ট্রেনের ছাদ ও আমার বাড়ি ফেরা।১০%লাজুক শেয়ালের জন্য।
আসসালামু আলাইকুম,
বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে তিনটা।ঘড়ির কাঁটা বেজে চলছে। হঠাৎ প্রশিক্ষণরত অফিস থেকে ঈদ ফেস্টিভাল বোনাস।খুব খুশি লাগছে।এবারের ঈদটা ঢাকাতে করার কথা ছিলো।সময় স্বল্পতা এবং পড়াশোনার চাপ সব মিলিয়ে সিদ্ধান্ত ছিলো ঢাকাতেই খালার বাসায় ঈদ করা।কিন্তু অফিসিয়াল সিদ্ধান্ত আমাকে পাল্টে দিলো।বাসায় ঈদ করার চিন্তা চেতনাকে জাগ্রত করতে হলো।
যাই হোক,ঈদের ছুটি দীর্ঘ আট দিন।সময় অপচয় না করে ৪টায় অফিস থেকে বাসায় ফিরলাম।বাসের টিকিট কাটার জন্য আগ্রহী হয়ে গেলাম।কিন্তু কিছুই করার নাই,বাস কাউন্টারে পর্যাপ্ত টিকেট না মেলায় এক পর্যায়ে হতাশ হয়ে পড়লাম।ততক্ষণে জয়দেবপুর,চৌরাস্তা,গাজীপুর থেকে আমার বন্ধুদের ফোন কল চলে আসলো।বাসে বাড়ি ফেরা হবেনা,বাড়ি যেতে হলে অবশ্যই আমাদেরকে ট্রেনে যেতে হবে। কিন্তু পরিস্থিতিতে আছমকা ট্রেনের টিকিট পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে নাই।যাইহোক,পরিস্থিতি সামাল দিতেই প্রথমে যাওয়া হলো শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের রেলস্টেশনে। তখন জনসমাগম কম দেখা গেলেও ট্রেন আসার পূর্ব মুহূর্তে জনসমাগম বাড়বে বলে আশঙ্কা করা হলো।
তাই স্বল্প সময়ের জন্য বিমানবন্দর রেল স্টেশন থেকে কমলাপুরের দিকে যাত্রা শুরু করলাম।সন্ধ্যা সাতটায় কমলাপুর গিয়ে টিকিট কাটার অনেক চেষ্টা করা হলো কিন্তু টিকেট পাওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে নাই।আমরা লালমনিএক্সপ্রেস ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম।ঠিক নয়টায় নানা কৌশল অবলম্বন করে টিকিট মিলানো সম্ভব হল। ইতিমধ্যে ১০ টার গাড়িতে আমার কিছু বন্ধু কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেসে বিনা টিকিটে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।রাত এগারোটা। লালমনি এক্সপ্রেস ট্রেনের সিগন্যাল।যাত্রীদের ভিড় ছিল উপচে পড়ার মতো।যাই হোক,টিকেট কাটা কামড়ায় না হলেও অবশেষে খাবার বগিতে কোনমতে জায়গা করে নেওয়া হলো। অনেক যাত্রী টিকেটের তোয়াক্কা না করেই ট্রেনে উঠেছেন। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যাপার হলো নিষেধ করা সত্ত্বেও মই বেয়ে অনেকেই ট্রেনের ছাদে অবস্থান করছেন।দেখে অনেকটাই ভীতু হয়ে গেলাম। বলে রাখি, ঢাকা থেকে এবারের ঈদে এই প্রথম আমি রেলপথে যাত্রা করলাম।
আগে কখনও ঢাকা থেকে রেলপথে আমার বাসায় যাওয়া হয়নি।যাইহোক ট্রেন চলছে,ঝড় ঝাপটা পেরিয়ে টিটিই চলে আসছে টিকিট চেক করতে। টিকিট ছাড়া অনেক ব্যক্তি অসদুপায় অবলম্বন করে তাদের যাত্রা পথকে সুগম করে নিলো। যদিও নিয়ম-নীতির বাইরে অসংলগ্ন কার্যকলাপ অনেকটাই হতাশা করে তুলেছিল।সেই ব্যাপারগুলোতে না যাই।ঢাকা থেকে গাইবান্ধার পথ অনেকটাই মিলে ঘুরে ঘুরে যেতে হয়। দীর্ঘ সময় এবং জনসমাগমরত অবস্থা যাত্রা করা খুব সুখময় ছিলনা।পরিস্থিতির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে থাকলাম।ট্রেনের খাবার বগিতে ও যাত্রীদের এমন উপচে পড়া ভিড় ছিল যে প্রাকৃতিক কার্যক্রম সাড়ার জন্য টয়লেটে যেতেও যাত্রীদেরকে বাধার মুখে পড়তে হচ্ছে। পা রাখার জন্য কোথাও ফাঁকা জায়গা পাওয়া যাচ্ছিল না। তার পরেও কায়দা-কৌশলেই অনেকের পথ চলা পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে।
