঙ্গর, যা সেই সময়ে আসা জলদস্যুদের মাধ্যম ছিলো। গুটি পায়ে এগিয়ে যেতেই বুঝলাম মণ্ডপ বানানো হয়েছে মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদার বিভিন্ন দিকগুলির নিয়ে। যা নিয়েই আজ অনেক অরাজকতা সৃষ্টি করেছে।
মন্ডপটি সেই সময়ের জাহাজের আদলে, যার পুরোটাই বানানো হয়েছে কাঠের কাজের উপরে। সেখানেই নানা ভাবে আমাদের মৌলিক চাহিদাগুলির ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। মা বিরাজিত করছেন মূল মন্ডপটির মাঝখানে। সমাজের নেতিবাচক দিল গুলো যেমন ইতিবাচক শক্তির সামনে মাথা নুইয়ে দাঁড়ায় সেভাবেই আমাদের মা দুর্গা অসুর সংহার করে যুগ যুগ ধরে আমাদের মৌলিক চাহিদা গুলির রক্ষা করে চলেছেন।
আলিপুর সার্বজনীনের পুজো মন্ডপটি দেখতে খুবই সুন্দর লাগছে। অত্যন্ত সাজানো গোছানো একটি পরিবেশ। আসলে সকলে চেষ্টা করে ধর্মীয় উৎসব উদযাপনের জন্য পূজা মন্ডপটি সুন্দরভাবে সাজিয়ে সকলের নিকট উপস্থাপন করতে।
সত্যিই তাই। অতন্ত্য সাজানো গোছানো পরিবেশ, যেটা পুজো মন্ডপকে আরো সুন্দর করে তুলেছে।