রাস্তা নয় যেন কঙ্কাল ।। 10% beneficary for @shyfox ❤️

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)

আজ- ১৭ ই আশ্বিন | ১৪২৯ , বঙ্গাব্দ | শরৎকাল ||

শুভ সন্ধা

হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই। আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আমি @joniprins আরো একটি নতুন পোষ্ট নিয়ে আপনাদের সামনে হাজির হয়ে গেলাম। আজকে খুবই মর্মান্তিক একটি বিষয় নিয়ে আপনাদের সাথে আলোচনা করবো। চলুন তাহলে শুরু করা করা যাক।

bulldozer-410118_1920.jpg
Source

গত সাপ্তাহে আমার এক আত্নীয় মারা যাওয়ার কারনে আমি ঢাকা থেকে দ্রুত বাড়িতে যায়। বাড়িতে গিয়ে মা-বাবা সবাইকে নিয়ে ঐ আত্নীয়ের বাড়িতে যাওয়ার জন্য রওয়ানা করি। আমারা দুইটি সিএনজি রিজার্ভ করে নিয়ে যাচ্ছিলাম। ঐ আত্নীয়ের নামাজে জানাযা আসরের নামাযের পরে করার ঘোষনা করা হয়েছে। আমরা বাড়ি থেকে দুইটার দিকে বের হয়। আমাদের বাড়ি থেকে ঐ আত্নীয়ের বাড়িতে যেতে এক থেকে দেড় ঘন্টা সময় লাগে। ২০ মিনিটি যাওয়ার পর আমার এক নানু আর দাদু আমাদের সিএনজিতে উঠে। আমরা ফোনে যোগাযোগ করে তাদের জন্য দুইটি সিট খালি নিয়ে যায়। সুতরাং যথা সময়ে তারাও আমাদের সাথে সিএনজিতে উঠে। এখন অনেকে মনে মনে বলতে পারেন এই ঘটনা আপনাদের সাথে সেয়ার করে লাভ কি। লাভ আছে চলোন সামনের দিকে যায়।

যাওয়ার সময় দেখলাম রাস্তার অবস্থা এত খারাপ, আমি বর্ণনা দিয়ে আপনাদেরকে বুঝাতে পারবো না। এক ঘন্টার রাস্তা সিএনজি দুই ঘন্টায়ও যেতে পারতেছে না। বৃষ্টির কারনে রাস্তার পিচ উঠে কঙ্কালের চেহেরা ধারণ করে আছে। যদি সমস্ত রাস্তা কঙ্কালের মত থাকতো তাও ভাল ছিল। এক মিনিট দুই মিনিট যাওয়ার পর পরই রাস্তার মাঝখান দিয়ে, এদিক দিয়ে সেদিক দিয়ে ড্রেনের মত হয়ে আছে। রাস্তায় যেতে যেতে সিএনজিতে থাকা মানুষের উপর এত জাকি লাগলো যে ঐ আত্নীয়ের বাড়িতে যাওয়ার আগেই সিএনজিতে থাকা আমার নানু আর দাদু অসুস্থ হয়ে গেল। রাস্তার অবস্থা খারাপ হওয়ার কারনে আমরা সাড়ে পাচঁটার দিকে ঐ বাড়িতে পৌছায়। আমরা আত্নীয়ের জানাযাও করতে পারি নাই আবার কেউ ঐ আত্বীয়কে শেষ বারের মত দেখতেও পারি নাই।

আমি গাড়িতে থাকা অবস্থায় সিএনজি ড্রাইভারকে জিঙ্গেস করেছিলাম যে ভাই রাস্তার অবস্থা এত খারাপ কেন..? সে বললো ভাই প্রতি বছর বছর রাস্তা দেখিয়ে সরকার থেকে টাকা আনে। তারপর কিভাবে যেন পিচ ডালায় দেয়, হালকা বৃষ্টি হলেই সেই পিচ উঠে যায়। বৃষ্টির মৌসুম আসলে গ্রামগঞ্জের কোন রাস্তা দিয়েই গাড়ি চালানো তো দুরের কথা ঠিক ভাবে হাটাই যায় না।

