২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপভোগের গল্প[১০% লাজুক খ্যাকের জন্য] by @kaz-raihan

in আমার বাংলা ব্লগ3 years ago (edited)

আসসালামু আলাইকুম


হ্যালো..!!
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক


  • ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপভোগের গল্প
  • ৯ই, এপ্রিল ,২০২২
  • শনিবার


আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশাকরি আল্লাহর রহমতে ভালোই আছেন। আমিও ভালো আছি। আজ আমি আমার জীবনের একটি স্মরণীয় স্মৃতি ২০১৫ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপ দেখা এবং কিছু মজার গল্প শেয়ার করতে যাচ্ছি। আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লাগবে।



cricket-5369992__480.webp.png

Source

আমি ছোট থেকেই ক্রিকেট অনেক পছন্দ করি। যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়তাম তখন থেকেই ক্রিকেট খেলা দেখার প্রতি একটা নেশা জন্ম হয়েছিল। ২০১১ সালে আমি প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ দেখেছিলাম যদিও তার আগে ২০০৭ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপের কয়েকটা ম্যাচ দেখেছিলাম কিন্তু কিছু বুঝতে পারতাম না। অন্য সবাই দেখতো তাই আমিও বসে বসে দেখতাম কিন্তু কত রান কেমন কি কিছুই জানতে পারতাম না। তবে এই পর্যন্ত আমি ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ টা সবচেয়ে সুন্দর ভাবে উপভোগ করতে পেরেছিলাম। মোটামুটি বাংলাদেশ দলের অর্জন টাও বেশ ভালো ছিল আর বন্ধুদের সাথে বিশ্বকাপটা বেশ ভালোভাবেই উপভোগ করেছিলাম। সেই পুরনো কিছু অনুভূতি নিয়েই আজকের এই পোষ্ট আপনাদের সাথে শেয়ার করছি।

cricketer-7015983__480.webp.jpg

Source

২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ উপভোগের গল্প তাহলে শুরু করা যাক।


২০১৫সাল, আমি তখন বিজ্ঞান বিভাগের দশম শ্রেণীর একজন ছাত্র ছিলাম। মোটামুটি লেখাপড়ার পাশাপাশি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া খেলাধুলা করা ছিল আমার দৈনন্দিন রুটিন। তবে ২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ শুরু হওয়ার পর থেকেই ক্রিকেট খেলা দেখার প্রতি আগ্রহ যেন আরো বেড়ে যায়।

২০১৫ সালের ক্রিকেট বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিল নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ায়। নিউজিল্যান্ড এবং অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে খেলা অনুষ্ঠিত হাওয়ায় বাংলাদেশের সময় ৯:০০ বা ৯:৩০ মিনিটের সময় খেলা অনুষ্ঠিত হতো। যদি সকালে প্রাইভেট থাকতো তাহলে প্রাইভেট শেষ করে বাড়ি এসে খেলা দেখতাম আর যদি প্রাইভেট না থাকতো তাহলে আগে থেকেই গোসল খাওয়া-দাওয়া শেষ করে খেলা দেখতে বসে যেতাম। তবে দুঃখের বিষয় শুধু পাওয়ার প্লের ১০ ওভার খেলা দেখে স্কুলে চলে যেতে হতো।

আমি যখন দশম শ্রেণীতে পড়তাম তখন নিয়মিত ক্লাস করতাম। আর আমাদের দশম শ্রেণীর ক্লাস রুম ছিল দোতলায় যার কারণে স্কুল পালানো খুব কষ্টকর ছিল। তবে স্কুলের নির্মাণের কাজে দশম শ্রেণীর ক্লাস রুম ফেব্রুয়ারি মাসে ল্যাবরেটরী রুমের পাশে ট্রান্সফার করা হয়। আর এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আমাদের সায়েন্স গ্রুপের কিছু ছেলেরা ক্রিকেট বিশ্বকাপ দেখার জন্য ক্লাস ফাঁকি দিতে যার মধ্যে আমিও একজন সদস্য ছিলাম 🙂
প্রথম যেদিন বাংলাদেশের খেলা হয়েছিল সেদিন আমার বন্ধু জসিমের বাড়িতে গিয়ে খেলা দেখেছিলাম। যখন জাতীয় সংগীত গাওয়া আরম্ভ হয়েছিল তখন আমরা স্কুলের পেছনের দিয়ে পালিয়ে বন্ধু জসিমের বাসায় যাই। সম্ভবত পাঁচ থেকে ছয় জন বন্ধু একসাথে খেলা দেখার জন্য জসিমের বাসায় গিয়েছিলাম। তবে ভাগ্য ভাল ছিল যে জসিমের বাড়িতে এমন কোন লোক ছিল না যার কারণে আমরা টানা ২ ঘন্টা খেলা দেখতে পেরেছিলাম। তবে ঐদিন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ছিল স্কটল্যান্ড আর ঐ ম্যাচে বাংলাদেশে খুব সহজেই জয় লাভ করে এবং তামিম ইকবাল খান সর্বোচ্চ ৯৩ রান করেছিল। তবে আমার এখনও স্পষ্ট মনে আছে সাব্বির রহমান একটা বিশাল ছক্কা হাঁকিয়েছিল আর সে ছক্কা দেখেই আমার আরেক বন্ধু ওহিদুল ইসলাম বলেছিল সাব্বির রহমান হচ্ছে আমাদের বাংলার ক্রিস গেইল 😁

