আজকের দিনটা একদম বাজে ভাবে কেটেছে। সকাল থেকে ঘুম থেকে উঠেই দেখলাম বিদ্যুৎ নেই। এমনিতেই প্রচন্ড ঠান্ডা তারপরে ঘুম থেকে উঠতে একটু দেরি হয় যার কারণে কমিউনিটিতে সময় দেওয়া একটু কষ্ট হয়ে যায়। রাত্রে বেলায় মোটামুটি কমিউনিটিতে একটু বেশি সময় দেই তারপরে ও এখন শীতের সময় বলে রাত্রে লম্বা ঘুম হয়। ৮ থেকে ১০ ঘন্টা ঘুমানো মানে বিশাল ব্যাপার। সারাদিন আর একটু মন চায় না বিছানায় শুয়ে থাকি তারপরেও এই প্রচন্ড শীতে শুয়ে না থেকে কোন উপায় নেই। যাইহোক সকালবেলা উঠে দেখলাম ঘড়ির কাটায় প্রায় নয়টা বাজে। আমি সকালে উঠে গোসল করতে চাইলাম কারণ আজকের দিনটা একটু ব্যস্ততার মধ্যে পার করার কথা ছিল। যখনই মোটরের লাইন দিব তখনই দেখলাম বিদ্যুৎ নেই। আম্মু বলল আজকে আর বিদ্যুৎ আসবেনা, বিকাল ৫ টার পরে নাকি বিদ্যুৎ লাইন দেবে। কি জানি কি অবস্থা কোথায় কি হয়েছে সেটা আর জানিনা। তাই গোসল না করেই হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে রুমে চলে আসলাম। শীতের কাপড় পড়ে সকালকার নাস্তা কমপ্লিট করলাম। আম্মু পায়েস রান্না করে রেখেছিল সেটা এত পরিমাণে ঠান্ডা ছিল খাওয়ার পরে মনে হচ্ছিল আমার গা হাত পা আবার নতুন করে জমে যাচ্ছে। ভাবলাম আবার একটু লেপের ভিতরে গিয়ে গা গরম করে নিই। কিছু সময় পরে ভাইয়া ফোন করে বলল বাইক নিয়ে দ্রুত বাজারে আসতে আমাকে একটু বের হতে হবে। দিনের ব্যস্ততা শেষ করে প্রায় বিকাল টাইমে বাসায় ফিরলাম। যাই হোক এবারে মূল প্রসঙ্গে যাওয়া যাক।

শীতের ছুটিতে আমাদের বাড়ি ভর্তি মেহমান ছিল আর সবাই অনেক আগেই চলে গিয়েছে তবে আমার ছোট মামার পরিবার এখনো গ্রামে ছিল। হয়তো এর আগেও একবার জানিয়েছি যে আমার নানা বাড়ি আমাদের বাড়ির পাশেই। নানা বাড়িতে হেঁটে গেলে হয়তোবা পাঁচ মিনিট সময় লাগবে এরকম। আমার মামাতো ভাই আমাদের খুব ভক্ত, ঢাকা থেকে বাড়ি আসলেই সোজা সে আমাদের বাড়িতে চলে আসে আর থাকা খাওয়া গোসল সবকিছু আমাদের বাড়িতেই হয়। প্রায় দশ দিন যাবত আমার মামাতো ভাই আমাদের বাড়িতেই ছিল। দুপুরে জানতে পারলাম মামা, স্বপরিবারে আজকে সন্ধ্যার পরে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিবে। আমি তখনই একটু গিলটি ফিল করছিলাম। আসলে মামাতো ভাই আমার সাথেই থাকতো আর আমার ছোট ভাই তার খুব ক্লোজ, সবমিলিয়ে অনেক রাত পর্যন্ত আমরা সবাই আড্ডা দিতাম এটা ছিল আমাদের দৈনন্দিন রুটিন। ফোনে মজার মজার ফানি ভিডিও দেখা একসাথে মুভি দেখা আবার মাঝ রাত্রে মুড়ি পার্টি করা সব মিলিয়ে প্রতিটা মুহূর্ত আমি মিস করবো। আবির বলছিল ভাইয়া আজকে চলে যাব প্রতিদিন রাতে যে আড্ডা দেই সে কথাগুলো ঢাকায় গিয়ে আমার খুব মনে পড়বে। ও আমার মামাতো ভাইয়ের সাথে তো পরিচয় করে দেওয়া হয়নি। ওর নাম হচ্ছে আবির ও ক্লাস নাইনে পড়ে। ঢাকার বর্ণমালা ইস্কুলে সে বর্তমানে লেখাপড়া করে।

