দুষ্টামি করতে গিয়ে নৌকা ডুবে তিন বন্ধুর প্রাণ গেল ।। 10% beneficary for @shyfox ❤️

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
আসসালামুআলাইকুম

আমি @joniprins বাংলাদেশের ঢাকা থেকে সুখে দুঃখে সবসময় রয়েছি আপনাদের পাশে।

হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই। আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। যে যেখানে যে অবস্থায় আছেন সব সময় ভাল থাকার চেষ্টা করুন। নিজের জীবনকে, সময়কে উপভোগ করুন। কারন কখন কার জীবনে কি ঘটে সেটা বলা যায় না। গত কাল রাতে ঘটে যাওয়া একটি মারাত্বক দূর্ঘটনায় তিনটি তাজা প্রাণ চলে গেল। আজকে আপনাদের সাথে ঘটনাই সেয়ার করবো। চলোন শুরু করা যাক।

dlrg-5068708_1920.jpg
Source

মনোয়ার ভাইয়ের সাপ্তাহিক ছুটি রবিবারে। কিন্তুু শনিবারে সকাল দশটা বেজে যাওয়ার পরেও না সে আসায় ম্যানাজার স্যার মনোয়ার ভাইকে মোবাইলে কল দিলো। কল রিসিপ করলো একজন মহিলা। স্যার জিঙ্গেস করলেন আপনি কে আর মনোয়ার কোথায়। এটা তো মনোয়ারের নাম্বার। ওপাশ থেকে মহিলাটি বললো আমি মনোয়ারের স্ত্রী। গত কাল রাতে মনোয়ারের ছোট ভাই পানিতে ডুবে মারা গেছে। উনি এখন বাসার বাহিরে আছেন। বাসায় আসলে আমি আপনাকে ফোন দিতে বলবো। স্যার শুধু ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিলো।

আধা ঘন্টা পরে মনোয়ার ভাই স্যারের মোবাইলে ফোন দিলো। স্যার আর আমাদের অফিসের মাঝ খানে কোন দেয়াল বা গ্লাস না থাকায় স্যারের সব কথাই আমারা শুনতে পায়। এমনকি স্যার তার ওয়াইফের সাথে বা অন্য আরো যার যার সাথে কথা বলে সবই আমরা শুনতে পারি। মনোয়ার ভাই ফোন দিয়ে যে বর্ননা দিলো সেটা আমরা শুনার জন্য মোটেও প্রস্তুুত ছিলাম না।

মনোয়ার ভাইয়ের বাসা শীতলক্ষা নদীর পূর্ব পাড়ে মানে বন্দর উপজেলায়। বন্দর উপজেলার মানুষ সাধরনত নৌকা দিয়ে নারায়ণগঞ্জ সদরে আসে। যদিও কিছু দিন আগে নারায়ণগঞ্জ থেকে শীতলক্ষা নদীর উপড় দিয়ে বন্দর উপজেলায় যাওয়ার জন্য একটি সেতু নির্মান করা হয়েছে। সেতুটি কয়েকদিন আগে উদ্বোধন হয়েছে। মনোয়ার ভাইয়ের ছোট ভাইয়ের নাম দিদার। মনোয়ার ভাইয়ের মুখে দিদারের নাম আমরা অনেক বার শুনেছি। রাত বারোটার দিকে দিদারের মোবাইলে একটি কল আসে। কলটি রিসিপ করে দিদার কোন কথা না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। মনোয়ার ভাইয়ের মা দিদার কে জিঙ্গেস করে ছিল এত রাতে কোথায় যাচ্ছিস। দিদার বলে ছিল কিছুক্ষনের মধ্যেই আসতেছি।

boat-55173_1920.jpg
Source

দিদার বাসা থেকে বের হওয়ার দশ মিনিট পরে তার মায়ের মোবাইলে ফোন দিয়ে জানায় যে সে তার বন্ধুর সাথে তাদের বাসায় থাকবে। দিদার প্রায় সময় তার বন্ধুর বাসায় রাতে থাকে। তাই তার মা ও কোন চিন্তা না করে ঘুমিয়ে গেল। তারপর দিদার আর তার তিন বন্ধু সহ নৌকা দিয়ে নদী পাড় হয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে যায় পিজ্জা খাওয়ার জন্য। পিজ্জা,কোলড্রিংস খেয়ে শহীদ মিনারে আড্ডা দিয়ে সেখান থেকে চা খেয়ে রাত দুইটার দিকে বাসার দিকে রওয়ানা হয়। রাস্তায় তেমন কোন মানুষ না থাকায় তারা হেটে হেটেই নদীর ঘাটে আসে। সেখানে রাতে ডিউটি করা নৌকার মাঝিকে না পেয়ে তারা চারজন বন্ধু মিলে নৌকায় উঠে নৌকা ছেড়ে দিলো। দিদার নৌকা চালাইতেছে আর একজন জোরে জোরে গান গাইতে লাগলো। মাঝ নদীতে যাওয়ার পর তাদের মাথায়ে ভুত চেপে বসলো।

