গাইবান্ধা থেকে জয়পুরহাট পথের বাঁকে জমানো গল্পচিত্র,১০%প্রিয়,লাজুক শেয়ালের জন্য।
হ্যালো বন্ধুরা,
কেমন আছেন সবাই।আশা করি,আল্লাহর রহমতে ভালো আছেন।আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।গাইবান্ধা থেকে জয়পুরহাট যাওয়ার পথে মনোমুগ্ধকর কিছু গ্রামীণ চিত্র নিয়ে থাকছে আজকের গল্প।
পথে পথে চলতে নতুন কিছু দেখা।গ্রামীণ লীলাভূমির অপরূপ সৌন্দর্যে দারুন মনমুগ্ধ হয়ে যাই মাঝেমধ্যেই।গত কয়েকদিন আগেই একটি বিশেষ কাজে গাইবান্ধা থেকে যাত্রা করি জয়পুরহাট জেলার উদ্দেশ্যে।সময় স্বল্পতার কারণে বড় রাস্তা না ধরে গ্রামের মেঠো পথ দিয়ে যাওয়া শুরু হয়।যাওয়ার পথে আমিও আমার এক ছোট ভাই,সাথে আরেক সঙ্গী বাইক।গ্রামের মেঠো পথ ধরে যাত্রাপথে দেখা যায় নতুন কিছু। পলাশবাড়ী থেকে হোসেনপুর ঘোড়াঘাটের পথ।কাঁচা রাস্তার পাশেই দেখা গেল যাত্রী ছাউনী।সেটি আমার নজর,না কাড়লেও পাশে থাকা শতবর্ষী বটগাছ আমার নজরে আসে। সাথেই ছোট একটা ব্রিজ ছিল।ব্রিজে দাঁড়িয়ে বটগাছের খুব দূর থেকে ছবি নেওয়া হলো।সেইসাথে স্থানীয় এক ব্যক্তির সঙ্গে বটগাছ সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞেস করলাম।তিনি জানালেন,খুব অল্প বয়স থেকেই বটগাছের এমন দৃশ্য দেখে আসছেন।ঠিক তিনিও জানেন না এই বটগাছের বয়স কত।
তবে,তিনি তার বাবার মুখে শুনেছেন এই বটগাছের কথা।সেই অনুযায়ী বট গাছের বয়স আনুমানিক ভাবে তিনি বললেন ১২০ বছর পার হয়ে গেছে।প্রাচীনতম এমন গাছ দেখে কৌতূহলী মনে অনেক কিছুই জিজ্ঞেস করার চেষ্টা করলাম।কিন্তু তেমন কোনো সদুত্তর মিলল না।গাছের ছায়া শতবছর আগলে রেখেছে ঐই এলাকার মানুষদের।মাঠে কিংবা পথে ক্লান্ত পথিকের বসার অন্যতম জায়গা হচ্ছে এই বটগাছতলা।ব্রীজের উপড় দাঁড়িয়ে চারপাশ দেখতেই চোখে এসে যায় গ্রামবাংলার মেঠোপথে ছাগল নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য।খুব ধীর স্থিরে ছাগল পারাপার করছেন।রাস্তার ধারের ঘাসগুলো ছাড়া ছাগলের তেমন কোন খাবারের খোলা মাঠ চোখে পড়ছে না।ঠিক পাশেই চোখে পরলো মাছ ধরার দৃশ্য।শ্যালো মেশিনের সাহায্যে নালার পানি শুকিয়ে ছোট-বড় অনেককেই মাছ ধরতে দেখা যায়।মাছ ধরার এমন দৃশ্য দেখে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল।তাই খুব দূর থেকেই মাছ ধরার একটি ছবি নিলাম।তারপর বাইকের রওনা দেওয়ার প্রস্তুতি চলছে।সাথে একটি সেলফি তুলে নিলাম।
কিছুক্ষন পর,আবার যাত্রা।এবার সোজা জয়পুরের দিকে।পথের সাথেই জমিরক্ষেত।ক্ষেতে ধান রোপনে ব্যস্ত সময় পার করছেন কিষান-কিষানীরা।মাঝেমধ্যেই আলু উঠাতেও তাদের ব্যস্ততা চোখে পড়ছে।রাস্তায় ভ্যানগাড়ি দাঁড়িয়ে আছে আলু বহন করার জন্য।ঘন্টাখানেক পর আমরা জয়পুরের খুব কাছাকাছি শহরের প্রবেশ করলাম।