Source

বিকেলবেলা খাওয়া-দাওয়া শেষ করে মামার কাছে জিজ্ঞাসা করলাম আপনারা কখন যাবেন?? মামা বলল এইতো সন্ধ্যার পরে বের হব নাইটে ঢাকায় পৌঁছে যাব। মামা বর্তমানে হাইকোর্টের একজন আইনজীবী। রবিবারে কোর্টের কাজ করবে এর জন্য আজকে রাতেই বের হবে। তারা সন্ধ্যার পরে বের হয়ে গিয়েছে, আমার রুম এখন খালি। ছোট ভাই আবাসিক মাদ্রাসায় চলে যাবে সকালে যার কারণে আজকে নাকি সে আব্বু আর আম্মুর কাছে ঘুমাবে। সব মিলিয়ে আজকের রুমের মধ্যে আমি একা আছি। কেমন যেন মনের মধ্যে একটা একাকীত্ব ভাব অনুভব করছি। প্রতিদিন সবাই মিলে কত আড্ডা দেই কত মজার মজার গল্প করি মুভি দেখি কিন্তু আজকে সেই অনুভূতি গুলো অনেক মিস করছি। আবার মামার পরিবার কবে আসবে সেটা বলতে পারবো না তবে এই একাকীত্ববোধ হয়তো আমাকে দীর্ঘদিন ভোগাবে। হঠাৎ করে এরকম একা হয়ে যাবো, আর নিজে নিজে এত কষ্ট পাবো সেটা আগে বুঝতে পারিনি। আসলেই আজকে অনেক মন খারাপ লাগছে। আবির যাওয়ার আগে ও বলল ভাইয়া আবার কবে আসবো সেটা জানি না কিন্তু আপনার কথা অনেক মনে পড়বে। আমিও বলল ঢাকায় আয় আমাদের বাসা থেকে ঘুরে যা, আর মামার ছোট ছেলে আদনান সে তো আমার গলা ধরে বলছে ভাইয়া চলেন না আমাদের বাসায় যাই। মজার বিষয় হচ্ছে আদনান নিজেকে ডিডো নামে পরিচয় দিতে ভালোবাসে 😆 ও অনেক ছোট তাই সবাই ওকে একটু বেশি আদর করে। আমার কাছে আজকে চকলেট আবদার করবে কালকে স্পিড খাওয়ার জন্য বলবে সে কথাগুলো ও অনেক মনে পড়বে।

Source

অনেক আগে থেকেই আমাদের বাড়িতে যদি দীর্ঘদিন মেহমান থাকে আর হঠাৎ করে তারা যদি বাসায় ফিরে যায় তাহলে আমার কেমন যেন একটু একাকীত্ব বোধ হয়। আসলে এমনটা সবার ক্ষেত্রে হয় কিনা জানিনা তবে ৭-৮ যাবত এই একাকীত্ববোধ আমার মন থেকে দূর হয় না। যদিও এর আগে আমার ফুপি আসছিল তাদের পরিবার নিয়ে, আমার খালা আসছিল তাদের পরিবার নিয়ে কিন্তু এমনটা মনে হয়নি কারণ ওরা চলে যাওয়ার পরেও আবির এসে আমাদের সাথে আড্ডা দিত আমাদের সাথে কথা বলতো। আবার যদি আমার ছোট ভাইটা আজকে মাদ্রাসায় চলে না যেত তাহলে হয়তো ওর সাথে একটু আড্ডা দেওয়া যেত। আমি জানি বাসায় গেলে অনেক মন খারাপ হবে নিজেকে অসহায় মনে হবে এজন্য এই শীতের মধ্যেও আজকে বাজার থেকে একটু দেরি করে বাসায় ফিরেছি কারণ বাসায় গেলেই একা একা বসে থাকতে হবে। আমার বন্ধুর চাচার দোকানের মধ্যে বসে সবাই অনেক সময় আড্ডা দিলাম যাতে মনটা একটু ফ্রেশ থাকে।

আজকে আবার বুঝতে পারছি মানুষের মধ্যে মায়া থাকলে সেটা কেন তাকে একসময় কাঁদাতে পারে?? মানুষের প্রতি মানুষের ভালোবাসাই তাকে কষ্ট দেয়। এই যে ধরুন আমার মামাতো ভাই ছিল আমার ছোট ভাই ছিল সবাই রাত্রে একসাথে ঘুমাতাম একসাথে আড্ডা দিতাম একসাথে মুভি দেখতাম সবাইকে নিয়ে একটা অন্যরকম ভালোবাসার সৃষ্টি হয়েছিল। রাতে যতক্ষণ না ঘুম আসবে ততক্ষণ এই বিষয়গুলো বার বার মনে পড়বে। আমি এইটুকুতেই এতটা বেসামাল হয়ে পড়েছি তাহলে যারা দীর্ঘ সময় একা থাকে বা প্রবাসে থাকে তারা কিভাবে জীবন যাপন করে সেটাই চিন্তা করছি। সবশেষে দোয়া করবেন সবকিছু ভুলে আবার যেন দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে যেতে পারি।

এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।

সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan

আমার পরিচয়

আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ছবি আঁকতে, ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও মাঝে মাঝে গুন গুন করে গান গাইতে খুবই ভালোবাসি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।

|| আমার বাংলা ব্লগ-শুরু করো বাংলা দিয়ে ||

>>>>>|| এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য ||<<<<<

---

---

VOTE @bangla.witness as witness

OR

SET @rme as your proxy

---

JOIN WITH US ON DISCORD SERVER

Follow @amarbanglablog for last updates

---

Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power

250 SP	500 SP	1000 SP	2000 SP	5000 SP

---

|| Join the Discord Server for more Details ||

---