আমার বর্তমান অবস্থান ও বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা ।। ১০% প্রিয় লাজুক খ্যাঁক এর জন্য ||
আসসালামু-আলাইকুম। আদাব - নমস্কার। মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি আমার বাংলা ব্লগ এর ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, আশা করি সবাই ভাল আছেন। সবার সুস্থতা ও উজ্জল ভবিষ্যৎ কামনা করে আমি আমার আজকের বাস্তব জীবনের ঘটনা নিয়ে একটি পোষ্ট সেয়ার করলাম।
আমি বাংলাদেশের নারায়ণগঞ্জ জেলায় একটি প্রাইভেট কোম্পানিতে জব করি। বর্তমানে আমার সেলারি ১৮০০০ হাজার টাকা। আমি আমার চাকরি সুবাদে নারায়ণগঞ্জে একটি ব্যাচলর ভাষায় ভাড়া থাকি। আমরা একটি দুই রুমের ফ্লাটে পাচঁ জন মিলে থাকি। আমাদের বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল, বুয়ার বিল, খাবার খরচ এবং ওয়াই ফাই বিল সহ প্রতি মাসে একেকজনের ৭ থেকে সাড়ে ৭ হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতিমাসে মা বাবাকে ৮ হাজার টাকা বাড়িতে দিতে হয়। অফিসে যাতায়ত ভাড়া,মোবাইল খরচ ও অন্যান্য হাত খরচ সহ তিন হাজার টাকা খরচ হয়। ১৮ হাজার টাকার উপরে খরচ হয়ে যায়। তাও এত নিম্ম লেভেলের খাবার খাওয়া হয় যা এখানে ভাষায় প্রকাশ করতে পারতেছি না।
আর এদিকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বেড়েই চলছে। কোথাও কোন নিয়ম কানুন বা আইন মানা হচ্ছে না। যে যেভোবে পারতেছে, দাম হাকাচ্ছে। কেউ কিছু বলার নেই। গত মাসের আয় ব্যয় হিসাব করে বাড়িতে যাওয়ার মত আমার কাছে কোন টাকাই অবশিষ্ট নেই। এদিকে নতুন বিয়ে করেছিলাম, বাড়িতে যাওয়ার জন্য বউ প্রতিদিন কান্নাকাটি করছে। আমি এখন বউকে কি করে বুঝাই যে আমার কাছে বাড়িতে যাওয়ার মত কোন টাকা পয়সা নেই।
আজ শুক্রবার অফিস বন্ধ। মেসের বাজার করতে বাজারে গিয়েছিলাম। এখন আপনাদের সাথে বাজারের অভিজ্ঞতা সেয়ার করেতেছি। চলোন দেখে আসা যাক.
আগে ৫০ কেজি মিনিকেট চাউলের বস্তা নিত ২৭০০ থেকে ২৮০০ টাকা আজ নিলো ৩০০০ টাকা। সয়াবিন তেল নিলো ২০০ টাকা কেজি। ডাউল ১৬০ টাকা কেজি যেটা আগে ছিল ১৩০ টাকা কেজি। ডিম ৫০টাকা হালি যা আগে ছিল ৪০ থেকে ৪৫টাকা হালি। কাঁচা মরিচ ৩২০ টাকা কেজি গত সপ্তাহেও ছিল ২৪০ টাকা কেজি। প্রত্যেকটি সবজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি। টমোটু ১৫০ টাকা কেজি। দেশি মুরুগ আর গরুর দিকে না যাওয়াটাই ভাল। দাম শুনে লাভ নেই, কোন সময় নিতে পারি নাই আজও নিতে পারবো না। চলুন ব্রইলার মুরুগ মামার সাথে কথা বলে আসি।
ব্রইলার মুরুগ মামা
