মানুষের ভিড়ে থেকেও এত একা কেন আমরা?
মানুষের ভিড়ে থেকেও এত একা কেন আমরা?
আজকাল খুব একটা খেয়াল করলে দেখা যায়—মানুষ যেন ধীরে ধীরে মানুষের কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। একসময় যাদের সাথে দিনের পর দিন কথা না হলে অস্বস্তি লাগত, যাদের সাথে আড্ডা না দিলে মনে হতো কিছু একটা অপূর্ণ থেকে গেল, আজ তাদের সাথেই আর তেমন যোগাযোগ রাখা হয় না। সবাই যেন নিজের খোলসের ভেতরে গুটিয়ে যাচ্ছে। কথোপকথনগুলো ছোট হয়ে আসছে, সম্পর্কের বন্ধনগুলো শিথিল হয়ে পড়ছে। একসময়কার উষ্ণ আলাপচারিতা জায়গা ছেড়ে দিচ্ছে নিস্তব্ধতায়, আর এই নিস্তব্ধতাই আজকের মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠছে।
মানুষ এখন যেন নিজেকে ব্যাখ্যা করার শক্তি হারিয়ে ফেলছে। আগে হয়তো কষ্ট পেলে কারও কাছে গিয়ে মন খুলে বলা যেত, ভালো লাগলে আনন্দটা ভাগ করে নেওয়া যেত, কিন্তু এখন যেন সেই শক্তিটুকুও কমে যাচ্ছে। কেউ আর অন্যকে বোঝাতে চায় না, আবার অন্যের কথাও পুরোপুরি বুঝতে চায় না। সবাই ব্যস্ত, সবাই ক্লান্ত, সবাই নিজের ভেতরকার যুদ্ধ লড়তে লড়তে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে ভালোবাসার জায়গাটা ক্রমেই ফাঁকা হয়ে পড়ছে।
একটা সময় ছিল যখন বিশ্বাস ছিল সম্পর্কের মূল ভিত্তি। কিন্তু এখন সেই বিশ্বাস যেন ভয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানুষ বিশ্বাস করতে ভয় পাচ্ছে, ভালোবাসা দিতে গেলেও ভয় পাচ্ছে। কারণ বারবার ভেঙে যাওয়া সম্পর্কগুলো মানুষকে ভেতর থেকে কাঁপিয়ে দিয়েছে। এখন অনেকেই ভাবে—কেউ যদি আবারও মাঝপথে ছেড়ে যায়? কেউ যদি প্রতিশ্রুতির ভেতরেও মিথ্যে লুকিয়ে রাখে? তাই ভালোবাসার হাতছানি থেকেও মানুষ মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে, অচেনা এক নির্লিপ্ততায় ঢেকে যাচ্ছে।
একা থাকার চেষ্টা এখন যেন একটা অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে। কেউ আর সহজে আড্ডায় বসতে চায় না, দীর্ঘ কথোপকথন করতে চায় না। বরং নিঃসঙ্গতার সাথে মানিয়ে নিতে শিখছে। অনেকেই ভাবে—মানুষের ভিড়ে থেকেও যখন মন খালি লাগে, তখন নিঃসঙ্গতাই হয়তো ভালো। অন্তত সেখানে প্রতারণা নেই, প্রত্যাশা নেই, কারও কাছে নিজেকে প্রমাণ করার দরকার নেই। এই ভাবনাটাই মানুষকে ভয়ংকরভাবে একাকিত্বের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।
আর এই একাকিত্বই ধীরে ধীরে সুন্দর সম্পর্কগুলোকে ভেঙে দিচ্ছে। একসময়কার প্রিয় মানুষগুলো, যাদের ছাড়া একটা দিনও ভাবা যেত না, তারাই এখন অনেক দূরে চলে যাচ্ছে। যোগাযোগ কমতে কমতে একসময় পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কেউ ফোন করছে না, কেউ বার্তা দিচ্ছে না। একে অপরের জীবনে থাকার যে প্রতিশ্রুতি ছিল, তা সময়ের সাথে হারিয়ে যাচ্ছে।
তবে সত্যি বলতে কি, মানুষ আসলে এই দূরত্বটা চায় না। মানুষ চায় মানসিক শান্তি, চায় একটু বোঝাপড়া, চায় অন্তরের ক্লান্তি ভাগ করে নেওয়ার মতো কাউকে। কিন্তু যখন সেই শান্তিটুকু পাওয়া যায় না, যখন বারবার চেষ্টা করেও ভরসা করা যায় না, তখন মানুষ বাধ্য হয় একাকিত্বকে আপন করে নিতে। নিঃসঙ্গতার ভেতর একধরনের নিরাপত্তা আছে—যেখানে কেউ আঘাত দিতে পারে না, কেউ প্রতিশ্রুতি ভাঙতে পারে না, কেউ কষ্ট দিতে পারে না।
