পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাওয়া ||১০% লাজুক খ্যাকের জন্য by @kazi-raihan
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।
আজ -১৭ই মাঘ | ১৪২৮ বঙ্গাব্দ | মঙ্গলবার | শীতকাল |
আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।
বাংলাদেশে পদ্মা সেতুর উদ্বোধন হয়েছে দীর্ঘদিন কিন্তু কখনো পদ্মা সেতুর উপর দিয়ে যাওয়া হয়নি। এর আগেও ঢাকা গিয়েছি তবে রাজবাড়ী আর মানিকগঞ্জ জেলার মধ্যে অবস্থিত দৌলতদিয়া ঘাট হয়ে। প্রথমত ঢাকা যাওয়ার আগে বন্ধুর সাথে কথা হল এবং তার বাসায় ওঠার কথা ছিল কিন্তু যেদিনে যাওয়ার কথা ছিল সেদিন সকালে সে আমাকে ফোন করে বলল সে নাকি আজকে বাড়ি চলে আসবে যার কারণে ঢাকায় আর মোহাম্মদপুর অঞ্চলে যাওয়া হয়নি। পরবর্তীতে মামার সাথে কথা হওয়ার পরে মামা বলল যাত্রাবাড়ী তার বাসায় যেন যাই। যেহেতু আমি যাত্রাবাড়ী যাব সেহেতু মামা আমাকে বলল পদ্মা সেতু হয়ে আসলে অনেক সুবিধা হবে। পদ্মা সেতু হয়ে অল্প সময়ে মামার বাসায় পৌঁছে দিতে পারব। তাছাড়া মামার বাসায় এমনিতেও যেতে হতো কারণ আমি যে কাজে ঢাকায় যাচ্ছি সেই কাজে মামাকে সাথে নিয়ে যেতে হবে এমনকি সেই কাজের পুরোপুরি দায়িত্ব নিয়েছে মামা নিজেই। আমার মামা ঢাকা হাইকোর্টের একজন আইনজীবী তাই হাইকোর্টের পাশেই তার বাসা। আমরা কুষ্টিয়ার লোকজন সাধারণত ঢাকা গেলে মিরপুর বা মোহাম্মদপুর এলাকায় থাকলে সুবিধা হয় কারণ খুব বেশি যানজট পেরিয়ে সামনে যেতে হয় না কিন্তু মামার বাসা যাত্রাবাড়ী হওয়ায় তেমন একটা যাওয়া হয় না। প্রায় দীর্ঘ এক বছর পরে আবার মামার বাসায় যাচ্ছি যদিও মাঝে কয়েকবার ঢাকা যাওয়া হয়েছে কিন্তু মামার বাসায় যেতে হলে প্রায় দুই ঘন্টা জ্যামে আটকে থাকতে হয় এই জন্য যাওয়া হয়নি।
যেহেতু আমি পদ্মা সেতু হয়ে যাব তাই ভাবলাম রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা নকশি কাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেনে আমি ভাঙ্গা পর্যন্ত যাব। ভাঙ্গা থেকে সোজা পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকায় পৌঁছাব। সকালে একটু দেরি করে ঘুম থেকে উঠেছিলাম কারণ রাজশাহী থেকে ছেড়ে আসা নকশি কাঁথা এক্সপ্রেস ট্রেনটির সঠিক সময় ১১:৩০ মিনিটে। আমাদের বাসা থেকে শোমসপুর রেলস্টেশনে পৌঁছাতে মাত্র ২০ থেকে ২৫ মিনিট সময় লাগে। সাড়ে দশটার দিকে আমি বাসা থেকে বেরিয়ে পড়লাম আর বাজারে গিয়ে কিছু সময় ব্যয় করার পরে ঠিক ১১ঃ০০ টা বাজার ৯ মিনিট আগে ইজিবাইক স্ট্যান্ডে গিয়ে দেখলাম একটি ইজিবাইক দাঁড়িয়ে আছে। ইজিবাইকে গিয়ে উঠলাম আর ড্রাইভার এর সাথে কিছু কথা সেরে নিলাম। আমি স্টেশনে পৌঁছানোর পরে একটি চায়ের দোকানে কিছু সময়ের জন্য বসলাম। টাইম হয়ে যাওয়ার