অসহায় সুমাইয়া ||১০% লাজুক খ্যাকের জন্য by @kazi-raihan

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।

আজ -১৬ই মাঘ | ১৪২৮ বঙ্গাব্দ | সোমবার | শীতকাল |


আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।



20230130_110836_0000.png

Canva দিয়ে তৈরি



গত কয়েক সপ্তাহের তুলনায় এই সপ্তাহে নিজের ধারাবাহিকতা সেই রকম ভাবে ধরে রাখতে পারিনি। সবারই কমবেশি নিজের ব্যক্তিগত সমস্যা থাকে আর এই সমস্যার সম্মুখীন হলে কাজগুলো ঠিকমতো করতে একটু বাঁধার সম্মুখীন হতে হয়। গত পরশু দিন ঢাকা গিয়েছিলাম এবং ঢাকায় যে ব্যক্তিগত কাজগুলো ছিল সেগুলো কমপ্লিট করে আবার কালকে ঢাকা থেকে ফিরে এসেছি। দুদিনের মধ্যে বেশিরভাগ সময়টুকু গাড়ির মধ্যে ছিলাম যার কারণে কমিউনিটিতে সময় দেওয়া হয়নি। তবে ঢাকা আসা যাওয়া নিয়ে আমি আপনাদের মাঝে দুটি পর্ব শেয়ার করব সেটা পরবর্তী দিনে। যাইহোক এবারে মূল প্রসঙ্গে আসা যাক। আজকে আমি একটি ছোট গল্প নিয়ে হাজির হয়েছি। যদিও গল্পটা অনেক বড় তবে আমি ছোট আকারে অর্থাৎ মূল টপিক গুলো নিয়ে সংক্ষেপে আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো। এটা একটা বাস্তব জীবনের গল্প। আমাদের বাড়ির পাশে একটি মেয়ের সাথে ঘটে যাওয়া একটি বাস্তব কাহিনী আপনাদের মাঝে তুলে ধরব এখন। সাধারণত দরিদ্র পরিবারের কোন মেয়ে যদি জন্মগ্রহণ করে তাহলে তাকে স্বল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দেওয়া হয়। তাছাড়া গ্রামে এক সময়ে বাল্যবিবাহের পরিমাণ অনেক বেশি ছিল। আধুনিকতার ছোঁয়ায় এই বাল্যবিবাহ এখন আর গ্রামে তেমন একটা লক্ষ্য করা যায় না। যারা একটু বেশি দরিদ্র বা পারিবারিক বিভিন্ন সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে এই বাল্যবিবাহের বিষয়টি মাঝেমধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এরকম একটি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছিল সুমাইয়া। সুমাইয়া ছিল তার বাবা-মায়ের একমাত্র মেয়ে। সুমাইয়ারা ছিল তিন ভাই বোন যার মধ্যে তার ভাই দুইটা ছিল বড় আর সুমাইয়া ছিল সবার ছোট। সবার ছোট হওয়ায় সুমাইয়াকে সবাই অনেক আদর করত তবে তার কপালপোড়া বলেই তার এই আদর ভালবাসা দীর্ঘদিন স্থায়ী হয়নি।



worried-girl-413690_1280.jpg

Source



সুমাইয়ার বাবা মাঠে কাজ করত আর তাদের আর্থিক অবস্থা অনেক দুর্বল ছিল বলেই তার ভাই দুইটাও বাধ্য হয়ে মাঠে কাজ করা শুরু করে। আজ থেকে ২০ বছর আগে গ্রামের দরিদ্র পরিবারের ছেলেরা বেশিরভাগ মাঠে কাজ করতো। দৈনিক মাঠে কাজ করে বা অন্যের বাড়িতে কাজ করে সময়ের পরিবার খাদ্যের যোগান দিত। বড় ভাই আর সুমাইয়ার বাবা মাঠে কাজ করে যা রোজগার করত তাতে তাদের পরিবার ভালো মতোই সুখে শান্তিতে খেয়ে পড়ে দিন পার করে দিত। ধীরে ধীরে সময় আর মেজো ভাই বড় হতে লাগলো আর সেও মাঠে কাজ শুরু করে দিল। এক পরিবারে যখন তিনজন লোক রোজগার করা শিখে যায় তখন আসলে পরিবারটি একটু স্বস্তির বাতাস অনুভব করে তেমনি ভাবেই সময়ের পরিবার একটু স্বাবলম্বী হতে শুরু করে। তাদের আর্থিক দুর্বলতা অনেকটাই কেটে যায় কিন্তু এই সুখের আভাস দীর্ঘদিন স্থায়ী হয় না। সুমাইয়ার মা কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়। তখন সুমাইয়ার বয়স ৬ থেকে ৭ বছর। সুমাইয়া তখনো সব কিছু ভালোমতো বুঝতে শেখেনি। তিন থেকে চার বছর ধরে সবাই মিলে শ্রম বিক্রি করে যা কিছু অর্থ গুছিয়ে ছিল তার অর্ধেকটা তার মায়ের চিকিৎসার পেছনে খরচ করে ফেলেছিল। কিন্তু সৃষ্টিকর্তার নির্মম পরিহাস সবশেষে সুমাইয়ার মা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে চলে যায়। ছোট্ট বয়সে সুমাইয়া তার মাকে হারিয়ে ফেলে। সে বয়স থেকেই সুমাইয়া টুকটাক রান্নাবান্না শুরু করে আর তার কাঁধে তার পরিবারের দায়িত্ব অনেকটাই চলে আসে। কিছুদিন পরে সুমাইয়ার বাবা বিয়ে করে তখন সুমাইয়া ভেবেছিল হয়তো এবার আমি এই পরিবারের চাপ থেকে একটু মুক্তি পাবো কিন্তু সেটা আর হয় না।



