বেশি বুঝলে যেমন হয় ।। 10% beneficary for @shyfox ❤️
হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই। আশা করি সবাই ভাল আছেন। আজকে আমি সকাল এগারোটার সময় এই পোষ্টি লিখতে বসেছিলাম। অল্প একটু লেখার পরে বিদ্যুৎ চলে যায়। ল্যাপটপে তখন ৩০% থেকে ৩৫% চার্য ছিল। আজ শুক্রবার হওয়ায় অফিসেও যায়নি। অপেক্ষায় বসে আছি কখন বিদ্যুৎ আসবে। এক ঘন্টা দুই ঘন্টা অপেক্ষা করতে করতে ছয় ঘন্টা পরে চারটার সময় বিদ্যুৎ আসে। তখন আমি বিছানায় সুয়ে ছিলাম। চোখে হালকা হালকা ঘুমের ভাব ছিল। তাই তখন আর ঘুম থেকে উঠি নাই। সন্ধার পরে পোষ্টি সম্পূর্ন করতে বসলাম। চলুন আপনাদের সাথে একটি হাসির ঘটনা সেয়ার করি।
আমি যে অফিসে জব করি, সেখানে আমাদের সেকশনে প্রায় পনেরজন কাজ করি। কিন্তুু আমাদের সম্পূর্ন ফ্যাক্টরিতে প্রায় তিন থেকে চারশো মানুষ কাজ করে। আমাদের দুইটি পাচঁতলা ভবনের সব ফ্লোরেই মানুষ কিছুনা কিছু কিছু কাজ করে। এইদুইটি ভবনের অফিস সহ ভবনের সব জায়গা এবং সিড়ি প্রতিদিন পরিষ্কার করার জন্য কিছু লোক নিয়োগ দেওয়া আছে। তাদেরকে আমারা ক্লিনার বলে থাকে। যাদের সর্টকাট নাম হলো এফসি। ফুল মিনিং হলো ফ্লোর ক্নিনার। আপনাদেরকে পড়াশোনা করানো আমার উদ্দ্যেশ্য নয়। ঘটনার প্রসঙ্গে এসেছে তাই সেয়ার করলাম। এবার মূল কথায় আসি।
সমস্ত ক্লিনারদের একজন হেড বা ইনচার্য আছে। যার নাম আব্দুল কাইয়ূম। আমরা উনাকে কাইয়ূম ভাই বলে ডাকি। সে প্রতিদিন সকাল দশটার সময় ঘুরে ঘুরে দেখে সব কিছু ঠিক ভাবে পরিষ্কার হয়েছে কিনা। এমনকি প্রতিটা ওয়াশ রুমে সাবান তোয়ালে আছে কিনা সেটাও সে পর্যবেক্ষন করে। আব্দুল কাইয়ূম ভাইয়ের বাড়ি উত্তর বঙ্গের রংপুরে। আমাদের ব্যবসাটা মূলত বিভিন্ন কেমিক্যাল এবং কালারের ব্যবসা। আমরা বাহিরের বিভিন্ন দেশ থেকে কেমিক্যাল এবং কালার ইমপোর্ট করি। তারপর এগুলো গোডাউনে রেখে বিভিন্ন গার্মেন্টস মালিকের কাছে পায়কারি সেল করি। আমাদের এমডি সাহেবেরও গাজিপুরে,ভুলতায় কয়েকটা গার্মেন্টস রয়েছে সেখানেও পাঠানো হয়। আমাদের এমডি সাহেব ১৯৯৭ সালে ভ্যানগাড়ি দিয়ে বিভিন্ন জায়গা থেকে কেমিক্যাল এনে খুচরা বিক্রয় করতো। তখন ইমপোর্ট করার মত আমাদের কোন লাইসেন্স ছিল না। ২০০২ সালে আমাদের এমডি সাহেব ১৮ লাখ টাকা দিয়ে অন্য এক মালিকের ইমপোর্ট করার লাইসেন্স কিনেন। সর্বপ্রথম যে ভ্যানগাড়ি দিয়ে কেমিক্যাল আনতেন সেই ভ্যানগাড়ির ড্রাইভার ছিল এই কাইয়ূম। এখন আমাদের কোম্পানি অনেক বড় হয়েছে কাইয়ূমও ড্রাইভার থেকে ইনর্চায হয়েছে।
গত কয়েক মাস আগে আমাদের একটি নতুন প্রজেক্ট দেখতে গিয়ে লোহা বা টিন দিয়ে কায়ূমের পা কেটে যায়। মোটামুটি ভাল অংশই কাটে। সে আমাদের কোম্পানির মেডিকেল সেন্টারে আসে। আমাদের কোম্পানিতে এমবিবিএস ডাক্তার,কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ার,টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ার,আইনজীবী সবই আছে। তো কাইয়ূম ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার তার পাটা ব্যান্ডেজ করে কিছু ঔষুধ লিখে দিলেন। আর তাকে সাত দিন ছুটি দিয়ে বাসায় বিশ্রাম নিতে বলেন। ছুটির কথা শুনে কাইয়ূম সাথে সাথে ডাক্তারকে বললো আমাকে ছুটি দিলে তোমার কি চাকরি থাকবে..? আমার কোন ছুটির দরকার নেই। একথা বলে কাইয়ূম চলে গেল। কায়ূমের বয়স আনুমানিক পঞ্চাশ বছর হবে। তার বাড়ি রংপুরে হওয়ায় সে অফিসার,ডাক্তার, ম্যানেজার, এজিম,ডিজিএম,টিডি,ইডি সবাইকে তুমি বলে ডাকে। তবে তার এভাষায় কেউ রাগ করে না। সবাই তার এই ভাষা নিয়ে ভালই হাসাহাসি করে।