সান্তাহার রেলওয়ে জংশনে পৌঁছানোর আগেই মোবাইলে এসএমএস চলে আসলো।আমার বন্ধুদের যাওয়ার ট্রেনে তিনজন যাত্রী নিহত হওয়ার খবর।মেসেজটি দেখে হৃদয়বিদারক ঘটনায় নিজেকে অনেকটাই সামলে নিতে হলো। বারংবার ভাবছি আমরা যে ট্রেনে যাত্রা করেছি সেই ট্রেনের ছাদে ও লোক সংখ্যা ছিল অনেক বেশি।রেললাইনে ফুট ওভারব্রিজের ধাক্কায় ট্রেনের ছাদে থাকা যাত্রী নিহত হওয়ার খবর হরহামেশাই পাওয়া যায়।
আমার প্রশ্ন, পরিবারের সঙ্গে ঈদ করতে ঢাকা কিংবা অন্যত্র থেকে বাড়ির উদ্দেশ্যে সবারই যাত্রা।সেই যাত্রাপথে নিরাপত্তার প্রশ্ন একান্ত নিজের। ছাদে যাত্রীরা কিভাবে তাদের নিরাপদ মনে করেন এটা আমার মাথায় আসেনা।
সামান্য অসতর্কতায় খুব সহজেই ঝরে যেতে পারে অনেকেরই প্রাণ। হয়তো আমার কথা অনেকেরই বিভিন্ন উক্তিতে দ্বিমত পোষণ করবেন, কিন্তু তাতে কি এই সমস্যার সমাধান ঘটবে। আমি মনে করি আলোচনা-সমালোচনা কিংবা আইন করে নয়। দুর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজন নিজেদের সর্তকতা। সবারই উচিত দ্রুত পৌঁছাতে গিয়ে একবারের না পৌঁছানো বেশি খারাপ। ধীরগতিতে একটু দেরীতে পৌঁছানোয় বেশি ভালো। যাই হোক, সান্তাহার রেলওয়ে জংশন পার হয়ে আড়াই ঘন্টা পর বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশনে আমরা পৌঁছালাম।
ঢাকা কমলাপুর রেলওয়ে থেকে বোনারপাড়া রেলওয়ে জংশনে পৌঁছাতে ৯ ঘন্টা সময় লেগেছিলো।এরপর স্থানীয় পরিবহনে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। ঢাকা থেকে ১০ ঘণ্টা পর প্রিয় পরিবারের মুখগুলো দেখতে পেয়ে অনেকটাই ভাল লেগেছিলো।ব্যক্তিগতভাবে সকলকে অনুরোধ করবো, ঈদযাত্রা থেকে শুরু করে স্বাভাবিক যাত্রায় যাত্রাপথে নিজেদের সতর্ক রাখা। দ্রুত পৌঁছানোর চেয়ে নিরাপদ ভাবে পৌঁছানোই কাম্য।সামান্য অসতর্কতায় ঝরে যেতে পারে অনেক তাজা প্রাণ।
আজ এ পর্যন্তই কথা হবে আগামীতে।সে পর্যন্ত সবাই ভাল থাকুন,সুস্থ্য থাকুন,নিরাপদে থাকুন।
বিষয় | ট্রেনযাত্রা |
---|---|
বর্ণনায় | @kamrul8217 |
ডিভাইস | Samsung A32 |
লোকেশন | w3w |
তারিখ | ১০ মে ২০২২ |
এতক্ষন সাথে ছিলাম আমি@kamrul8217
পেশায় একজন সাংবাদিক,উপস্থাপক ও ক্ষুদ্রলেখক।জ্ঞান আহরণের সর্বাত্মক ছুটে চলা।একজন সাদাসিধা জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত মানুষ।দু-চোখে যা দেখি শব্দাকারে তা লিখতে থাকি।ভালো কাজে পাশে থাকি।একজন প্রকৃত মানুষ হওয়ার চেস্টায় চিরকৃতজ্ঞতায় পাশে আছে দুই বাংলার এক অবিচ্ছেদ্য প্রাণ@amarbanglablog
You've got a free upvote from witness fuli.
