দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নমুনা।।
বাংলা ভাষা আমার অহংকার
আমি কোন রাজনীতিবিদ নয়। আর আমি কোন দলের রাজনীতিও করি না। আমি একজন সাধারন মানুষ, দেশের সাধারন একজন নাগরিক। আমি অন্যের কথায় তেমন কান দেয় না। যে কোন তথ্য যাচাই বাছাই করা ছাড়া বিশ্বাস করি না। বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন কথা বলে, তিলকে তাল বানিয়ে বলে। আমি এসব বিশ্বাস করি না। বাস্তবতা অনেক কঠিন, মানুষের কথা আর বাস্তবতার মধ্যে অনেক পার্থক্য। গত সাপ্তাহে পুরোটাই আমি গ্রামের বাড়িতে ছিলাম। আর ইন্টারনেট বন্ধ থাকার কারনে তেমন কোন খোঁজ খবরও পায়নি। সরকারের পক্ষে প্রতিমন্ত্রী সাহেব জোর গলায় বলছে দুর্বৃত্তদের নাশকতার কারনে দেশের প্রধান ব্রডব্যান্ড লাইন পুড়ে গেছে। যার ফলে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। অথচ গতকাল পত্রিকায় দেখলাম সরকারই ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়েছে। তার প্রমান হলো নাশকতা হয়েছে বৃহস্পতিবারে ও শুক্রবারে আর ইন্টারনেট বন্ধ হয়েছে বোধবারে দিনগত রাতে বারোটার পর থেকে। যায়হোক এসব নিয়ে আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। দেশের যা হচ্ছে এটা কারো কাম্য নয়। ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতার জন্য মরণ কামড় বসিয়েছে। তারা ক্ষমতার জন্য যে কোন কিছু করতে পারে।
একটি আর্ন্তজাতিক রিপোর্টে দেখলাম বাংলাদেশের উল্লেখ যোগ্য হারে ধনীর সংখ্যা বাড়ছে। আর ধনীদের প্রধান অস্ত্র হলো দুর্নীতি। বাংলাদেশের দুর্নীতি নিয়ে প্রমানপত্র সহ আমি বেশ কয়েকটি ব্লগ শেয়ার করেছি। তাই আর আজকে সেদিকে যাচ্ছি না। আজকে আমাদের দেশের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলবো। দেশের উন্নয়ন কিভাবে হচ্ছে। মূলত আমাদের দেশের উন্নয়ন হচ্ছে না কি দুর্নীতির উন্নয়ন হচ্ছে। সেটা নিয়ে কথা বলবো। দিকে দিন আমাদের দেশের মুদ্রার দাম কমে যাচ্ছে। এখন এক ডলার সমান সমান বাংলাদেশর ১২০ টাকার উপরে। চিন্তা করেন অর্থনীতি কোথায় যাচ্ছে। বর্হিবিশ্বে বাংলাদেশের টাকার মান কমে যাচ্ছে,অর্থাৎ মুদ্রাস্ফীতি হচ্ছে। আর মুদ্রাস্ফীতির কারনে মূল্যস্ফীতি হচ্ছে। বিষয়টা আমি ক্লিয়ার করে বলছি।
আমরা আগে বাজার থেকে আলু কিনতাম পাঁচ টাকা কেজি ধরে। গরুর মাংস কিনতাম ৮০ টাকা কেজি, ডিম ছিল ১২ টাকা হালি, দুধ ছিল ১৬ টাকা কেজি, পেঁয়াজ ৩০ টাকা কেজি, তেল ৫০ টাকা কেজি। সবজি তরকারি ২০ টাকার উপরে ছিল না। ১০০ টাকা নিয়ে বাজারে গেলেই ব্যগ ভরে বাজার নিয়ে আসা যেতো। সবাই হাঁসি খুশিতেই জীবন যাপন করতো। ধীরে ধীরে আমাদের দেশে উন্নয়নের ছুঁয়া লাগলো। কাঁচা রাস্তা পাকা হলো। জাগায় জাগায় ব্রিজ কালভার্ট হলো। চিকন রাস্তা মোটা হলো। জাগায় জাগায় ফ্লাইওভার হলো। সেই সাথে পাল্লা দিয়ে দুর্নীতিও বাড়লো।
