ছোট গল্প : নিষ্ঠুর মানুষ (পর্ব-০২) || by @kazi-raihan
আমার প্রিয় বন্ধুরা,
আমি@kazi-raihan বাংলাদেশের নাগরিক।
আজ -২৩শে বৈশাখ | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | শনিবার | গ্রীষ্মকাল |
আমি কাজী রায়হান,আমার ইউজার নাম @kazi-raihan।আমি বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন।মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে অভিনন্দন।
সোহা আর সাদমানের ঢাকা থেকে পালিয়ে আসার পর এক ভদ্র মহিলার বাসায় আশ্রয় নেয় আর তার ভাই ডাকাত হওয়ায় এই খোঁজ পেয়ে ছেলেমেয়ে দুজনের কাছ থেকে গহনা সহ টাকা-পয়সা নিতে আসে। ভদ্রমহিলাটি তার ভাইয়ের পা ধরে আকুতি মিনতি করায় ক্ষমা করে দিয়ে চলে যায় কিন্তু তার লোভ হয়েছিল ছেলে মেয়ে দুজনের টাকা পয়সা আর গহনাগুলোর প্রতি তাই সে তাদেরকে যেকোনো সময় মেরে ফেলতে পারে আর তার টাকাগুলোকে লুট করতে পারে এই ভয়ে ছিল ভদ্রমহিলাটি। যার কারনে ভদ্র মহিলাটি ছেলেমেয়ে দুজনকে ঘরের মধ্যে রেখে তালা বন্দি করে রাখত যাতে তার ডাকাত ভাই তাদেরকে কিছু করতে না পারে এই পর্যন্ত প্রথম পর্বে শেয়ার করেছিলাম। এভাবে তালা বন্দি অবস্থায় সাদমান আর সোহার বেশ কয়েকদিন কাটলো। এদিকে ডাকার দলের লোকজন গুলো এলাকার চারিপাশ নজর রাখত যাতে ছেলে-মেয়ে দুজন টাকা পয়সা নিয়ে এলাকা থেকে বেরিয়ে যেতে না পারে। কিন্তু ডাকাত দলের সদস্যরা এত কড়া পাহারা থাকার পরেও যেহেতু তাদের সফলতা মিললো না তাই তারা ভিন্ন ধরনের একটি প্ল্যান করল। তারা দীর্ঘদিন পর একটা প্ল্যান করল যে তার বোনের বাড়িতে একটা ভুল মৃত্যু সংবাদ দিবে অর্থাৎ ভদ্রমহিলাটির বাড়িতে তার এক আত্মীয়র মৃত্যুর সংবাদ একজন লোকের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। যেহেতু তাদের বেশ কাছের আত্মীয়, তাই তারা এই মৃত্যুর সংবাদ শুনে অনেকটাই ভেঙে পড়ে আর মৃত্যুর সংবাদ শুনে তার আত্মীয় বাড়িতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
ভদ্রমহিলার স্বামী বিষয়টি প্রথমে ধারণা করে যে যদি আমরা দুজন বাড়ি থেকে চলে যাই তাহলে কোন বিপদ হতে পারে অসহায় ছেলে-মেয়ে দুজনের উপরে তাই ভদ্রমহিলার স্বামী সিদ্ধান্ত নিল সে মৃত ব্যক্তিকে দেখতে যাবে আর ভদ্রমহিলা বাড়িতে থাকবে। যদিও ভদ্র মহিলাটি চাইছিল সে নিজেও তার আত্মীয় বাড়িতে যাবে কারণ মৃত ব্যক্তিকে শেষবারের মতো সে একবার দেখতে চায়। মহিলার স্বামী তার আত্মীয় বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে আর ভদ্রমহিলাটি বাড়িতে তার বাড়ি পাহারা দিচ্ছিল। ভদ্রমহিলা বসে বসে চিন্তা করছিল আর ভাবছিল তার আত্মীয়কে শেষবারের মতো সে একবার দেখতে পারবে না। এই ধারনায় সে বারবার আফসোস করছিল, হঠাৎ করেই সে প্ল্যান করল সে নিজেও তার আত্মীয়কে দেখতে যাবে। ভদ্র মহিলা রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ল তার আত্মীয় বাড়ির উদ্দেশ্যে। অর্ধেক পথ যাওয়ার পরে ভদ্র মহিলার মাথায় আবার অন্য ধারনা আসলো যে যদি ডাকাত দল ভুল তথ্য দিয়ে তাদের দুজনকে বাড়ি থেকে সরিয়ে ছেলে-মেয়ে দুজনের কোন ক্ষতি করে। এই ভেবে ভদ্রমহিলাকে অর্ধেক পর থেকে আবার বাড়িতে ফিরে আসলো। তবে বাড়িতে ফিরে আসার পরে ভদ্রমহিলাটি যে ভয় পাচ্ছিল সেটাই ঘটে গিয়েছিল।