কারণে আবার তাড়াহুড়ো করে টিকিট সংগ্রহ করতে গেলাম কিন্তু আমি কোন সিট পেলাম না তার জন্য একটু কষ্ট হয়েছিল তবে তার পরেও ট্রেনযাত্রা আমার কাছে বেশ ভালো লাগে। দীর্ঘ এক বছরের বেশি সময় পরে আজকে ট্রেনযাত্রা করব। তবে ভাগ্যটা অনেক ভালো ছিল যে ১১:৩৪ মিনিটে ট্রেন স্টেশনে ঢুকে পড়ে। খুশি খুশি মনে ট্রেনে উঠে পড়লাম আর সোজা সামনের বগিতে গিয়ে দেখলাম কিছু সিট ফাঁকা পড়ে আছে আর আমি সেখানে বসলাম। ট্রেন রাজবাড়ি পার হওয়ার পরে আরো কিছু সিট ফাঁকা হয়ে গেল তখন আমি জানালার পাশে গিয়ে বসলাম যাতে আমার ছবি তুলতে সুবিধা হয়। তাছাড়া ভাঙ্গার লাইনে আমি আজকেই প্রথম ট্রেন জার্নি করছি। নতুন জায়গায় গেলে আসলেই অন্যরকম একটা অনুভূতি থাকে তাই জানালার পাশে বসে আশপাশের দৃশ্যগুলো দেখছিলাম আর মজা উপভোগ করেছিলাম।
ট্রেন গিয়ে সোজা ভাঙ্গা স্টেশনে থেমে গেল। তবে একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম ভাঙ্গা স্টেশন যেন অস্থায়ীভাবে তৈরি করা হয়েছে। যদিও আশপাশ থেকে কারো কাছে এই স্টেশন সম্পর্কে কোন কিছু জিজ্ঞাসা করা হয়নি তবে নিজের যতটুকু মনে হয়েছে হয়তো এই স্টেশনটা এখানে স্থায়ী নয়। যাইহোক ট্রেন থেকে নেমে ২০ টাকা দিয়ে ইজিবাইকে উঠে সোজা ভাঙ্গা গোল চত্তরে যে বাস স্ট্যান্ড আছে সেখানে গেলাম। আমি এই রুটে আজকে প্রথম যাত্রা করছি তাই কোন গাড়ি কোন দিকে যায় সে সম্পর্কে কোন ধারণা নেই। বিষয়টা বোঝার জন্য আমি রাস্তার সাইডে গিয়ে কিছু সময় বিস্তারিত সবকিছু বোঝার চেষ্টা করলাম। হঠাৎ দেখলাম একজন ট্রাফিক পুলিশ হেটে আসছে। ভাবলাম ট্রাফিক পুলিশ এর কাছ থেকে কিছুটা সাহায্য নেয়া যাবে তাই আমি তার কাছে গেলাম এবং তাকে সালাম দিয়ে বললাম আঙ্কেল আমি এইরুটে আজকেই নতুন তো কোন গাড়ি ঢাকার দিকে খুব দ্রুত যাবে এটা একটু বলবেন। তিনি আমার সাথে কিছু সময় কথা বলে এবং অনেক কিছু জানতে চাইলেও আর আমিও তার কথাগুলোর উত্তর দিলাম। তিনি আমাকে বললেন আচ্ছা তুমি সাইডে দাঁড়াও আমি একটা বাস দেখে তোমাকে তুলে দিচ্ছি। কিছু সময়ের পর দেখলাম সার্বিক পরিবহনের একটি ডাইরেক বাস ঢাকার দিকে যাচ্ছে আর ট্রাফিক পুলিশ আংকেল বাসটিকে থামিয়ে বলল ছেলেটাকে ঢাকা পর্যন্ত ভালোভাবে পৌঁছে দিও।হয়তো ট্রাফিক পুলিশ আংকেল বলেছিল বলেই সামনের একটি সিটে আমাকে বসতে দিল। যদিও সামনের ভালো সিটগুলো পুরোপুরি বুকিং হয়ে গিয়েছিল তবে সুপারভাইজারের বসার যে সিট থাকে সেটা আমার জন্য ছেড়ে দিয়েছিল। বাসে উঠে দীর্ঘ পথ যাওয়ার পরে আমি পদ্মা সেতুর সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারলাম। আর এ সেখানকার রাস্তা গুলো যা ছিল বলতে গেলে অনেকটা স্বপ্নের মত। আসলে বাংলাদেশের অনেক জায়গায় ঘোরাফেরা করেছি কিন্তু এমন উন্নত মানের রাস্তা আর উন্নত মানের