আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা- ২২ | আমার জীবনে প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি
আমি ঢাকা, বাংলাদেশ থেকে @kawsar ।
আশা করি সবাই অনেক অনেক ভাল আছেন, আর আমিও ভাল আছি আলহামদুলিল্লাহ। আজও আপনাদের মাঝে আরও একটি পোস্ট শেয়ার করতে চলে এসেছি। আজ আমি আপনাদের মাঝে একটি ভিন্নধর্মী পোস্ট শেয়ার করব। আমাদের কমিউনিটি তে যে কনটেস্ট চলতেছে অংশগ্রহণ করতে যাচ্ছি। এই কনটেস্টে অংশগ্রহণ করতে পেরে আমি খুবই খুশি। কেননা আমার জীবনের প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতি ছিল অন্যরকম অনুভূতি টা আপনাদের মাঝে শেয়ার করে আমার কাছে খুবই ভালো লাগবে।
যদিও আজকালকার ছেলেমেয়েরা যখন ফাইভ- সিক্স এ পড়ে তখনই তাদের হাতে মোবাইল থাকে। আর যখন তারা খুবই ছোট থাকে তখনই তারা আসলে মোবাইল সম্পর্কে অনেক কিছুই জানে। কিন্তু আমাদের সময় এরকম ছিল না। যখন আমি এসএসসি পরীক্ষা দেই তখন মোবাইল সম্পর্কে আমার কোন ধারণা ছিলনা। আমাদের ঘরে খুবই কম দামী একটা মোবাইল ছিল যেটা আমার মা ব্যবহার করত। সেটাই সবাই ফোন দিত আর হয়তো কখনো রিসিভ করে মায়ের কাছে দিতাম ,এইটুকু পারতাম। আর অন্য কিছু কখনোই পারতাম না। কিন্তু সব সময় মনের ভিতর একটা আকাঙ্ক্ষা থাকতো যে আমার কবে একটা মোবাইল থাকবে।
তখন কিন্তু এরকম এন্ড্রয়েড ফোন ছিলনা। সবাই বাটন ফোন ব্যবহার করত ,যারা একটু বেশি দামি মোবাইল ব্যবহার করত তাদের মোবাইলে হয়তো ক্যামেরা থাকতো আর আর মেমোরি ঢুকিয়ে তারা গান ,গজল এগুলো শুনতে পারতো। এরপরে আমি ২০০৯ সালে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে এরপরে আমি ঢাকায় আসি পড়াশোনার জন্য। আর দারুন্নাজাত মাদ্রাসায় পড়াশোনা করি। তো সেখানে আমি ছাত্রাবাসে থাকতাম। আমাদের সেখানে লোক থাকতো ১১ জন। আর ভিতরে ৯ জনের কাছে আসলে মোবাইল ছিল। আমার কাছে ছিল না কিন্তু আমি যদি সেই মুহূর্তে বাড়িতে মোবাইল চাই তাহলে তো আমাকে দিবি না ,উল্টো মাইর দিবে।
মোবাইলের আকাঙ্ক্ষা খুবই ছিল। সেখানে আমার উপর একটু বেশি নজরদারি ছিল। কেননা আমার গ্রামের একজন সেই হলে চাকরি করতো। তাই আমার আসলে মোবাইল চালানো হতো না ,যারা আসলে মোবাইল চালাতে তারা সবাই চুরি করে চালাতো। মাদ্রাসার হুজুর এই মোবাইলটা নিয়ে যাবে এই ভয়ে সবাই চুরি করে রাত্রিবেলা মোবাইল চালাতে। কিন্তু তখন থেকে আমার যেহেতু মোবাইল পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা তাই আমি আমার যখন টেস্ট পরীক্ষা শেষ হয়। তখন আমি একটি মিথ্যা কথা বলে বাড়ি থেকে টাকা আনে মোবাইল কিনব।