জায়গাটি জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি থানার আটাপুর গ্রাম। উচাই বাজারের পাশেই দেখতে পেলাম খ্রিস্টান মিশনারিজ চ্যারিটি।চ্যারিটির আশপাশে রয়েছে সেন্ট পলস হাই স্কুল।পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদীর উপর নতুন ব্রীজ নির্মাণ চলছে।সময় খুব কম থাকার কারণে খুব বেশি ঘোরাঘুরি হলো না।তবে জানা গেল চ্যারিটির পাশেই হিন্দু ধর্মালম্বীদের জন্য একটি মন্দির রয়েছে।মন্দির থেকে পঞ্চাশ গজ কাছেই রয়েছে মুসলিম ধর্মালম্বীদের ঈদগাঁ মাঠ।মাঠেরর সাথে মাজার শরীফ।কি বিচিত্র এই জায়গার মানুষ গুলো।একই গ্রামে হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান মুসলমান একাকারে বসবাস।সকল ধর্মালম্বীদের সমন্বয়ে এমন জনপদ খুব কমই চোখে পড়ে।পাশাপাশি বসবাসরত এক যুবকের সঙ্গে কথা হয়।একই গ্রামের ঘরের সাথে অন্য ধর্মালম্বীদের অবস্থানে ধর্মীয় উৎসব পালনে কোন বাধা নিষেধ আছে কিনা।তিনি বিনা সংশয় জানালেন,আমাদের পূর্বপুরুষ থেকেই আমরা একসাথে এখানে বসবাস করি।আজ পর্যন্ত সাম্প্রদায়িক কোন অশান্তি কিংবা কলহ আমাদের মাঝে হয়নি।তিনি আরো জানান,তার খুব কাছের বন্ধু একজন খ্রিস্টান আর একজন হিন্দু।প্রাইমারি শেষ করে কলেজ পর্যন্ত তারা সবাই একসাথে পড়াশোনা করেন।ধর্ম নিয়ে তাদের মাঝে কোন কথা কাটাকাটি কিংবা দ্বন্দ্ব নেই।একসাথে চলতে তারা কখনই মনে করেন না,কে কোন ধর্মের লোক।
ঠিক অল্পসময় পার করেই,জয়পুরহাট জেলার প্রানকেন্দ্রে চলে আসলাম।কাজ শেষ করে আমার সহকর্মীর বাসায় গেলাম।কিন্তু খুবই আনন্দের ব্যাপার হলো তার বাড়ি ছিলো খ্রিষ্টান মিশনারিজ চ্যারিটির পাশেই।তার ঘড় থেকে পূর্বদিকে ১০ গজের মধ্যের ঘড়টা হিন্দুধর্মলম্বীদের।শুধু তাই নয় তার ঘড় থেকে দক্ষিনে ২০ গজ দূরত্বের ঘরবাড়িগুলোতে খ্রিস্টানদের বসবাস।এমন চমৎকার ভিন্নধর্মী জনপদের একত্রে বসবাস আমার চোখে ছিলো বিরল।ঐইখানে দেখা প্রাচীনতম কল্পকাহিনির পৌরাণিক পুকুর,নিয়ে লিখবো আরেক দিন।
ভালো থাকার শুভপ্রত্যয় নিয়ে,আজ এখানেই শেষ করছি।
বিষয় | পথ চলার গল্প |
---|---|
বর্ণনা | @kamrul8217 |
ডিভাইস | Samsung A32 |
লোকেশন | w3w |
তারিখ | ১৮ ফেব্রুয়ারী ২০২২ |
মূল্যবান সময় দিয়ে গল্পটি পড়ার জন্য | আপনাকে ধন্যবাদ |
---|
এতক্ষণ সাথে ছিলাম আমি @kamrul8217
পেশায় একজন সাংবাদিক,উপস্থাপক ও ক্ষুদ্রলেখক।সময় পেলেই ঘুড়তে যাই,গল্পকুড়াই।জ্ঞানের অন্বেষনে ছুটে চলা অবিরাম।মানুষের ভালবাসা নিয়ে যেতে চাই শেষ কৃত্যে।আমার ব্যক্তি,জ্ঞানে বিকশিত করতে সাহস যুগিয়েছেন,দুই বাংলার এক অবিচ্ছেদ্য প্লাটফর্ম@amarbanglablog