মামা ব্রইলার কত টাকা করে। ১৯০ টাকা মামা। আমি বলি মামা গত সপ্তাহে তো আপনার থেকে নিলাম ১৬০ টাকা করে। আজ ১৯০ টাকা হয়ে গেল...। দাম বাড়ছে মামা কিছু করার নাই। অন্য দোকানে দেখে আসেন সমস্যা নাই। আমি বলি দেখা লাগবে না মামা কম কত। মুরুগ মামা বললো কম হবে না এক দাম। অনেক্ষন চিন্তা ভাবনা করে, কয়েকটি দোকান ঘুরে একটি মুরুগ নিলাম। দাম আসলো ২৭০ টাকা।
সবজি মামা
মামা লাউ/কদু কত টাকা। মামা দামাদামি করবেন না একদাম ৯০ টাকা। আমি বললাম মামা লাউয়ের দাম এত বাড়লো কিভাবে, গত কয়েকদিন ধরেও তো ৫০ টাকা ৬০ টাকা ছিল। সবজি মামা বলে দেশের খবর তো রাখেন না। সব কিছুর দাম বাইড়া গেছে। আমি বললাম কি বলেন মামা, সব কিছুর দাম তো বাড়ে নাই, শুধু ডিজেলের দাম বাড়ছে। সবজি মামা বললো ঐ একি হলো… নিলে নেন, না নিলে নাই জামেলা করিয়েন না। আমি মনে মনে চিন্তা করলাম একটি লাউ ৯০ টাকা দিয়ে নিলে,ঘরে তো আগুন জ্বলবে না, আমি নিজে জ্বলবো।
মাছ মামা
বাজারে নদী পুকুর ও দেশি বিদেশি অনেক রকম মাছ আছে, তেলা পিয়া, পুটি, কৈ, পাবদা,শিং,রুই,কাতলা,পাঙ্গাস,ইলিশ সহ অনেক ধরনের সামুদ্রিক মাছ। রুই পাবদা ইলিশ তো কখনো নিতে পারি না। সেটা বলে লাভ নাই। তেলাপিয়া পাঙ্গাস আর কম দামের কিছু সামুদ্রিক মাছ আছে সে গুলোই সব সময় নেওয়া হয়। জিঙ্গেস করলাম মামা তেলা পিয়া কত টাকা কেজি, মাছ মামা বললো ২০০ টাকা কেজি, আমি বললাম কি বলেন মামা পাঙ্গাস কত..? মামা বলে একদাম ২৪০ টাকা নিতে পারবনে। আমি মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ার মত অবস্থা।
কিছু না বলে চুপ চাপ হেটে কম দামি সামুদ্রিক মাছ গুলোর দাম জিঙ্গেস করলাম, মামা এগুলো কত টাকা। মাছ মামা বলে ৩০০ টাকা কেজি, কয় কেজি নিবেন। আমি বললাম বলো কি মামা, এগুলো তো গত কালকে ও ২০০ টাকা কেজি ছিল। মাছ মামা বলে দেশের খবর রাখেন..? ডলারের দাম বাইড়া গেছে, তেলের দাম বাইড়া গেছে। আমি বললাম সবাই জানে ডিজেলের দাম বাড়ছে, আর আপনি তো ডলার আর তেলের দামও বাড়াই দিলেন। মাছ মামা বলে সব কিছুর দামই বাড়ছে, এখন আর আগের দামে কিছু পাওয়া যায় না। দেশের অবস্থা ভাল না। শুনতাছি অবস্থা না কি আরো খারাপ হবে। দামাদামি করিয়েন না ২৫০ টাকা কেজি দিয়েন, লন। আমি বললাম হাফ কেজি দেন।
বাস কন্টাক্টর মামা
মামা ভাড়াটা দেন। এই নেন মামা পাচঁ টাকা, চাষাড়া যাবো। চাষাড়া এখন দশ টাকা মামা। দশ টাকা কেন..? সব সময় তো পাচঁ টাকা দিয়ে যায়। মামা ডিজেলের দাম বাড়ছে, পাচঁ টাকা হবে না দশ টাকা দেন। আমি বললাম মামা ডিজেলের দাম বাড়ছে বলে কি ভাড়া ডাবল হয়ে গেছে। পাচঁ টাকার বাড়া দশ টাকা রাখবা...? এটা কোন কথা হলো। বাস কন্টাক্টর বললো মামা যায়লে যান না যাইলে নেমে পড়েন। এখন আর পাচঁ টাকা বাড়া নাই। অবশেষে প্রতিদিন সকালে দশ টাকা সন্ধায় দশ টাকা দিয়ে যেতে হচ্ছে। আগে প্রতি মাসে বাস ভাড়া লাগতো ১৫০ টাকা এখন লাড়বে ৩০০ টাকা। এখানে ১৫০ টাকা বেশি খরচ হবে।