Peace & Love!
অনেক সুন্দরভাবে আপনার ট্রেন ভ্রমণ টি আমাদের সাথে শেয়ার করেছেন। ঈদ এ এই বিড়ম্বনা প্রতিবছরই দেখা যায়। তবে এর মাঝেই আপনি আমরা আমাদের আনন্দ খুঁজে পাই। সহমর্মিতার এক জলজ্যান্ত উদাহরণ আমরা। আমাদের সাথে আপনার ভ্রমণ শেয়ার করার জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ।
হ্যাঁ খুবই গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন। বাড়ি যেতে ট্রেন ভ্রমণ ছিলো খুবই চমৎকার।তবে ছাদে ওঠা মোটেও নিরাপদ নয়।হতাহতের ঘটনা খুবই উদ্বেগের।সবাই সচেতন হোক,সেই প্রত্যাশায়।
ট্রেনের ছাদে ভ্রমন না করাই উচিত বাংলাদেশের যে ব্যবস্থা বাড়ি ফিরছেন শুনে ভালো লাগলো আপনার দারুন মুহূর্ত টা গুছিয়ে উপস্থাপনা করেছেন ধন্যবাদ এবং শুভ কামনা।
ট্রেনের ছাদে বাড়ি ফেরা নিশ্চয়ই নিরাপদ নয়। আমাদের উচিৎ ভ্রমনে নিশ্চয়তা নিশ্চিত করা।দ্রুত যাওয়ার চেয়ে নিরাপদে দেরীতে ফেরাই উত্তম।অত্যন্ত চমৎকার মন্তব্য করার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয়।
ভাইয়া ভালো লাগলো আপনার ট্রেন ভ্রমণ টি। কিন্তু এভাবে করে ট্রেনের ছাদে যাতায়াত করলে অনেক রিস্ক থাকে। অনেক বিপদ হতে পারে তাই চেষ্টা করবেন ট্রেনের ছাদে না উঠা। আসলে মানুষ তাড়াতাড়ি বাড়ি যাওয়ার জন্য যখন কোন সিট পায় না বা যাওয়ার অন্য কোন ওয়ে থাকে না তখন উঠে যায়। তারপরেও সব একটা সাবধান এবং সচেতন হওয়া উচিত। কারণ আমাদের দেশে এখন অহরহ এক্সিডেন্ট হচ্ছে। ধন্যবাদ আপনাকে ভাইয়া আপনার সুন্দর মুহূর্তে আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনার জন্য শুভেচ্ছা। আশা করি বাড়িতে গিয়ে আপনি খুব আনন্দময় একটি সময় কাটিয়েছেন ।
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় সুন্দর মন্তব্য করার জন্য।তবে বলে রাখি,আমি ট্রেনের ছাদে যাই নাই।আমি খাবার কেবিনে গেছি।ট্রেনের ছাদে যাওয়ার ঝুকি নিয়েই লেখাটি সচেতনতামুলক উপস্থাপন করা হয়েছে।ধন্যবাদ, হয়ত অল্প সময় দিয়ে পড়েছেন।ধন্যবাদ
আসলে এভাবে ট্রেনের ছাদে আসা খুবই রিক্স। কিন্তু সবই পরিস্থিতির শিকার ।বাড়িতে আসতে হবে। বাসের টিকিট না পেলে যেভাবে চলে আসতেন। ধন্যবাদ আপনাকে এত সুন্দর একটা কাহিনী শেয়ার করার জন্য।।
আপনি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেছেন শ্রদ্ধেয়। ঈদে কিংবা স্বাভাবিক যে কোন যাত্রায় আমাদের উচিৎ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ছাদে কখনো নিরাপদ নয়।অহরহ এমন দূর্ঘটনা থেকে আমাদের আরো বেশি সচেতন হওয়া উচিৎ।
