আমাদের সিদ্দিক ভাই।।
মাতৃভাষা বাংলার একমাত্র কমিউনিটি-
আমাদের সিদ্দিক ভাই। আমার সিনিয়র কলিগ। বাড়ি দক্ষিণ বঙ্গের বরিশাল বিভাগের পটোয়াখালী জেলার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতের পাশে বাউফল উপজেলার দাশপাড়া গ্রামে। তিনির সম্পূর্ণ নাম আবু বকর সিদ্দিক,তবে আমরা তাকে সিদ্দিক ভাই বলেই সংবোধন করে থাকি। পাঁচ ভাই বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি বিয়ে করেছেন ২০১৩ সালে, বর্তমানে তার দুইটি সন্তান আছে। বউ বাচ্ছা ফেমিলি সহ নারায়ণগঞ্জ-ই বাসা ভাড়া নিয়ে থাকেন। মাদ্রাসা থেকে থেকে দাখিল, আলিম, ফাজিল পাশ করে ২০০৪ সালে এক জজ সাহেবের নিকট দেখার করার উদ্যেশ্যে ঢাকায় আসেন। কিন্তুু ঢাকায় এসে জানতে পারেন, জজ সাহেব ওমরা করতে সৌদিআরব চলে গেছেন। আর ঢাকাতে তেমন কোন আত্বীয় স্বজন না থাকায় কাকরাইল মসজিদেই অবস্থান নিয়ে ছিলেন। তাবলিগের সাথীদের সাথে ঘুমাতেন,তাদের সাথেই খাওয়া দাওয়া করতেন। পনের দিন এভাবেই মসজিদে মসজিদে তালিগের সাথীদের সাথে কাটিয়ে দিলেন। তারপর হঠাৎ করে জানতে পারলেন জজ সাহেব ওমরা করতে গিয়ে সৌদিআরবই মারা গেছেন। খবরটা শুনে তার মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। তারপর ধীর্ঘ একটি নিঃশ্বাস নিলেন, বাড়িতে ফিরে যাওয়ার চিন্তা ভাবনা করতে করতে হঠাৎ পরিচিত এক ভাইয়ের স্বাক্ষাৎ পেলেন।
তারপর পরিচিত ঐ ভাইয়ের মাধ্যমে সেনাবাহিনীর কিছু সদস্যের প্রতিমাসে পাওয়া নিত্যপণ্য বিক্রয় করার কাজ নেন। সেখানে কয়েক মাস থেকে কেরানীগঞ্জে এক মসজিদের ইমাম হিসাবে কয়েক বছর চাকরি করেন। তারপর সেখান থেকে ময়মনসিংহ জেলার ভালুকায় মাতাম ফাইভারে, গাজীপুরের বিভিন্ন ফেক্ট্ররীতে বেশ কয়েক বছর চাকরী করেন। সেখানে সর্বশেষ চাকরী করেছেন ডেলটা গ্রুপে। কিন্তুু ২০১৪ সালে রাজনৈতিক কারনে ডেল্টা গ্রুপের ঐ প্রজেক্টটি বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারনে ২০১৪ সালের শেষের দিকে তিনির এক চাচার মাধ্যমে আমাদের অফিসে এসে জয়েন করেন। আর আমি ২০১৫ সালে জয়েন করে তাকে কলিগ হিসাবে পেলাম।
লোকটির খরচের হাত অনেক লম্বা। প্রতি মাসে যা সেলারি পায়, তার থেকে আট দশ হাজার টাকা বেশি ব্যয় হয়ে যায়। অফিস থেকে বাসা পর্যন্ত এমন কোন দোকানদার নেই যে তাকে চিনে না। তবে লোকটি অনেক ভালো ন্যায়পরাণ মানুষ। পাচঁ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে। সবসময় ওযু অবস্থায় থাকে। এই লোকটির একটি অভ্যাস আছে। আর