বাংলাদেশের পরবর্তী ম্যাচ ছিল শক্তিশালী ইংল্যান্ডের বিপক্ষে। যেহেতু বাংলাদেশ ক্রিকেট দল বেশ ভালো ক্রিকেট খেলছিল তাই আমাদেরও খেলা দেখার প্রতি একটা আগ্রহ বেশি ছিল। সকাল আটটায় আমাদের প্রাইভেট ছিল। আটটার সময় প্রাইভেট এগিয়েই আমরা সবাই আলোচনা করছিলাম আজকে তো বাংলাদেশ আর ইংল্যান্ডের খেলা আছে তাহলে প্রাইভেট পড়বো নাকি স্যারের কাছ থেকে ছুটি নিয়ে খেলা দেখবো?? হুট করে আমার বন্ধু পলাশ মাহমুদ স্যারকে বলে ফেলল আজকে আর পড়বো না সাড়ে আটটা থেকে বাংলাদেশ আর ইংল্যান্ডের খেলা অনুষ্ঠিত হবে আজকে আমরা খেলা দেখবো। স্যার আমাদের মনের অনুভূতি বুঝতে পেরে প্রাইভেট ছুটি দিয়ে দিল, পরে আমি আমার বন্ধু পলাশ এবং সোহেল তিনজন আমাদের বাসায় এলাম। ঠিক সাড়ে আটটা থেকে আমরাও বাংলাদেশ এবং ইংল্যান্ডের খেলা দেখা শুরু করলাম। আম্মু আমাদের তিনজনের কিছু নাস্তা দিল এবং বলল তোমরা অপেক্ষা করো তোমাদের সকালের খাবার দিব। স্কুলের টাইম হতে আরও দেড় ঘন্টা বাকি ছিল আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম দেড়ঘন্টা খেলা দেখবো তারপর স্কুলে যাবো। যথাসময়ে খাওয়া-দাওয়া শেষ করে আমরা ঘড়ির কাটায় দশটার সময় স্কুলে পৌছালাম। মজার বিষয় হচ্ছে স্কুলে এসে দেখলাম আমার কোন বন্ধুই ক্লাসরুমে নেই, আমি প্রথমে অবাক হলাম এবং পরবর্তীতে বান্ধবীদের জিজ্ঞাসা করলাম সবাই কোথায় গিয়েছে?? তারা উত্তর দিল আজকে নাকি বাংলাদেশের খেলা তাই সবাই খেলা দেখতে গিয়েছে। আমরা তিনজন তখন ধারণা করলাম হয়তো জসিমের বাড়িতে খেলা দেখতে গিয়েছে। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে আমরা যাওয়ার পথেই দেখলাম আমার কিছু বন্ধু স্কুলের দিকে ফিরে আসছে সামনাসামনি দেখা হওয়ার পর জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে তখন ওরা উত্তর দিল স্কুল টাইমে টিভি দেখছি তাই জসিমের বাড়ি থেকে রাগ করেছে তাই আমরা চলে আসছি।

আমরা সবাই একসাথে ক্লাস রুমে ফিরে এলাম এবং দেখলাম আমাদের ক্লাস শুরু হয়ে গিয়েছে। অল্প কিছু সময় দেরি হওয়ায় স্যার আমাদের ক্লাস রুমে ঢুকতে দিলো। তবে ক্লাস রুমে এসে দেখতে পেলাম আমাদের অর্ধেক বন্ধুই ক্লাসে অনুপস্থিত। যদিও মন থেকে ক্লাস করার প্রতি কোন ইচ্ছা ছিল না তবুও অনেক কষ্টে প্রথম প্লাস করেই আমরা স্কুল থেকে পালালাম। আমাদের স্কুল থেকে এক কিলোমিটার দূরে বাজার আছে আর সেখানে গিয়ে দেখলাম আমাদের কিছু বন্ধু এখানে এসে টিভিতে খেলা দেখছে ততক্ষনে দেখতে পেলাম বাংলাদেশ দল একটি ভালো রান সংগ্রহ করে ফেলেছে। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর মুশফিকুর রহিম দুজন অনেক ভালো খেলছে। দুপুর পর্যন্ত খেলা দেখে আবার স্কুলে ক্লাসে ফিরে গেলাম আর বান্ধবীদের কাছ থেকে জানতে পারলাম আমাদের ইংরেজি টিচার শামসুল আলম আমাদেরকে নাকি নাম লিস্ট করে নিয়ে গিয়েছে পরবর্তী ক্লাসে পিটানি দিবে।

