গল্প থেকে শিক্ষা | ১০% লাজুক খ্যাঁক এর জন্য
আশাকরি সকলেই সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে সুস্থ আছেন এবং ভাল আছেন। সেই সাথে আশা করি আপনারা যেখানেই থাকুন না কেন পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো সময় কাটাচ্ছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে বাস্তবতার আলোকে একটি গল্প শেয়ার করব এবং সেখান থেকে আমরা কি শিক্ষা নিতে পারি! সেই সম্পর্কে আলোচনা করবো আশা করি আমার লেখা টি আপনাদের ভালো লাগবে।
মিস্টার করিম একটি ছোট রুমে বসে আছে এবং ক্লান্তি বোধ করছে। আজ তার কাছে মনে হচ্ছে সে যেন রাজ্যের ক্লান্ত একাই বোধ করছে। আজ সে তার অতীত এবং বর্তমান অবস্থা নিয়ে মনের মধ্যে ঝড় তৈরি করে তুলেছে। আজ তার বয়স ৫৫ বছর। তার স্ত্রী মারা গেছে গত বছর। যদিও সে তেমন একটা বৃদ্ধ নয় তবুও আজ সে বৃদ্ধের চেয়েও অধম। আজ সে যেন ফেলে দেয়া ইক্ষুর আশের মত। যার ভিতরের অংশ খাওয়ার পর বাহিরের অংশটি আবর্জনার ঝুড়িতে ফেলে দেয়া হয়। ঠিক আজ করিম যেন সেটাই উপলব্ধি করছে তার জীবনে।
অথচ আজ থেকে ২০ বছর আগে এরকম ছিল না। সেও অনেকটা টগবগে যুবক ছিল, ছিল তার পরিবার। কতইনা শান্তি ছিল পরিবারে। পরিবারের সামান্য শান্তির জন্য সে কত কিছুইনা করেছে! এমনকি পরিবারের তথা স্ত্রী-সন্তানদের সুখের জন্য সে তার বৃদ্ধ বাবা মাকেও বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে ছিল। সন্তানদের সুখের জন্য এবং স্ত্রীর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সকল কিছুই করেছে সে। সে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছে ইক্ষুর মতো। আজ যেন ইক্ষুর ভেতরের সব মধুর রস ফুরিয়ে গেছে। এখন যা আছে কেবল অবশিষ্ট অংশটুকু। যার স্থান পায় ময়লার ঝুড়িতে কিংবা ডাস্টবিনে। আজ ঠিক সেরকমই একটি ময়লার ঝুড়ি তথা বৃদ্ধাশ্রমের বসে সে নিজের মৃত্যুর প্রহর গুনছে এবং নিজের ভুলগুলোর চিন্তা করছে। ছেলেদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য ছেলেদের উচ্চশিক্ষিত করেছে এবং সেইসাথে ছেলেমেয়েদের জন্য বিশাল বিশাল অ্যাপার্টমেন্ট কিনে দিয়েছে। আজ এই অ্যাপার্টমেন্ট গুলোতেই আজ সে যেন এক ফোঁটা ময়লার ছাপ।
আজ থেকে ২০ বছর আগে সে যেমন তার পিতা-মাতাকে বাড়তি বোঝা মনে করেছিল! আজ ঠিক তার সন্তানও এবং সন্তানের স্ত্রীরাও তাকে একই ভাবে বোঝা মনে করছে। অথচ এই সন্তানরাই একসময় তার অন্ধভক্ত ছিল। যাদের জন্য নিজের সবটুকু বিলিয়ে দিয়েছে আজ তারাই তাদের সঙ্গিনীকে সুখী করার জন্য তাকে ময়লার ঝুড়িতে ফেলে দিয়েছে। আজ করিম খুব ক্লান্ত এবং চলতে চলতে সে তার জীবনের ভুলগুলো যেন সামনে দেখতে পাচ্ছে। সে তার ভাগ্যকে নয় বরং তার কর্মকে দোষারোপ করছে এবং নিজের ভুলগুলো বুঝতে পেরেছে এবং নিজেকে দোষারোপ করে হায় হায় করছে। কারন সে জীবনে যে ভুল করেছে সেই ভুলের পুনরাবৃত্তিই তার জীবনে ঘটেছে।
