নৌকা যাদের একমাত্র বাহন।।

পৃথিবীটা হলো একটা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। আর আমরা সবাই হলাম স্টুডেন্ট। জন্ম থেকে শুরু করে মৃত্যু পর্যন্ত আমাদের শিক্ষা অর্জন করতে হয়। শিক্ষার কোন শেষ নেই,শিক্ষার কোন বয়স নেই। আমরা যদি কোন কিছুতে সীমাবদ্ধ থাকি তাহলে আমাদের শিক্ষাটাও সীমাবদ্ধ হয়ে যায়। তাই যত ঘুরাফেরা করা যায়, যত মানুষের সাথে মেশা যায়, ততই শিক্ষা অর্জন করা যায়। যে কোন বিষয়ে শিখতে হলে,অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হলে আমাদের ভ্রমন করতে হবে। পৃথিবীতে কত কিছু আছে,কত জাতি আছে,কত সৃষ্টিজীব আছে। একেক জনের জীবন নির্বাহ করার পদ্ধতি আলাদা। একেক জনের পছন্দ আলাদা,ধর্ম আলাদা,গোত্র আলাদা,চাল-চলন চিন্তা ভাবনা আলাদা। সব কিছু দেখতে হলে, এসব বিষয়ে জানতে হলে ভ্রমন করতে হবে।

এই বছরের মার্চের এক তারিখ একটি ফেসবুক গ্রুপের সাথে আমি পার্বত্য জেলা রাঙামাটি ঘুরতে গিয়েছিলাম। আমাদের একদিনের সফর ছিল। বিশাল বড় রাঙামাটি জেলা একদিনে ঘুরে দেখা সম্ভব নয়। তারপরও আমরা যথা সম্ভব চেষ্টা করেছি কয়েকটা জায়গা ঘুরে দেখতে। আমরা মূলত নৌকা ভাড়া করে বৃহত্তর কাপ্তাই লেকের আশেপাশেই ঘুরা ফেরা করেছিলাম। আমরা বেশকিছু উপজাতির জীবন যাপন পদ্ধতি দেখেছি। আমরা তাদের সাথে মিশেছি,কথা বলেছি, তাদের বাড়িতেও গিয়েছি। তাদের জীবন যাপন খুবই সংক্ষিপ্ত। পাহাড়, লেক, নৌকা তাদের জীবনের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। আজকে আমি সেই লেকে ভেঁসে ভেড়ানো কিছু নৌকার ছবি আপনাদের সাথে শেয়ার করতে যাচ্ছি।

রাঙামাটি জেলার কাপ্তাই লেকের আশে পাশে বিভিন্ন জাগায় বিভিন্ন পাহাড়ের পাদদেশে অনেক উপজাতি বাস করে। তাদের জীবন যাপনের সাথে কয়েকটি বিষয় জড়িত। সে গুলো হলো রাঙামাটি শহর, পাহাড় আর নৌকা। তারা যেখানে বসবাস করে সেখানে থেকে রাঙামাটি শহরের সাথে কোন স্থলপথ নেই। জলপথে নৌকার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় জিনিষ পত্র আনা নেওয়া করতে হয়। উপরের ফটোগ্রাফিতে দেখতে পাচ্ছেন একটি নৌকা দিয়ে কাঁশফুলের ঝাড়ু বানিয়ে রাঙামাটি শহরে বিক্রয় করার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

এখানে দেখতে পাচ্ছেন পাহাড়ের পাদদেশে বসবাস করা কিছু উপজাতি মানুষ বাজার সদাই করার জন্য একটি ছোট নৌকা দিয়ে রাঙামাটি শহরে যাচ্ছে। যেহেতো লেকের মধ্যে বড় কোন ঢেউ নেই, বড় কোন জাহাজ আসা যাওয়ার চিন্তা নেই, তাই ছোট নৌকা দিয়ে যাতায়ত করতে তাদের কোন সমস্যা নেই। তাছাড়া সবাই সাঁতার জানে। নৌকা ডুবে গেলে সাঁতরে লেকের পাড়ে উঠে যাবে।