চার জন বন্ধুর মাঝে দুইজন একেবারেই সাতাঁর পারে না। আর বাকি দুইজনের মাঝে একজন কিছু কিছু সাতাঁর পারে কোন রকম জীবন বাচাঁনোর মত। আর অন্য জন মানে দিদার ফুল সাতাঁর পারে। নৌকা যখন মাঝ নদীতে গেল যারা সাতাঁর পারে তারা দুইজন নৌকার দুই পাশে দাড়িয়ে নৌকাটা দুলাতে লাগলো। যারা সাতাঁ পারে না তারা হাত জোর করে মিনতি করে রিকুয়েষ্ট করতে লাগলো যেন নৌকাটা না দুল খাওয়ায়। কিন্তুু কে শুনে কার কথা। তাদের মিনতি দেখে তারা আরো বেশি করে দুলাতে লাগলো। দুলাতে দুলাতে একসময় নৌকাতে পানি উঠে গেল। নৌকাতে পানি দেখে সাতাঁর না পারা দুইজন দিদারের কাছে চলে আসলো। কারন তারা আগে থেকেই জানে যে দিদার সাতাঁর বেশি পারে। তিন জন যখন এক সাথে হয়ে গেল নৌকায় পানি উঠে কিছুক্ষনের মধ্যেই নৌকাটা ডুবে গেল। যে সাতাঁর কম পারে সে কোন রকম সাতাঁ কেটে নদীর পারে আসলেও বাকি তিন জন পাড়ে আসতে পারে নাই। দিদার যদিও অনেক চেষ্টা করেছে সাতাঁ কেটে পাড়ে আসতে কিন্তুু ঐ দুইজন বন্ধু দিদারকে ছাড়ে নাই। দিদারের শরীরে কাপড়ে জরিয়ে ধরে রেখে ছিল। যার জন্য তিন বন্ধুই এক সাথে নদীর নিচে চলে গেল। সকাল বেলা যেখানে তারা ডুবে গেছে সেখান থেকে আধা কিলোমিটার দুরে তাদের তিন জনের লাশ পাওয়া গেছে।

শিক্ষনীয় বিষয়
  • আমাদের প্রত্যেকের সাতাঁর জানা থাকা দরকার।
  • কেউ সাতাঁর না জানলে তাকে নিয়ে পুকুর, খাল, বিল বা নদীতে দুষ্টামি করা যাবে না।
  • ঘটনাক্রমে নৌকায় পানি উঠলে সবাই একত্রিত হওয়া যাবে না।
  • বিপদ হতে পারে এমন জাগায় বন্ধু বা কারো সাথে দুষ্টামি করা যাবে না।
  • সব কিছুর একটি সীমা থাকার দরকার। কখনো সীমা অতিক্রম করা যাবে না।
  • লাইফ জ্যাকেট থাকলে সেটা পড়ে নৌকা ভ্রমন করা।

555555.png

111.png

3YjRMKgsieLsXiWgm2BURfogkWe5CerTXVyUc6H4gicdRPjVagCKakAuSTsQyj2bkd5a1qGy627tazWyRR8KvSGF5XUzUYGAJxbEm1WagpCyidt3eCtv81zeLX27xCgJJcRrX6JcoixPY1ZYkTzZRvU4cg43nsPEvFsMrCx1qpdtvt7rn7wUCn6Q3hQL3sAJM.png

4gZTTLyoV1msFb1u1BdB14ZHSP5sNg8hbP9cbJyTmUqfzL1as2zt5nA5iP9iEBmXtJKZZD3SHGtdFKZ13Up5EmSAxpDYtwYvvxyhsR48F5wdZ6ZhgEKtW9w1csKVawJHrqc3fgSkcpz8WsTY1MvhswZsey8zNe3vkwTdKjCivA3Z6dpaPrexwcy6xHQHfFaMXGPra6UPL.png

Sort:  

Hello friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

 2 years ago 

ভাই আপনার গল্পটি পড়ে ভীষণ কষ্ট পেলাম। কেননা দুষ্টুমি করতে গিয়ে এত বড় ভয়ানক কান্ড হবে তা হয়তো ওই চার বন্ধু জানতো না। একসাথে তিন বন্ধুর প্রাণ চলে গেল এটা আসলেই মেনে নেয়া সম্ভব নয়। তাদের এই অকাল মৃত্যুতে তিনটি পরিবারেই দুঃখের ছায়া নেমে এসেছে। মহান আল্লাহ তায়ালা যেন এই তিনটি পরিবারকেই মৃত্যুর শোক কাটিয়ে ওঠার তৌফিক দান করেন। সেই সাথে এই তিন বন্ধুর আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