এরকম অবস্থার শিকার শুধু যে আমরা তা নয়। সারা বাংলাদেশের রাস্তার অবস্থাই এমন। বিশেষ করে গ্রামগঞ্জের রাস্তা গুলোর দিকে সরকারি লোক বা প্রকৌশলীদের নজর কম। কিছু কিছু গাড়ির ড্রাইভার বলে ভাইয়া রাস্তার অবস্থা দেখে মন চাই গাড়ি গুলো আমাদের নিজের কাধে করে নিয়ে যায়।

construction-machine-3412240_1920.jpg
Source

বেশ কয়েক মাস আগে একটি নাম করা প্রত্রিকার প্রতিবেদনে পড়েছিলাম, “এলজিইডির ৬৩ শতাংশ সড়কই খারাপ,ব্যবহারের অনুপযুক্ত। তার কারন হলো নিম্নমানের কাজ ও নিম্নমানের নির্মাণ উপকরণ,অনিয়ম-দুর্নীতি,অদক্ষ ঠিকাদার,রক্ষণাবেক্ষণের অভাব,নকশার ত্রুটি সড়ক নেটওয়ার্ককে ভঙ্গুর দশায় নিয়ে গেছে। প্রযুক্তি ব্যবহার না করে অপরিকল্পিত ভাবে নিম্নমানের খোয়া ও অপর্যাপ্ত বালি দিয়ে এবং খোয়া না দিয়ে কাদার ওপর পিচ দিয়ে রাস্তা নির্মাণ করায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে। নির্মাণের কয়েক মাসের মধ্যে সড়কের বেহাল দশা দেখে বোঝা যায়, এটি যথাযথভাবে নির্মাণ হয়নি। নির্মাণকাজে ফাঁকি দেয়া হয়েছে”।

কিন্তু আমার প্রশ্ন, সড়ক নির্মানের সময় তো সরকারি প্রকৌশলী,সরকারি লোক থাকার কথা। সড়ক নির্মাণের পর তা তো কর্তৃপক্ষকে বুঝিয়ে দেয়ার কথা। তাহলে তারা কি সঠিকভাবে বুঝে নেয়নি..? ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) এর এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এলজিইডির কাজের ক্ষেত্রে বরাদ্দকৃত অর্থের গড়ে ১৫ শতাংশ অর্থ ভাগাভাগি হয়ে যায়।এলজিইডির বেশির ভাগ প্রকল্প ও রক্ষণাবেক্ষণ কাজে এর চেয়েও অনেক বেশি অর্থ নয়ছয় হয়।এখানে এক খাতের অর্থ অন্য খাতে ব্যয় করা রীতিমতো নিয়মে পরিণত হয়েগেছে।টেন্ডার পাওয়ার জন্য রাস্তার জন্য বরাদ্দকৃত টাকায় বিলাসবহুল গাড়ি কিনে সেগুলো বিভিন্ন পর্যায়ের রাজনৈতিক প্রভাবশালী নেতাদের ব্যবহারের জন্য উপহার দেয়া হয়।

সড়ক নির্মানের অর্থ যদি এভাবে বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়ে যায় তাহলে সড়ক নির্মান করবে কি দিয়ে আপনারাই বলেন। ছোট একটি গল্প দিয়ে আজকের পোষ্টটি শেষ করতেছি।

বিশ্ব মোড়ল আমেরিকা কানাডার বর্ডারে একটি দেয়াল নির্মাণ করার জন্য সিধান্ত নেই। সেই দেয়াল নিমার্ণ কাজের জন্য তিনটি দেশ আবেদন করে। বাংলাদেশ, জাপান আর জার্মানি। আমেরিকার রাষ্ট্রপতি জাপানকে বলে এত বাই এত ফুট লম্বা দেয়ালটি নির্মাণে কত ডলার ব্যয় হবে। জাপান সব ক্যালকুলেসন করে বলে দুই মিলিয়ন ডলার। তারপর জার্মানি বলে তিন মিলিয়ন ডলার আর বাংলাদেশ বলে পাচঁ মিলিয়ন ডলার।

