জুমার নামাজ হলো সাপ্তাহিক মিলন মেলা।।

হ্যালো বন্ধুরা,
আপনারা সবাই কেমন আছেন। আশা করি সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমতে আপনারা সবাই অনেক ভাল আছেন। আজকে আমি আপনাদের সাথে নতুন একটি ব্লগ নিয়ে হাজির হয়েছি। আজকে আমি আপনাদের সাথে পবিত্র জুম্মার নামাজ নিয়ে কিছু কথা বলবো।

আপনারা সবাই জানেন যে পবিত্র ইসলাম ধর্মে প্রতি শুক্রবারে ধর্মপ্রাণ মুসলমান ভাইয়েরা পবিত্র জুমার নামাজ আদায় করে। ইসলাম ধর্মে জুমার নামাজের অনেক গুরুত্ব রয়েছে। সেই সাথে রয়েছে অনেক ফজিলত। বাংলাদেশে অনেক মসজিদ রয়েছে যেগুলোতে জুমার নামাজ আদায় করা হয় না। ওই মসজিদগুলোকে বলা হয় পাঞ্জেগানা মসজিদ। পাঞ্জেগানা মসজিদে শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা হয়। রমজান মাসে তারাবি ও রমজানের শেষে এতেকাফ করা হয়।

একসময় সারা গ্রামের মানুষ গ্রামের কেন্দ্রীয় মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতো। তখন মানুষ কম ছিল,আর এত মসজিদও ছিল না। যে কারণে সারা গ্রামের মানুষ একসাথে মিলিত হয়ে এক মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতো। তারপর ধীরে ধীরে মানুষের সংখ্যা বাড়তে লাগলো। সেই সাথে মসজিদের সংখ্যা ও বাড়তে লাগলো। ঢাকা শহরকে বলা হয় মসজিদের শহর। আয়তন অনুযায়ী ঢাকা শহরে যত মসজিদে রয়েছে এত মসজিদ পৃথিবীর আর শহরে নেই। অর্থাৎ জায়গা অনুযায়ী ঢাকা শহরে মসজিদ বেশি। আমাদের গ্রামেও প্রচুর মসজিদ রয়েছে। আমাদের সম্পূর্ণ গ্রামে ২৮ টি মসজিদ রয়েছে। এরমধ্যে ২৬ টি মসজিদে জুমার নামাজ আদায় হয়।

আপনারা সবাই জানেন যে অন্যান্য দিনে জোহরের নামাজের আজান দুপুর ১ টার সময় দেওয়া হয়। আর জুমার নামাজের আযান দুপুর ১২ঃ১৫ থেকে শুরু হয়। প্রায় সাড়ে বারোটা পর্যন্ত বিভিন্ন মসজিদে জুমার নামাজের আজান শোনা যায়। জুমার দিন হলো গরিবের হজের দিন। যারা টাকার অভাবে হজ করতে পারে না, তারা যদি জুমার নামাজের সমস্ত শর্তগুলো পালন করে নামাজ আদায় করে তাহলে হজের সওয়াব পায়। আজকে ১২ঃ১৫ মিনিটে জুমার নামাজের আযান শুনে আমি তাড়াতাড়ি করে হাতের কাজগুলো গুছিয়ে নিলাম। তারপর ১২:৪৫ মিনিটে গোসল করতে গেলাম। গোসল শেষ করে দুপুর একটার সময় নামাজের উদ্দেশ্যে বাসা থেকে বের হলাম।