বাড়ি ফেরার তাড়না সকলের মধ্যেই কাজ করে। বাসায় ঈদ না করতে চাইলেও অফিস থেকে ছুটি পাওয়া এবং অনুকূল পরিস্থিতির কারণে বাসায় ঈদ করতে পেরেছেন শুনে খুব ভালো লাগলো তবে এতো রিক্স নিয়ে বাসায় না আসলেও পারতেন।শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
আপনি মনে হয় পর্বটি পুরোপুরি পড়েন নাই।আসলে আমি টিকিট নিয়ে খাবার কেবিনে এসেছি।মুলত ছাদে যেনো কেউ রিস্ক নিয়ে যাত্রা না করে এজন্যই লেখাটি লেখা।আমাদেরকে যাতায়াত আরো বেশি সচেতন হওয়া উচিৎ।
আপনার ট্রেন ভ্রমণের কথা শুনে ভালো লাগলো। কিন্তু আমার মনে হয় ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করা একদম উচিত নয়। এটা আমাদের জন্য একদম রিস্ক একটা কাজ। তা ছাড়া আর সবকিছুই মোটামুটি ভালো লেগেছে। আপনার পুরো ভ্রমণের কথাগুলো শুনে ভালো লাগলো।
ধন্যবাদ,আপনি জেনে খুশি হবেন যে আমি টিকেট কেটে খাবার কেবিনে উঠেছিলাম।তবে যারা ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ করেছেন তারা অনিরাপদ ছিলেন।তাদেরকে নিয়েই সতর্কতামুলক পোস্ট ছিলো।
এই ঈদ যাএায় যে কত মানুষের প্রাণ হারিয়েছে তা বলে বোঝানো যাবে না। এবং এটা সত্যি হৃদয় বিদারক। এবং এই ঈদ যাএায় বাড়ি ফেরার সময় না পাওয়া বাসের টিকিট না পাওয়া যায় ট্রেনের। ফলশ্রুতিতে সবাই নিয়মভেঙে ট্রেনে উঠে কেউ তো নিয়ে নেয় জীবনের ঝুঁকি। যাইহোক আপনার ঈদ যাএা টাও পড়লাম বেশ কষ হয়েছে আপনার।
দারুন মন্তব্য করেছেন শ্রদ্ধেয়। তবুও মা-বাবার সাথে ঈদ করতে পেরে অনেক খুশি লেগেছে।
আসলে ঈদের সময় বাস কাউন্টারগুলোতে এত বেশি পরিমাণে ভিড় লক্ষ্য করা যায় যার কারণে আমরা কোনোভাবেই টিকিট পায়না। এর জন্য আমাদেরকে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয় যেমনটি আপনি আজকে আমাদেরকে দেখিয়েছেন আপনি ট্রেনের ছাদের উপর করে বাড়ির উদ্দেশ্যে চলে এসেছেন। আমাদের জেলাতে ট্রেন লাইন নাই যার পরিপ্রেক্ষিতে আমাদের তেমন একটা ট্রেনে চলাচল করার প্রয়োজন হয় না।
আপনি অনেক সুন্দর করে গুছিয়ে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু দুঃখের ব্যাপার আমি ট্রেনের টিকিট কেটে খাবার কেবিনে যাত্রা করি।ট্রেনের ছাদে ভ্রমণ নিরাপদ নয় এ সচেতনতায় লেখাটি লেখা হয়েছিলো।