কন্যাদানে স্বপ্নবেচা,১০% লাজুক শেয়ালের জন্য।
হ্যালো বন্ধুরা,
আশা করি সবাই ভালো আছেন।আলহামদুলিল্লাহ,আমিও ভালো আছি।জীবন মানেই চড়ুই উতড়াই আর বাস্তবতায় ভরপুর।বাস্তবতার স্রোতে ভেসে যায় কত জীবন।এমনই এক বাস্তবজীবনের গল্পে আজকের শুরুটা।
কেউ স্বপ্ন দ্যাখে,কেউ স্বপ্ন বাস্তবায়নে দিনভর খেটে যায়।কেউ স্বপ্ন বিলাসীতায় আর কেউবা বাস্তবতায়।স্বপ্নের এই টানাপোড়নে কেউ সফল আর কেউবা ভাসে স্বপ্নের ক্যানভাসে।কন্যাদানে স্বপ্নবেচা নিয়ে থাকছে,আজকের পর্ব।
নাম আলামিন।পাড়ার প্রতিবেশী হিসেবে চাচাতো ভাই।গত কয়েক বছর আগে চাচা মারা যায়।সংসারে তার মা,ছোট দুই ভাইবোনের দায়িত্ব নিয়ে মাত্র ১৫ বছর বয়সেই ঢাকা যেতে হয়। ছয় বছরের খাটাখাটুনিতে বাপমরা ছেলেটা,সংসারের হাল ধরে।ঢাকায় একটি শপে চাকুরী করে।খুব অল্প বয়সেই শহুরে জীবনে চলে যেতে হয়।যে বয়সে তাকে অন্য দশটা ছেলের মতো,সুন্দর কৈশর কাটানোর কথা কিন্তু সেই বয়সেই দায়িত্ব নিয়ে,তাকে থাকতে হয়।যাইহোক,সব মিলিয়ে অনেক কষ্ট করে কিছু টাকা সঞ্চয় করেছিলো।
সোর্স
আমাদের বাড়ির পাশেই আলামিনের বাড়ি।ওর মা,প্রায় সময়ই আমাদের বাড়িতে কাজ করে।খুবই শান্ত স্বভাবের মানুষ।কথা বললেই মনটা ভরে যায়।খুবই মিশুক ও আনন্দপ্রিয়।কে জানে, এতো তাড়াতাড়ি করে ঝড় বয়ে যাবে তার জীবনে।বিয়ের সতেরো বছর জীবনে স্বামীহারা হয়ে গেলেন।তিনটা সন্তান নিয়ে খুব টানাটানি করেই চলছে জীবন।বড়ো ছেলে আলামিন ঢাকায় থাকে।মেয়েটা মেঝো ও তার ছোট আরেকটা ছেলে আছে।মেয়েটার বয়স আঠারো ছুঁই ছুঁই।মাঝে মধ্যেই বিয়ের প্রস্তাব আসে।গ্রামের পরিবেশে এতোদিন মেয়ে রাখাও সমাজে তেমন ভালো দেখায় না।ছোট ছেলেটা হাফেজিয়া মাদ্রাসায় পড়ছে।
গত দুইমাস আগে ছুটিতে এসেছিলাম বাড়িতে।বড় ছেলে আলামিনের সাথে দেখা হলো,হলো কিছু কথা।
মাঝখানেই বলে উঠলো ভাই,আমি লাখ দুয়েক টাকা জমিয়েছি।বাপের তো জমিজমা নেই।আমি একটা ব্যবসা করবো,ঢাকায় আর আমাকে ভালো লাগে না।আমি আমার জায়গা থেকে ব্যবসার বেশ কিছু পরামর্শ দিলাম।সাথে বললাম,হেল্প লাগলে নক দিও।খুব খুশি মনে বললো ভাই,আমাকে দুটো জমি দেন।এবার আমি আবাদ করবো।সব ঠিকঠাক করে পরের দিন আমি অফিসে আসলাম।
সোর্স
ইতিমধ্যেই আলামিনের ছোটবোনকে তার মা বিয়ে দিতে উঠেপড়ে লেগে গেলো।একপর্যায়ে খুব তাড়াহুড়ো করেই বিয়েটা হলো।আমরা সবাই আমাদের জায়গা থেকে ভালভাবেই সম্পন্ন করে দিলাম।
কন্যাদানে একজন বাবার ভূমিকা যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা সেদিনই বুঝেছি।যাইহোক,আলামিনের আম্মা অশ্রুসিক্ত হয়েই অবশেষে কন্যাদান সম্পন্ন করলেন।যে দৃশ্য কিংবা বর্ণনা আমার পক্ষে বলা সম্ভব নয়।
কিছুদিন পর;