তিনদিন পরে কাইয়ূম আবার ঐ ডাক্তারের কাছে গিয়ে ডাক্তারকে ধমক দিয়ে বললো ঐ ডাক্তার তুমি কি ঔষধ লিখে দিছো। আমার পা তো ভাল হয় না। আর পা খুব ব্যাথা করে। তখন ডাক্তার বললো আপনি এভাবে হাটাহাটি করলে পা তো ব্যাথা করবেই। আপনাকে তো সাতদিন ছুটি দিলাম বিশ্রাম নেওয়া জন্য আপনি তো আমার কথা শুনছেন না। কাইয়ূম বললো এখন ব্যাথা কমার জন্য কি করতে হবে। ডাক্তার আবার কিছু ঔষুধ লিখে দিলেন আর পায়ে গরম পানির সেঁক দিতে বললেন।
রাতের বেলা যখন কাইয়ূম পায়ে বেশি ব্যথা অনুভব করলো তখন গরম পানি করে পায়ে ঢেলে দিলো। সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে দেখে পাটা অনেক ফুলে গেছে,আর গরম পানি দেওয়ার কারনে পায়ের চামড়া পুরে হালকা কালো হয়ে গেছে। ফুলা পা নিয়ে কায়ূম আর হাটতে পারতেছে না। তখন রিকশা নিয়ে সকাল দশটার দিকে কোম্পানির মেডিকেল সেন্টারে হাজির হলো। ডাক্তার কে বললো তুমি বলছো গরম পানি দিতে, রাতের বেলা আমি গরম পানি দেওয়ার কারনে আমার পা ফুলে কি হয়ছে দেখো। ডাক্তার মাথায় হাত দিয়ে বললো আমি কি আপনাকে পায়ে গরম পানি ঢেলে দিতে বলছি না কি। আমি তো বললাম কাটা জায়গায় গরম পানির সেঁক দিতে। কাইয়ূম বললো এখন আমি কি করবো বলো। ডাক্তার দেখলেন পায়ের অবস্থা বেশি ভাল না। তাই সে কায়ূমকে নারায়ণগঞ্জের পপুলার ডায়াগনস্টিক সেন্টারে রেফার করে দিলো। আর পপুলারের একজন পরিচিত ডাক্তারের সাথে যোগাযোগ করতে বলে দিলো। আমাদের কোম্পানির ডাক্তার পপুলারের ডাক্তারকে ফোন করে বলে দিলো তারা যেন যে ভাবেই হোক কাইয়ূমকে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করে নেয়। কারন কাইয়ূমের পায়ের অবস্থা বেশি ভাল না।
কাইয়ূম পপুলারে ঐ ডাক্তারের কাছে যাওয়ার পর ডাক্তার তাকে বললো যে আপনার পায়ের অবস্থা ভাল না। যদি আপনি আমাদের হাসপাতালে থেকে চিকিৎসা না নেন,তাহলে আপনার পা কেটে ফেলে দিতে হবে। একথা শুনে কাইয়ূম ভয় পেয়ে গেল। সে ডাক্তারের কথা মত পপুলার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে গেল।পপুলারের ডাক্তাররা কাইয়ূমকে তিনদিন হাসপাতালে রেখে বাসায় গিয়ে সাত দিন বিশ্রাম নিতে বললো। কাইয়ূম তিন দিনে ত্রিশ হাজার টাকা দিয়ে বাসায় গিয়ে দশ দিন বিশ্রাম নিয়ে মোটামুটি কিছুটা সুস্থ হলো। প্রায় পনের দিন পরে কাইয়ূম আবার আমাদের কোম্পানির ডাক্তারের কাছে গিয়ে বললো তুমি কি হাসপাতালে পাঠাইছো তিন দিনে ত্রিশ হাজার টাকা লাগছে,আবার ঔষুধের টাকা সহ প্রায় পয়ত্রিশ হাজার টাকা খরচ হয়ছে। ডাক্তার বললো তাও সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করেন। আপনার পা যে ভাল হয়ছে। আমি তো ভাবছিলাম আপনার পা কেটে ফেলে দিতে হবে। সাতদিন ছুটি দিছিলাম,আমার কথা শুনলেন না। এখন তো বিশ দিন লাগছে,আবার টাকাও খরচ হয়েছে।
বন্ধুরা আজকে এখানেই শেষ করছি। আবার দেখা হবে নতুন কিছু নিয়ে। সবাই ভাল থাকবেন। সতর্ক থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।।
https://steemitwallet.com/~witnesses
VOTE @bangla.witness as witness