সেটা হলো সে বাহিরের খাবার বেশি খায়। যার ফলে ঔষুধের দোকানে,ফলের দোকানে,চায়ের দোকানে,নিত্যপণ্যের দোকানের বাকির খাতায় তার নাম থাকবেই থাকবে। তবে তিনি মাস শেষে সেলারি পাওয়ার পরে কারো টাকা বাকি রাখে না। সবার টাকা গুণে গুণে পরিশোধ করে দেন। সেলারির সব টাকা শেষ হয়ে গেলে আবার বাকিতে পণ্য নেন। তারপরও দোকানদারের পূর্বের কোন টাকা বাকি রাখেন না। যার ফলে পরিচিত কোন দোকানে কোন মাসে বাকিতে পণ্য না নিলে, সেই দোকাদার তাকে দেখলেই ডেকে দোকানে নিয়ে, বাকিতে ব্যাগ ভরে পণ্য দিয়ে দেন। গাজীপুরে থাকা অবস্থায় তার কাছে এক দোকানদার কিছু বাকি টাকা পেতো। সেই টাকা তিনি ডাকযোগে পাঠিয়ে দিয়েছেন। মোটামুটি সব দিক দিয়েই লোকটি অনেক ভালো।
আজকে সকালে অফিসে এসে মাথাটা কেমন যেন করছে। সকাল থেকেই জ্বর জ্বর ভাব। তাই চিন্তা করলাম একটা নাপা ট্যাবলেট খেয়ে ফেলি। বাসা থেকে আসার সময় যে কয়টা ঔষুধের দোকান পেলাম, একটাও খোলা ছিল না। যার ফলে সিদ্দিক ভাইয়ের কাছে একটা নাপা ট্যাবলেট চাইলাম। তিনি তার ডেস্কের ড্রয়ার থেকে অনেক গুলো ঔষুধ গুলো বের করলেন। এখন মাস শেষ, তাই তার ঔষধও শেষের পথে। তারপরও তার কাছে ১৪/১৫ প্রকারের ঔষুধ পেলাম। এগুলো তিনি মাঝে মাঝে দরকার পড়লে খেয়ে থাকেন। বাসার মধ্যে আরো ১৫/২০ প্রকারের ঔষুধ আছে। মানে তিনির কাছে ছোটখাটো একটি ডিসপেনসারির ঔষুধ থাকে। প্রতি মাসে যে টাকার খাবার খায়,তার থেকে বেশি টাকার ঔষুধ খায়। তিনির ঔষুধ দেখে আমার জ্বর জ্বর ভাব চলে গেছে, নাপা ট্যাবলেট আর খাওয়ার প্রয়োজন হয়নি।
তিনির শরীরে অনেক ধরনের রোগ আছে। ইবনেসিনা,সোহরাওয়ার্দী, পিজি ,ল্যাবএইড হাসপাতাল সহ বাংলাদেশের বিখ্যাত ডাক্তারদের কাছে তিনি যাতায়ত করেন। শেখ হাসিনার প্রাইভেট ডাক্তার ডা,এবি এম আবদুল্লাহ কাছেও গিয়েছিলেন। ঔষুধ খেতে খেতে তিনির অবস্থা এমন হয়ে গেছে, যে তিনির শরীরে ঔষুধ আর কাজ করে না। তার শরীরে সাধারন ঔষুধ কাজ করার জন্য অন্য প্রকারের ঔষুধ খেতে হয়। পাইলস,পিটের পিড়া, হাড় ক্ষয় সহ তার শরীরে অনেক ধরনের রোগ রয়েছে। সে সাধারন ডাক্তারের কাছে যায় না। বেশি টাকা ভিজিট দিয়ে বড় বড় ডাক্তারের কাছে যান। যতবার তিনি ডাক্তারের কাছে যান তত বারই ডাক্তার সাহেব তার প্রেসক্রিপশনে সিল মেরে দেন, যে বাহিরের খাবার খাওয়া তার জন্য সম্পূর্ণ নিষেধ,হারাম। অথচ তিনি হাসপাতাল থেকে বের হয়ে হোটেলের সামনে দিয়ে গেলেই খাবার দেখলে আর লোভ সামলাতে পারেন না। হোটেলের খাবার খেয়ে ঔষুধ কিনে বাসায় ফিনরে। তাহলে এই ঔষুধ খেলে কাজ হবে কিভাবে....।