ভয়েভয়ে পরবর্তী দুইটা ক্লাস করলাম এবং স্কুল ছুটি শেষে বাড়ি ফিরে আসলাম। বাড়ি এসে প্লেটে ভাত নিয়ে টিভির সামনে করে বসে গেলাম, তবে ছোটবেলায় আম্মুকে দেখে অনেক ভয় পেতাম তাই আম্মু বলল দ্রুত খাওয়া শেষ করে প্রাইভেটে যেতে তাই খাওয়া-দাওয়া শেষ করে দ্রুত উচ্চতর গণিত প্রাইভেট পড়ার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে বের হলাম। মজার বিষয় হচ্ছে আমাদের স্যারের বাসা ছিল একদম বাজারের পাশে আমরা সবাই মিলে স্যারকে অনুরোধ করলাম আজকে আমাদের ছুটি দিতে আমরা বাজারের পাশের একটি চায়ের দোকানে গিয়ে খেলা দেখবো। সবাই একসাথে অনুরোধ করায় স্যার আমাদের কথা রাখলো। আমরা সবাই মিলে ছোট্ট একটি খাবার হোটেলে ঢুকে স্বল্প পরিমাণে কিছু খাবার অর্ডার করলাম আর খেলা দেখছিলাম। মূলত সবাই মিলে একসাথে খেলা দেখব বলেই এই ফন্দি তৈরি করেছিলাম। তবে খেলার শেষ দিকে আমাদের বুকের মধ্যে ধরফর ধরফর করছিল কারণ ইংল্যান্ডের হাতে ছিল চারটি উইকেট আর রান লাগতো মাত্র ৫০। সবশেষে ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতে যায় আর কৃতিত্ব অর্জন করেছিল রুবেল হোসেন। ম্যাচ জয়ের পর আমরা বন্ধুরা অনেক আনন্দ করেছিলাম। এরকম শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ প্রিয় বন্ধুদের সাথে দ্বিতীয়বার আর কখনো দেখা হয়নি।
সেই সোনালী দিন গুলো আমার কাছে এখন শুধুই অতীত।

এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে আশাকরি আপনাদের কাছে ভালো লেগেছে। ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন 🙏

ধন্যবাদ সবাইকে



logo.gif

Sort:  
 3 years ago 

আমি নিজেও খেলাধুলা পছন্দ করি। ২০১৫ সালের বিশ্বকাপের সময় আমি ক্লাস সেভেনে পড়তাম।বলতে গেলে আমার দেখা প্রথম ক্রিকেট বিশ্বকাপ। বাংলাদেশের খেলা দেখার জন্য স্কুল পালিয়েছেন বিষয়টি বেশ মজার। খেলা দেখার জন্য আমি বাড়িতে মিথ‍্যা বলে স্কুলে যেতাম না হা হা। অনেক ভালো লাগল ভাই।।

 3 years ago 

এমন ইতিহাস আমারও অনেক আছে 😁

 3 years ago (edited)
 3 years ago 

🥰🥰🥰

 3 years ago 

ক্রিকেট খেলা আমারও খুবই ভালো লাগে। বিশেষ করে বন্ধুদের সাথে একসাথে বসে দেখতে।

সেই সোনালী দিন গুলো আমার কাছে এখন শুধুই অতীত।

আসলেই ভাই প্রতিটি মানুষের জীবনেই এই আফসোস টা কাজ করে।

 3 years ago 

হুম এটাই বাস্তবতা।

 3 years ago 

ওই মেসে মনে হয় আরেকজন ওপেনার ছিলেন বিজয় সে আবার ইঞ্জুর্ড হয়ে যায়।আর সময়টা আমি ক্রিকেট পুরো আসক্ত ছিলাম,এমনকি যেদিন ইন্ডিয়া আর বাংলাদেশ এর ম্যাচ টা হলো আমরা তো ক্লাস এই করি নি,ক্লাস না করে স্কুলের সবাই মিলে মাল্টিমিডিয়া তে খেলা দেখেছি☺️

 3 years ago 

তারপর থেকে আর এনামুল-হক-বিজয় দলে নিয়মিত হতে পারেনি।
ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।

 3 years ago 

যদি সকালে প্রাইভেট থাকতো তাহলে প্রাইভেট শেষ করে বাড়ি এসে খেলা দেখতাম

আপনার মত আমিও এমন করতাম । ক্রিকেট খেলা অনেক পছন্দ করি। সেই সময়ের স্মৃতি গুলো মনে করিয়ে দেয়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।

 3 years ago 

আপনার মতামত প্রকাশ করার জন্য ধন্যবাদ ভাইয়া।

 3 years ago 

2015 বিশ্বকাপ আমার কাছে খুবই সুন্দর একটি বিশ্বকাপ মনে হয়েছে। আপনি খুবই সুন্দর ভাবে 2015 সালের বিশ্বকাপ উপভোগ করেছেন যা আপনার পোস্ট দেখে বোঝা যাচ্ছে। বিশেষ করে বাংলাদেশ যখন ইংল্যান্ডকে হারিয়ে দিয়েছিল সেই সময়টা আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছিল।।

 3 years ago 

আপনার সুন্দর মতামত প্রকাশ করার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.20
JST 0.034
BTC 99331.95
ETH 3298.98
USDT 1.00
SBD 3.05