সব প্রযুক্তি এখানে ব্যবহার করা হয়েছে যেটা দেখে মনে হচ্ছিল আমি যেন উন্নত কোন দেশের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। যতটুকু পথ দিয়েছিলাম পুরোটাই শুধু ছবি তুলেছিলাম আর ভিডিও করেছিলাম। আমি বাসের একদম সামনে বসে ছিলাম যার কারণে ছবি তুলতে আর ভিডিও করতে একটু সুবিধা হয়েছিল। ছবিগুলো দেখে বুঝতে পারছেন পদ্মা সেতুর শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছবি তুলেছিলাম আর তার মধ্যে কয়েকটি ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি।
পদ্মা সেতু পার হয়ে ভেবেছিলাম হয়তো রাস্তাগুলো একটু খারাপ হবে কিন্তু একদম ভাঙ্গা থেকে ঢাকা পর্যন্ত পুরোপুরি রাস্তাটাই একদম অসাধারণ সুন্দর। এক লাইনে রাস্তা হওয়ায় বাসগুলো খুব দ্রুতগতিতে যাচ্ছিল কারণ পেছন থেকে ওভারটেক করছিল সে আলাদা লাইন দিয়ে আর সামনে থেকে গাড়ি আসার কোন চান্স নেই এজন্য ড্রাইভার বেশ দ্রুত গতিতেই ড্রাইভ করছিল। আর এই সুন্দর রাস্তার সৌন্দর্যটা আমি বেশ ভালোই উপভোগ করছিলাম কারণ আমিও গাড়ির সামনের অংশে বসে ছিলাম। লক্ষ্য করতে পারলাম এই রাস্তার পাশ দিয়ে নতুন রেল লাইন তৈরি করা হচ্ছে হয়তো পদ্মা সেতু হয়ে যে ট্রেন আসবে সেটা এই লাইনের উপর দিয়ে যাবে আর আমাদের তখন ঢাকা আসা আরো সহজ হয়ে যাবে। ট্রেন লাইনটা পুরোপুরি কমপ্লিট হয়ে গেলে ট্রেনে চড়ে ঢাকা আসতে পারবো। যাইহোক ট্রেন লাইনসহ যে রেল স্টেশন গুলা হচ্ছে তার কয়েকটি ছবি আমি আপনাদের মাঝে শেয়ার করেছি উপরের ছবিগুলো দেখলে হয়তো বুঝতে পারবেন। তবে পদ্মা সেতু পার হয়ে আরো কয়েকটি ছোট ছোট ব্রিজ আছে সেগুলো অনেক সুন্দর ভাবে তৈরি করা হয়েছে আর ব্রিজগুলো পার হয়ে গিয়ে যে ট্রোল ঘর তৈরি করা হয়েছে সেটাও অনেক সুন্দর ছিল।
যাইহোক অনেক স্বল্প সময়ে ঢাকায় পৌঁছে গিয়েছিলাম। আনুমানিক ১টা ৩০ মিনিটের দিকে বাসে উঠলাম আর তিনটার পরেই ঢাকায় পৌঁছে গেলাম আমার মনে হয় ভাঙ্গা থেকে ঢাকায় আসতে দেড় থেকে দুই ঘন্টা সময় লাগে। আর সবশেষে যেটা বলতে চাচ্ছিলাম সেটা হচ্ছে পদ্মা সেতু তৈরি হওয়ার পরে আমি পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা গিয়েছি আর সেটা নিয়ে আপনাদের সাথে একটি ব্লগ শেয়ার করতে পেরেছি আর নিজের অনুভূত গুলো তুলে ধরতে পেরেছি তার জন্য আমি অনেক আনন্দিত।
⬇️📥 | ⬇️📥 |
---|---|
ডিভাইস | Samsung galaxy A52 |
ফটোগ্রাফার | @kazi-raihan |
লোকেশন | |
সময় | জানুয়ারি,২০২৩ |
এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।
সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan
আমার পরিচয়
আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ছবি আঁকতে, ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও মাঝে মাঝে গুন গুন করে গান গাইতে খুবই ভালোবাসি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