পৌরাণিক কল্পকাহিনির ছবির সাথে, বিকশিত বাক্য গুলো, লেখাকে অতিমাত্রা প্রদর্শন করেছে। ধর্মের বালাই,অন্ধের কাছে বৈকি! সুন্দর ছিল।
আপনি খুব দারুনকরে বলেছেন ধর্মের বালাই অন্ধের কাছে কিছুই না।চমৎকার এমন মন্তব্য নিশ্চয় নিজের লেখার উৎসাহ বাড়াতে সহায়ক হবে।ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়।
চালিয়ে যান।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়।
গাইবান্ধা থেকে জয়পুরহাটে যাওয়ার সময় আপনি খুব সুন্দর মুহূর্ত পার করেছেন। তাছাড়া আপনি মুহূর্তগুলো পার করার সাথে সাথে আমাদের সাথে শেয়ার করলেন ।আমার কাছে ভ্রমণ করতে খুবই ভালো লাগে। আপনি প্রকৃতির কিছু রুপ আমাদের সাথে শেয়ার করলেন খুবই ভাল লেগেছে। আপনার যাত্রা শুভ হোক এটাই কামনা করি।
আপনি ঠিকই বলেছেন প্রকৃতির অপরুপ লীলাভূমি সবাইকেই কাছে টানে।গ্রামীণ জনপদে এমন মেঠোপথের বাকে বাকে জড়ানো গল্পটি ঠিক প্রকৃতি প্রেমীদের জন্যই লেখাছিলো।শহরের ব্যস্ততায় গ্রামীণ চিত্র দেখতে নিশ্চয়ই সবার ভাল লাগে।অনেক চমৎকার মন্তব্য করে পাশে থাকার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়।
গল্পটি পড়ে বেশ ভালোই লাগলো, আপনার জার্নির গল্পটি অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে আমাদের মাঝে উপস্থাপন করছেন, আর বট গাছের কথা গুলে সেই লেগেছে আমার, পথ চলতে এমন অনেক পুরোনো বট গাছ চোখে পড়ে, আবার এই প্রাচীন বট গাছ গুলোর পিছনে একটি করে রহস্য ও থাকে, আমি অনেক বট গাছের রহস্য শুনেছি আমার দাদা দাদির কাছ থেকে, আপনার বটগাছের গল্পটি পরতেই দাদা দাদির কথা মনে পরছিলো, অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া এমন সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য, আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইলো।
আপনি চমতকার বলেছেন,হয়তো এই বট গাছের ও কোন না কোন রহস্য থাকতে পারে,অনুসন্ধানী চোখে খুজতে গিয়ে সময় স্বসল্পতায় কিছু বের করে আনা সম্ভব হয় নাই। আপনি খুব সুন্দর করে গঠনমুলক মন্তব্য করেছেন। ধন্যবাদ, শ্রদ্ধা ও ভালবাসা রইলো।
ভাই আপনি আপনার বন্ধুর সঙ্গে জয়পুরহাটে গিয়ে অনেক সুন্দর সময় কাটিয়েছেন।আপনাদের মুহূর্তগুলোর ছবি এবং সেখানকার প্রাকৃতিক দৃশ্যের আলোকচিত্রগুলো অনেক সুন্দর ছিল। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর ছবিগুলো এবং লেখা আমাদের সঙ্গে শেয়ার করার জন্য।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়, আপনি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে মন্তব্য করেছেন। দারুন উপভোগ্য ছিলো সেদিনের আয়োজন। ভালবাসা রইলো শ্রদ্ধেয়।