শারীরিক প্রতিবন্ধিতা (physical disability)[১০% @shy-fox এর জন্য] by @kazi-raihan
আজ - ৩রা বৈশাখ | ১৪২৮ বঙ্গাব্দ|শনিবার| গ্রীষ্মকাল|
আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি কাজী রায়হান, আমার ইউজার নাম @kazi-raihan। বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
আমাদের সমাজে বিভিন্ন ধরনের মানুষ বাস করে তবে তাদের মধ্যে কিছু মানুষ জন্ম থেকে বা দুর্ঘটনাজনিত কারণে পঙ্গুত্ব বরণ করে নিয়েছে। কারো পা নেই আবার কারো হাত নেই। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা মানুষগুলোকে নিয়ে আপনাদের সাথে কিছু কথা শেয়ার করতে যাচ্ছি আশা করি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
চলুন শুরু করা যাক
আমরা যদি আমাদের সমাজে লক্ষ্য করি তাহলে দেখতে পাবো কেউ চোখে দেখতে পারে না আবার কেউ চোখে দেখতে পারে কিন্তু হাঁটতে পারে না আবার কেউবা চোখে দেখতে পারে, হাঁটতে ও পারে কিন্তু মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন। সমাজের এই মানুষগুলোর পাশে দাঁড়িয়ে তাদের মনের কষ্ট দূর করা আমার মতে একটি মহৎ কাজ। বাংলাদেশ সরকার বর্তমানে বিভিন্ন অনুদান দিচ্ছে। যারা প্রতিবন্ধী তাদের প্রতিমাসে বা তিন মাস পর পর ভরণপোষণের জন্য কিছু পরিমাণে অর্থ জোগান দেওয়া হয়। শারীরিক প্রতিবন্ধিতা মানুষগুলো নিয়ে মূলত আজকে আমার এই পোস্ট শেয়ার করা।
আমি ২০১৬ সালে যখন পাংশা সরকারি কলেজে ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে ভর্তি হলাম তার প্রায় দেড় মাস পর উচ্চতর গণিত প্রাইভেট থেকে এক বন্ধুর সাথে পরিচিত হলাম। তার নাম ছিল সেলিম রেজা। সে জন্ম থেকেই প্রতিবন্ধী, তার বাম পায় সমস্যা ছিল। জন্মের পর থেকেই পা ভেঙ্গে বসতে পারতো না। আমরা ওর কাছ থেকে ওর নিজের ব্যক্তিগত অনুভূতি সম্পর্কে জানতে চাইলাম। তবে ওর ব্যক্তিগত বিষয় গুলো জানার পরে আরো অনেক বেশি কষ্ট পেয়েছিলাম। বন্ধু সেলিম রেজার জন্মের কয়েক বছর পরে ওর মা মারা যায়। ওর পরিবারের আর্থিক অবস্থাও খুব একটা ভালো ছিল না। ওর বাবা যখন দ্বিতীয় বিয়ে করে তখন সেলিম তার নানাবাড়িতে চলে আসে আর সেখানেই বড় হয়ে ওঠে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও লেখাপড়ার দিকে সেলিম অনেক মনোযোগী ছিল।
বন্ধু সেলিম তার নানা বাড়ি থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে কলেজে আসতো। হঠাৎ আমার এক বন্ধু বলে ফেলল চল আমরা সেলিমের জন্য একটা ভালো কাজ করি। আমরা কয়েকজন একটু অবাক হলাম এবং জিজ্ঞাসা করলাম কি ভালো কাজ করবি?? সে আমাদেরকে জানালো সেলিম অনেক পথ সাইকেল চালিয়ে কষ্ট করে আসে বিশেষ করে ওর পায়ে সমস্যা থাকার কারণে সাইকেল চালাতে অনেক বেশি কষ্ট হয় আর আমরা বন্ধু হয়ে পাশে দাঁড়াতে পারি। আমাদের মেসে সেলিমকে রাখতে পারি। হয়ত ওর সব খরচ বহন করতে পারব না তবে কিছুটা সাহায্য তো করতে পারব। আমরা সবাই কিছুক্ষণ চিন্তা করলাম এবং বিষয়টা নিয়ে ভাবলাম। এবং সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম আমরা সেলিমের পাশে দাঁড়াবো এবং সেলিমকে অফার দিলাম তুমি আমাদের মেচে থাকবে আমরা তোমাকে সাহায্য করতে চাই। সেলিম প্রথমে আমাদের প্রস্তাবে রাজি হল না কিন্তু পরবর্তীতে আমাদের রিকুয়েস্টে সে রাজি হলো। সে আমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করল এবং আমরা বন্ধুত্বের দায়িত্ব পালন করলাম।
সেলিম এখনো আমাদের সেই ভালো কাজের প্রশংসা করে। যদিও বন্ধু সেলিম এখন প্রতিবন্ধী স্কুলের চাকরি করছে। আমরা সবসময়ই দোয়া করি সেলিম অনেক ভালো থাকুক আর আমরা সবাই চেষ্টা করবো আমাদের আশ পাশে যারা প্রতিবন্ধী আছে তাদের পাশে দাঁড়ানোর।
যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে আমাদের সমাজে যারা প্রতিবন্ধী আছে তাদের জীবনযাত্রার মান একটু হলেও উন্নত হয়েছে। যেমন বর্তমানে ক্রিকেট-ফুটবল খেলাধুলাতেও প্রতিবন্ধীদের সুযোগ দেওয়া হয়। আসলে তাদের মধ্যে যে প্রতিভা থাকে সেটি প্রকাশ করানোর জন্যই এই উদ্যোগ নেয়া হয়। শুধু বাংলাদেশ নয় বিশ্বের প্রায় সব দেশেই এই ধরনের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। তবে সবাই হয়তো এই সুবিধা পাচ্ছে না, হয়তো যুগের পরিবর্তনের সাথে সবাই এই সুবিধা পাবে।