girl-2696947_1280.jpg

Source



সৎ মায়ের অত্যাচারে সুমাইয়ার জীবনে আরো কষ্টকর হয়ে পড়ে। তার বড় ভাই দিনমজুরের কাজ করতে দেশের বিভিন্ন জেলায় চলে যেত আর তার মেজো ভাই পরিবারের এই অবস্থায় কোন দিশানা পেয়ে শেষ পর্যন্ত নেশা করা শুরু করে দেয়। অন্যদিকে তার বাবা তাদের কোন কথা শুনতো না শুধু তাদের সৎ মায়ের কথা শুনত। বছর পেরোতেই সুমাইয়াদের পরিবারে নতুন স্বদেশের আগমন ঘটে অর্থাৎ সুমাইয়ার সৎ মায়ের আরও একটি মেয়ে সন্তান জন্ম নেয়। যার কারণে সুমাইয়ার কষ্টের দিন আরো কাছে আসতে শুরু করে। সুমাইয়া একটি সংসারের যত কাজ সব করত। আসলে সাত থেকে আট বছর বয়সের একটি মেয়ে একটি পরিবারের সব কাজ করা কতটা কষ্টকর হয় তার জন্য সেটা অবশ্য বুঝতে পারছেন। এই বয়সে সুমাইয়া স্কুলে যাবে তার স্কুলের বান্ধবীদের সাথে খেলা করবে, জীবনে শিক্ষার আলো দিয়ে তার জীবনটাকে রাঙিয়ে তুলবে, মায়ের ভালোবাসায় সে একটু আল্লাদ দেখাবে কিন্তু সে এখন পরিবারের ঘানি টানছে। সুমাইয়ার বয়স যখন দশ বছরে পড়লো তখন সুমাইয়ার মা এবং বাবা তাদেরকে ছেড়ে নতুন বাড়িতে চলে যায়। অর্থাৎ সুমাইয়ার সৎ মায়ের কথা অনুযায়ী সুমাইয়ার বাবা তাদেরকে ছেড়ে নতুন একটি বাড়িতে চলে যায়। সুমাইয়ার মেঝো ভাই বিভিন্ন নেশাগ্রস্থ লোকদের সাথে মেলামেশা শুরু করে অন্যদিকে সুমাইয়ার বড় ভাই দিন মজুরের কাজ করে তাদেরকে দুবেলা দুমুঠো অন্য মুখে তুলে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দেয়।



girl-3421489_1280.jpg

Source



আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে সুমাইয়ার বড় ভাই সুমাইয়াকে বিয়ে দিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। সুমাইয়ার বয়স তখন মাত্র ১৪ থেকে ১৫ বছর। একদিকে সুমাইয়ার বাবা তাদেরকে ছেড়ে চলে গিয়েছে অন্যদিকে তার ভাইয়ের আর্থিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়েছে। সুমাইয়াদের সুখের সংসারে পুরোপুরি ফাটল ধরে গিয়েছিল তখন। সুমাইয়ার মা মরে যাওয়ার পরে তাদের সুখের পরিবারটি এলোমেলো হয়ে যায় আর সময় আর বাবা আবার বিয়ে করার পরে সুমাইয়াদেরকে ফেলে রেখে নতুন ভাবে আবার জীবন শুরু করে। সুমাইয়া তখন একেবারে অসহায় হয়ে পড়েছিল। ছোট বয়সে সে তার মাকে হারিয়ে ফেলেছে আর তার বাবা তাকে ফেলে রেখে চলে গিয়েছে। সুমাইয়ার বাবা থাকতেও যেন নেই বিষয়টা কিছুটা এরকম হয়ে গিয়েছিল।

আজকে এই পর্যন্তই শেয়ার করলাম আর বাকিটা পরবর্তী দিনে আবার আপনাদের মাঝে তুলে ধরবো। আমি খুব একটা ভালো গল্প লিখতে পারি না তবে আমার আশপাশে ঘটে যাওয়া কিছু বাস্তব জীবন কাহিনী আপনাদের মাঝে গল্প আকারে তুলে ধরার চেষ্টা করি তারই ধারাবাহিকতায় আজকে সুমাইয়ার এই বাস্তব জীবনের গল্পটা তুলে ধরলাম। দ্বিতীয় পর্বে তার জীবনের আরও কিছু বাস্তব কাহিনী আপনাদের সাথে শেয়ার করব।





🔚সমাপ্তি🔚




এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।

সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan



আমার পরিচয়


IMG-20211015-WA0027.jpg

আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ছবি আঁকতে, ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও মাঝে মাঝে গুন গুন করে গান গাইতে খুবই ভালোবাসি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।



break .png

Banner.png

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 2 years ago 

এরকম চারপাশে অহরহ ঘটে যাচ্ছে।শুধুমাত্র যে আর্থিকভাবে অসচ্ছল পরিবারের মেয়েদের এ অবস্থা নয় কিছু সচ্ছল এবং মানসিক সমস্যাগ্রস্ত পরিবারেরও একই অবস্থা।মানসিক সমস্যাগ্রস্ত বলার কারণ হলো একটি পরিবারে যখন এরকম ঘটনা ঘটে,অস্বাভাবিক কিছু মানুষের মধ্যে স্থান পায়।আপনি বাস্তব কাহিনিকে ঘিরে খুব সুন্দর করেই উপস্থাপন করেছেন গল্পটি। বাকি পর্ব পড়ব ইনশাল্লাহ।

 2 years ago 

টপিক টি পড়ার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.20
JST 0.033
BTC 93256.79
ETH 3124.97
USDT 1.00
SBD 3.05