এই পৃথিবীতে আমরা সুন্দর ভাবে বাঁচার তাগিদে অনেক কিছুই করি। আমরা নিজেদের সুখের জন্য কিংবা আমাদের স্ত্রী-সন্তানের সুখের জন্য কোনটি ন্যায় কোনটি অন্যায় আমরা সেটি ভুলে যাই। যার ফলে একটি নিদিষ্ট সময়ের ব্যবধানে ঠিক একই রকম প্রতিফলন আমাদের জীবনেও ফিরে আসে। আজ আমরা যা করছি আগামীতে তার প্রতিফলন হিসেবে ঠিক এরকমটাই পাচ্ছি। আর এটাই স্বাভাবিক। পিতা-মাতা সৃষ্টিকর্তার দেয়া এমন এক উপহার যারা কখনো বোঝা নয়। যাদের সুখের জন্য আমরা আমাদের পিতা মাতাকে বোঝা মনে করি! ঠিক নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে আমাদের সেই আপন জনেরাই আমাদেরকে বোঝা মনে করবে এবং আমাদের সাথে ঠিক একই রকম আচরণ করবে। তাই আমাদের সকলকে সকলের মতো ভালোবাসতে হবে। না হয় আজ আমরা আমাদের পিতা মাতা কিংবা অন্য কারো সাথে যে রকম আচরণ করছি ঠিক নির্দিষ্ট সময়ের ব্যবধানে আমরাও এরকম আচরণ ফিরে পাবো।
আমি মোঃ কাউছার হাসান। জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশী নাগরিক। তাই নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। কেননা এদেশের প্রকৃতির মাঝে আমার বেড়ে ওঠা এবং এদেশের বুকে আমার বসবাস। পেশায় একজন শিক্ষক। সব সময় নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পাই এবং সেইসাথে প্রকৃতির মাঝে ভ্রমণ করার মাধ্যমে নিজেকে খুঁজে পাই।
ভাই আপনার গল্পটা একেবারে বাস্তব চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন। আসলে বাস্তবে এমন অনেক অনেক ঘটনা ঘটছে আমরা আমাদের আশেপাশে তাকালেই দেখতে পাই কিন্তু যখন আমাদের এটা বুঝার কথা তখন ওই সময়টায় আমরা না বুঝে যে কাজগুলো করি ঠিক তার পুনরাবৃত্তি পরবর্তী সময়ে আমাদের সাথে ঘটে থাকে, আর সে সময় আমাদের করার কিছুই থাকে না আফসোস করা ছাড়া। আসলে এই জাতীয় গল্পগুলো ভিতরটাকে একেবারে নাড়া দিয়ে ওঠে। তাই আমাদেরকে অবশ্যই পিতা-মাতাকে বোঝা না ভেবে তাদেরকে নিজের সন্তানের মতো আগলে রেখে পুরো সময়টা তাদের পাশে থাকার অঙ্গীকার করতে হবে এতে করে ভবিষ্যতে আমাদের এরকম আফসোস এর মধ্যে থাকতে হবে না। অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই ভালো থাকবেন আর আরও চমৎকার চমৎকার গল্প নিয়ে হাজির হবেন এই শুভ কামনায় রইলাম।
আমরা প্রত্যেকেই আমাদের কৃতকর্মের জন্য দায়ী এবং আমরা তখনই বুঝতে পারি যখন এটা আমাদের জীবনে প্রতিফলন ঘটে। কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে যায়। আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ আপনার সুন্দর মন্তব্য প্রদানের জন্য এবং গল্পটি পড়ার জন্য।
যেমন কর্ম তেমন ফল এই কথাটি সবারই মনে রাখা উচিত। যে সন্তান তার পিতা-মাতার হতে পারেনা। সে দুনিয়ার আর কারো হতে পারে না। এই ধরনের মানুষের সাথে এটাই হওয়া উচিত। গল্পটা সুন্দর ছিল। তবে সবাই এই গল্প থেকে শিক্ষা নেবে বলে মনে হয় না। কারন অনেকেই মনের দরজা জানালা সব বন্ধ করে রেখেছে। ভালো লিখেছেন । ধন্যবাদ আপনাকে ।
এটা চরম সত্য একটি কথা বলেছেন। সত্যি বলতে ভাই যখন দেখি অনেক শিক্ষিত যুবক তাদের পিতা-মাতার সাথে খারাপ আচরণ করে এবং তাদের থেকে আলাদা হয়ে যায় তখন খুব খারাপ লাগে। আমি আমাদের সমাজে এমন অনেক দেখেছি যারা পিতা-মাতার সাথে যেমন করেছে তারা বর্তমানে তাদের সন্তানদের থেকে সেই রকম আচরণ ফিরে পাচ্ছে। ধন্যবাদ আপনাকে।