গভীর রাতে ভূত পিছনে (পর্ব-০২) || by @kazi-raihan
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।
আজ -২১শে চৈত্র | ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | মঙ্গলবার | বসন্তকাল |
আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।
দিনের ব্যস্ততা শেষে আবারো চলে এলাম আপনাদের সাথে আমার দেখা একটি ছোট্ট গল্প শেয়ার করার জন্য তবে এটা একটি ভূতের গল্প। ইতিমধ্যে আপনাদের সাথে এই গল্পটির প্রথম অংশ আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি আর আজকে আমি দ্বিতীয় এবং শেষ পর্বটি শেয়ার করতে যাচ্ছি। যদি আজকের দিনের ব্যস্ততার কথা বলি তাহলে অন্যান্য দিনের তুলনায় একটু কম ছিল। তবে আজকে সকালে অনেক সময় পর্যন্ত ঘুমিয়েছি। কালকে রাতে ইসরাত মিম আপুর সাথে অনেকদিন পর ডিসকোডে দীর্ঘ সময় আড্ডা দিয়েছিলাম। তাই ঘুমোতে ঘুমোতে প্রায় একটা বেজে গিয়েছিল। আবার তিনটার সময় সেহরি খাওয়ার জন্য উঠে পড়েছিলাম তাই রাতের বেলায় আর ঘুম তেমনটা হয়নি। সেহরি খাওয়া শেষ করে এমনিতেই একটু বেশি ঘুম চাপে কারণ ভরপুর খাওয়া দাওয়ার পরে শরীর আলসে হয়ে যায়। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে দেখলাম প্রায় নয়টা বাজে কিভাবে যে সকাল ৯ টা বেজেছে আমার বলার কোন ক্ষমতা নেই। তবে সকালবেলায় ঘুম থেকে ওঠার পরেই যখন ফোন হাতে নিলাম তখন দেখলাম ঢাকায় ভয়াবহ আগুন লেগেছে। সারাদিন কমবেশি আপডেট নিয়েছি আর মানুষের অসহায়ত্ব হাজারি দেখেছি আর কষ্ট পেয়েছি। কিভাবে একজন মানুষ কোটিপতি থেকে রাস্তায় নেমে গিয়েছে সেটা আজকে দেখেছি। গল্পে গল্পে আম্মু সেটাই বলছিল যে চোড়ে নিলে তাও ঘরে কিছু রেখে যায় কিন্তু আগুনে পুড়ে গেলে আর কিছুই থাকে না। আল্লাহতালা যেন তাদেরকে ধৈর্যধারণ করার ক্ষমতা দেয়। যাই হোক আর টপিক বাড়াবো না এখন মূল পর্বে চলে যাই চলুন তাহলে নিচে গিয়ে গল্পটা পড়া শুরু করি
প্রথম পর্বে আনোয়ার যে শ্বশুরবাড়ি থেকে অনেক রাতে বাড়ি ফিরছিল আর সে যে ভয় পেয়েছিল সেই পর্যন্ত শেয়ার করেছিলাম। আনোয়ার বট গাছের নিচে এসে একটু বেশি ভয় পেয়েছিল কারণ সে যখন বটগাছের কাছে চলে আসে তখন তার পেছনের গুনগুন শব্দ আর হাঁটার শব্দ আরো বেড়ে যায়। কিছু সময় পর আনোয়ার দাড়িয়ে পড়ে আর শব্দটাও থেমে যায় তখন আনোয়ার আরো বেশি ভয় পায়। আনোয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সে সেখান থেকে দৌড়ে পালাবে। সে লুঙ্গি উঁচু করে কাঁচা মারে আর দৌড়াতে শুরু করে। তার পেছনে থাকা শব্দটি ও তার পিছু পিছু দৌড়াতে শুরু করে। দীর্ঘ সময় দৌড়ানোর পর আনোয়ার মাঠ পেরিয়ে একটি ব্রিজের পাশে আসে। আর এই ব্রিজের পাশে অনেক আগে থেকেই বেশ কিছু ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটেছিল তাই সে দৌড়েতে দৌড়াতে ব্রিজ পার করে। হঠাৎ পিছন থেকে একটি শব্দ আসে, কে যেন আনোয়ারকে বলছে "যা আজকের মত বেঁচে গেলি"আনোয়ার ও তখন পেছনে ঘুরে বলে "যা তোরাও আজকে বেঁচে গেলি" এই বলে আনোয়ার আবার কিছু পথ দৌড় শুরু করে।