 2 years ago 

জী ভাইয়া এমন অনাকাংখিত ঘটনা কাম্য ছিল না। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

আপনার গল্পটি পড়ে আমার কাছে খুবই খারাপ এবং কষ্ট লেগেছে। একসাথে এতগুলো তাজা প্রাণ চলে গেল এটা আসলেই কিছুতেই মেনে নেওয়া যায় না। আরো দুজন বন্ধু সাঁতার জানে না জেনেও এই ধরনের দুষ্টুমি করা তাদের উচিত হয়নি। দুষ্টামির ছলে এই ধরনের কাজগুলো থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হবে। আর আমি মনে করি কম বেশি সবাই সাঁতার শিখে রাখা দরকার। ওই তিনজনের আত্মার মাগফিরাত কামনা করছি। ধন্যবাদ আপনাকে।

 2 years ago 

জী আপু সাতাঁর জানাটা খুবই জরুরী। বলা যায় না কখন কার জীবনে কি ঘটে । ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 
প্রথমেই আমি বলতে চাই, আপনার পোস্ট পড়ে সত্যি আমার অনেক খারাপ লেগেছে। আমাদের গ্রাম্য ভাষায় একটা প্রবাদ আছে ''ইয়ার্কি নাম লোকসান মন্ডল"। এই কথাটির অর্থ, অনেক সময় ছোটখাটো কিছু নিয়ে মজা করতে গিয়ে অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যায়। ঠিক যেমনটি ঘটেছে এ তিন বন্ধু মজা করার কারণে। আজকে তাদের পরিবারে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। আমি এই শোকাহত পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি। এবং যারা মারা গেছে তাদের মাগফিরাত কামনা করছি, আমিন।
 2 years ago 

জী ভাইয়া মজা করতে গিয়ে এত বড় একটি দূর্ঘটনা ঘটে গেল। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

কখন কার ভাগ্যে কি ঘটে কেউ বলতে পারেনা। তাই সবসময় বিপদ সম্পর্কে সতর্ক থাকা উচিত।

 2 years ago 

জী ভাইয়া সব সময় সতর্ক থাকা জরুরী। ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার সাথে এক মত।

 2 years ago 

দিদারের কথা শুনে সত্যি ভীষণ খারাপ লাগলো। সবথেকে বেশি খারাপ লাগলো যে ও একেবারে ফুল সাঁতার জানা সত্ত্বেও বাঁচতে পারল না। আমাদের বন্ধু হওয়া ভালো কিন্তু বন্ধুরা এতটা ও দুষ্টামি করা ঠিক নয় যে কাজে আমাদের বিপদ রয়েছে। প্রথমত এত রাতে ওদের তিন বন্ধুর একসাথে নদীর পাড়ে যাওয়া একদমই উচিত হয়নি। তার মধ্যে আবার নৌকার মাঝি না থাকা সত্বে ও তারা নিজেরাই নৌকা চালিয়ে চলে গেল। দুষ্টামিতে এত বেশি মেতে উঠেছিল যে বন্ধুরা সাঁতার পারে না তাদের মিনতিও শুনলো না। আপনি যে পরামর্শ গুলো দিয়েছেন সেগুলো আমাদের জন্য সঠিক বলে মনে করি। দুষ্টমি যে জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ালো সেটা বুঝতে পারল না।

 2 years ago 

জী আপু কেন জানতো তাদের একটু দুষ্টামি এত বড় দূর্ঘটনা বয়ে আনবে। ধন্যবাদ আপু।

 2 years ago 

সব জায়গায় সব বিষয়ে মজা অনেক সময় মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। এখানেও ঠিক তাই ঘটেছে। কখনো বিপদ নিয়ে এভাবে খেলা করা উচিত নয়। তারা তাদের কর্মফল ভোগ করলো। বিষয়টি শিক্ষনীয় ছিল।

 2 years ago 

মর্মান্তিক একটি গল্প পড়ে অনেক শোকাহত হলাম।।আসলে দুষ্টুমির ছলে চার বন্ধুর মধ্যে, তিন বন্ধুর এরকম অকালমৃত্যু। এটা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায়না।তবে অবশ্যই নৌকার লঞ্চ যে কোনো ভ্রমনেই আমাদের অনেক বেশি সতর্ক থাকা প্রয়োজন।আমাদের সকলের এই কথাটা খুব ভাল করে মনে রাখা উচিত। ছোট্ট একটি দুর্ঘটনা, সারা জীবনের কান্না।এবং আমাদের প্রতিটি মানুষের সাঁতার শেখা আবশ্যকীয়।♥♥

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.16
JST 0.033
BTC 64349.87
ETH 2775.11
USDT 1.00
SBD 2.65