গত তিন চার মাস আগে ডিজেলের দাম বাড়ার করনে আমাদের বাড়িতে যাওয়ার বাস ভাড়া ২০০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা করেছিল। এখন আবার ডিজেলের দাম বাড়ায় ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা করা হয়েছে। গত এক সপ্তাহ ধরে নিত্যপন্যের দামও বেড়েই চলছে। অথচ গত দুই চছর ধরে আমাদের সেলারি বাড়ছে না। এবার জুন জুলাইতে বাড়ার কথা তাও কোন খবর নেই। শুনতেছি এবারও না কি বাড়বে না।
আমি চিন্তা করে দেখতেছি এভাবে চলতে থাকলে সামনের মাসে আমাদের মেস বিল আসবে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা। আমি যে ভাবে নিম্ন লেভেলে চলছি সে ভাবে চললেও টোটাল আমার দরকার পড়বে ২০ থেকে ২১ হাজার টাকা। তাহলে আমার আরো ২ থেকে তিন হাজার টাকা ঋণ করতে হবে। বাড়িতে যাওয়ার কথা বাদই দিলাম। কোন কাপড় বা মার্কেট করার চিন্তা স্বপ্নেও আসে না।
আমি জানিনা কার কেমন লাগছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের মত মধ্য বিত্ত ও নিম্ন বিত্তদের বেচে থাকাই দায় হয়ে যাচ্ছে। মন চাইতেছে বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে অন্য কোন দেশে চলে যায়। কখন কিভাবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না।
বন্ধুরা ভারাক্রান্ত হৃদয় নিয়ে আজকের পোষ্টটি লিখেছি। জানিনা আমার অবস্থানটা কতটুকু আপনাদের কে বুঝাতে পেরেছি। আজ এখানে আমি শুধু আমার নিজের অবস্থাটা প্রকাশ করেছি। অন্য কোন উদ্দেশ্য নেই। আশা করি ভুলত্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। আজ এখান থেকেই বিদায় নিচ্ছি। দেখা হবে নতুন পর্বে । ততদিন পর্যন্ত ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন। নিজের প্রতি খেয়াল রাখবেন। অপচয় রোধ করবেন। নিজের চারপাশ পরিষ্কার রাখবেন। আল্লাহ হাফেজ।।
খুবই করুন অবস্থা ভাই।আমার আরো টিউশন করে চলা লাগে।বেতন বাড়তেছে না।কিন্তু দিন দিন খরচ আকশ ছোয়া হয়ে যাচ্ছে।খুব চিন্তায় থাকি এভাবে সব বাড়তে থাকলে চলব কিভাবে।
ভাইয়া কিছু বুঝতেছি না। কিভাবে সংসার চালাবো। আল্লাহ জানে।
ভাই এমনিতেই বাজারে গেলে আমারও মাথা ঘুরায়। আজকে আপনার এই বাজারের লিস্ট দেখে আমার মাথা আসলে ঘুরেই যাচ্ছে। সব জিনিসের এত এত দাম বেড়েছে আসলে কি বলব সত্যিই দেশের পরিস্থিতি খুবই খারাপ। সেই সাথে আমাদের মত সাধারন জনগনের হলো
ভাইয়া ভয়ে বাজারে যেতে মন চাই না। আবার না গিয়ে পারা যায় না, তার মাঝে মাথা মোটা মন্ত্রিরা বলে আমরা না কি জান্নাতে আছি, কেমন লাগে বলেন তো।