কুমিল্লা সিলেট হাইওয়ে রোড থেকে পায়ে হেঁটে আমাদের গ্রামে প্রবেশ করতে মাত্র পাঁচ থেকে সাত মিনিট সময় লাগে। অটো বা রিকশা দিয়ে দুই তিন মিনিট সময় লাগে। আমাদের গ্রামে হাইস্কুল কলেজ থাকার কারনে গ্রামে প্রবেশ করার রাস্তাটা পাকা করার জন্য বাজেট আসলো। যাদের কাছে বাজেট আসলো তারা অর্ধেক রাস্তায় আস্তো ইট বিছিয়ে দিলো আর অর্ধেক রাস্তায় ইটের কংক্রিট দিয়ে রোলার দিয়ে চাপ দিয়ে প্রথম বাজেটের টাকা শেষ করে ফেললো। তারপর সেভাবেই বেশ কয়েক বছর অতিক্রম হয়ে গেলো। রাস্তা নিয়ে আলোচনা সমালোচনার পরে আবার বাজেট আসলো। পুরাতন ইট কংক্রিট তুলে ফেলে দিলো। নতুন করে কাজ শুরু করলো। এবার হাইওয়ে রোড থেকে কলেজ পর্যন্ত পিচ ঢালাই হলো। গ্রামের ভিতরের বাজার পর্যন্ত বাজেট হলেও কলেজ পর্যন্ত এসে বাজেট শেষ হয়ে গেলো। হায়েওয়ে রোড থেকে কলেজ পর্যন্ত যে পিচ ঢালাই হয়েছে,সেটা তেমন ভালো হয়নি। বৃষ্টিতেই রাস্তা ও পিচ নষ্ট হয়ে গেছে।
সেই রাস্তা নিয়ে আবার আলোচনা সমালোচনা শুরু হলো। বৃষ্টির উপর দুষ চাপিয়ে সেইবার রেহায় পেয়ে গেলো। এভাবে বেশ কয়েক বছর অতিক্রম হলো। নির্বাচনের সময় আসলো। সবাই বলতে লাগলো এবার পাশ করলে হাইওয়ে রোড থেকে সারা গ্রামের রাস্তায় পিচ ঢালাই হবে। নির্বাচনে আগের সদস্যরাই রয়ে গেলো। বৃষ্টিতে যেন রাস্তা না ভাঙ্গে সে জন্য রাস্তার দুই পাশে গাছ লাগানোর বাজেট হলো। কিছু গাছ লাগিয়ে ছবি তুলা হলো,পত্রিকায় ছবি ছাপা হলো,বাজার পর্যন্ত রাস্তা পাকা হলো। কিন্তুু বৃষ্টি হলে পাকা রাস্তার আর পাকা থাকে না। কাঁচা রাস্তা হয়ে যায়। আর রাস্তার পাশে যে কয়েকটা গাছ লাগিয়েছিল সে গুলো অস্তিত্বও নাই। কয়েকটা কালভার্ট আছে জোড়াতালি দিয়ে চলছে।
এবার আসি মূল কথায়। একই রাস্তা করতে কয়বার বাজেট হলো....চারবার। অথচ যদি প্রথমবাই বাজেটের টাকা ঠিকঠাক ভাবে কাজে লাগাতো। তাহলে প্রথম বারেই রাস্তা সুন্দর হয়ে যেতো। এভাবে দেশের প্রত্যেকটা সেক্টরে দুর্নীতি হয়। প্রত্যেকটা কাজে একবারের জাগায় চারবার পাঁচবার বাজেট হয়। যারা কাজ করে তাদের কোন জবাবদিহিতা নেই। কোন রকম একটা কাজ করে বাজেটের অর্থ ঠিকাদার তুলে নেয়। অনেক সময় নিউজ পেপারে দেখি অর্ধেক কাজ করেই ঠিকাদার কোম্পানি বাজেটের অর্থ মন্ত্রনালয় থেকে তুলে ফেলে। এমন দুর্নীতির হাজার হাজার প্রমান আমরা দেখেছি,এখনও দেখতেছি। পদ্মা সেতু করতে কয়েকবার বাজেট হয়েছে,রুপপুরের বালিশ কান্ড,পর্দা কান্ড, সেনাবাহিনীর খাট কান্ড,কক্সবাজারের চেয়ার টেবিল কান্ড, গাছ কান্ড সহ অনেক দুর্নীতির প্রমান রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছে তার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক,হেলিকপ্টারে যাতায়ত করে। বেনজির,মতিউর, সম্রাট,পাপিয়া সহ অনেকের নাম আপনারা জানেন। আর উপর লেভেলে যারা আছে তাদের পিছনের আমলনামার খোঁজ করলে চিন্তা করেন কি হবে।