এবার আনোয়ার ধীরে ধীরে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো আর বারবার সে ভয়ঙ্কর কথাগুলো মনে করতে লাগলো। আনোয়ার চিন্তা করতে লাগলো আজকে হয়তো মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে এসেছি যদি আমি সেখানে দাঁড়িয়ে থাকতাম বা বারবার পেছনে তাকাতে তাকাতে ধীরে ধীরে আসতাম তাহলে হয়তো আমাকে এতক্ষণে মেরে ফেলত। সে সময় এতটা প্রযুক্তি আসেনি তাই আনোয়ারের কাছে মোবাইলও ছিল না যে এই বিপদের কথা কাউকে ফোন করে জানাবে। আর আগের দিনে এতটা ঘনবসতি ও ছিল না যে একটা বাড়ির পাশে গিয়ে লোকজন ডেকে সে সাহায্য নিবে। তাই পরিস্থিতির শিকার হয়ে বাধ্য হয়ে সে একা একাই ধীরে ধীরে সামনে হাঁটতে থাকে। তবে তার বিপদ তখনও শেষ হয়নি। যেতে যেতে আনোয়ারের সামনে একটি বাঁশ বাগান সামনে পড়ে। সে ধীরে ধীরে হাঁটতে হাঁটতে বাঁশ বাগানের কাছে চলে এলো। এই বাঁশ বাগানে এলাকার অনেক লোকজন গলায় দড়ি দিয়ে মৃত্যুবরণ করেছে তাই আনোয়ার বাঁশ বাগানের পাশে এসে একটু ভয় পাচ্ছিল যদিও বাঁশ বাগানটি খুব ছোট তবে ভেতরটা ঘুটঘুটে অন্ধকার। এরকম একবার ভয় পাওয়ার পরে বাঁশ বাগানের ভেতরে ঘুটঘুটে অন্ধকার দৃশ্যটি চোখের সামনে পড়লে আবার ভয় পাওয়া খুবই স্বাভাবিক। কাছে যাওয়ার কারণে তার আবার ভয় শুরু হয়ে গেল সে মনে ভয় নিয়েই সামনের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো কারণ আর এক কিলোমিটার পথ অতিক্রম করলেই সে বাড়ি পৌঁছে যেতে পারবে। হয়তো এখানকার এই বাধাটা পেরোতে পারলেই আনোয়ার সহিসালামতে বাড়িতে পৌঁছে যাবে।
ভয়ে ভয়ে কিছু পথ প্রেরণের পরেই বাঁশ বাগানের মধ্যে দিয়ে যে গ্রামের কাঁচা রাস্তা ছিল সেখানে একটি বিশাল বড় বাঁশ রাস্তার উপর শুইয়ে রাখা হয়েছে। অনেক রাত হয়ে গেছে তাই রাতের আকাশে চাঁদের দেখা মিলেছে বলে রাস্তাটা অনেকটাই চাঁদের আলোয় স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। তবে রাতের বেলায় আনোয়ার এই বিষয়টি দূর থেকে লক্ষ্য করতে পারেনি যখন সে শুইয়ে থাকা বাঁশের কাছে চলে আসে তখন সে বিষয়টি বুঝতে পারে। প্রথমে আনোয়ার ভাবছিল হয়তো কোন কারনে বাঁশটি রাস্তার উপর পড়ে গিয়েছে এভাবে সে বাঁশ পার হয়ে এগিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিল। কিছুক্ষণ পরেই তার মত বদলে গেল সে আবার চিন্তা করল এখন যদি এই বাঁশ পার হতে গিয়ে কোন সমস্যা হয় তাহলে তো আমার আর দেখার মত কেউ থাকবে না। সে আবার চিন্তা করল বাঁশ পার হতে গিয়ে যদি বাঁশ আমাকে উঁচু করে নিয়ে উপরে উঠে যায় তাহলে আমি নির্ঘাত মারা পড়বো। কিছু সময় দাঁড়িয়ে আনোয়ার নানা রকম চিন্তা করল কিন্তু তাতে কোন সমাধান মিল না। তবে এই গল্পেও একটা বাস্তব দিক ফুটে উঠেছে যে মানুষ যখন বিপদে পড়ে তখন সৃষ্টিকর্তার কথা মনে পড়ে আর বিপদ কেটে গেলেই সৃষ্টিকর্তার রহমতের কথা ভুলে যায়। যাই হোক সেই বিপদের সময়ে আনোয়ার শুধু আল্লাহকে ডাকছে আর দোয়া পড়ছে। কিছু সময় সেখানে দাঁড়িয়ে দোয়া পড়লো কালিমা পড়ল আর আল্লাহ তায়ালার কাছে সাহায্য চাইছিল। হঠাৎ সে ধারণা করলো তার হাতে মিষ্টি, মাছ-মাংস আছে বলেই হয়তো এমনটা হচ্ছে। এত রাতের বেলায় সে এই ধরনের খাবার নিয়ে যাচ্ছে বলেই তার সাথে বারবার এমনটা হচ্ছে। সে তখনই মিষ্টির প্যাকেট