কপাল যখন খারাপ হয়, সব কাজের মধ্যেই ভুল হয়।
হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আমি গতকালকে আমার নিজের সাথে ঘটে যাওয়া কিছু কথা আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি।
আগামী শুক্রবারে আমি বাড়িতে যাওয়ার প্লান করেছিলাম। সে অনুযায়ী সবকিছু রেডি করেছিলাম। কিন্তু গতকালকে সবকিছু উলটপালট হয়ে গেছে। গতকালকে লাঞ্চ করে অফিসে বসে বসে কম্পিউটারে পত্রিকা পড়ছিলাম। যেহেতু আমি বাইরে হোটেলের মধ্যে লাঞ্চ করেছিলাম, তাই অন্যান্য কলিগদের আগে অফিসের ভিতরে প্রবেশ করেছিলাম। ২ টা ১৫ মিনিটের দিকে হঠাৎ করে অফিসের সাউন্ডবক্সে এডমিন সেকশন থেকে এলান করে জানিয়ে দিলো যে, চার তারিখ রোজ সোমবার আমাদের অফিস অনিবার্য কারণবশত বন্ধ থাকবে। তবে সোমবারের দিনটি আগামী শুক্রবার এর সাথে সমন্বয় করে নেওয়া হবে। হঠাৎ করে এমন এলান শুনে আমি চমকে উঠলাম। কারণ আমি শুক্রবারে বাড়িতে যাওয়ার প্লান করেছিলাম। তারপর খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারলাম যে চার তারিখ রোজ সোমবার আমাদের অফিসে ইলেকট্রনিক কিছু কাজ করানো হবে। যার ফলে সোমবারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত অফিসের মধ্যে কোন পাওয়ার থাকবে না। আর যদি ইলেকট্রিসিটি না থাকে তাহলে অফিসের কেউ কোনো কাজ করতে পারবেনা। সেজন্য সোমবারে অফিস বন্ধ রেখেছে।
সাথে সাথে আমি সিদ্ধান্ত নিলাম তাহলে রবিবারে আমি গ্রামে চলে যাবো। যেহেতু শুক্রবারে অফিস খোলা থাকবে, শুক্রবারে যাওয়া সম্ভব নয়। সাথে সাথে ম্যানেজার স্যারের সাথে কথা বললাম। উনি বিভিন্ন ধরনের কথা বলে আমাকে অনুমতি দিলেন। যারা প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করে তারা বুঝে এক ঘন্টা ছুটি নিতে কত কথা শুনতে হয়। যাই হোক আমি সাড়ে চারটার সময় অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় গেলাম। আমার ইচ্ছা আমি সবসময়ই বাড়িতে আসা যাওয়ার সময় ট্রেনে যাতায়াত করি। এবারও বাড়িতে যাওয়ার সময় ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে বাসা থেকে বের হলাম। তবে এবার চিন্তা করলাম তিতাস ট্রেনে যাব না। কারণ তিতাস ট্রেনে প্রচুর পরিমাণে মানুষের ভিড় থাকে। আর সেটা প্রত্যেকটা স্টেশনে টপিজ দিয়ে ধীরে ধীরে ব্রাহ্মণবাড়িয়া পৌছায়। তাছাড়া সাড়ে চারটার সময় অফিস থেকে বের হয়ে তিতাস ট্রেন পেতে অনেক কষ্ট করতে হয়।
আমি বাসা থেকে বের হয়ে জ্যামে পড়ার ভয়ে লোকাল বাসে না চড়ে শীতল নামের একটি এসি বাসে চড়লাম। আমার গন্তব্য কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন। যেখানে আমার বাসা থেকে কমলাপুর যেতে মাত্র ৩৫ টাকা খরচ হয়, সেখানে আমি ৯০ টাকা দিয়ে কমলাপুরে পৌছালাম। সেখানে গিয়ে কাউন্টারে রাত সাড়ে নটায় মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের টিকেট চাইলাম। টিকেট মাস্টার আমাকে জানালো যে রবিবারে মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেনের অফ ডে। এ কথা শুনে আমি মাথায় হাত দিলাম। আমি কতটা বোকা বনে গেলাম, সারাদিন অনলাইনে থাকি অথচ কমলাপুর আসার আগে একবার চেক করে দেখলাম না, রবিবারে মহানগর এক্সপ্রেস ট্রেন আছে নাকি। অথচ আমি এটা জানি যে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে সাড়ে পাঁচটার সময় যে মহানগর এক্সপ্রেস ঢাকায় আসে, সেটা রবিবারে বন্ধ থাকে। অথচ সেটাই কমলাপুর এসে সাড়ে নটার সময় আবার চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা হয়।