ভদ্র মহিলাটি বাড়িতে আসার পরেই দেখতে পেল তার ঘরের তালা ভেঙে ফেলা হয়েছে আর ছেলেমেয়ে দুজনকে সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ছেলে মেয়ে দুজন বাড়ি থেকে যত টাকা পয়সা নিয়ে এসেছিল সবকিছু ডাকাত দল সাথে নিয়ে গিয়েছে তাছাড়া ছেলে-মেয়ে দুজনকেও ধরে নিয়ে গিয়েছে। ঘরের তালা ভাঙা দেখে ভদ্রমহিলা দূর থেকে চিৎকার করে উঠলো ততক্ষণে ছেলে-মেয়ে দুজনকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভদ্র মহিলাটি তাদের দুজনকে খুঁজতে খুঁজতে নদীর পাড়ে চলে গেল ততক্ষণে তার স্বামী ও বাড়িতে এসে এই দৃশ্য দেখে সেও নদীর দিকে ছুড়তে লাগলো। ভদ্র মহিলার স্বামী যখন তার আত্মীয় বাড়িতে গিয়ে বুঝতে পারল আসলে তাকে ভুল তথ্য দেওয়া হয়েছে তখন সেও একই ভয় পেল যে হয়তো এই ভুল তথ্য দিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে ছেলেমেয়ে দুজনকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে তার জন্য সে আত্মীয় বাড়ি থেকে খুবই দ্রুত তার বাড়িতে ফিরে আসলো। ভদ্রমহিলা দৌড়ে দৌড়ে নদীর পাড়ে গিয়ে দেখল ছেলে-মেয়ে দুজনকে ততো সময়ে গলা কেটে মেরে ফেলা হয়েছে। নদীর মধ্যে বালুর চরে এনে যখন সাদমান আর সোহাকে বেঁধে রাখা হয়েছিল তখন তারা দুজন ডাকাত দলের সদস্যদের কাছে বারবার প্রাণ ভিক্ষা চাইছিল আর বলছিল আপনারা আমাদের টাকা পয়সা সহ গহনা যা কিছু আছে সব কিছু নিয়ে নিন শুধু আমাদেরকে ছেড়ে দিন আমরা এই গ্রাম থেকে অনেক দূরে চলে যাব। চিৎকার করে কান্নাকাটি করছিল আর বারবার প্রাণ ভিক্ষা চাইছিল কিন্তু ডাকাত দলের সদস্যের কারো মনে একটু দয়া হলো না একটুও ছেলে মেয়ে দুজন এর প্রতি মায়া হলো না।
ভদ্রমহিলা দূর থেকে সাদমান আর সোহার গলা কাটা দৃশ্য দেখেই চিৎকার শুরু করে দিল আর ভদ্রমহিলার স্বামী কিছু সময় পরে গলা কেটে হত্যা করার দৃশ্য দেখে সেখানেই হার্ট অ্যাটাক করে মারা যায়। ফুটফুটে দুজন ছেলে মেয়েকে এভাবে হত্যা করা দেখে ভদ্রমহিলার স্বামী চমকে যায় যার কারণে সে হার্ট অ্যাটাক করে। ডাকাত দলের সদস্যরা ছেলে-মেয়ে দুজনকেই বালুর নিচে চাপা দিয়ে দেয়। আর ভদ্রলোক মহিলাকে জ্ঞানহীন অবস্থায় বাড়ি পৌঁছে দেয়। ভদ্রমহিলা জ্ঞান ফেরার পর থেকেই ছেলেমেয়ে দুজনের কথা ভাবতে থাকে আর তার স্বামীর হার্ট অ্যাটাকে মৃত্যুহার ফলে সে যেন শোকে পড়ে যায়। এক পর্যায়ে ভদ্রমহিলা মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে ফাঁসি নিয়ে মারা যায়। বোনের মৃত্যুর পরে ডাকার দলের প্রধান অর্থাৎ ভদ্রমহিলার ভাই বুঝতে পারে সে আসলে অনেক বড় একটা অন্যায় কাজ করে ফেলেছে যার কারণে সেই পাপের ভার তার বোনকে পোহাতে হয়েছে। তবে নিষ্ঠুর ডাকাত দলের প্রধান এত কিছুর পরেও তার পাপ কাজ থেকে বিরত থাকে না। এই ঘটনার এক বছর পরে ঠিক একই বালুচরে টাকা ভাগাভাগি করা নিয়ে ডাকার দলের দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের সৃষ্টি হয় আর সেই সংঘর্ষে ডাকার দলের প্রধান সহ সবাই বিপক্ষ দলের হাতে মারা যায়। ডাকাত দলের প্রধানের মাথায় গুলি লাগে আর মুহূর্তের মধ্যেই সে মারা যায়।
