মানুষের মিথ্যে মনুষ্যত্বের অহংকার। জেনারেল রাইটিং।

in আমার বাংলা ব্লগ4 days ago (edited)

মানুষের মিথ্যে মনুষ্যত্বের অহংকার

☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️☘️


আজ নিজেকেই ধিক্কার দেওয়ার দিন


pexels-photo-1358534.jpeg
সোর্স

🙏🙏সকলকে স্বাগত জানাই🙏🙏

আজ একটি বিশেষ বিষয় নিয়ে আপনাদের সামনে আলোচনা করব। বিষয়টি মানুষের মনস্তাত্ত্বিক ভাবধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে এবং পরিচালনা করে। মানুষ এক উন্নত প্রজাতির জীব যার মধ্যে মান আর হুঁশ বিদ্যমান। তাই সে মানুষ। সভ্যতার আদিপর্ব থেকে ধীরে ধীরে এক বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে এই প্রজাতি আজ শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছে নিজ গুণে৷ যদিও সে তার দাবী। কিন্তু তার শ্রেষ্ঠত্বকে পদদলিত করে তারই উপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ায় সে আজ অগ্রগণ্য। আমরা কথায় কথায় একটি কথা বলে থাকি। তা হল -

এ তো মানুষের নয়, যেন পাশবিক আচরণ।

নিজের জ্ঞাত ও অজ্ঞাতসারে পশুর সঙ্গে এই তুলনা আমরা কি সচেতন ভাবে করি? আসলে এখানেও এক আত্মঅহংকার। অর্থাৎ মানবজাতির শ্রেষ্ঠত্ব এবং সকলকে তার নিচে পাঠানোর এক তীব্র খিদে। এই মানসিকতা মিশে থাকলে কখনোই নিজের মধ্যে উন্নয়ন সম্ভব নয়। মানুষও কি পারছে ধীরে ধীরে আধুনিক থেকে অতি আধুনিক মানুষে উপনীত হতে? কই আমরা তো দেখছি না। যদি মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জীব হত তাহলে আজ আমাদের মোমবাতি নিয়ে মিছিলে হাঁটতে হতো না। কারণ আমরা কোন পশুর বিরুদ্ধে মিছিল করি না। অথচ পশুকে অবমাননাকর ভাবে মানবজাতির তলায় প্রতিষ্ঠিত করতে ভালোবাসি। হায় রে নিয়তি। হায়রে আত্মঅহংকার।

আচ্ছা বলুন তো, কখনো দেখেছেন অনেকগুলি কুকুর মিলে একটি কুকুরকে মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে খুন করতে? হলেও তা মানসিক ভারসাম্যহীন কুকুরের দ্বারা সম্পাদিত হতে পারে। কিন্তু এমন দুর্বৃত্তের মত কাজ পশু সমাজেও হয় কিনা সন্দেহ। মানুষ নিজের দাবী থেকে সরে কবে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে তা জানা নেই, কিন্তু পশুর সাথে তুলনার মধ্যে দিয়ে তার যে অসম্ভব এক তৃপ্তি, তা কখনোই মানবিক আচরণ বলে আমার মনে হয়নি। মানুষ বিশ্বাসঘাতকতা করে, পশু করে না। মানুষ পিঠে ছুরি মারে, পশু মারে না। মানুষ অন্তর্ঘাত করে, পশু তা পারেনা। সুতরাং সবকটি দিক বিচার করলে হয়তো মানবজাতির মিথ্যে আস্ফালন কিছুটা পদদলিত হবেই। স্বজাতির সংরক্ষণেও আমরা বিন্দুমাত্র বিচলিত নই। তার চেয়ে বরং হিন্দু মুসলিম, ব্রাহ্মণ দলিত অথবা রাজনৈতিক দলাদলিতে বেশি আগ্রহী। কে কার ঘর ভাঙলো, আর কে তাতে কতটা ইন্ধন দিল, তা আমাদের কাছে বেশি চর্চার বিষয়।

কই কোনদিন কি ভাবতে পেরেছেন আমার সন্তানের মত বাকি সব সন্তানও ভালো থাকুক? নাকি তার আগে নিজের সন্তানকে শিখিয়েছেন অন্যকে সাহায্য না করতে? নিশ্চয়ই ভাবুন। উত্তর আয়নার সামনে দাঁড়ালে ঠিকই পেয়ে যাবেন। নিজের বাহ্যিক রূপের আগে অন্তরের রূপকে প্রকাশিত করুন সমাজের সামনে। মোমবাতি মিছিলে হেঁটে প্রতিবাদ জানিয়ে তারপর অন্যের সমালোচনা করা কোন বাহাদুরির কাজ নয়। যারা একসঙ্গে পা মেলাচ্ছেন, তাদেরকে একটি ইউনিট ভাবতে শিখুন। আসলে সহনশীলতা আমরা বহুদিন ভুলে গেছি। নিজের গায়ে আঁচটি পড়লে, কিভাবে তার দ্বিগুণ প্রতিঘাত হিসাবে ফিরিয়ে দিতে হয় তা নিয়ে ভাবতেই আমরা ব্যস্ত। অথচ আমরা বলতে ছাড়ি না,

