লেকচার- ভিটামিন বা খাদ্যপ্রাণ।

হ্যালো বন্ধুরা,সবাই কেমন আছেন। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে নতুন একটি লেকচার শেয়ার করবো। আশা করি মনযোগ সহকারে পড়লে অনেক উপকার পাবেন।

Link

আমাদের ডিএমএস কোর্সের দ্বিতীয় ক্লাসটি ছিল শুক্রবার বিকাল সাড়ে তিনটার সময় । কিন্তুু হঠাৎ একটি দুর্ঘটনা সব কিছু উলটপালট করে দেয়। হঠাৎ করে আমাদের বিকালের ক্লাসের প্রফেসর মারা যায়। যার ফলে বিকালের ক্লাসটি বন্ধ হয়ে যায়। সবার অনুরোধে বিকালের ক্লাসটি সকাল নয়টা থেকে দশটার মধ্যে করা হয়। নতুন একজন স্যার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তিনি আগেও এই সেন্টারে ক্লাস করেছেন। আবার তিনিকে আনা হয়েছে। তিনি খুব সুন্দর ভাবে বুঝিয়ে লেকচার প্রদান করেন।

স্যার প্রথমে ক্লাসে এসেই সবার সাথে কুশল বিনিময় করে জিঙ্গেস করেন,ফার্মকোলজী বইয়ের কোন বিষয় থেকে পড়ানো শুরু করবে। তখন সবাই ভিটামিনের কথা বললো। আমি আগের ক্লাস গুলোতে ছিলাম না। আমি নতুন হিসাবে প্রথম ফার্মকোলজীর ভিটামিন সাবজেক্ট টি পড়লাম। আর এই বিষয়ের উপরে সংক্ষিপ্ত একটি আলোচনা উপস্থাপন করছি।

Vitamin
ভিটামিন হলো এক ধরনের অত্যন্ত প্রয়োজনীয় খাদ্য উপাদান। যা খুব অল্প পরিমাণে প্রয়োজন হয়। তবে যাহা ব্যতীত আমাদের শরীরের বৃদ্ধি ও স্বাভাবিক কার্যবলী বন্ধ হয়ে যাবে।

ভিটামিনের প্রকারভেদ

প্রথমতো ভিটামিনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে-

• Fat Soluble Vitamin
• Water Soluble Vitamin

Vitamin A, D, E এবং K হলো ফ্যাট সলিউবল ভিটামিন। এই ধরনের ভিটামিন ফ্যাট বা চর্বিতে মিশ্রন হয়ে থাকে। শরীর এই ভিটামিন গুলোকে ফ্যাটি টিস্যু এবং লিভারে দিনের পর দিন বা একমাসও জমিয়ে রাখতে পারে।

Vitamin C এবং সকল প্রকার B Vitamin হলো ওয়াটার সলিউবল ভিটামিন। এই ভিটামিন গুলো পানিতে মিশ্রিত হয়ে থাকে। যার ফলে অতিরিক্ত পরিমাণে জমা হলে মূত্রের সাথে বের হয়ে যেতে পারে।

এখন কোন কোন জিনিষে কি কি ভিটামিন থাকে এবং সে গুলোর অভাবে কি রোগ হতে পারে সে গুলো বিস্তারিত বর্ণনা করা হলো।

Vitamin A
ডিম, দুধ,সবুজ সবজি,মেথি,আম,পেঁপে, ছোট মাছ,মাছের তেল, গাজর, কলিজা, কড লিভার অয়েল ইত্যাদি খাবারে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন এ থাকে। এর অভাবে রাতকানা রোগ সহ দৃষ্টি শক্তি কমে যায়। একই সাথে এই উপাদান ত্বকের সুস্থতার জন্য খুবই গুরুত্বপুর্ণ।

Vitamin B
৮টি ভিটামিনের উপাদান নিয়ে তৈরী হয়েছে একটি গ্রুপ। আর এই গ্রুপের নাম হলো ভিটামিন বি। এদের প্রতিটির কাজ আলাদা ,উৎসও আলাদা। কিন্তু এদের পারস্পরিক সম্পর্কের কারনে এদের মিশ্রণে ফুড সাপ্লিমেন্ট তৈরি করা হয়েছে। যাকে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স বলা হয়। যথা Vitamin B1,Vitamin B2,Vitamin B3,Vitamin B5,Vitamin B6,Vitamin B7,Vitamin B9,Vitamin B12.