আর এককাজে তিনবার চার বার বাজেটের টাকা কোথায় থেকে আসে। সরকার কি তার বাবার সম্পতি বিক্রয় করে টাকা আনে.....নাহ । বিদেশ থেকে ঋণ করে। বিদেশের ঋণ পরিশোধ করতে জনগনের রক্তচোষা শুরু করে। প্রত্যেকটা জিনিষের মধ্যে অধিক হারে টেক্স বসাই। যায় ফলে ৫ টাকার আলু হয়ে গেছে ৬০ টাকা। ১০০ টাকার গরুর মাংস হয়ে গেছে ৮০০ টাকা। ২০ টকা কেজির চাল হয়ে গেছে ৮০ টাকা, ৩০ টাকা কেজির পেঁয়াজ হয়ে গেছে ১২০ টাকা। ৫০ টাকার চিনি ১৬০ টাকা। অথচ যদি জবাবদিহিতা থাকতো তাহলে এত দুর্নীতি হতো না,মুদ্রাস্ফীতির ও মূল্যস্ফীতি হতো না। এখন দেশের জনগন বাজারে গেলে চোখ দিয়ে রক্ত পড়ে। কেউ এক কেজি চাউল কিনতে শরীরের রক্তকে পানি করে। আর কেউ দুর্নীতির টাকায় হেলিকপ্টারে চড়ে। আর ক্ষমতাসীনরা বলে দুর্নীতির বিরুদ্ধে না কি জিরো টলারেন্স জারি করেছে। পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক,বেনজির সাহেব একটি উপজেলার সমান সম্পতির মালিক, এনবিআরের কর্মকর্তার ছেলে ১৫ লাখ টাকা দিয়ে ছাগল কিনে, পিএসসির ড্রাইভার আবেদ আলী কয়েক শত কোটি টাকার মালিক আর উপর লেভেলে গেলে হার্ট এ্যাটার্ক হয়ে যাবে। তাই উপর দিকে ভয়ে যায় না। এই হলো দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নমুনা।
ধন্যবাদ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্সের নমুনা লেখাটির মধ্যে আমাদের দেশের সার্বিক চিত্র তুলে ধরেছেন। বেশ ভালো হয়েছে লেখাটি। যে যেভাবে পারছে লুটপাত করছে।এক কাজের বাজেট বারবার বাড়াচ্ছে। মধ্যবিত্তের বাজারে যাওয়াই নুশকিল হয়ে দাড়িয়েছে।দেখার কেউ নেই। সবমিলে ভালো লেগেছে লেখাটি। আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স জারি করছে,অথচ দুর্নীতিতে দেশ চেম্পিয়ান হয়ে বসে আছে। এই হলো অবস্থা। ধন্যবাদ।
দুর্নীতি নিয়ে ভালো লিখেছেন ভাইয়া।আসলেই মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্তদের বাজারে যাওয়া মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছে বর্তমান সুচিয়েশনে। যার যার মতো করে ব্যবসায়ী ,সিন্ডিকেট সরকারি বিভিন্ন লোকজন লুট করে নিচ্ছেন।দেখার যেন আসলেই কেউ নেই।অসুস্থ বাংলাদেশ দ্রুত সুস্থ হোক এমনটাই দোয়া করি,ধন্যবাদ আপনাকে।
জী আপু কেউ অবৈধ ভাবে শত শত কোটি টাকার মালিক আর কেউ দুবেলা দুমোটু খাবার জোগার করতে মাথার ঘাম পানি করেও পারছে না।
একই রাস্তায় চার টা বার বাজেট দেয়া হয়, সেখানে বোঝাই যায় কে বা কারা চোখ থাকিতেও অন্ধ! কিংবা কে বা কারা নিরব সমর্থন দিয়ে যায়!! বৃষ্টির কারণে রাস্তার পিচ উঠে যায়, দোষ তো অবশ্যই বৃষ্টির ই! এমন দোষ দিয়ে দিয়ে কত কি ঢাকা পরে যায়!
জী আপু যত বাজেট আসবে ততই পকেট মোটা হবে। এটাই বাংলাদেশের সিস্টেম, হা হা হা।