কি পাশবিক অত্যাচারটাই না করল।

শুনুন মহাশয়, পশুরা এমন অত্যাচার করে না। হিংস্র পশুর পাশ দিয়েও আপনি হেঁটে গেলে সে আপনাকে আক্রমণ করবে না। যদিও ভুলে যাবেন না কোনো কোনো পশুর হিংস্রতা এবং বন্যপ্রাণীকে মাংস হিসেবে ভক্ষণ করা আমাদের জীবজগতের জীব বৈচিত্রের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। কিন্তু আমরা নিজের অজান্তেই প্রতিদিন সেই জীব বৈচিত্র্যের বাইরে বেরিয়ে অন্য মানুষের মাংস ভক্ষণ করি। কি অবাক হলেন? মাংস ভক্ষণ অর্থে আপনি কি শুধু মানুষের দেহ কেটে খাওয়াকেই বোঝেন? আজ্ঞে না। মানুষ হয়ে প্রতিনিয়ত অন্য মানুষের অসুবিধা সৃষ্টি করাও এক রকমের ভক্ষণ। না হলে আমরা বলি কেন, রক্ষকই ভক্ষক? আসলে আমরা এই পরোক্ষ ভক্ষণে অনেকদিনই অভ্যস্ত হয়ে গেছি। আর প্রতিনিয়ত স্বজাতির ক্ষতিসাধনে নিজেদের ব্যস্ত করে তুলেছি পশুদের সাথে তুলনার দোহাই দিয়ে।

সমস্ত অন্ধকারের জন্য আসলে আমরাই দায়ী। একটুখানি আলোর জন্য আমরা চিৎকার করি প্রতিনিয়ত। আমরা দাবি করি আমরা সকলে আলোর পথযাত্রী। কিন্তু কতটা আলোর পথ সমাজকে দেখাতে পারি আমরা? পরিবর্তে আরও ঠেলে দিচ্ছি তীব্র থেকে তীব্রতর অন্ধকারের দিকে। নানাভাবে নিজের সমাজকেই গুঁড়িয়ে দিচ্ছি লোভ, লালসার তীব্র কষাঘাতে। কিন্তু সেই ধ্বংসের দিনগুলো দেখবার জন্য আমরা প্রস্তুত তো? সবাই একবার ভেবে নিন। ঈশ্বর মানুন আর নাই মানুন, কর্ম ও তার ফলের সম্পর্কটিকে বিজ্ঞানের দিক থেকে বিবেচনা করুন। আপনার কৃতকর্মের ফলাফল আপনাকেই সহ্য করতে হবে। যেমন সন্তানকে শিক্ষা না দিলে সে প্রথম প্রত্যাঘাত পিতা মাতাকেই ফিরিয়ে দেয়, ঠিক তেমনভাবে সমাজও আপনাকে আপনার মত করেই জবাব দিতে প্রস্তুত। তাই যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সত্যিকারের মানবতাকে ফিরিয়ে আনুন। সংঘাত কোন সুস্থ সমাজের অঙ্গ নয়। কোন বিভেদ বা প্ররোচনায় পা দিয়ে অন্যের ক্ষতি করা মানবধর্ম নয়। নিজের দেশ, জাতি, ধর্ম, বর্ণ, সবকিছুর উপরে মানবধর্মকে নিয়ে একবার ভেবে দেখুন। যে মানুষটার জল প্রয়োজন, তাকে দলমত বিচার না করে জল দিয়ে দেখুন। সেই জলটুকু আপনার জন্যও বরাদ্দ থাকবে আগামীতে।

ধন্যবাদ সকলকে। অবশ্যই সকলে ভালো থাকুন কিন্তু তার আগে অন্যকে ভালো রাখুন।



(৫% বেনিফিশিয়ারি এবিবি স্কুলকে এবং ১০% বেনিফিশিয়ারি প্রিয় লাজুক খ্যাঁককে)



1720541518267-removebg-preview.png

Onulipi_07_27_10_21_22.jpg


new.gif

1720541518267-removebg-preview.png


--লেখক পরিচিতি--

IMG_20240303_181107_644.jpg

কৌশিক চক্রবর্ত্তী। নিবাস পশ্চিমবঙ্গের হুগলি জেলায়। পেশায় কারিগরি বিভাগের প্রশিক্ষক। নেশায় অক্ষরকর্মী। কলকাতায় লিটল ম্যাগাজিন আন্দোলনের সাথে দীর্ঘদিন যুক্ত৷ কলকাতা থেকে প্রকাশিত কবিতার আলো পত্রিকার প্রধান সম্পাদক। দুই বাংলার বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও দৈনিকে নিয়মিত প্রকাশ হয় কবিতা ও প্রবন্ধ। প্রকাশিত বই সাতটি৷ তার মধ্যে গবেষণামূলক বই 'ফ্রেডরিক্স নগরের অলিতে গলিতে', 'সাহেবি কলকাতা ও তৎকালীন ছড়া' জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে। সাহিত্যকর্মের জন্য আছে একাধিক পুরস্কার ও স্বীকৃতি। তার মধ্যে সুরজিত ও কবিতা ক্লাব সেরা কলমকার সম্মান,(২০১৮), কাব্যলোক ঋতুভিত্তিক কবিতায় প্রথম পুরস্কার (বাংলাদেশ), যুগসাগ্নিক সেরা কবি ১৪২৬, স্রোত তরুণ বঙ্গ প্রতিভা সম্মান (২০১৯), স্টোরিমিরর অথর অব দ্যা ইয়ার, ২০২১, কচিপাতা সাহিত্য সম্মান, ২০২১ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।



কমিউনিটি : আমার বাংলা ব্লগ

ধন্যবাদ জানাই আমার বাংলা ব্লগের সকল সদস্যবন্ধুদের৷ ভালো থাকুন, ভালো রাখুন।

44902cc6212c4d5b.png


Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.15
JST 0.031
BTC 61179.86
ETH 2631.51
USDT 1.00
SBD 2.46