তারপর রাষ্ট্রপতি কে কিভাবে কোন ক্যাটাগরিতে কাজ করবে তা জানতে চাইলো। জাপান তার নিজের মত করে বর্ণনা করলো। জার্মানিও কোন কোন জাগায় কত ডলার ব্যয় হবে সম্পূর্ণ বিস্তারিত বললো। সব শেষে আসলো বাংলাদেশের নিকট। বাংলাদেশের ঠিকাদারির লোক বললো দেয়ালটা নির্মাণ করতে জাপানকে দিবো দুই মিলিয়ন ডলার আর আপনাকে দিবো দুই মিলিয়ন ডলার আর বাকি এক মিলিয়ন ডলার আমাদের।

106.png

3YjRMKgsieLsXiWgm2BURfogkWe5CerTXVyUc6H4gicdRPjVagCKakAuSTsQyj2bkd5a1qGy627tazWyRR8KvSGF5XUzUYGAJxbEm1WagpCyidt3eCtv81zeLX27xCgJJcRrX6JcoixPY1ZYkTzZRvU4cg43nsPEvFsMrCx1qpdtvt7rn7wUCn6Q3hQL3sAJM.png

4gZTTLyoV1msFb1u1BdB14ZHSP5sNg8hbP9cbJyTmUqfzL1as2zt5nA5iP9iEBmXtJKZZD3SHGtdFKZ13Up5EmSAxpDYtwYvvxyhsR48F5wdZ6ZhgEKtW9w1csKVawJHrqc3fgSkcpz8WsTY1MvhswZsey8zNe3vkwTdKjCivA3Z6dpaPrexwcy6xHQHfFaMXGPra6UPL.png

Sort:  
 2 years ago 

ঠিক বলেছেন। তৃতীয় বিশ্বের মূল সমস্যা হচ্ছে এর দুর্ণীতি। এটা না কমলে কিছুই হওয়ার নয়।

 2 years ago 

জী বিশেষ করে বাংলাদেশের অবস্থা বেশি খারাপ। ধন্যবাদ ভাইয়া।

 2 years ago 

সত্যি বলেছেন ভাইয়া এখনো কিছু কিছু গ্রামের কিছু রাস্তা আছে যেন রাস্তা নয় যেন কঙ্কাল ।এলজিইডির ৬৩ শতাংশ সড়কই খারাপ,ব্যবহারের অনুপযুক্ত একদম বাস্তব কথা। আপনি সিএনজি ড্রাইভারকে জিঙ্গেস করাতে উনি বলল ভাই প্রতি বছর বছর রাস্তা দেখিয়ে সরকার থেকে টাকা আনে। তারপর কিভাবে যেন পিচ ডালায় দেয়, হালকা বৃষ্টি পেলেই ভেঙে যায়।এটাই দেশের অবস্থা। পোস্টটি পড়ে অনেক ভালো লাগল।

 2 years ago 

জী আপু কিছু কিছু রাস্তার অবস্থা দেখলে কান্না করতে ইচ্ছে হয়। ধন্যবাদ।

 2 years ago 

ঠিক বলেছেন ভাইয়া। আমাদের গ্রামের রাস্তাতে এত পরিমাণ খারাপ যেটা বলে বোঝানো যাবে না। গ্রামে মেম্বার রাস্তা ঠিক করে অনুদান আসলে সেটার ফিফটি পার্সেন্ট দিয়ে হালকা কিছু ঠিক করে আর ফিফটি পার্সেন্ট নিজের পকেটে রেখে দেয়। তাছাড়া গ্রামের মানুষ সেরকম সচল না যে একটা জিনিসের প্রতি প্রতিবাদ করবে। যারা যেমন আছে তেমনি থাকতে চাই। আর আপনার সিএনজিতে যাওয়া গল্পটি পড়ে কি বলব আর বলার মত কোন কিছুই নেই।
তবে ভাই গ্রামের প্রাকৃতিক দৃশ্যটি অনেক সৌন্দর্য। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ

Coin Marketplace

STEEM 0.16
TRX 0.15
JST 0.029
BTC 56477.82
ETH 2390.38
USDT 1.00
SBD 2.33