শহরের মধ্যে সাধারণত বারোটার পর থেকেই মানুষ মসজিদে যাওয়া শুরু করে। কারণ শহরে প্রচুর মসজিদ থাকা সত্ত্বেও মসজিদে গিয়ে জায়গা পাওয়া যায় না। যার ফলে মানুষ একটু আগে আগেই মসজিদে যাওয়ার চেষ্টা করে। যারা পড়ে যায় তাদের অধিকাংশই জায়গা পেতে অনেক কষ্ট হয়। আমি একটার সময় মসজিদে গিয়ে প্রথম এবং দ্বিতীয় তলাতে জায়গা পায়নি। তৃতীয় তলাতে কোনরকম অল্প একটু জায়গা পেয়েছি। শুক্রবারে জুমার নামাজের দিন এলাকার প্রত্যেকটা মুসলমান মসজিদে গিয়ে জুমার নামাজ আদায় করার চেষ্টা করে। যার ফলে মসজিদে জায়গা পেতে একটু কষ্ট হয়ে যাই।

শুক্রবারে জুমার নামাজ হলো মুসলমানদের জন্য একটি সাপ্তাহিক মিলন মেলা। এলাকার মানুষ সপ্তাহের ছয় দিন নিজ নিজ কাজে ব্যস্ত থাকে। কেউ চাকরি করে, কেউ বিজনেস করে, এরকম ভাবে মানুষ বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত থাকে। কিন্তু শুক্রবারে জুমার নামাজের আযান দেওয়ার পর সবাই নিজ নিজ কাজ থেকে ফারেগ হয়ে জুমার নামাজের প্রস্তুতি নিয়ে মসজিদের দিকে যেতে থাকে। যখন মানুষ জায়নামাজ হাতে নিয়ে মসজিদের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে তখন ঈদের দিনের দৃশ্য ফুটে উঠে। ঈদের দিনের মত জুমার নামাজের জন্য মানুষ রং বেরঙের পাঞ্জাবি টুপি পড়ে মসজিদ যায়। এই দৃশ্যগুলো খুবই চমৎকার লাগে।

আমি আজকে যে মসজিদে জুমার নামাজ আদায় করতে গিয়েছিলাম, সেই মসজিদের নাম হলো লামাপাড়া দরগা বাড়ি কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ। এই মসজিদের পাশে ঈদগাহ মাঠও রয়েছে। প্রতি শুক্রবারে জুমার নামাজের সময় তিন তলা মসজিদ মানুষ দ্বারা কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে সেই ঈদগা মাঠের মধ্যেও মানুষ জুমার নামাজ আদায় করে। যারা নামাজের জন্য সবার শেষে যাই তারাই ঈদগাহ মাঠে জায়গা পাই। যেহেতু আমি একটার সময় চলে গেছিলাম তাই আমি তিন তলাতে জায়গা পেয়েছিলাম।

আমি নামাজ শেষ করে মসজিদের আঙ্গিনায় দাঁড়িয়ে বেশ কয়েকটি ফটোগ্রাফি নিয়েছিলাম। আপনারা সবাই জানেন যে জোহরের নামাজ চার রাকাত হলেও জুমার নামাজ হলো দুই রাকাত। জুমার নামাজের একটি বৈশিষ্ট্য হলো এ নামাজ পড়ার আগে খতিব সাহেব মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা প্রদান করেন। এই খুতবার মধ্যে দেশ এবং বিশ্বের বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা সহ ইসলামের হুকুম আহকাম নিয়ে আলোচনা করা হয়।

তারপর নামাজ শেষ করে দেশ ও জাতির জন্য দুই হাত তুলে সৃষ্টিকর্তার নিকট দোয়া করা হয়। এই দোয়ার সময় শত শত মুসল্লিদের আমিন আমিন ধ্বনিতে মসজিদ কম্পিত হয়ে ওঠে। আজকে জুমার নামাজ শেষে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বন্যারতদের জন্য দোয়া করা হয়েছে। নামাজ শেষে বন্যার্তদের সাহায্যের জন্য অর্থ কালেকশন করা হয়েছে। সবাই যে যার সামর্থ্য অনুযায়ী বন্যার্তদের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছে। সুতরাং বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে জুমার নামাজের ইহকালিন এবং পরকালীন অনেক গুরুত্ব রয়েছে।

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।