তবে মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হলে এভাবে দুজন ফুটফুটে ছেলে মেয়েকে বিনা অপরাধে গলা কেটে হত্যা করতে পারে। তারা দুজন সমস্ত টাকা পয়সা সহ গহনা দিয়ে দিতে রাজি হওয়ার পরেও তাদেরকে গলা কেটে হত্যা করে। এত বড় পাপ করার জন্যই হয়তো ডাকাত দলের প্রধান এক বছরের মাথায় অন্য ডাকাতের হাতে মারা পড়ে যায়।
এই ছিল আমার আজকের আয়োজনে।
ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
ভালো থাকবেন সবাই , আল্লাহ হাফেজ👋।
সবাই ভালোবাসা নিবেন 💚🌹
ইতি,
@kazi-raihan
আমার পরিচয়
আমি কাজী রায়হান। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে লেখাপড়া করছি। আমি ছবি আঁকতে, ফটোগ্রাফি করতে, গল্প লিখতে ও মাঝে মাঝে গুন গুন করে গান গাইতে খুবই ভালোবাসি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমিট প্লাটফর্মে কাজ করতে।
VOTE @bangla.witness as witness
OR
250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
ধন্যবাদ।
https://twitter.com/KaziRai39057271/status/1654697775815335937?s=20
ছেলেমেয়ে দুটির এরকম মৃত্যুর সংবাদ শুনে সত্যি খুবই খারাপ লেগেছে আমার কাছে। ডাকাত দল ছেলে মেয়ে দুটির গলা কেটে মেরে ফেলেছিল এবং তাদের কাছ থেকে টাকা-পয়সা স্বর্ণ গহনা সবকিছু নিয়ে গিয়েছিল। এই দৃশ্যটি দেখে ভদ্রমহিলাটির হাসবেন্ড হার্ট এটাক করে মারা যান। তার পর ভদ্র মহিলাটি তার স্বামীর হার্ট এটাকে মৃত্যু এবং ছেলে মেয়ে দুটির মৃত্যু সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে মারা গিয়েছিলেন আসলে খুবই খারাপ লাগলো সম্পূর্ণটা পড়ে। ভালোই লিখেছেন সম্পূর্ণটা।
আসলে মানুষ লোভের জন্য এতো হিংস্র হয়ে ওঠে।
নিষ্ঠুর মানুষ গল্পটি পরে খুব খারাপ লাগলো। ঘরের তালা ভেঙে সব নিয়ে গেছে আবার বাচ্চাদের মেরে ফেলেছে সত্যি এধরনের দুর্ঘটনায় খবর শুনলে ভীষণ খারাপ লাগে। পুরো পরিবার শেষ হয়ে গেলো। সবার জন্য দোয়া রইল।
পড়ে মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া।
আসলে এরকম নিষ্ঠুর মানুষ কিভাবে যে এরকম হয় বুঝতে পারলাম না। দুইটা মানুষকে গলা কেটে হত্যা করেছিল সেই ভদ্রমহিলাটির ডাকাত ভাই। ওই দৃশ্যটা দেখে ভদ্রমহিলাটির হাজবেন্ড ও হার্ট এটাক করে মারা গিয়েছে। খুবই খারাপ লেগেছে এরকম একটা পোস্ট পড়ে। যাইহোক সম্পূর্ণটা খুবই সুন্দরভাবে লিখেছেন।
আসলে মানুষ কতটা নিষ্ঠুর হতে পারে সেটা এই গল্প থেকে কিছুটা আন্দাজ করা যায়।
এটা কিন্তু একদম সত্য কথা ভাই মানুষ আসলেই অনেক নিষ্ঠুর। মানুষের মধ্যে এখন মায়া দয়া কমে গেছে। তা না হলে ডাকাত গুলা এত ছোট ছোট দুটি ছোট শিশুকে কি করে খুন করে । আর এগুলো দেখে ভদ্রলোকটি হার্ট এ্যাটাক করেন। এদিকে স্বামীর হ্যার্ট এ্যাটাক আর ছোট ছোট দুটি বাচ্চা শিশুর করুন অবস্থা দেখে ভদ্র মহিলা নিজেই আত্নহত্যা করেন। অনেক কষ্ট লাগলো আপনার গল্পটি পড়ে।
মন্তব্য করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আপু মনি।