আপনি পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাওয়ার সৌন্দর্যটি সবার মাঝে ভাগ করে নিয়েছেন দেখেই আমার কাছে ভীষণ ভালো লেগেছে। পদ্মা সেতুর অপরূপ সৌন্দর্য ফটোগ্রাফির মাধ্যমে তুলে ধরলেন। আপনার মামার বাসায় পদ্মা সেতু হয়ে গেলে মনে হয় খুব তাড়াতাড়ি যাওয়া যায়। যেহেতু আপনি এমনিতে যে কাজে এসেছেন আপনার মামাকে প্রয়োজন তাহলে আর জ্যামের মধ্য দিয়ে আপনার মামার কাছে আসতে হবে না মামার বাসায় একেবারে চলে গেলেই ভালো। পদ্মা সেতু দেখার এবং যাওয়ার সেই স্বপ্নটি সবারই আছে। সবমিলিয়ে আপনার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে তাহলে।
যদিও অনেক আগেই যাওয়ার ইচ্ছা ছিল কিন্তু এবারে কাজের সুবাদে সব স্বপ্নই পূরণ হয়ে গেল। মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আপু।
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
https://twitter.com/KaziRai39057271/status/1620446353846571010?s=20&t=Eqt3WE2wMEXkeIi0HuNquA
পদ্মা সেতুর অপূর্ব সৌন্দর্য খুব সুন্দর ভাবে উপভোগ করেছেন। আসলে পদ্মা সেতু হওয়াতে যাতায়াতের অনেক সুবিধা হয়েছে খুব কম সময়ের মধ্যে এখন রাজধানী ঢাকাতে আসা যায়। অবশেষে আপনার স্বপ্ন পূরণ হলো আপনি পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকা এসেছেন এবং আমাদের সাথে আপনার অনুভূতি শেয়ার করেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে আপনার চমৎকার অনুভূতি শেয়ার করার জন্য।
হ্যাঁ যেমন সময় বাঁচবে তেমন ভ্রমণ করতে মজা লাগবে।
আপনি আপনার অনুভূতিগুলো শেয়ার করলেন দেখে ভীষণ ভালো লাগলো। পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা যাওয়ার কারণে সেই অনুভূতিটি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। আপনি তো দেখছি পদ্মা সেতুর সৌন্দর্য ক্যামেরায় বন্দি করে ফেলেছেন। অনেক স্বল্প সময়ে ঢাকায় পৌঁছে গিয়েছেন তাহলে। আপনি আপনার মামার বাসায় যে কাজের জন্য গিয়েছেন তা ঠিকমতো হলেই হয়। পদ্মা সেতু হয়ে আসার কারণে খুবই কম সময় লেগেছে তাহলে। এরকম একটা মুহূর্ত শেয়ার করলেন দেখে ভীষণ ভালো লাগলো।
সুন্দর কোন কিছু দেখলে ছবি তোলা একটা অভ্যাস হয়ে গিয়েছে তাই পদ্মা সেতুর সৌন্দর্য ক্যাপচার করেছিলাম। আপনার ব্যক্তিগত মতামত তুলে ধরার জন্য অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া।
পদ্মা সেতু হয়ে ঢাকা আসার অনুভূতি পড়ে অনেক ভাল লাগলো। ভাঙ্গা থেকে ঢাকা আসার রাস্তা গুলো দেখে আমি রীতিমত অবাক হয়ে যাচ্ছি। অনেক সুন্দর রাস্তা করেছে। পদ্মা সেতুর ছবি গুলো অনেক সুন্দর হয়েছে। ধন্যবাদ ভাইয়া।
একদিন এই সাইডে ঘুরে দেখবেন ভাই।