রাতভর উপকূলে তান্ডব চালিয়ে রাজধানীতেও ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাব।।

আজকে ভেবেছিলাম আইপিএল ফাইনাল ম্যাচের রিভিউ শেয়ার করবো। কিন্তুু গতকাল কলকাতা নাইট রাইডার্স বনাম সানরাইজ হায়দ্রাবাদের যে ফাইনাল খেলা দেখলাম তাতে ম্যাচ রিভিউ করার ইচ্ছাটা মরে গেছে। দুইশো আড়াইশো রান করা হায়দ্রাবাদ গতকাল আগে ব্যাটিং করে মাত্র ১১৩ করেছে। যার উপরে বেশি ভরসা ছিল সেই হেড জেরো রানে আউট হয়ে গেছে। আর কলকাতা ১১৪ রান কর হেঁসে খেলেই সেই ম্যাচ জিতে গেছে। যারা ফাইনাল খেলার টিকেট কেটেছে,তাদের টাকাটাই নষ্ট হলো। তবে ফাইনাল খেলা যেমনই হোক গত কাল একটু আরামে ঘুমিয়েছি।

গত দুই মাস যাবৎ গরমের কারনে রাতে ঠিকভাবে ঘুমাতে পারছিলাম না। গত বৃহস্পতিবারে হ্যাংআউটে যখন দাদা বললো যে বঙ্গপসাগরে একটি নিম্মচাপ সৃষ্টি হয়েছে। যেটা আগামী ২৫ তারিখ ঘূর্ণিজড়ে পরিণত হয়ে বাংলাদেশ এবং ভারতে প্রভাব ফেলবে। আর সেটার নাম দেওয়ো হয়েছে ঘূর্ণিঝড় রেমাল। তখন থেকেই বৃষ্টির আশায় দিন গুণতেছি, কবে রেমাল আসবে। পাশাপাশি এটাও চিন্তা করতেছি যদি রেমাল প্রবল ভেগে উপকূলে আঘাত হানে তাহলে তো উপকূলবাসির অনেক কষ্ঠ হবে,তদের অনেক ক্ষয়ক্ষতি হবে। তখন থেকেই সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা করতেছিলাম যেন রেমাল হালকা বাতাসের সাথে বৃষ্টি বর্ষণ করে। আর এই বৃষ্টি বাতাসের মাধ্যমে যেন গরমটা কমে যায়।

অবশেষ পচিঁশ তারিখ আসলো। পচিঁশ তারিখ সকাল বেলা এমন রোদ দেখলাম যেটা গত দুই মাসেও দেখি নাই। তবে নিউজ পেপারে খবর দেখে কিছুটা আশ্বস্ত হচ্ছিলাম যে রেমালের প্রভাবে ২৬ তারিখ রবিবারে বৃষ্টি হবে। ২৬ তারিখ সকাল বেলাও কিছুটা রোদ ছিল তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে সূর্যের উপরে কিছুটা মেঘের আভা দেখতে পায়। ফলে রোদ না থাকায় কিছুটা অন্ধকার অন্ধকার ভাব দেখে মনে মনে খুশি হয়েছি। কিন্তুু গতকাল সন্ধার দিকে যে নিম্নচাপ ঘূর্ণিজড়ে রুপান্তরিত হয়ে এভাবে উপকূলে আঘাত হানবে সেটা বুঝিতে পারি নাই। আবার গত কাল দাদা একটি পোষ্টের মাধ্যমে ঘূর্ণিজড় রেমালের আপডেট দিয়েছে,সেটা পড়ে কিছুটা খুশির সাথে ভয়ও ছিল।

অবশেষে রাত আটটার দিকে প্রবল বেগে ঘূর্নিজড় রেমাল উপকূল আঘাত হানে। তখন বাতাসের গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ১১০ থেকে ১২০ কিলোমিটার। রাতের প্রথম অংশে ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশের মোংলা বন্ধরের দক্ষিণ-পশ্চিম দিক দিয়ে সুন্দরবনের উপর দিয়ে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে থাকে। এই ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে বাংলাদেশের বরিশাল, পটোয়াখালী, ঝালকাঠি, সাতক্ষীরা,বাগেরহাট, পিরোজপুর, বরগুনা, ভোলা, খুলনা, যশোর সহ উপকূলের বিভিন্ন জেলায় ঝড়ো হাওয়া বয়ে গেছে। সেই সাথে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়। ঘূর্ণিঝড় রেমালের কারণে মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরে ১০ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত ও চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার সমুদ্র বন্দরে ৯ নম্বর মহাবিপদ সঙ্কেত দেওয়া হয়েছে। রেমালের প্রভাবে ঐ সমস্ত জেলার চর অঞ্চল গুলো কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সেই সাথে অনেক জাগায় ভেড়িবাঁধ ভেঙ্গে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে প্রায় ত্রিশ হাজার মানুষ। বেশি অংশ মানুষকে নিরাপদ আশ্রয় কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে।

সোমবারে রাত চারটার দিকে সেই ঘূর্ণিজড় রেমাল রাজধানীতেও প্রভাব ফেলেছে। যার ফলে রাজধানীতে সকাল থেকেই দমকা বাতাসের সঙ্গে বৃষ্টি হচ্ছে। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই বৃষ্টি দেখে কিছুটা খুশি হয়েছি। সারারাত হালকা বাতাস ছিল,ফলে ঘুমটা ভালোই হয়েছে। সাড়ে আটটার দিকে বৃষ্টি বেড়ে যায়। যার ফলে অফিসে যেতে পারবো কিনা সেটা নিয়ে টেনশনে পড়ে যায়। যদিও ছাতা আছে,তবে বৃষ্টির সাথে বাতাস থাকার কারনে ছাতা শরীরকে বৃষ্টি থেকে প্রটেকশন দিতে পারবে না জানি। তারপরও চিন্তা করলাম দরকার হলে বৃষ্টিতে ভিজে অফিসে যাবো। অনেক দিন অপেক্ষায় থাকার পরে এই বৃষ্টি পেয়েছি। রেডি হয়ে বাসার নিচে এসে দেখি রাস্তা পানিতে তলিয়ে গেছে। আর শহরের রাস্তায় পানি উঠলে কি একটা বিশ্রী অবস্থা হয় সেটা সবাই জানেন। কিছুক্ষন দাড়িয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করলাম। বৃষ্টির দিনে আবার রিকশার অভাব দেখা দেয়। মানে আরাম পেয়ে সবাই একটু ঘুমানোর চেষ্টা করে। যায়হোক মিনিট পাঁচেক দাড়িয়ে আর কোন দিকে না তাকিয়ে নিচ দিয়ে পেন্ট কিছুটা উপরে তুলে হাটা দিলাম। আফিসে আসতে আসতে কিছুটা ভিজে গেছি তারপরও ভালো লাগছে বৃষ্টি হয়েছে। মাটি ঠান্ডা হয়েছে,গরম কিছুটা কমেছে। বৃষ্টি ক্রমাগত বর্ষণ হচ্ছে। এখন দেখা যায় রেমাল চলে গেলে সূর্য মামা কি প্রতিক্রিয়া দেখায়।।

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা,ডিজাইন করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।