প্রাইভেট পড়ানোর একটি গল্প।। 10% beneficary for @shyfox ❤️

আমি বর্তমানে যে বাসায় ভাড়া থাকি সেই বাসাটি তিন তলা বিশিষ্ট একটা ভবন। পাচঁ তলা ফাউন্ডেশন থাকলেও তিনতলা পর্যন্তই কম্পিলিট করা হয়েছে। আমরা থাকি তৃতীয় তলায় আর বাড়িওলা আংঙ্কেল থাকে দিত্বীয় তলায়। বাড়িওলা আঙ্কেল একটি সরকারি ব্যাংকে চাকরি করে। আর আন্টি গৃহণী। অঙ্কেল অনেক ভাল মানুষ বাড়িতে কখন কে কি করে এসব নিয়ে তার কোন মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তুু আন্টি খুব জামেলা করে। রাতে দেরি করে বাসায় আসা যাবে না, বন্ধু বান্দব নিয়ে বাসায় আসা যাবে না, জোরে গান গাওয়া বা বাজানো যাবে না, সিড়িতে বসা যাবে না ইত্যাদি আরো অনেক নিয়ম চালু করে রেখেছেন। আঙ্কেল আবার সব সময় আন্টির কথা মতই চলে। আন্টি বসে থাকতে বললে বসে থাকবে আবার দাড়িয়ে থাকতে বললে দাড়িয়ে থাকবে। মানে সংসারের কর্তা হলো আন্টি। তাদের এক ছেলে এবং এক মেয়ে আছে।

ছেলের ঘরে আবার এক নাতি আছে যার নাম হলো ইকরাম। ইকরাম একবার দশম শ্রেণীতে ফাইনাল পরিক্ষা দিয়ে ইংরেজিতে ফেল করেছিলো। সে সারা বছর তেমন পড়াশোনা করে না, সারাদিন ঘুরাঘুরি করে আর ছাদে ক্যারাম বোর্ড খেলে। আমিও মাঝে মাঝে তার সাথে ক্যারাম খেলি। তো ইকরাম খুব ভাল ভাবেই আমাকে চিনে। পরের বছর যখন পরিক্ষার সময় এসে গেল। তখন সে তার মায়ের কাছে বললো সে ইংরেজি প্রাইভেট পড়বে। ইকরামের মা আবার তার দাদুর কাছে বলেছে যে ইকরাম ইংরেজি প্রাইভেট পড়বে,তাকে যেন একটি টিচারের ব্যবস্থা করে দেয়। হাসবেন্ডের কাছে না বলে শাশুড়ির কাছে বলছে কারনটা আগেই বলেছি যে সংসারের কর্তা হলো শাশুড়ি। শাশুড়ি যা বলবে সংসারে তাই হবে।

আন্টি ইকরামকে ডেকে বললো সে কার কাছে প্রাইভেট পড়তে চাই। তার কোন স্যার আছে না কি। ইকরাম হঠাৎ করে আমার নাম বলে দিলো,যে উপরের তিনতলাতে এক কাকা আছে আমি তার কাছে প্রাইভেট পড়তে চাই। আন্টি বললো আচ্ছা ঠিক আছে, সন্ধায় ছেলেটাকে আমাদের বাসায় আসতে বলিও। আমি সাতটার সময় অফিস থেকে বাসায় আসার পর হঠাৎ ইকরাম এসে আমাকে বললো যে আপনাকে দাদু ডাকতেছে, বাসায় যেতে বলছে। আমি ইকরামের কথা শুনে চমকিয়ে উঠলাম। আমাকে তো কখনো আন্টি ডাকার কথা না। আমি ইকরামকে বললাম,আমাকে ডাকে কেন..? ইকরাম বললো আমি তো জানি না,আপনাকে যেতে বলছে। আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি।

ইকরাম চলে যাওয়ার পর আমি খাটে বসে চিন্তা করতে লাগলাম,কেন ডাকলো,কোন অন্যায় করলাম না তো আবার। অনেক চিন্তা ভাবনা করে ফ্রেশ হয়ে দ্বিতীয় তলায় আন্টির বাসায় গেলাম। আন্টি আমাকে বসতে বললো। আমি বসার পরে আন্টি বলেলো তোমার বাড়ি কোথায়..?। আমি বললাম ব্রাহ্মণবাড়িয়া। তারপর আমার বিষয়ে অনেক তথ্য জানলেন। সব শেষে আন্টি বললো তুমি দশম শ্রেণীর ফাইনাল পরিক্ষা পর্যন্ত ইকরাম কে প্রাইভেট পড়াবা। আমি বললাম আন্টি আমি তো একটি অফিসে চাকরি করি। সন্ধায় কখন বাসায় আসি সেটা ঠিক নেই, কখন পড়াবো। আন্টি বললো তুমি যখন বাসায় আসো তখনই ইকরাম তোমার রুমে চলে যাবে। তুমি তোমার রুমেই তাকে পড়াবা। আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে আমি আগামী কাল আপনাকে জানাবো।

পরেরদিন অনেক চিন্তা করে রাজি হলাম। তারপর তিন মাস ইকরামকে পড়ালাম। মোটামুটি ছেলেটাকে ভালই মনে হলো। পরিক্ষার আগেরদিন কিভাবে পরিক্ষা দিতে হবে সেই বিষয়ে কিছু টিপস দিয়ে দিলাম। টিপস অনুযায়ী সে পরিক্ষা দিয়েছে। অবশেষে রেজাল্ট দিলো,ইকরাম পাস করেছে। ইকরাম পরিক্ষার দেওয়ার পরে আমি আল্লাহর কাছে অনেক দোয়া করেছি যে,আল্লাহ আমার দিকে না তাকিয়ে ছেলেটার দিকে তাকিয়ে হলেও তাকে পাস করে দিও। আল্লাহ আমার দোয়াটা কবুল করেছে।

গতকাল রাতে আন্টি আাবার আমাকে ডেকে পাঠালো। আমি যাওয়ার পরে নাস্তা পানি ভালই দিলো। তারপর আমার অনেক প্রশংসা করে বললো ঢাকায় আমার মেয়ের জামাই এর নতুন চাকরি হয়েছে। তারা এখানেই থাকবে। তুমি আমার দুই নাতনিকে কাল থেকে প্রাইভেট পড়াবা। তারা নতুন বই পেয়েছে। তোমার কাছে পড়তে চাই। এখন চিন্তা করতেছি কি করবো। স্টিমিট আর চাকরি নিয়ে অনেক ব্যস্ত সময় পার করতেছি। তার উপর আবার প্রাইভেট পড়াতে বলতেছে, কি করবো কিছু বুঝতেছি না। আপনাদের নিকট পরামর্শ চাই।

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।