নব্বই দশকের শেষে জন্ম গ্রহনকারী মানুষের অনুভূতি।।

হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই,আশা করছি সবাই অনেক ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আমি মনের ভিতরের কিছু অনুভূতি শেয়ার করতে যাচ্ছি।

যারা নব্বই দশকের শেষে জন্ম গ্রহন করেছে তারা খুবই ভাগ্যবান মানুষ। তারা অনেক কিছু দেখেছে, জেনেছে ,শিখেছে এবং স্বাক্ষী হয়ে রয়েছে। যারা নব্বই দশকের শেষে জন্ম গ্রহন করেছে তারা প্রথম দিকে মোবাইল কি জিনিষ,ইন্টারনেট কি জিনিষ,কম্পিউটার কি জিনিষ জানতো না। তারা পাচঁ ছয় মাইল পায়ে হেটে স্কুল কলেজে গেছে। তারা পোষ্ট অফিসে চিঠি পোষ্ট করেছে আবার পোষ্ট অফিস থেকে চিঠি ও টাকা গ্রহন করেছে। আমার এখনো মনে আছে পোষ্ট মাস্টার বাড়ি বাড়ি সাইকেলে চড়ে বা পায়ে হেটে মানুষের বাড়িতে চিঠি দিয়ে আসতো। বিদেশ থেকে চিঠি আসলে চিঠি পড়ার জন্য শিক্ষিত মানুষের খুজঁ করতো। আবার দেখা গেছে বিদেশ থেকে নিজের বয়েস অডিও করে পাঠাতো। সন্ধার পরে বাড়ির উঠানে গোল হয়ে বসে সবাই সেই অডিও বয়েস শুনতো। ক্যাসেটে এক এক করে বাড়ির সবার না উল্লেখ করতো। যার নাম নিয়ে কথা বলতো তাকে মুচকি হাঁসি দিতে দেখতাম। এগুলো আমাদের সোঁনালী অতীত।

নব্বই দশকের মানুষ শুক্রবারে সাদা কলো টিভিতে সিনেমা দেখেছে। বাজার থেকে সিডি ভাড়া করে ব্যাটারি দিয়ে সিনেমা দেখেছে। শুক্রবারে সন্ধার পরে আলিফ লাইলা দেখার জন্য যাদের বাড়িতে টিভি আছে তাদের বাড়িতে ভিড় জমাতো। তখন গ্রাম থেকে ঢাকা আসাকে অনেক কঠিন কিছু মনে করা হতো। নব্বই দশকে পাচঁ পয়সা দশ পয়সা দিয়ে চকলেট কিনে খাওয়া যেত। হাতে হাতে মোবাইল পাওয়া,মোবাইল দিয়ে ছবি তুলা,বিডিও দেখা তখন অকল্পনীয় ছিল। রাখালেরা গরু নিয়ে মাঠে যাওয়ার সময় সাথে করে বাঁশি নিয়ে যেত। সারাদিন গরুর সাথে সাথে থাকতো আর মাঝে মাঝে গাছের নিচে বসে বাঁশি বাজাতো।

দুই হাজার সনের পরে আমাদের দেশে আধুনিকতার ছোয়াঁ লাগলো। ধীরে ধীরে সাদা কালো টিভির পরিবর্তে রঙিন টিভি আসতে লাগলো। এন্টিনিয়ার ফেলে দিয়ে ঘরে ঘরে ডিশলাইন লাগাতে শুরু করলো। ডিশলাইনের যুগ শেষ হয়ে ওয়াইফাইরের যুগ শুরু হয়ে গেল। দোকানে গিয়ে কথা বলার পরিবর্তে হাতে হাতে মোবাইল আসা শুরু হলো। তখন নোকিয়া মোবাইলের প্রচলন ছিল বেশি। বাটন ফোনের সাথে পাল্লা দিয়ে ক্যামেরা মোবাইল,অ্যান্ড্রয়েড ফোন আসা শুরু হলো। শুধু তাই নয় কম্পিউটার,ল্যাপটপ হাতে আসা শুরু হলো। পোষ্ট অফিসের গুরুত্ব কমে যেতে লাগলো। মানুষ টাকা পয়সা অনলাইনের মাধ্যমে আদান প্রদান করা শুরু করলো। এখন আর একটার রুটি আর এক টাকার চা পাওয়া যায় না। এখন আর গমের লাল আটা কেউ খায় না। এখন খায় নডুলস,পাস্তা,পিৎজ্জা,জুস,কফি।

এই যে নব্বই দশকের মানুষ গুলো তারা দুইটি দিকে অভিজ্ঞতা রাখে। মোবাইল ইন্টারনেট ছাড়া লাইফ, এগুলো সহ লাইফ তারা দুই ভাবেই এনজয় করেছে। বর্তমানের ছেলে মেয়েরা তো জন্ম হওয়ার কিছুক্ষন পরেই হাতে মোবাইল পায়। ফ্যান ছাড়া তারা একমিনিটও থাকতে পারে না। অথচ নব্বই দশকে বাংলাদেশের ৫০ ভাগ গ্রামেও বিদ্যুৎ যায়নি। আমরা বিদ্যুৎ সহ এবং বিদ্যুৎ ছাড়া দুই ভাবেই জীবন অতিবাহিত করেছি। লাকড়ির চুলায় রান্না করে খেয়েছি।

আমাদের অনুভূতি আর বর্তমানে প্রজন্মের অনুভূতি এক নয়। বর্তমানে যে জিনিষ গুলো হাতের খেলনা সে গুলো নব্বই দশকে স্বপ্ন ছিল। আমরা বিয়ের পরে পালকি দিয়ে বউ আনতে দেখেছি। আর বর্তমানে পালকি থাকে জাদুঘরে। নব্বই দশকে তেমন রাস্তাঘাট না থাকার কারনে পায়ের হেটে বরের সাথে বরযাত্রী যেত। তখন বুড়িগঙ্গা নদীতে জাল ফেলে মাছ ধরেছে। আর এখন পচাঁ পানর গন্ধে কাছে যাওয়া যায় না। বর্তমানের প্রজন্ম জানেও না বুড়িগঙ্গাতে মাছ পাওয়া যেত। বর্তমানের মানুষ চাষের মাছ খেতে খেতে নদীর মাছের কথা ভুলে গেছে। নব্বই দশকের মানুষ একটির পরিবর্তে অন্যটি ব্যবহার করার চিন্তা করে যেটা বর্তমান প্রজন্ম করে না। কারন তাদের সেই অভিজ্ঞতা নেই। নব্বই দশকের মানুষের দুই দিকেই অভিজ্ঞতা আছে।

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা,ডিজাইন করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।