আমরা কিভাবে যেন নিজেদের অজান্তেই অনেকটা যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি।

হ্যালো,

আমার প্রিয় স্টিমিট বাসি,কেমন আছেন সবাই। আশা করছি সবাই অনেক ভাল আছেন। আজকে আমি আবার আপনাদের মাঝে হাজির হয়ে গেলাম নতুন একটি পোষ্ট নিয়ে। আজকে একটি বিষয় নিয়ে নিজের কিছু অনুভূতি শেয়ার করবো।

আমি গত এক বছর ধরে তেমন ফেসবুকে যায় না। তার কারন হলো ফেসবুকিং করার মত আমার নিজের কোন মোবাইল নেই। একটি মোবাইল কিনবো কিনবো করেও কেনা হচ্ছে না। যখনই চিন্তা করি একটি নতুন মোবাইল নিবো তখনই সামনে বিরাট বড় একটি সমস্যা এসে দাড়ায়। যার ফলে আর আর কেনা হয় না। বাসায় ল্যাপটপ আছে তবে সকাল সাড়ে আটটার সময় বাসা থেকে বের হলে রাত দশটার সময় বাসায় ফেরা হয়। দশটার সময় বাসায় ফিরে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে তখন ল্যাপটপ অপেন করে ফেসবুকিং করতে আর মন চাই না। স্টিমিটের টুকটাক কাজ করতে করতেই বারোটা একটা বেজে যায়। আবার সকালে অফিসে যাওয়ার টেনশন নিয়ে ঘুমাতে যেতে হয়। আর অফিসে যে কম্পিউটার আছে সেটাতে ফেসবুকের পেইজ লোডিং হয় না। তার কারন আমাদের কোম্পানির আইটি বিশেষজ্ঞরা কিভাবে যেন কোম্পানির সকল কোম্পিউটারে কিছু কিছু সাইট বন্ধ করে রেখেছে। আর সেটার মধ্যে ফেসবুকও রয়েছে। এই সাইটটি বন্ধ করার কারনও আছে। অনেক স্টাফ কাজ বাদ দিয়ে সারাদিন ফেসবুকিং এ সময় নষ্ট করে। যার ফলে কোম্পানির ম্যানেজমেন্ট কিছু সাইট বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।

আজকে গ্যাস ও বৈদ্যুতিক কারনে আমাদের অফিস বন্ধ রয়েছে। যার ফলে আজকে সকালে ল্যাপটপের মাধ্যমে ফেসবুকটা অপেন করি। অপেন করার সাথে সাথে খুব বড় একটি দুঃসংবাদ দেখতে পেলাম। আর সেটা হলো গতকাল আমার একজন শ্রদ্ধেং টিচার মারা গেছেন। তিনি কিছুটা অসুস্থ ছিলো আমার কয়েকজন বন্ধুরা বলে ছিলো শ্রদ্ধেয় স্যারকে দেখতে যেতে বা ফোন করে খুঁজখবর নিতে। কিন্তুু আমি এমন হতবাগা দেখতেও যেতে পারলাম না আর ফোনও করা হয়নি। এমনকি না জানার কারনে জানাযায়ও অংশগ্রহন করতে পারি নাই।

আমাদের হাতে যখন মোবাইল ছিল না,তখন আমরা বিভিন্ন আত্নীয় স্বজনের বাসায় কিছুদিন পর পর স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে তাদেরকে দেখে আসতাম। তাদের খুঁজখবর নিতাম। কিন্তুু এখন হাতে মোবাইল আছে,অনলাইনে কথা বলা যায়। কথা বলতে তেমন অর্থও খরচ হয় না। তারপরও আত্নীয় স্বজনের সাথে তেমন কথাবার্তা হয় না। বছরে একবারও তাদের বাড়িতে যাওয়া হয় না। আমরা কতটা যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। আমার খালারা,ফুফুরা,মামারা আমাকে খুব আদর করতো। তারা মাঝে মাঝে মায়ের কাছে ফোন দিয়ে আমার নামে নালিশ করে আমি নাকি দুনিয়ায় বেঁচে নাই। আগে তাদেরকে দুইদিন পরপর ফোন দিতাম,কথা বলতাম আর এখন তাদেরকে ভুলে গেছি।

ফুফুরা ফোন দিয়ে কান্নাকাটি করে,খালারা ফোন দিয়ে বিভিন্ন কথা বলে। আমার নানি গত ছয় তারিখ হজ্বে গেছে। নানি হজ্বে যাওয়ার আগে আমাকে যেতে বলেছিলো কিন্তুু ব্যস্ততার কারনে যেতে পারি নাই। বলছে ফোন দিতে তাও কেন জানি ফোন দেওয়া হচ্ছে না। কত বন্ধু বান্দব রয়েছে তাদের সাথে মাসের পর মাস কথা হয় না। আমাদের বন্ধুদের ইমো গ্রুপ,হোয়াটসআপ গ্রুপ রয়েছে। অনেকেই কল দেয় ম্যাসেজ দেয়,ম্যানশন দেয়। কিন্তুু আমি কেন জানি তাদের ম্যাসেজের রিপলে দিতেও মন চাই না। কেন এমন হয়ে যাচ্ছি সেটা নিজেও জানি না।

আগে ঢাকা থেকে বাড়িতে গেলে সন্ধার পরে বা সকাল বেলা সারা পাড়া মহল্লা সবার ঘরে ঘরে যেতাম। তাদের সাথে কথা বার্তা বলতাম। সবাইকে দেখে কত ভালো লাগতো। আর এখন বছরে এক থেকে দুইবার গ্রামে যাওয়া হয়। গ্রামে গেলেও ঘর থেকে বের হয় না। দুইএকদিন থাকলে কুয়ার ব্যাঙ হয়ে থেকে আবার ঢাকায় চলে আসি। আমার দেখা কত মানুষ দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে তার কোন হিসাব নেই। যে মানুষ গুলোর সাথে ঘন্টার পর ঘন্টা সময় কাটিয়েছি,যে মোড়ে ব্রিজের উপরে,যে বাজারে,পুকুরের ঘাটলায় না গেলে দিন অতিবাহিত হতো না সেই জায়গা গুলো আজকে ভুলে যেতে বসেছি। যান্ত্রিক এই শহরে থেকে আমি নিজেও যান্ত্রিক হয়ে যাচ্ছি। আমি জানিনা আমার মত আর কেউ এমন আছে নাকি। এই সমস্যা গুলো থেকে বের হওয়া উত্তর আমার জানা নেই।

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা,ডিজাইন করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।