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার উদ্দেশ্যে পরবর্তী ট্রেন সাড়ে এগারোটার সময় ছেড়ে যাবে। সে ট্রেনটির নাম হল তুড়ণা নিশীথা।আমি সেই ট্রেনের জন্য বসে না থেকে বাসে যাওয়ার চিন্তা করলাম। তবে বাসের টিকিট কাটার পূর্বে আমি কমলাপুর থেকে গুলিস্তানে গেলাম। সেখানে গিয়ে আমাদের বাবুর জন্য একটি কাপড়ের ট্রলি কিনলাম। আমাদের যদিও একটি কাপড়ের ট্রলি আছে। তবে সেটা একটু বড়, যার ফলে ছোট একটি ট্রলি কিনলাম। তারপর গেলাম সানগ্লাস কিনতে। আমার আগের সানগ্লাসটি কিছুদিন আগে মিরপুর স্টেডিয়ামে বিপিএল খেলা দেখতে গিয়ে হারিয়ে ফেলেছিলাম। যার ফলে নতুন একটি সানগ্লাসের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করলাম। সেই চিন্তা থেকে নতুন সানগ্লাস নিলাম। দুইটার ছবি তুলে আমার ফ্রেন্ডকে সেন্ড করলাম। কারণ তার সাথে যোগাযোগ করে গুলিস্তানে গিয়েছিলাম। দুইটি জিনিসের দাম একত্রে যে টাকা নিল, তাতে আমার ফ্রেন্ড বলল আমি নাকি টোটালে ৭৫০ টাকা লস খেয়েছি। এ কথা শুনে মনটা একটু খারাপ হয়ে গেল। একদিকে তো ট্রেন পেলাম না, অন্যদিকে জিনিসপত্র কিনতে গিয়েও লস খেলাম। তারপর গেলাম বাসের টিকেট কিনতে। বাসের টিকেট নিয়ে সিটে বসলাম। বাসের ড্রাইভার জানালো বাস ছাড়তে ৩০ মিনিট লেট হবে। অথচ আমার চোখের সামনে রয়েল কোচ বাসটি চলে গেলো আমি ইচ্ছা করে সেটাতে উঠি নাই। এখানেও একটি ভুল করলাম। যাইহোক কিছু বলার ছিল না চুপ করে বসে রইলাম। তারপর যথা সময়ে বাস ছেড়ে দিল।
বাস ছাড়া এক থেকে দেড় মিনিট পরে এমন জ্যামে পড়লাম, যা আপনাদেরকে বলে বুঝানো যাবে না। পুরো এক ঘন্টা জ্যামের মধ্যে আটকে রইলাম। তারপর জ্যাম ছাড়ার পরে কিছুদূর যাওয়ার পর বাসের ইঞ্জিন থেকে একটি সাউন্ড আসতে লাগলো। বাসের অন্যান্য যাত্রীদের সেই সাউন্ডে কোন প্রবলেম হচ্ছিল না। তবে আমার মাথা খুব ব্যাথা করছিল। বাসের কন্ডাকটর কে ডেকে জিজ্ঞেস করলাম এটা কিসের সাউন্ড। সে জানালো এটা নাকি ইঞ্জিনের প্রবলেম। পুরাতন ইঞ্জিন ছিল, সেটা মেরামত করার পরে এমন সাউন্ড করে। এ জায়গায়ও কিছু বলার ছিল না। চুপ করে বসে রইলাম।
শনির আখড়ায় এসে ২০-২৫ মিনিট জমে পড়লাম, চিটাগাং রোড আসার পরে আবার জ্যামে পড়লাম। সেখানে আবার ৩০ মিনিট লেট। তারপর ধীরে ধীরে গাড়ি চলতে লাগলো। তবে ড্রাইভার গাড়ি টানতে পারছিল না, কারণ চিটাং রোড থেকে সরাইল বিশ্বরোড পর্যন্ত সম্পূর্ণটা সিঙ্গেল রোড। আর সিঙ্গেল রোডে গাড়ি ওভারটেকিং করা খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অবশেষে অনেক কষ্টের পরে রাত 11:30 টার সময় আমি ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে পৌছালাম। প্রায় সাড়ে চার ঘন্টা সময় লেগেছে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসতে।
তারপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া এসে কিছু খাবারের জিনিসপত্র কিনলাম, বাসায় আনার পরে জানতে পারলাম সেগুলোর মধ্যেও নাকি আমি বোকামির কাজ করেছি। এগুলো আর আপনাদের নিকট বলে আমি হাসির পাত্র হতে চায়না। কপাল খারাপ থাকলে যে কাজ করা হয় সেটাই বোকামির কাজ হয়ে যায়। গতকালকে সারাদিন আমি কিছু বোকামির কাজ করেছি। তবে আমি মনে করি এগুলো থেকে আমি শিক্ষা লাভ করেছি। ভবিষ্যতে এরকম কাজ করার আগে অবশ্যই আমি চিন্তাভাবনা করবো। বন্ধুরা আজকে এখান থেকেই বিদায় নিলাম, আপনারা সবাই যে কোন কাজ করার পূর্বে অবশ্যই চিন্তা ভাবনা করে কাজ করবেন। সবাইকে ধন্যবাদ।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
ফটোগ্রাফির বিবরণ:
ডিভাইস | মোবাইল |
---|---|
মডেল | realme-53 |
শিরোনাম | কপাল যখন খারাপ হয়, সব কাজের মধ্যেই ভুল হয়। |
স্থান | কমলাপুর , ঢাকা,বাংলাদেশ। |
তারিখ | ০৩ /০৩/২০২৪ |
কমিউনিটি | আমার বাংলা ব্লগ |
ফটোগ্রাফার | @joniprins |
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
সত্য কথা বলতে ভাই প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরি করতে হলে অনেক কথা শুনতে হয় আর অন্যের আন্ডারে কাজ করা অনেক কষ্টকর। যাই হোক অনেক ঝামেলা উতরাই আপনি ছুটির অনুমতি পেয়েছেন। বেশ কষ্ট হয়েছে আপনার। কপাল খারাপ থাকলে আসলেই ভাই চারিদিকে কপাল খারাপ থাকে। একটা কথা আছে না বিপদ আসলে চারিদিক থেকে বিপদ আসে। যাইহোক বেশ ভালো লাগলো আপনার মুহূর্ত গুলি পড়ে।
জি ভাইয়া ঝামেলা যখন শুরু হয়, তখন চারদিক থেকে ঝামেলা এসে হাজির হয়। যাই হোক সবকিছু সহ্য করতে হয়েছে। কিছুই করার ছিল না।
কপাল খারাপ হলে বা ঝামেলা শুরু হলে তখন ব্রেন ভালো কাজ করে না। যেমনটা আপনি অফিসের কথা শুনে ছুটে নিলেন কিন্তু ট্রেনেতে স্বস্তিতে যাবেন সেটাও হলো না । সেজন্য কোন ট্রেন কখন যাত্রা বিরতি রাখে এগুলো জেনে রাখলে এই সমস্যা হতো না। যাইহোক, ভোগান্তি ভালই হয়েছে আপনার বাসে যাওয়া অনেক কষ্টকর জ্যাম তারপর ধুলাবালি যাচ্ছে তাই অবস্থা। খুবই খারাপ একটা দিন পার করেছেন বুঝলাম।
জী ভাইয়া সারাদিন অনলাইনে থেকেও ট্রেনের শিডিউল টা দেখতে ভুলে গেছিলাম। যার ফলে অনেক লাঞ্ছনা ভোগ করতে হয়েছে।
কপাল যেখানে খারাপ হয় সেখানে সব দিক দিয়ে হয়। আসলেই আপনার ভাগ্যটা খারাপ ছিল। সেদিন আপনার যাতায়াত না করা উচিত ছিল। কোন কাজে যখন প্রথম দিকে বাঁধা পড়ে যায় তখন দেখবেন সব দিকে বাঁধা পড়ে যায়। এগুলো হচ্ছে সামনের বিপদের লক্ষণ। যা আপনাকে প্রতিটি ধাপে ধাপে অতিক্রম করে যেতে হয়েছে। শেষমেষ খাবার কিনলেন সেখানেও গন্ডগোল হয়ে গেল। আপনার গল্পটি পড়ে অনেক খারাপ লাগলো।
এরকম একটি গল্প শেয়ার করার জন্য প্রথমে আপনাকে অনেক ধন্যবাদ জানাই। আসলে আমাদের সকলের সাথে অনেকবার এরকম ঘটনা ঘটে গিয়েছে৷ যখন আমাদের ভাগ্য খারাপ থাকে তখন আমাদের সব কাজের মধ্যেই গন্ডগোল হয়ে যায়৷ যেমন আপনার সাথে আজকে ঘটেছে৷ প্রথমে যখন আপনার কাজের মধ্যে বাধা পড়ে যায় তখন আপনার যাতায়াত করা উচিত হয়নি৷ কারণ প্রথমে যখন আপনি বাধা পেয়ে গিয়েছেন, হয়তো পরবর্তীতে আরো বাধা পেতে পারেন এরকম চিন্তা ভাবনা করেননি৷ শেষমেষ যখন খাবার কিনলেন তাতেও গন্ডগোল হয়ে গেল৷ প্রতিনিয়ত আপনি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হলেন শুনে খুব খারাপ লাগলো৷