জেনারেল রাইটিং : অনুপস্থিতির ভীড়ে উপস্থিতির ছায়া
অনুপস্থিতির ভীড়ে উপস্থিতির ছায়া।
তুমি যখন ছেড়ে চলে যাচ্ছিলে, আমার ভেতরে তখনো এক ধরনের অদ্ভুত শান্তি ছিল। মনে হচ্ছিল, তোমাকে ভুলে যাওয়ার চাইতে সহজ কিছু হয়তো এই পৃথিবীতে আর নেই। আমি নিজেকে বোঝাতে পারছিলাম, মানুষ তো মানুষকে ছেড়েই যায়, তাই এ-যাওয়াটাও স্বাভাবিক, এর ভেতরে তেমন কোনো রহস্য নেই। কিন্তু ঘরে ফেরার পরই যেন পৃথিবীটা হঠাৎ অচেনা হয়ে গেল। দেখলাম, আমার চারপাশের যত রঙ, যত শব্দ, যত স্পন্দন—সব যেন তোমার সঙ্গেই গুটিয়ে চলে গেছে। যেন তুমি শুধু আমাকে ছেড়ে যাওনি, আমার পুরো পৃথিবীটাকেই সাথে করে নিয়ে গেছো।
তুমি চলে যাওয়ার পর আমার ছাদের ছোট্ট বাগানটায় আর কোনো নয়নতারা ফুটল না। গাছগুলো যেন অভিমান করে নিঃশব্দ দাঁড়িয়ে থাকে, ফুল ফোটাতে ভুলে গেছে। দক্ষিণের জানালা দিয়ে রোদ আর আগের মতো ঢোকে না; সেই সকালবেলার অভ্যাসটাও ভেঙে গেছে। ঘরের ভেতরে আলো ঢোকে ঠিকই, কিন্তু তার উজ্জ্বলতা নেই, তার উষ্ণতা নেই—সব যেন অচেনা, শূন্য, প্রাণহীন।
তুমি চলে যাওয়ার পর আমার শরীরও যেন বদলে গেল। আগে অভ্যস্ত আদরের অভাবে হঠাৎ করে জ্বর আসত, সামান্য যত্নে ভিজে যেতাম। এখন আর তেমন কিছু হয় না। আমি অসুখ খুঁজে বেড়াই, চাই তীব্র কোনো কষ্ট আমাকে জড়িয়ে ধরুক, যাতে তোমার অভাবটা ভুলে থাকতে পারি। অথচ শরীর যেন জেদ ধরে বসে আছে—আর কোনো জ্বর আসে না, কোনো অজুহাতেই তোমাকে ডাকতে পারি না। চায়ের কাপে তাড়াহুড়ো করে চুমুক দিলে ঠোঁট পুড়ে যেত, এখনো চেষ্টা করি, কিন্তু আর সেই দুর্ঘটনা ঘটে না। আমি বরং চাইতাম প্রতিটি চুমুকেই ব্যথা পাক, প্রতিটি নিশ্বাসে যন্ত্রণা পাক, তবুও কোনো না কোনোভাবে তোমাকে মনে করিয়ে দিক।
তুমি ছেড়ে যাওয়ার পর পার্কের পাঁচ বছরের ছোট্ট মেয়েটা—যে প্রতি বিকেলে বেলী ফুলের মালা বিক্রি করতে আসত, সে-ও আর আসে না। তার খুদে কণ্ঠের ডাক, তার বেলী ফুলের গন্ধ, সেসব সব মিলিয়ে হারিয়ে গেছে। আমি কতবার রোদে দাঁড়িয়ে থেকেছি, শুধু তোমার অপেক্ষায়, অথচ কোনোদিন তুমি আর ফিরে আসবেনা। রোদে দাঁড়িয়ে থেকেও আমার আর কখনো মাথাব্যথা হয়নি, কোনো আড়াল খুঁজতে হয়নি, কোনো অস্থিরতা আসেনি।
পার্কে গেলে আগে বসার জায়গা খুঁজতে হতো, একসাথে বসার মতো কোনো গোপন কোণা, কোনো শান্ত আড়াল। এখন পার্কে গেলেও সেই তাড়াহুড়ো নেই, সেই আগ্রহ নেই। যেখানে-সেখানে বসা যায়, কারণ বসার জন্য আর কারো হাত ধরার দরকার পড়ে না। তবুও সবকিছুর ভেতরে এক বিরামহীন শূন্যতা ঘুরে বেড়ায়।
তুমি সত্যিই ছেড়ে চলে গিয়েছিলে। কিন্তু আসল ব্যাপার হলো—তোমার অভাব আমাকে এক মুহূর্তও একা থাকতে দেয়নি। আমি একা থাকলেই তোমার অভাব এসে পাশে বসে যায়। তোমার অনুপস্থিতি এতটাই উপস্থিত যে, আমার নিঃসঙ্গতাও যেন ভিড়ে ঠাসা হয়ে ওঠে। আমি যতই দূরে যেতে চাই, ততই তুমি আমাকে ঘিরে ধরো—তোমার না থাকা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় উপস্থিতি হয়ে আছে।
আমার লিখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়ার জন্য ধন্যবাদ। অন্য কোনোদিন অন্য লিখা নিয়ে হাজির হবো। সে পর্যন্ত সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। আল্লাহ হাফেজ। |
---|
আমার পুরোনাম জোনায়েদ আহমদ । স্টিমিট আইডি @junaidahmed।
বাসা নেত্রকোনা সদর নেত্রকোনা । আমি অর্থনীতি বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি, বর্তমানে জবের পড়াশোনার পাশাপাশি স্টিমিট এ লিখালিখি করি। আমার প্রকৃতির ছবি তুলতে সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে,বিশেষ করে ফুলের ছবি,সূর্যের অস্ত যাওয়ার ছবি,চাঁদের ছবি আর সাদাকালো বিভিন্ন ছবি।বিভিন্ন বিষয়ে গল্প লিখতেও ভালো লাগে। হলের বারান্দায় আমার কিছু গাছ আছে এগুলোর সাথে মাঝে মাঝে সময় কাটাই। আমি স্টিমিটে জয়েন করি ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে। আমার এই স্বল্প সময়ে আমার বাংলা ব্লগে ক্যারিয়ার শুরু করতে পেরে খুবই আনন্দিত অনুভব করছি। আপনাদের সাথে কাজ করার সুযোগ পেয়ে খুব ভালো লাগছে।



