গল্প থেকে শিক্ষা | ১০% লাজুক খ্যাঁক এর জন্য
আশাকরি সকলেই সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে সুস্থ আছেন এবং ভাল আছেন। সেই সাথে আশা করি আপনারা যেখানেই থাকুন না কেন পরিবার পরিজন নিয়ে ভালো সময় কাটাচ্ছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে একটি বাস্তবধর্মী গল্প শেয়ার করব। আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।
এক গ্রামে একটি পানির উৎস তথা কুমড়া ছিল যেখান থেকে সম্পূর্ণ গ্রামের মানুষ পানি পান করার জন্য নির্ভরশীল ছিল। এখান থেকে পানি সংগ্রহ করে পুরো গ্রামের মানুষ পানির চাহিদা মিটাতো। একদিন হঠাৎ একটি বিপদ ঘটল। গ্রামের একজন মহিলা যখন সেই পানির উৎস থেকে পানি আনতে গেল তখন সে খালি হাতে গ্রামে প্রবেশ করল। তার কারন হচ্ছে সে যখন কুয়ার ভিতর বালতি যুক্ত রশি ফেলল তখন শুধুমাত্র রশিটি তার হাতে চলে এলো। কিন্তু বালতিটি নিচে পড়ে গেল। গ্রামের মানুষ এসে একইভাবে পানি তোলার চেষ্টা করল। কিন্তু সবাই ব্যর্থ হলো এবং তাদের বালতি কিংবা পানি তোলার সব উপকরণ হারাতে থাকল। তখন তারা ধরে নিলো এই কুয়াতে কোন জ্বীন কিংবা ভূত আছে। তাছাড়া কুয়ার ভিতর কোন কিছু ফেলা হলে সেই জিনিসটি আবার ঢিল মেরে ওপরে মারা হতো। কুয়াটি অনেক গভীর হওয়ার কারণে কি আছে সেটা বুঝা যাচ্ছিল না। তাই অনেকেই ধরে নিয়েছে কুয়ার ভিতর ভূত আছে।
তাই গ্রামের মানুষ একসময় ঘোষণা দিল যে এই কুয়ার ভিতরে নেমে যে এর রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারবে। তাকে অনেক অর্থ মুদ্রা পুরস্কার দেয়া হবে। কিন্তু কেউ রাজি হলো না। তার কারণ হচ্ছে মৃত্যুর ভয় সকলের আছে এবং সকলেই জ্বীন কিংবা ভূতকে ভয় পায়। এভাবে কয়েক দিন যেতে থাকলো এবং মানুষজন পানিপানে অসুবিধার সম্মুখীন হতে থাকলো। তাই গ্রামবাসীদের চিন্তার ভাঁজ পড়ে গেল।
কিছুদিন পর একজন ছেলে এসে গ্রামবাসীকে বলল সে কুয়ার ভিতরে নামতে চায় এবং রহস্য উদ্ঘাটন করতে চায়। গ্রামবাসী আনন্দে ছেলেটিকে বাহবা দিতে থাকলো। তবে সেই ছেলেটি তার একটি শর্তের কথা জানালেন। সে বলল আমি যখন কুয়ার মধ্যে নামবো তখন আমার শরীরে রশি বাঁধা থাকবে এবং সেই রশিতে আপনারা ধরে থাকবেন এবং শেষ প্রান্তে আমার বাবা রশি ধরে থাকবে। গ্রাম বাসী অবাক হলো এবং বলল আমরা পুরো গ্রামের মানুষ রশি ধরে থাকবো! তারপরও তোমার বাবার প্রয়োজন হবে কেন? ছেলেটি বলল আমার শর্তে রাজি আছেন কিনা সেটা বলেন? গ্রাম বাসী অবাক হল এবং ছেলেটির শর্তে রাজী হল।