তো আমি টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট একটু খারাপ করি, সেজন্য আমি বাড়িতে ফোন দিয়ে বলি যে আমার টেস্ট পরীক্ষার রেজাল্ট খারাপ হয়েছে সেই জন্য আমার আসলে প্রাইভেট পড়তে হবে। যদিও সেখানে প্রাইভেট পড়তে হয় না। এজন্য টাকা লাগবে টাকা দিতে হবে। আমার মা-বাবা ও সেটা বিশ্বাস করেছিল। আর আমাদের গ্রামের আরও একজন সেখানে চাকরি করতো তার কাছ থেকেই আমাকে ২০০০ টাকা নিতে বলল। তো আমি তার কাছ থেকে টাকাটা নিলাম। আর সেই টাকা দিয়ে মোবাইল কিনে ছিলাম। আমি সে টাকা আর এক বন্ধুর কাছ থেকে ৩০০ টাকা ধার করে একটা ক্যামেরা মোবাইল কিনেছিলাম।
যখন আসলে আমি ক্যামেরা মোবাইলটা আমার হাতে পেয়ে ছিলাম। তখন আমি মনে করেছিলাম আমি হয়তো কোন সোনার হরিণ হাতে পেয়ে ঘুরতেছি। আমার কাছে আসলে খুবই ভালো লাগছিল। আর এরকম একটি মুহূর্ত প্রকাশ করার মতো নয়। কবে থেকে সেই মোবাইলের অপেক্ষায় রয়েছে সেই মোবাইল হাতে পেয়েছি সেটা আসলে খুবই একটি ভালো অনুভূতি ছিল। কিন্তু এই মোবাইল কিন্তু সবাইকে দেখিয়ে ব্যবহার করা যাবে না। তাহলে নিয়ে যাবে আর আমার সেখানে পরিচিত লোক ছিল খুবই কড়া গার্ট তাই যদি জানে যে মোবাইল আমি চালাই তাহলে কিন্তু সে মোবাইলটা নিয়ে যাবে।
এটা আমি খুব ভালোভাবেই জানতাম সেজন্য আসলে এটা চুরি করে চালাতাম। সেদিন অনেক রাত পর্যন্ত মোবাইল টিপেছি ও বন্ধুদের কাছে থেকে অনেক কচু শিখেছি। সারাদিন তো মোবাইলে দেখার সময় পেতাম না এত শখ এর একটি মোবাইল। সেটা দেখার সময় প্রতি রাতে যখন ঘুমোতে যেতাম তখন দেখতাম। ভাল লাগত হয়তো সব কিছু বুঝতাম না যারা মোবাইল চালাতে তাদের কাছে জিজ্ঞেস করে নিতাম। হঠাৎ একদিন আসলে আমি ধরা খেয়ে যাই। কিভাবে যেন তারা জানতে পারে আমার মোবাইল আছে। এজন্য আমার মোবাইলটা নিয়ে নেয় আমার খুবই কান্না পেয়েছিল। যে আমার মোবাইলটা নিয়েছিল বেশিদিন চালাতে পারেনি হয়তো ১৫ থেকে ১৬ দিন।
এরপরে আমি আর সেই দুঃখ করিনি। কারন আমি যতই মোবাইল চাই আমাকে দিবে না আমি আমার কষ্ট ভরা মন নিয়ে দিন চালাতে লাগলাম। এরপর যেকোন আমার পরীক্ষা শেষ হলো তখন মোবাইল তা দেয়। আবারো হারিয়ে যাওয়া অনুভূতি ফিরে পেলাম। এরপর তো অনেক মোবাইল বেবহার করেছি। কিন্তু সেই অনুভূতি আর ছিল না।
আজ এই পর্যন্তই আমাদের সকলের সুস্থতা কামনা করে আজকের মত এখানেই শেষ করছে। সবাই সুস্থ থাকবেন ভালো থাকবেন। আগামীকাল আরো কোন পোস্টটি আপনাদের সামনে হাজির হবো।
আমি খেয়াল করেছি ছেলেরা প্রথমবার চুরি করেই মেবাইল চালায় (আমার দেখা)। প্রথমবারের অনুভূতি সকলের কাছেই ভালো লাগে যেমন আপনার। দ্বিতীয়বারে তেমন অনুভূতি ছিলে না। যাইহোক ভালো লাগলো আপনার এই অনুভুতি পড়ে ভালো লাগলো।
আমারও মনে হয় তাই আপু। ধন্যবাদ আপু
