"আমার বাংলা ব্লগ" প্রতিযোগিতা - ১৪|| গ্রীস্মকালীন ফল চুরির গল্প [১০% লাজুক খ্যাকের জন্য] by @kaz-raihan
আসসালামু আলাইকুম
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক
- আমার জীবনের মজার কোন গ্রীস্মকালীন ফলের গল্প
- ২৯, মার্চ ,২০২২
- মঙ্গলবার
আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি আমার জীবনের একটি স্মরণীয় স্মৃতি গ্রীস্মকালীন সময়ে ফল চুরির গল্প শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।
গ্রীষ্মকাল আসলেই ভিন্ন ভিন্ন ফলের আনাগোনা দেখা যায়। মূলত বসন্তের শুরু থেকেই গাছে ফুল ফুটতে শুরু করে আর গ্রীষ্মকাল আসতে আসতে ফুলগুলো ফলে পরিণত হয়। আমাদের দেশে সাধারণত আম জাম কাঁঠাল এই জাতীয় ফল গুলো বেশি পাওয়া যায়। আর এই সপ্তাহে এই ফল নিয়ে আমাদের কমিউনিটি তে একটি প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। ছোটবেলা থেকে শুরু করে এই গ্রীস্মের সময়ে ফল চুরি করার যে একটা মজা বা বাস্তব অভিজ্ঞতা সেটি শেয়ার করা। আমি প্রথমে ধন্যবাদ জানাই @hafizullah ভাইকে যে এতো সুন্দর একটি প্রতিযোগিতা আমাদের মাঝে আয়োজন করার জন্য।
আমার জীবনের মজার গ্রীস্মকালীন ফলের গল্প শেয়ার করছি তাহলে শুরু করা যাক।
আমাদের দেশে জাতীয় ফলের নাম কাঁঠাল কিন্তু কাঁঠালের চেয়ে সবাই আম বেশি পছন্দ করে। আম একটি রসালো ফল। আম কাঁচা থেকে শুরু করে পাকা পর্যন্ত সবাই অনেক পছন্দ করে বিশেষ করে মেয়েরা কাঁচা আম একটু বেশি পছন্দ করে।
২০১৬ সালে আমি সবে কলেজে ভর্তি হয়েছি। কলেজের পাশে একটি মেস নিয়েছিলাম যাতে আমার কলেজ যাতায়াতে সুবিধা হয়।মেসে ফার্স্ট ইয়ারের তিনজন ছেলে আগে থেকেই ছিল। একজন ছিল সাইন্স গ্রুপের এ সেকশনে আর অপর দুইজন ছিল সায়েন্স গ্রুপের বি সেকশনে। আমি বি সেকশনে ছিলাম যার কারণে বি সেকশনে থাকা বন্ধু গুলোর সাথে একটু বেশি মিল ছিল। কারণ বি সেকশনের সবার একসাথে ক্লাস হতো, সব প্র্যাকটিকেল ক্লাস গুলো একসাথে হতো। আমার স্কুল লাইফের বান্ধবীর দৌলতে অনেকগুলো মেয়ের সাথে বন্ধুত্ব হয়।ওরা সবাই আমাদের কলেজের ইংরেজি প্রভাষক আবদুল কাশেম স্যারের ছাত্রী নিবাসে থাকতো। কিছুদিন পরে সবার মধ্যে একটা ক্লোজ বন্ধুত্ব গড়ে উঠলো। মাঝে মধ্যে ওদের বিভিন্ন সাহায্য করতাম আবার ওরাও আমাদের অনেক সাহায্য করতো।
প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে সবাই যার যার কাজ শেষ করে বা প্রাইভেট শেষ করে রুমে চলে আসতো। তো পড়াশোনা শেষ করে আমরা রাত দশটা বা এগারোটার দিকে সবাই একসাথে আড্ডা দিতাম। হঠাৎ আমার একটা বান্ধবী ফোন দিল আমরা লাউড স্পিকারে কথা বলছিলাম। হুট করে বলে ফেলল বন্ধু আমাদের কাঁচা আম খেতে ইচ্ছে করছে তোমরা খাওয়াবা ?? আমরা বললাম এই রাতে আমরা কাঁচা আম কোথায় পাবো?? তখন ওরা বলল আমাদের বাসার সামনে তিন থেকে চারটি আমের গাছ আছে আর আম গাছে বেশ বড় বড় আম ধরেছে। এই কথা শুনেই আমার পাশে থাকা সজল নামে এক বন্ধু বলে ফেললো আচ্ছা তোমরা অপেক্ষা করো আমরা তোমাদের বাসায় আম পৌছে দিচ্ছি। আমি তো অবাক হয়ে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে থাকলাম আর অন্যদিকে আমার বান্ধবী গুলা তো অনেক খুশি হয়ে গেল। আমি ফোন রেখে দিলাম আর সজলকে বললাম তুই গিয়ে আমের ব্যবস্থা কর আমি ওসবের মধ্যে নেই। পরে আমার বন্ধু স্বাধীন, সজল এবং আমি বাধ্য হয়ে রাত ১১টার সময় আম চুরি করার সিদ্ধান্ত নিলাম।