মজার বিষয় হচ্ছে আমার বাস্তব জীবনে আমি একটা ছেলের সাথে পরিচিত হয়ে ছিলাম যদিও খুব ক্লোজ ভাবে মেশা হয়নি, শুধু একদিনের পরিচয়। ক্রিকেট খেলার মাধ্যমে তার সাথে পরিচিত হয়েছিলাম, ছেলেটির বাম হাত একদম সোজা অর্থাৎ কুনই থেকে হাত ভাঙতে পারে না। তবে সবচেয়ে আশ্চর্য করার বিষয় হচ্ছে বাম হাত দিয়ে কিছুটা ইন্ডিয়ান ফাস্ট বোলার বুমরার মতো বল করেছিল আর তার কারণেই আমাদের টিমমেট এর সবাই তার উপর একটা ভালোবাসা কাজ করেছিল।
আবার, ঢাকা থেকে একজন রিক্সা চালকের সাথে পরিচিত হলাম, লোকটার পা নেই। সাধারণত ঢাকা শহরের রিকশাতে ব্যাটারি চালিত মোটর লাগানো থাকে না। সবাই পা দিয়ে রিক্সা চালায়। লোকটির পা না থাকায় ব্যাটারি চালিত মোটর লাগিয়ে রিকশা চালায়। আমি রূপনগর আবাসিক এলাকা থেকে মিরপুর এক নম্বরের দিকে আসছিলাম। একজন ট্রাফিক পুলিশ লোকটির রিক্সা থামালো এবং তাকে বলল ব্যাটারিচালিত কোন রিক্সা চলবে না এই বলে রিক্সা আটকে রাখলো। বিষয়টা দেখতে পেরে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলো আর রিকশা ওয়ালার পক্ষ নিয়ে ট্রাফিক পুলিশের সাথে কথা বলল। রিক্সাওয়ালা লোকটি বলল আমার পা নেই তার পরেও আমি রিকশা চালিয়ে অর্থ উপার্জন করে আমার পরিবারকে দুবেলা দুমুঠো ভাত খাওয়ানোর চেষ্টা করেছি। ট্রাফিক পুলিশ মানবিক দিক দিয়ে লোকটিকে যেতে দিল। আর এভাবেই আমাদের সবারই উচিত যারা প্রতিবন্ধী আছে আমাদের সমাজে বা বাড়ির আশেপাশে তাদের পাশে দাঁড়ানোর। আসলে সৃষ্টিকর্তা চাইলে আমাদেরও প্রতিবন্ধী হিসেবে পৃথিবীকে পাঠাতে পারতে।
আমি সবাইকে দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছি আপনার আমার বাড়ির আশেপাশে যারা শারীরিক প্রতিবন্ধিতা মানুষ রয়েছে তাদের পাশে দাঁড়ানো আর তাদের মনের কষ্ট দূর করার।
এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।
সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan
আমার পরিচয়
আমি জীবন কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ছবি আঁকতে, ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও মাঝে মাঝে গুন গুন করে গান গাইতে খুবই ভালোবাসি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।
https://twitter.com/KaziRai39057271/status/1515223647329398784?s=20&t=PizG4A6SeKQ1Pd8V7kPkQQ
🥰🥰🥰
খুবই ভালো একটি কাজ করেছিলেন আপনার বন্ধু সেলিমের জন্য।আসলে তাদের জন্য কিছু করতে পারলে বেশ ভালো লাগে।আমার এক ফুফাতো ভাই সে বোবা কথা বলতে পারে না।আমরা চেষ্টা করি তাকে সব সময় সাহায্য করতে।ভালো লিখেছেন।ধন্যবাদ আপনাকে।
কাওকে সাহায্য করতে পারলে অন্য রকম একটা অনুভূতি কাজ করে।
মতামত প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ আপু 🥰
বাহ আপনি তো দেখছি গল্প লেখা শুরু করে দিয়েছেন। আসলে এই ধরনের চিন্তাভাবনা বা জীবনের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু স্মৃতি বিজড়িত কাহিনী এভাবে প্রকাশ করলেন নিজের স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
কিছু কিছু অনুভূতি আছে যে গুলো শেয়ার করতে ভালো লাগে।
আমাদের সকলেরই উচিত এ জাতীয় মানুষগুলোর জন্য সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেওয়া। আপনি সুন্দর একটি দক্ষতা সম্পন্ন সচেতনমূলক পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। এ জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
আপনার ব্যাক্তিগত মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
যারা শারিরীক প্রতিবন্ধি তাদের সাথে আমাদের সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়া উচিত সেই সাথে বন্ধুত্ব পূর্ণ আচরন করা উচিত। আপনার বন্ধু সেলিমের জন্য আপনি ঠিক সেই কাজটি করেছেন। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর একটি লেখা আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য
আপনার গুরুত্বপূর্ণ মতামত তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।