তবুও গভীরভাবে ভেবে দেখলে বোঝা যায়—মানুষ একা থাকার জন্য জন্মায়নি। আমরা সবাই সম্পর্কের বাঁধনে জড়িয়েই বাঁচতে চাই। আমরা চাই কথা বলতে, চাই অনুভূতি প্রকাশ করতে, চাই কারও সাথে মন খুলে হাসতে বা কাঁদতে। কিন্তু আজকের পৃথিবীর ব্যস্ততা, প্রতিযোগিতা আর অগণিত মানসিক চাপ সেই সহজ চাওয়াটুকুকে অনেক দূরে সরিয়ে দিয়েছে।
এখনকার দিনে হয়তো মানুষ আড্ডা না দিয়ে অনলাইনের নিঃশব্দ স্ক্রলিং-এ সময় কাটায়, গভীর কথোপকথনের বদলে ছোট্ট একটি “আছি” লিখেই দায়িত্ব সেরে ফেলে। অথচ সেই একটুকু যোগাযোগে কখনোই হৃদয়ের গভীরতা প্রকাশ পায় না। ধীরে ধীরে মনে হয়—সবাই আছে, কিন্তু কেউ নেই।
এভাবে একসময় আমরা বুঝতে পারি—আমাদের চারপাশে ভিড় থাকলেও আমরা আসলে ভয়াবহভাবে একা হয়ে গেছি। একাকিত্ব যেন এক অনাহূত সঙ্গী, যাকে না চাইতেও মেনে নিতে হচ্ছে। হয়তো কেউ চুপচাপ মেনে নেয়, কেউ আবার ভেতরে ভেতরে কষ্ট পায়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাই এই একাকিত্বের সাথেই বাঁচতে শিখে যায়।
মানুষ আসলে ভালোবাসার জন্যই বেঁচে থাকে, বিশ্বাসের জন্যই টিকে থাকে। কিন্তু যখন সেই ভালোবাসা ভেঙে যায়, বিশ্বাসের জায়গায় ভয় এসে বসে, তখন মানুষ সত্যিই দিশেহারা হয়ে পড়ে। আর দিশেহারা মানুষ শেষ পর্যন্ত শান্তি খোঁজে একাকিত্বের ভেতরেই।
তাই আজকাল দেখা যায়—কথা বলা কমে যাচ্ছে, যোগাযোগ ভেঙে যাচ্ছে, সুন্দর সম্পর্কগুলো হারিয়ে যাচ্ছে। মানুষ চাইলেও মানুষের সাথে থাকতে পারছে না। আর এই না-পারার মধ্যেই গড়ে উঠছে ভয়ংকর নিঃসঙ্গতা, যা আমাদের সময়ের এক কঠিনতম বাস্তবতা।
| আমার লিখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। অন্য কোনোদিন অন্য লিখা নিয়ে হাজির হবো। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ। |
|---|
আমার পুরোনাম জোনায়েদ আহমদ । স্টিমিট আইডি @junaidahmed।
বাসা নেত্রকোনা সদর নেত্রকোনা । আমি অর্থনীতি বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি, বর্তমানে জবের পড়াশোনার পাশাপাশি স্টিমিট এ লিখালিখি করি। আমার প্রকৃতির ছবি তুলতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে,বিশেষ করে ফুলের ছবি,সূর্যের অস্ত যাওয়ার ছবি,চাঁদের ছবি আর সাদাকালো বিভিন্ন ছবি।বিভিন্ন বিষয়ে গল্প লিখতেও ভালো লাগে। হলের বারান্দায় আমার কিছু গাছ আছে এগুলোর সাথে মাঝে মাঝে সময় কাটাই। আমি স্টিমিটে জয়েন করি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। আমার এই স্বল্প সময়ে আমার বাংলা ব্লগে ক্যারিয়ার শুরু করতে পেরে খুবই আনন্দিত অনুভব করছি। আপনাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগছে।


| 250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |
Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness

OR






টাস্ক:
https://x.com/Junaid_2208/status/1961249830166225399
https://x.com/Junaid_2208/status/1961249202186436886