মাছ মাংস সহ যত খাবার ছিল সব কিছু বাঁশ বাগানের মধ্যে ফেলে দিল। ব্যাগটি বাঁশ বাগানের মধ্যে ফেলে দিয়ে সামনের দিকে তাকানো মাত্রই বাশটি আসতে আসতে উপরে উঠে যায়। আনোয়ার ভয়ে যেন কাঁপছে, ভয়ে তার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে আর হাত পা কাঁপছে। আনোয়ার আর পিছনে তাকালো না কারণ মাছ-মাংস যাই ফেলে রেখেছে সেগুলোর বিনিময়ে যদি তার জীবন বেঁচে যায় তাহলে সেটাই তো ভালো। সবকিছু পিছনে ফেলে দিয়ে দোয়া পড়তে পড়তে সে তার বাড়ির দিকে এগিয়ে আসলো। কিছু সময় পরে আনোয়ার বাড়িতে ফিরে আসলো আর তার বাড়িতে থাকা লোকজনকে ডেকে তুলল। সবাই আনোয়ারকে কাছে ডেকে নিল আর লবণ পানি খাওয়াতে লাগলো। টিউবওয়েল থেকে পানি নিয়ে এসে আনোয়ারকে গোসল করানো হলো এবং আগুনে গা ছেকে আনোয়ারকে ঘরে উঠালো।
এই ঘটনার পর থেকে আনোয়ার আর রাতের বেলায় কোথাও যাওয়ার কথা চিন্তা করে না আর বিশেষ করে কোন খাবার নিয়ে তো সে সন্ধ্যার পর থেকে বাড়ি থেকে বের হয় না। হয়তো সেদিনে আনোয়ার মৃত্যুর দ্বারপ্রান্ত থেকে ফিরে এসেছে। আনোয়ারের গল্পটা এখানেই শেষ হচ্ছে। ছোট্ট এই ভূতের গল্পটা কেমন লেগেছে সেটা মন্তব্য করে সবাই জানালে আমি অনেক খুশি হব।
এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।
সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan
আমার পরিচয়
আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ছবি আঁকতে, ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও মাঝে মাঝে গুন গুন করে গান গাইতে খুবই ভালোবাসি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
https://twitter.com/KaziRai39057271/status/1643299561094643713?s=20
এর আগের পর্বটি পড়েছি কিন্তু এ পর্বটি পড়ার জন্য অপেক্ষায় ছিলাম অনেক ভয়ঙ্কর একটি ঘটনা। বিপদে পড়লে আসলে মানুষ অনেক কিছু শিখতে পারে যা আপনার এই গল্পটির মাধ্যমে অনেক কিছু শেখা হয়েছে।এটি একটি শুধু ভূতের গল্প ছিল না জীবনে অনেক কিছু শিক্ষা নেওয়ার আছে অনেক ধন্যবাদ সুন্দর একটি গল্প শেয়ার করার জন্য।
একদম ঠিক বলেছেন আপু, বিপদে পড়লেই মানুষ নতুন কিছু শিখতে পারে।
ভূতের গল্পগুলো পড়তে আমার কাছে খুবই মজা লাগে। কারণ সেখানে একটা ভাব থাকে আর রাতের বেলা হলে তো সেই গল্পটা পড়তে পড়তে বিষয়টা অনুভব করা যায়। তবে আনোয়ার মিষ্টি আর মাছ মাংস নিয়ে বাড়িতে যাওয়ার কারণে হয়তোবা তার সাথে এত ঘটনাগুলো ঘটে গেল। ব্রিজের একপাশে এক ঘটনা আবার বাঁশ বাগানের কাছে আরেক ঘটনা। সবটা মিলে গল্পটা দারুন লিখেছেন ভাইয়া।
ভালো লেগেছে জেনে খুশি হলাম আপু। মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।
ভুতের গল্প গুলো পড়তে বেশ ভালো লাগে।আপনার গল্পটি ও অনেক ভালো লাগলো।রাতের বেলায় ভুত দের পছন্দের খাবার নিয়ে গেলে তো এগুলো হবেই।আনোয়ার এর সাথে যা যা ঘটেছে,মাছ মাংসের জন্যই ঘটেছে।দোআ পড়েছিল বলেই সেই যাত্রায় আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছিল ওনাকে নইলে যে কি হতো।ধন্যবাদ ভাইয়া সুন্দর গল্পটি শেয়ার করার জন্য।
আসলেই আল্লাহ তায়ালা অশেষ রহমতে আনোয়ার বেঁচে গিয়েছিল।