আলামিনকে আমি ডাকলাম।ব্যবসার জন্য একটি দোকান-ঘড় নিতে আলাপ করলাম।খুব মলিনমুখে বললো ভাই,আমার স্বপ্নের দোকান করা আর হবে না।খুব ইচ্ছে ছিলো,বাড়িতে থেকে বাকি জীবনটা ভাইবোন মায়ের সাথে কাটাবো।আমার বোনের বিয়ের পরে বর পক্ষ,নতুন করে চাহিদা দেখিয়াছে।নিজের স্বপ্ন নয়,বোনের সংসার ভালো থাকতে টাকাটা আমি সেখানেই দিয়েছি।
সোর্স
আমি অনেকটাই স্থির হয়ে গেলাম।কি বলবো ভেবে পাচ্ছি না।এ যেন মায়ের কন্যাদানে ভাইয়ের স্বপ্নবেচা।
পুরুষতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় এমনরুপ সত্যিই মেনে নেওয়া কঠিন।সব ঠিকঠাক করেই বিয়েটা হয়েছিলো।পরবর্তীতে অতিরিক্ত চাহিদার জন্য মোটেও কোন কথা হয় নাই।আগে বললে হয়তো প্রস্তুতিটাও ভিন্ন হতো।বোনের বিয়ের দায়িত্ব তো বাবা-মা ভাই বোনের উপড়েই আসে।
কিন্তু অযাচিত চাহিদায় যে একটি সংসার ভাঙ্গাগড়া হয়,তা তো অনেকেরই অজানা।
যাইহোক,ব্যক্তি হিসাবে আমি মনে করি এ প্রথা অচিরেই বন্ধ করা দরকার।সবাই তার সাধ্যের মধ্যেই সব কিছুর চিন্তা করে।সাধ্যের বাহিরে এরুপ আচারন কখনোই গ্রহনযোগ্য হতে পারেনা।তবুও সকল বোনেরা সুখী হোক,ভালো থাকুক।হাজারো স্বপ্ন বেচাকেনার ভীড়ে অটুট থাকুক প্রানের এই বন্ধন।
বন্ধহোক মানুষরুপী হায়েনাদের থাবা;কুসংস্কারমুক্ত হোক আমাদের সমাজ।সকল ভাই-বোনের স্বপ্ন বেঁচে থাকুক সেই প্রত্যাশায় কথা হবে,হবে নতুন কিছুর আয়োজন।সে পর্যন্ত ভালো থাকা চাই প্রিয় পরিবার@amarbanglablog
বিষয় | কন্যাদানে স্বপ্নবেচা |
---|---|
বর্ণনায় | @kamrul8217 |
ডিভাইস | Samsung A32 |
তারিখ | ১২ফেব্রুয়ারি ২০২২ |
আমি@kamrul8217 যুক্ত আছি বাংলাদেশ থেকে।পেশায় একজন সাংবাদিক,উপস্থাপক ও ক্ষুদ্রলেখক।পথ চলতেই শেখা।বাস্তবতায় একজন অতিসাধারণ মানুষ।যতটুকু শুনার আগ্রহ তার চেয়ে বেশি বলতে নাই আমি।আমার জ্ঞানে অকৃত্রিম বন্ধু,দুইবাংলার এক অবিচ্ছেদ্য প্রান@amarbanglablog
কথাটা অসাধারণ ছিল ভাই। এবং একেবারে বাস্তবসম্মত কথা। আমাদের সমাজে এমন অনেকেই আছে যারা পরিবারের জন্য নিজের স্বপ্ন বিসর্জন দেয়। যেমনটা দিয়েছে আপনার গল্পের আলামিন। যৌতুক আমাদের সমাজের ভয়াবহ একটি রীতি। যার উপস্থিতি আপনার গল্পের মধ্যেও পাওয়া যায়।আপনি তো অসাধারণ লিখেন ভাই। দারুণ ছিল পোস্ট টা।
সত্যিই বলেছেন এটি আমাদের সমাজের একটি ক্ষতিকর ব্যাধি।এতে কারো স্বপ্ন বলিদান হয়, নয়তো কারো জীবন। ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় এমন একটি সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।
কথাগুলো একদম ঠিক বলেছেন ভাই। বর্তমানে এমন ই হয়ে যাচ্ছে। কথাগুলো একদম বাস্তব। ধন্যবাদ আপনাকে।
ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।