উপরে আরেকটি নৌকার ফটোগ্রাফি দেখতে পাচ্ছেন। এটা হলো পর্যটকবাহী নৌকা। ঐ উপজাতিদের তেমন ইনকাম নেই। তারা নিজেরা পাহাড়ে কিছু ফল-মূল শাকসবজির চাষ করে। আর নৌকা দিয়ে পর্যটকদের আনা নেওয়া করে। সারা বছরই সেখানে পর্যটক যায়। তারা পর্যটকদের সাথে খুব ভালো ব্যবহারও করে থাকে। দরদাম করেই নৌকা গুলো ভাড়া করতে হয়।

আমরা যখন সেখানে ঘুরতে গিয়েছিলাম তখন তরমুজের মৌসুম ছিল। এখানে একটি নৌকা দিয়ে তরমুজ বিক্রয় করার জন্য শহরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। খুবই সাধারন তাদের জীবন যাপন। সকাল থেকে সন্ধা পর্যন্ত লেকের মধ্যেই থাকে। এই কাপ্তাই লেককে ঘিরেই তাদের জীবিকা নির্বাহ হয়। তাদের চাহিদা অল্প হলেও তারা অনেক সুখি মানুষ। যা কিছু ভক্ষণ করে সব কিছু পিউর। কোন ভেজাল নেই।

এখানে আরেকটি নৌকা দেখতে পাচ্ছেন, পর্যটক আনার জন্য শহরে যাচ্ছে। তাদের মধ্যে যাদের একটি নৌকা আছে,তাদের জীবনটা কিছুটা সচ্চল। প্রতিদিন কিছু না কিছু অর্থ তাদের হাতে আসে। এই নৌকাটার মধ্যে দেখতে পেলাম যে মাঝি যেখানে বসে তার উপরে কিছুটা ছায়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। যেহেতো প্রতিদিন নৌকা নিয়ে বের হতে হয়,রোদ বৃষ্টিতে থাকতে হয়। সেই জন্য নিজেই কাঠ দিয়ে কিছুটা ছায়ার ব্যবস্থা করেছেন।

নৌকার পাশাপাশি কিছু স্পিড বোটও দেখলাম। যারা দ্রুত গতিতে যাতায়ত করতে চাই,তারা স্পিড বোটে যাতায়ত করে। একটি স্পিড বোটে দশ বারো জন মানুষ যেতে পারে। অনেক মানুষ পার্সোনাল ভাবেও নৌকা স্পিড বোট ভাড়া নিয়ে ঘুরতে পারে। সাধারনত স্পিড বোটে ছাদ থাকে না। তবে তারা নিজেরাই স্পিড বোটে ছায়ার ব্যবস্থা করেছে।

এখানে অনেকটা দুরে দুইটা মাছ ধরার নৌকা দেখা যায়। মানুষ অনেক ভাবেই জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্টা করে। যেহেতো লেকের মধ্যে পানি আছে,মাছ তো অবশ্যই থাকবে। সে জন্য কিছু জেলেকে দেখলাম মাছ শিকার করছে। তবে লেকের মধ্যে কি ধরনের মাছ পাওয়া যায় সেটা আমার জানা নেই। দুর থেকে তেমন দেখাও যাচ্ছে না আবার আমি কোন মাছ বাজারেও যায়নি।

সব শেষে দেখতে পাচ্ছেন লেকের কিনারে সাড়ি সাড়ি কিছু নৌকা বাঁধা আছে। কিছু ভ্রমন পিপাসু মানুষ আছে,কিছু কাপল আছে,তারা পার্সোনাল ভাবে ছোট বোট নিয়ে আশে পাশে ঘুরতে চাই। তাদের জন্যই এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা যখন সেখানে গিয়েছিলাম তখন লেকের পানি অনেক নিচে ছিল। এখন বর্ষা শুরু হয়েছে,লেকের পানিও বেড়েছে। এখন দেখতেও অনেক সুন্দর লাগবে। এখন সেখানে ঘুরতে গেলে বেশি মজা পাওয়া যাবে।

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।