• Vitamin B1
  ইষ্ট,খোসা সহ চাল,গম,ডাল,মাংস,দুধ, সূর্যমুখীর বীজ, ফুলকপি, ডিম, কলিজা ইত্যাদিতে Vitamin B1 পাওয়া যায়। এর অভাবে বেরিবেরি রোগ হয়। ভিটামিন বি১ এর অপর নাম থিয়ামিন।

• Vitamin B2
  পাতাসহ শাকসবজি,ডাল,মাংস, কলা, ঢেঁড়স, দুধ, দই, মাছ, মাংস, ডিম ইত্যাদিতে ভিটামিন বি২ পাওয়া যায়। এর অভাবে ঠোটের কোণায় এবং জিহ্বায় ঘা হয়। ভিটামিন বি২ এর অপর নাম রিবোফ্লাভিন।

• Vitamin B3
  মুরগি ও গরুর মাংস, দুধ, ডিম, টমেটো, ব্রকলি, গাজর ইত্যাদিতে ভিটামিন বি৩ পাওয়া যায়। এর অভাবে পেলাগ্রা নামের এক ধরনের রোগ হয়। ভিটামিন বি৩ এর অপর নাম নিয়াসিন।

• Vitamin B5
  মাংস, ব্রকলি, টকদই ইত্যাদিতে ভিটামিন বি৫ পাওয়া যায়। যা হরমোন ও শক্তি উৎপাদন এর প্রধান কাজ করে। এর অভাবে প্যারেস্থেসিয়া রোগ হয়।

• Vitamin B6
  ডিম,ডাল, মাছ, গরুর কলিজা, কলা, বাদাম ইত্যাদিতে ভিটামিন বি৬ পাওয়া যায়। যা লোহিত রক্ত কণিকা তৈরির কাজ করে। এর অভাবে খিচুনী,মাথা ধরা,চর্মরোগ,মাথা ঘুরানো ও রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।

• Vitamin B7
  ডিমের কুসুম, কলিজা, ব্রকলি, পালং শাকে প্রচুর পরিমাণে বিটামিন বি৭ পাওয়া যায়। এর অভাবে ত্বকে ও ক্ষুদ্রান্ত্রে সমস্যা দেখা দিতে পারে। ভিটামিন বি৭ অপর নাম হচ্ছে বায়োটিন।

• Vitamin B9
  কলিজা,যে কোন ধরনের শিম জাতীয় খাদ্য, মটরশুঁটি ইত্যাদিতে ভিটামিন বি৯ পাওয়া যায়। যাহা DNA ও RNA তৈরিতে কাজ করে। এর অভাবে সন্তান বিকলাঙ্গ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

• Vitamin B12
  কড লিভার অয়েল,মাছ,ডিম,দুধ ইত্যাদিতে ভিটামিন বি১২ পাওয়া যায়। এর অভাবে এনেমিয়া,হাত পা জ্বালাপোড়া,বন্ধা এবং স্নায়ুর রোগ হতে পারে। এর অপর নাম সায়ানোকোবালামিন।

Vitamin C
ভিবিন্ন টক ফল যেমন আমলকি,লেবু,টমেটু,পেয়ারা,কমলা, মাল্টা, জাম্বুরা, শাক সবজি,ফুলকপি,বাধা কপি,পালং শাক ইত্যাদিতে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন সি পাওয়া যায়। যাহা হাড়ের গঠন, ক্ষত পূরণসহ অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে। এর অভাবে স্কার্ভি রোগ, ঘা শুকাতে দেরি ও বার বার ইনফেকশন হতে পারে।

Vitamin D
আমাদের শরীরে ভিটামিন ডি নিষ্ক্রিয় অবস্থায় থাকে। সূর্যের আলোর সংস্পর্শে এটি সচল হয়। এছাড়া মাছের তেল,ডিমের কুসুম,দুধ,মাশরুম, গরুর কলিজাতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায়। এর অভাবে হাড়ের রোগ রিকেট ও বড়দের অষ্টিওমেলেশিয়া রোগ হয়।

Vitamin E
ডিমের কুসুম,দুধ,কাঠ বাদাম ইত্যাদিতে ভিটামিন ই পাওয়া যায়। যা ত্বককে সুস্থ রাখা ও হাড়ের গঠনেও সাহায্য করে।এর অভাবে ত্বকের স্বাস্থ্য নষ্ট হতে পারে।

Vitamin K
কুমড়ো, ডুমুর, নানা পদের সবুজ শাক সবজি ইত্যাদিতে ভিটামিন কে পাওয়া যায়। এর অভাবে রক্ত জমাট বাধতে দেরি হয়। সুতরাং ভিটামিন কে এর ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ।

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা,ডিজাইন করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।