ছেলেটি কুয়ার ভিতর প্রবেশ করল। সে আগেই বলে গিয়েছিল যদি আমি রশি জোরে টান দিয়ে ধরি তাহলে আপনারা উপরের দিকে টেনে তুলবেন। ছেলেটি রশি টান দিয়ে ধরল। গ্রাম বাসি রশি টেনে ছেলেটিকে উপরের দিকে তুলতে শুরু করলেন। রশির শেষ প্রান্তে ছেলেটির বাবা রশি ধরে আছে। গ্রামবাসী কিছু সময় রশি টানার পর খেয়াল করলো একটি ভিন্ন ধরনের প্রাণী কুয়ার ভিতর থেকে উঠে আসছে। তারা খেয়াল করল একটি বানর আকৃতির মত প্রাণী উপরের দিকে উঠে আসছে। তারা সকলে মনে করল জ্বীন ছেলেটিকে বানর বানিয়ে ফেলেছে এবং সেই ভয়ে সকলে রশি ছেড়ে দৌড়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু ছেলেটির বাবা রশি ধরে টানতে থাকলো। ভয় থাকা সত্ত্বেও ছেলেটির বাবা নিজের ছেলেকে বাঁচানোর জন্য সকল ভয় দূরে রেখে রশি টেনে ছেলেটিকে উপরে তুললেন। এবং দেখতে পেলেন ছেলের কাঁধে একটি বানর বসে আছে। পরবর্তীতে গ্রামবাসী এসে বুঝতে পারল ছেলেটি কেন তার বাবাকে রাশির শেষ প্রান্তে ধরতে বলেছিল।
পৃথিবীতে বাবা এমন এক সম্পদ যা একবার হারিয়ে গেলে কখনই অর্জন করা সম্ভব নয়। বাবা এমন একজন বটবৃক্ষ যিনি রোদ বৃষ্টি ঝড়ে আমাদের ছায়া প্রদান করে এবং আমাদেরকে স্নেহ ভালোবাসা এবং আদর দিয়ে পরম যত্নে আগলে রাখে। যিনি নিজের জীবন বাজি রেখে তাদের সন্তানের জন্য নিজের জীবনকে উৎসর্গ করে দেয়। বাবা এমন একজন মানুষ যিনি সকল বিপদে পাশে থাকেন। সমস্ত পৃথিবী একদিকে চলে গেলেও বাবা সবসময় তার সন্তানের স্বার্থে নিজেকে উজাড় করে বিলিয়ে দেন। অথচ আমরা আমাদের স্বার্থে সেই বাবাকে একসময় বাবার বিপদের সময় পাশে থাকে না অর্থাৎ আমরা তাকে দূরে ঠেলে দেই। বাবা যেমন আমাদের বিপদে নিজের বিপদ আসন্ন জেনেও আমাদের একা ফেলে চলে যান না। ঠিক তেমনি তাদের সকল বিপদে আমাদের পাশে থাকা উচিত এবং বাবাদেরকেও সন্তানের মত করে ভালোবাসা উচিত।
আমি মোঃ কাউছার হাসান। জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশী নাগরিক। তাই নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। কেননা এদেশের প্রকৃতির মাঝে আমার বেড়ে ওঠা এবং এদেশের বুকে আমার বসবাস। পেশায় একজন শিক্ষক। সব সময় নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পাই এবং সেইসাথে প্রকৃতির মাঝে ভ্রমণ করার মাধ্যমে নিজেকে খুঁজে পাই।
ভাই খুবই চমৎকার একটি গল্প ছিল, সেই সাথে গল্পের মাঝে অনেক চমৎকার একটা শিক্ষনীয় বিষয় ছিল। আসলে আমাদের সকলেরই উচিত আমাদের বাবাদের পাশে থাকা ছোটবেলায় বাবার হাত ধরে এই পর্যন্ত এসেছি শুধু মাত্র বাবার অবদানেই। গল্পটি এর আগে আমি কোথা থেকে জানি শুনেছি বা পড়েছে মনে নেই তবে বেশ ভালো লেগেছে। অসংখ্য ধন্যবাদ একটি গল্পের মাঝে চমৎকার একটি শিক্ষনীয় বিষয় তুলে ধরার জন্য।