আমরা একদম কলেজের পাশেই থাকতাম। আর তাই কলেজ মাঠে এসে বুদ্ধি করলাম কিভাবে আম চুরি করা যায় আর আমাদেরকে সাহায্য করবে মেয়ে বন্ধুরা। আমার বান্ধবীরা আমাদেরকে জানালো বাসার সবাই ঘুমিয়ে পড়েছে এখন তোরা আসতে পারিস। আমি ছোট থেকে এই পর্যন্ত আগে কখনো এই ধরনের কাজ করিনি তার জন্য একটু বেশি নার্ভাস ফিল করছিলাম। মাঝখান থেকে আমার বন্ধু সজল বলল এটা তো আমার বাঁ হাতের কাজ 😒 আমি ওকে বললাম এখানে মুখ গল্পের কাজ হবে না বাস্তবে করে দেখাতে হবে। কলেজ মাঠ থেকে হাঁটতে হাঁটতে আম বাগানের পাশে গেলাম। মধ্যরাতে সজল আম গাছে উঠলো আর মেস থেকে আসার সময় হাতে করে বাজার করা ব্যাগ হাতে নিয়ে এসেছিল।আর গাছে উঠে ব্যাগ ভর্তি আম পাড়া শুরু করলো। ভাগ্য ভালো ওই রাতে মোটামুটি চাঁদের আলো ছিল আর রাত যত গভীর হয়েছিল চাঁদের আলো ততোই পরিষ্কার হচ্ছিল। আমি আর বন্ধু স্বাধীন একটি গাছের আড়ালে দাঁড়িয়ে ছিলাম। অনেক সময় হয়ে যায় কিন্তু সজল গাছ থেকে নামছে না। স্বাধীন রেগে গিয়ে গাছের দিকে ঢিল ছুড়ে মারল আর আমি তখন নিজের হাঁসি থামাতে পারছিলাম না 😁
কিছু সময় পর সজল ব্যাগভর্তি আম নিয়ে নিচে নেমে আসলো এবং বকে উঠে বলল ঢিল ছুড়ে মারল কে?? আমি আর স্বাধীন দুই জনই খিকখিক করে হেসে ফেললাম 🤣 তখন সজল বলল মেসে যাই তারপর তোদের দেখবো।
ব্যাগভর্তি আম নিয়ে প্রাচীরের উপর দিয়ে আমার বান্ধবীদের কাছে দিয়ে দিলাম কারণ রাত অনেক গভীর হওয়া মহিলা মেসের গেট আটকে দেওয়া হয়েছিল।আম দিয়ে দ্রুত কলেজের এড়িয়ায় চলে এলাম। আনুমানিক ১০ মিনিট পর বর্ণালী নামের এক বান্ধবী ফোন দিয়ে বলল দোস্ত তোদের জন্য আম কেটে রেখেছি নিয়ে যাও। আমরা আবার মহিলা ছাত্রীনিবাসের দিকে এগিয়ে গেলাম এবং প্রাচীরের উপর দিয়ে একটি ব্যাগ নিলাম। ব্যাগ হাতে নিয়ে অতি দ্রুত আমাদের মেসের দিকে রওনা হলাম। রুমে এসে দেখলাম অনেক সুন্দর করে আম কেটে ঝাল দিয়ে মাখানো হয়েছে। আমরা তিনজন মেঝেতে বসে পড়লাম আর কাঁচা আম খাওয়া শুরু করলাম। কাঁচা আম ঝাল দিয়ে মাখানো ছিল বলে খেতেও বেশ মজা লাগছিল। সেই মুহূর্তে আমাদের কাছে ফোন দিয়ে বান্ধবীরা জিজ্ঞেস করলো দোস্ত তোরা রুমে গিয়েছিস?? আমরা বললাম ভিডিও কলে আয় দেখাচ্ছি আমরা কোথায় আছি। পরবর্তীতে ওদের সাথে ভিডিও কলে কথা বললাম আর ওরা আমাদেরকে অনেক ধন্যবাদ দিল আর বলছিল তোরা না থাকলে আজকে এরকম মজা করে কাঁচা আম ঝাল দিয়ে মাখিয়ে খাওয়া হতো না। আমরাও ওদের বললাম তোরা এত সুন্দর করে কাঁচা আম মাখিয়ে না দিলে আমরাও খেতে পারতাম না 😋😁
এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 🙏
https://twitter.com/KaziRai39057271/status/1508792374243508235?s=20&t=sfL8KRc6eJkxqLMdaS_dSQ
বাহ!! শুধুমাত্র বান্ধবীদের জন্য আপনারা রাত দুপুরে আম চুরি করে নিয়ে আসলেন। আর বিশেষ কেউ বললে তো জান দিয়ে দিতেন হাহাহাহা। ভালই লাগলো আপনাদের আম চুরির গল্প। আসলে এই সব মজার ঘটনা গুলিই স্মৃতি হয়ে থাকবে সারা জীবন।
ভাই মূলত আমার বন্ধু সজলের জন্যই এতো কিছু সম্ভব হয়েছিল।
হ আপনার আম চুরির গল্প আমার কাছে ভালই লাগছে ।গৃষ্ম কালীন সময়ে কত প্রকার চুরি ছিল যা আমাদের দ্বারা প্রমাণিত হয় ।আপনি যে ভালো মানের করছিলেন সেটা গল্প পড়ে বুঝতে পারলাম ।শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
আপনার পোস্টে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
ফল চুরির আরো কয়েকটি গল্প পড়েছি তবে আপনারটিও খুব সুন্দর ছিল। খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাল থাকবেন সব সময়।
সুন্দর মন্তব্য প্রকাশ করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।