কৃপণতা নাকি মিতব্যয়িতা? কোনটি আমাদের অনুসরণ করা উচিত? ১০% লাজুক খ্যাঁক এবং ৫% এবিবি-স্কুল
আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটিরসকল সদস্যগণ আসসালামু আলাইকুম
আশা করি সকলে সৃষ্টিকর্তার দয়ায় ভাল আছেন এবং সুস্থ আছেন। সেই সাথে আপনারা আপনাদের পরিবারের সকল সদস্যদের নিয়ে ভালো সময় কাটাচ্ছেন। আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। আজ আমি আপনাদের সাথে কৃপণতা এবং মিতব্যায়িতা সম্পর্কে আলোচনা করব এবং এদের কোনটি আমাদের অনুসরণ করা উচিত? সেই সম্পর্কেও আমার মতামত নিজের মতো করে তুলে ধরার চেষ্টা করছি। আশা করি আমার আলোচনাটি আপনাদের ভালো লাগবে।
আমরা সকলেই জানি মানুষ সৃষ্টির আদি লগ্ন থেকেই মানুষে মানুষে মানসিকতার ভিন্নতা এবং আচার-আচরণে পার্থক্য ছিল এবং পার্থক্য ছিল তাদের চালচলনে। এখনও আমাদের সমাজে সেই চালচলন কিংবা সবকিছুতে আমাদের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। আমরা সাধারণত প্রয়োজনের তাগিদে কিংবা প্রয়োজনের বাহিরেও বিভিন্ন জিনিস ব্যবহার করে থাকি। সাধারণত আমাদের সমাজে কয়েক শ্রেণীর লোক বসবাস করে। তবে আমরা খরচ কিংবা ব্যয় করার দিক দিয়ে হিসেব করলে তিন ধরনের লোক সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। একশ্রেণীর লোক অনেক বেশি কৃপণ, দ্বিতীয় শ্রেণীর লোক অনেকটা মিতব্যয়ী এবং তৃতীয় শ্রেণীর লোক অপব্যয়ী(অপচয় কারী)।
কৃপণতা সম্পর্কে আমরা সকলেই ভালো জানি। বিশেষ করে হারকিপটে নাটক দেখার পর কৃপণতা সংজ্ঞা নতুন করে দেয়ার প্রয়োজন হয় না। কৃপণতা মানে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম ব্যয় করা। সত্যি বলতে এই ধরনের লোক সমাজে যেমন হাসির পাত্র ঠিক তেমনি সৃষ্টিকর্তাও কৃপণ লোকদের পছন্দ করেন না। কৃপণতা সম্পর্কে আমার দেখা একটি বাস্তব ঘটনা তুলে ধরছি।
আমি যখন খুব ছোট তখন প্রায় সময়ই আমার একজন চাচাতো ভাই (বন্ধুর) নানার বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। তার নানা অনেক কৃপন ছিল। প্রায় সময়ই শুনতাম এবং মাঝে মধ্যে দেখতাম রান্না বসানোর সময় তিনি রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে থাকতেন কিংবা তিনি তেল, চাল-ডাল কিংবা তরকারি ঠিক করে দিতেন কতটুকু দিয়ে আজ রান্না করতে হবে। ফলে ওই নানার ছেলের বউ এবং তার নিজের বউ এগুলো নিয়ে সব সময় তার সাথে ঝগড়া করতেন। তারপরেও তিনি নাছোড়বান্দা। তাই বাধ্য হয়ে তার ছেলের বউ এবং নিজের বউ আগে থেকে চুরি করে সবকিছু রান্না ঘরে নিয়ে রাখতেন। তিনি না থাকলে সেগুলো দিয়ে পরিমাণ বাড়িয়ে রান্না করতেন। এমনকি তিনি মেহমান আসলে ততোটা পছন্দ করতেন না। ফলে অনেকেই তাকে দেখতে পারতেন না কিংবা তাকে নিয়ে হাসাহাসি করতেন।
মিতব্যয়ী শব্দটি এক কথায় প্রকাশ এর সংক্ষিপ্ত রূপ। যার অর্থ অনেকটা যে পরিমাণ মতো ব্যয় করে। বুঝাই যাচ্ছে মিতব্যয়ী মানে কৃপণতা কিংবা অপব্যয়ী না। একজন লোক যখন চলার পথে কৃপণতা অবলম্বন করে না আবার অপব্যয় করে না অর্থাৎ মধ্যপন্থা অবলম্বন করে সেই লোকই হচ্ছে মিতব্যয়ী। আর আমাদের মিতব্যয়ী জীবন যাপন করা উচিত। এতে আমাদের জীবনে আমাদের প্রয়োজনীয় চাহিদা যেমন মিটিয়ে দিবে। ঠিক তেমনি এই ধরনের জীবন যাপন আমাদের অপব্যয় থেকে বাঁচিয়ে দিবে। এছাড়াও আমার জানা মতে সকল ধর্মই মিতব্যয়ী মানুষদের সাপোর্ট করে।**
কৃপণতা মানে নিজের চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কম ব্যয় করা। নিজের তথা পরিবারের মৌলিক চাহিদা পূরণে ঢিলেমি করা। কৃপণতা মানে নিজেকে নিচু মনের পরিচয় দেওয়া। আবার ঠিক অপরপক্ষে অপব্যয় মানে নিজেকে উঁচু মনে করা এমন নয়। কারণ অপচয়কারী শয়তানের ভাই। তার প্রধান কারণ হচ্ছে অপচয়কারী একসময় অপচয় এর কারণে প্রয়োজনের সময় নিজের চাহিদা পূরণে কিংবা পারিবারিক চাহিদা পূরণে ব্যর্থ হয়। তাছাড়া কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারবে না আজ সে যে হারে অপচয় করছে আগামীতেও সে এভাবে অপচয় করতে পারবে। বাংলায় একটি প্রবাদ আছে সকাল বেলার ধনীরে তুই ফকির বিকেল বেলা। তাই আমাদের কৃপণতা এবং অপব্যয় এই দুটোই ত্যাগ করতে হবে এবং মিতব্যয়ী জীবন-যাপন করতে হবে। তাহলেই আমাদের জীবন হয়ে উঠবে সুখময়।
আমি মোঃ কাউছার হাসান। জন্মসূত্রে একজন বাংলাদেশী নাগরিক। তাই নিজেকে বাংলাদেশি হিসেবে পরিচয় দিতে স্বচ্ছন্দ বোধ করি। কেননা এদেশের প্রকৃতির মাঝে আমার বেড়ে ওঠা এবং এদেশের বুকে আমার বসবাস। পেশায় একজন শিক্ষক এবং ব্যক্তিগতভাবে এক সন্তানের বাবা। সব সময় নতুন কিছু শেখার মাধ্যমে আনন্দ খুঁজে পাই এবং সেইসাথে প্রকৃতির মাঝে ভ্রমণ করার মাধ্যমে নিজেকে খুঁজে পাই।
সুন্দর একটি বিষয় আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন আপনি। যা পড়ে খুবই ভালো লাগলো তবে। আপনি ব্লকটা কিছু ফটোগ্রাফির মাধ্যমে সাজো আরো সুন্দর হতো।
ধন্যবাদ সুন্দর মতামতের জন্য।