250 SP | 500 SP | 1000 SP | 2000 SP | 5000 SP |

Support @Bangla.Witness by Casting your witness vote
VOTE @bangla.witness as witness

OR
টাস্ক:
https://x.com/Junaid_2208/status/1959068076600606902
https://x.com/Junaid_2208/status/1958833580827648476
https://x.com/Junaid_2208/status/1958833414976516244
আজকের এই ব্যস্ত সময়ে এই কথাগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা চারপাশে অসংখ্য মানুষের মাঝে বসবাস করি, তবুও নিজেকে একা মনে হয়। এ যেন উপস্থিতির ভিড়েও এক ধরনের নিঃসঙ্গতা। অন্যদিকে, যারা দূরে থাকেন, তাদের স্মৃতি ও ভালোবাসা আমাদের সঙ্গই করে। এই অনুভূতিকে খুব সহজ করে প্রকাশ করেছেন।
ধন্যবাদ ভাইয়া। আমার কেন জানি মনে হয় মানুষ যদি দূরে চলে যায় এবং সে বেঁচে থাকে তাহলে আমাদের অনুভূতি গুলো দিনে দিনে বাড়তেই থাকে, আমরা অনেকে বলি মুভ অন করতে, কিন্তু এই সময়টাতে মুভ অন করাও কঠিন হয়ে যায়।
শূন্যতার সত্যি অনেক অদ্ভুত। সময়ের সাথে সাথে মানুষ বদলে যায়। সেই সাথে বদলে যায় অনুভূতি। আপনার লেখাগুলো খুবই সুন্দর হয়েছে ভাইয়া।
ধন্যবাদ আপু 🙂