ছোট থেকেই পাওয়ারের ঔষুধ খেতে খেতে এখন আর তার শরীরে নরমাল ঔষুধ কাজ করে না। মোটামুটি তার মুখস্থ হয়ে গেছে কোন রোগের জন্য কি ঔষুধ খেতে হবে। শুধু যে এলোপ্যাথি ঔষুধ খেয়েছেন তা নয় বরং হোমিওপ্যাথি ও আয়ুর্বেদিক সব ঔষুধই খেয়েছেন। তিনির সমস্যার জন্য বাংলাদেশের আছে, এমন কোন ঔষুধ খাওয়া আর তার বাকি নেই। লোকটা মুড়ির মত এন্টিভাইটিক ঔষুধ খান। এন্টিভাইটিক চতুর্থ জেনারেশন খাওয়া শেষ। এই লোকটার ঔষুধ খাওয়ার ধরন দেখলে আমার ভয় লাগে। তিনি বলেন তিনি যত টাকা ইনকার করেছেন, তার অর্ধেক টাকা ঔষুধ কেনার পিছনে খরচ করেছেন। যায়হোক রোগ হলে তো ঔষুধ খেতেই হবে। তবে ডাক্তারের নিয়মনীতিও মানতে হবে। তিনি একটি কথাই বলেন রোগ দাতা যিনি মুক্তি দাতা তিনি। এই কথাটা তখনই সফলতা পাবে, যখন উসিলা হিসাবে ঔষুধ খাবে এবং ডাক্তারের নিয়মনীতি অনুযায়ী জীবন যাপন করতে পারবে। দোয়া করি সিদ্দিক ভাই যেন সুস্থ হয়ে যান।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
ফটোগ্রাফির বিবরণ:
ডিভাইস | মোবাইল |
---|---|
মডেল | realme-53 |
শিরোনাম | আমাদের সিদ্দিক ভাই।। |
স্থান | কাঠেরপুল,নারায়নগঞ্জ, ঢাকা, বাংলাদেশ। |
তারিখ | ২৬ /০৫ /২০২৪ |
কমিউনিটি | আমার বাংলা ব্লগ |
ফটোগ্রাফার | @joniprins |
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
সিদ্দিক ভাই অনেক ভালে মনের মানুষ বুঝতে পেলাম পোস্ট টি পড়ে।তবে অনেক রোগের বাসা তার শরীরে এটা জেনে খারাপ লাগছে।সিদ্দিক ভাই কিন্তুু ভীষন সচেতন মানুষ সুস্থতা নিয়ে কোন কার্পণ্য করেন না তাই অনেক প্রকারের ঔষধ তার সংগ্রহে এবং নামি-দামি ডাক্তারের কাছে যাওয়া আসা।বাইরের খাবার নিষিদ্ধ জেনেও লোভ সামলাতে পারেন না মানে ভোজনরসিক লোক। আপনার ঔষধ দেখে জ্বর পালিয়েছে জেনে খুব হাসি পেলো ভাইয়া।ধন্যবাদ সুন্দর একটি পোস্ট আমাদের সাথে ভাগ করে নেয়ার জন্য।
জী আপু ভোজনরসিক মানে কিছুক্ষন পর পর খায়। দিনে কমপক্ষে তিনবার ক্যান্টিনে যায়,হা হা হা। ধন্যবাদ।
এটাই একেবারে আসল কথা এবং ঠিক কথা। সিদ্দিক ভাই দেখছি প্রথম অবস্থায় অনেক কষ্ট করেছেন। যার সাথে দেখা করতে এলেন তার সাথে দেখা হলো না আর কখনো কী একটা কপাল। হ্যা এটা ঠিক যারা বেশি পাওয়ারের ঔষধ খাই বিশেষ করে এন্টিবায়োটিক একসময় গিয়ে অন্য সাধারণ ঔষধ তার তাদের উপর কোন কাজ করে না।
ভাইয়া তিনি অতিরিক্ত এন্টিবায়োটিক খেয়ে ফেলেছে। যার ফলে ঔষুধ আর কাজ করে না। ধন্যবাদ।