আমাদের পহেলা বৈশাখ পালন।।

হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি সবাই অনেক ভালো আছেন। আমি জনি প্রিন্স আজকে আবার আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আপনাদের সাথে আমাদের পহেলা বৈশাখ পালনের অনুভূতি শেয়ার করবো। আশা করি ব্লগটি আপনাদের সবার কাছে অনেক ভালো লাগবে।

গত কাল ঘুম থেকে উঠে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ফেসবুক অপেন করে দেখি সবাই পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। যেদিকে যায় সেই দিকেই শুধু পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা নববর্ষ পালন করার উত্তেজনা। টাইম লাইনে দেখছি সবাই পান্তা ইলিশের ফটোগ্রাফি শেয়ার করছে। সবাই বলছে পহেলা বৈশাখ আমাদের হাজার বছরের ঐতিহ্য,আর পান্তা ইলিশ না খেলে খাঁটি বাঙ্গালি হওয়া যায় না। ফেসবুকে ঘোরাঘুরি করে টেনশনে পড়ে গেলাম। পান্তা ভাত তো ঘরে আছে,এখন ইলিশ পাবো কোথায়। লাফ দিয়ে খাট থেকে নেমে গেন্জিটা পড়ে দৌড়ে বাজারে গেলাম। খাঁটি বাঙ্গালি হতে হলে পান্তা ইলিশ খেতে হবে।

বাজারে গিয়ে দেখি এ মা... বাজারে তো তেমন কোন মানুষই নেই, ঈদের ছুটিতে অধিকাংশ দোকান পাট বন্ধ। মাছের বাজারে গিয়ে দেখি কয়েক জন মাছ ব্যবসায়ী কিছু চাষের মাছ নিয়ে বসে আছে। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে দেখি এক গলির ভিতর কিছু মানুষের ভিড়। ব্যাপারটা কি জানার জন্য আরেকটু সামনের দিকে এগিয়ে গেলাম,গিয়ে দেখি এক লোক দুই তিন হালি জাতীয় মাছ ইলিশ নিয়ে বসে আছে। বড় সাইজের কিছু ইলিশের দাম হাকাচ্ছে চার হাজার টাকা কেজি,আর ছোট সাইজের কিছু ইলিশের দাম হাকাচ্ছে ৩২০০ টাকা কেজি। দাম শুনে আমি মাথায় পানি দিয়ে চুপ করে চলে আসলাম। পকেটে আছে পাচঁশো টাকা আর ইলিশের কেজি চার হাজার টাকা,😉। বর্তমানে ইলিশ মাছ ধরা নিষিদ্ধ রয়েছে। যার ফলে ইলিশ মাছ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। নিষিদ্ধ টাইমের আগে যারা ইলিশ ধরে বরফ দিয়ে সংরক্ষন করেছে,তারাই এখন বেশি দামে ইলিশ বিক্রয় করছে। তারপরও খাটি বাঙ্গালি হওয়ার জন্য কিছু মানুষ বেশি টাকা দিয়েই কিনে নিয়ে যাচ্ছে। যারা কিনে নিয়ে যাচ্ছে তারা অঢেল টাকার মালিক,আমি তো আর অঢেল টাকার মালিক নয়,তাই এখন খাটি বাঙ্গালি হওয়ার আশা ছেড়ে দিলাম। ইলিশ ছাড়া খালি হাতেরই বাজার থেকে বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম।

দুর থেকে তাকিয়ে দেখি বাসার নিচে কিছু মানুষ জড়ো হয়ে আছে। চিন্তা করলাম বিষয়টা কি..? এত মানুষ জড়ো হয়ে আছে কেন...? অনেক কিছু চিন্তা ভাবনা করে এক পা দুই পা করে এগিয়ে আসলাম। এসে দেখি এক লোক বড় সাইজের একটি সিলভারের পাতিলে ইলিশ মাছের বাচ্ছা বিক্রয় করতেছে। যাকে সহজ ভাষায় বলা হয় জাটকা ইলিশ। অনেক মানুষ খাটি বাঙ্গালি হওয়ার আশায় এই জাটকা ইলিশ কিনে নিয়ে যাচ্ছে। আমি কিছুক্ষন দাড়িয়ে থেকে পর্যবেক্ষন করলাম। আর কিছুক্ষন দাড়িয়ে থাকলে সিলভারের পাতিলে বরফ ছাড়া আর কিছু থাকবে না। দ্রুত মামাকে জিঙ্গেস করলাম,মামা জাটকা কত টাকা কেজি,তিনি বললেন সস্তা দামে ছেড়ে দিয়েছি,পাচঁশো টাকার মাছ এখন চারশো টাকা। আমি বললাম মামা আজকে পহেলা বৈশাখ এগুলো নিয়ে বাজারে গেলে এক হাজার টাকা কেজি ধরে বিক্রয় করতে পারবেন। তিনি বললেন মামা এগুলো নিয়ে বাজারে গেলে পুলিশ আমাকে জেলে পাঠাবে। আমি বললাম ও আচ্ছা তাই না কি,ঠিক আছে আমাকে হাফ কেজি জাটকা ইলিশ দেন। খাঁটি বাঙ্গালি হতে হলে আজকে পান্তা ইলিশ খেতেই হবে। ছোট হলে কি হয়ছে, মাছ তো মাছই।

জাটকা ইলিশ নিয়ে বাসায় যাওয়ার পরে বউ একটু ভ্রু কুচকে তাকালো। আমি তার প্রতিক্রিয়া দেখে বললাম, বাজারে এর থেকে বড় আর ইলিশ নেই। এখন ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ,তাই বাজারে কোন ইলিশ মাছ নাই,এগুলো অনেক কষ্ট করে খুঁজে বের করে আনছি। বউ কিছু বললো না, বাবুকে আমার কোলে দিয়ে মাছ কাটতে চলে গেলো। কয়েকটা মাছ কাটার পরে আমাকে ডেকে বললো মাছ গুলো অনেক ভালো। যদিও ছোট তবে ভাজি করে খেলে মজা পাওয়া যাবে। বউয়ের এমন কমেন্ট পেয়ে মনটা একটু শান্তি পেলো। কিছুক্ষন পরে মাছ কাটা শেষ হলে মাছ ভাজা শুরু হলো আহ কি ঘ্রান,ছোট কাঁচা মরিচে যেমন ঝাল বড় গুলোতেও তেমন ঝাল। ইলিশ মাছের বাচ্ছা বলে কেউ আবার উড়িয়ে দিবেন না। ছোট হোক বড় হোক ইলিশ মাছ তো....।

ইলিশের ঘ্রানে ঘরে থাকা দায়। কখন পান্তা দিয়ে ইলিশ খাবো..আর কত ধৈর্য ধরবো। বাবুকে খাটের উপরে শুইয়ে আমি পেয়াজ,কাঁচা মরিচ,পান্তা ভাত রেডি করলাম। কিছুক্ষন পরে বউ কড়কড়া ভাজা জাটকা ইলিশ এনে দিলো। আমি পান্তা ভাতের সাথে জাটকা ইলিশ খেয়ে তৃপ্তির ঢেকুর দিলাম.. আহ কি স্বাদ। এখন নিজেকে খাঁটি বাঙ্গালি মনে হচ্ছে,হা হা হা।

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।