প্রথমে আপনাকে ধন্যবাদ জানাই আপনি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন। আসলে আপনার গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো। আর মাদ্রাসার হুজুর রা বেশি মোবাইল ব্যবহার করতে দেয় না। এটা অনেক আগে থেকে সবজায়গাতেই। আমার ভাইয়ের মোবাইলে মাদ্রাসার হুজুর নিয়ে নিয়েছিল। কারণ তারা মোবাইল ব্যবহার করতে দেয় না। আপনার গল্পটি পড়ে খুবই ভালো লাগলো তবে আপনার গল্পটি পড়ে একটু কষ্ট লেগেছে।
জি ভাই মাদরাসা গুলো একটু এ বিষয়ে বেশি সর্তক থাকে। ধন্যবাদ সুন্দর মন্তব্য করার জন্য
মাশাআল্লাহ ভাইয়া চমৎকার অনূভুতি শেয়ার করেছেন। আমার ও আপনার মতো প্রথম মোবাইল চালানো হয় এসএসসি পরীক্ষার পর থেকে।সব বন্ধুদের কাছে মোবাইল ছিল কিন্তু তাড়া লুকিয়ে রাখতো সবসময়। প্রথম মোবাইল কারো হাতে দেখলে দৌড় দিয়ে চলে যেতাম মোবাইল দেখতে। বেশ ভালো ছিল সেই দিন গুলোর কথা । ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে অনুভূতি গুলো পড়ে বেশ ভালো লাগলো। শুভ কামনা রইলো আপনার জন্য।
আসলেই ভাই সেই অনুভূতি গুলো অন্যরকম ছিল।
সত্যি বলতে প্রথমবার হাতে ফোন আসলে অনেক কিছু অনুভূতি হয়।এমন ইচ্ছা থাকে আমি ফোনে ভুত এফএম শুনবো বা ফোনে নাটক দেখব। বাপনে বান্ধবী বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিব চ্যাট করব। অনেক আবেগময় কিছু থেকে থাকে ফোন কেনার আগে কিন্তু ফোন পেলে অনেকেই আবেগগুলো ফুটিয়ে তোলে ।ধন্যবাদ এত সুন্দর একটি পোস্ট শেয়ার করার জন্য।
জি ভাই প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার আগে অনেক পরিকল্পনা থাকে।
ভাই আপনার প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার অনুভূতিগুলো খুবই দারুণ ছিল। আসলে ছোটবেলায় আমরা কত রকম মিথ্যা কথা বলেছিলাম কিন্তু শুধুমাত্র মোবাইল নয় অনেক কিছু কেনার জন্য। যাইহোক আপনি খুবই চমৎকারভাবে আপনার প্রথম মোবাইল ফোন হাতে পাওয়ার অনুভূতিটা শেয়ার করেছেন যদিও কিছুটা কষ্টেরও ছিল।
জি এটা এখন মনে পরলে খারাপ লাগে।
আপনার প্রথম মোবাইল ফোন কিনার গল্পটা দারুন লেগেছে। এই পর্যন্ত যতগুলো গল্প পড়েছি প্রায় সবাই প্রথম মোবাইল ফোন চুরি করেই কিনেছে। এই ব্যাপারটা আমার কাছে বেশ ইন্টারেস্টিং লাগে। প্রথম মোবাইল হাতে পাওয়ার পর আসলেই ওইটা কে সোনার হরিণের মতই মনে হয়। সেটি যেকোনো ধরনের মোবাইলই হোক না কেন। অনুভূতিটা আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আপু চুরি করে না কিনলে তো, মোবাইলের পরিবর্তে পিঠে মাইর পরবে
আপনি খুব সুন্দর ভাবে মোবাইল পাওয়ার অনুমতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন। আপনার পুরো পোস্টে পড়ে খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ শেয়ার করার জন্য।
আপনাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ।