ছেলেমেয়েদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণ।। 10% beneficiary to @shy-fox

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago (edited)
আসসালামুআলাইকুম/ নমস্কার/আদাব

হ্যালো বন্ধুরা আমি @joniprins

কেমন আছেন সবাই। আশা করি সবাই স্টিমিট নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করছেন। আমিও অনেক ব্যাস্ত সময় কাটাচ্ছি। যদিও মাঝে মাঝে বিদ্যেুৎ,গ্যাস ডিস্টার্ব দিচ্ছে। তারপরও সৃষ্টিকার্তার কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া। তিনি অনেক ভাল রেখেছেন। আমি গত কালকে একটি পোষ্ট দিয়েছিলাম। যার টাইটেল ছিল “ছেলেমেয়েদের নৈতিক মুল্যবোধের অবক্ষয়”। আজকে আমি আপনাদের সাথে সেই মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কিছু কারন সেয়ার করবো। চলোন দেখে আসা যাক।

Untitled-1.png

ঐদিনের ঘটনা শুনার পর থেকে চিন্তায় আমার মাথাটা ঘুর ঘুর করছিল। ভেবেই পাচ্ছি না, যে এমন ভাবে ছেলে পেলেদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় কিভাবে ঘটলো। টিচার যত কিছুই করোক তাই যলে টিচারকে এভাবে মারাটা কোন ভাবেই কাম্য নই। অবশেষে অনেক চিন্তা ভাবনা করে কয়েকটি কারন বের করেছি। চলোন সে গুলো জানা যাক।

০১। রাজনৈতিক প্রভাব।

এখনকার ছেলেমেয়েরা কাউকে পরোয়া করেনা, কোনো কিছুকেই অন্যায় মনে করেনা। কারো সাথে দূর্ব্যবহার করা,কাউকে অকারণে নির্যাতন করা, মারামারি করা, কাউকে ঠকানো,নকল করা, চাদাবজি করা, বড়দেরকে অসম্মান করা, এগুলো তারা হরহামেশাই করে থাকে। তারা এগুলো করাকে খারপ চোখে তো দেখেই না বরং এগুলো করে নিজেকে বীর পুরুষ মনে করে। কারন সে জানে যে সে যত বড় অন্যায় করুক না কেন, সে গুলো ধামাচাপা দেওয়া জন্য তার উপরে বড় ভাই আছে, উপরে নেতা আছে,নেতারা সব কিছু টেকেল দিবে। উপরের মহলের আশ্রয় পেয়ে,রাজনৈতি শেলটার পেয়ে এখন অপরাধকে আর অপরাধ মনে হয় না। এগুলোর জন্য তাদের কারো কাছে জবাবদিহিতা করা লাগে না। কেউ কিছু বললে তারা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বুক উচু করে চলে আসে।

০২। ছাত্রদের প্রতি শিক্ষকদের আন্তরিকতার অভাব।

এখনকার শিক্ষকরা তাদের ছাত্রদের প্রতি আগেকার শিক্ষকদের মত এত আন্তরিকতা নেই। আগেকার শিক্ষকরা ছাত্রদেরকে তাদের নিজের সন্তানের মত দেখতেন, পড়ার বাইরেও ছাত্রদের ভালমন্দ নিয়ে চিন্তা ভাবনা করতেন, সবল-দূর্বল সব ছাত্রদের প্রতি সমান মনোযোগ দিতেন। ছাত্রদের সাফল্যের মাঝে নিজের সাফল্য, নিজের আনন্দ খুঁজে পেতেন, নিজেরা যেমন আদর্শবান ছিলেন, ছাত্রদের মাঝেও সেই আদর্শ চর্চা করতেন। এখনকার শিক্ষকদের মাঝে এসব নেই। কারণ এখন বেশিরভাগ শিক্ষক স্কুল কলেজে আসেন, ঘুষ দিয়ে বা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে। শিক্ষকতা পেশাকে ভালবেসে নয়। এ পেশাকে শিক্ষকেরা অন্যসব পেশার মত ‘জীবিকা নির্বাহের উপায়’ হিসেবে দেখে। নিজেদেরকে চাকুরীজীবী ভাবে, ‘মানুষ গড়ার কারিগর’ ভাবেনা। তাই তাদের হাতে ‘মানুষ’ তৈরি না হয়ে অন্যকিছু তৈরি হচ্ছে।

০৩। ক্লাস ফাঁকি দেওয়া বা অযথা সময় নষ্ট করা।

শিক্ষকদের মূল কাজ হল, ক্লাসে শতভাগ মনযোগ দিয়ে ছাত্রদের পড়ানো। কিন্তুু এখনকার শিক্ষকেরা সে দ্বায়িত্ব ঠিক ভাবে পালন করে না। এ পেশার প্রতি তাদের ভালবাসা, দায়বদ্ধতা বা আন্তরিকতা থাকেনা। । যার কারণে ক্লাস ফাঁকি দেই। যত ছোট ক্লাসের ছাত্রই হোক না কেন, কোন শিক্ষক ভাল, আর কোন শিক্ষক ফাঁকিবাজ, সেটা তারা ঠিকই বুঝতে পারে। আর বুঝতে পারার সাথে সাথে সে শিক্ষকের প্রতি ঘৃণা চলে আসে। পরে তারা সব শিক্ষক কে অসম্মান করতে শুরু করে। শিক্ষকদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধাবোধ হারিয়ে যায়। পড়া শোনার প্রতি,শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রতি তাদের আর্কষন,আগ্রহ হারিয়ে যায়।

০৪। প্রাইভেট পড়ানো বা কোচিং বানিজ্য করার চিন্তা করা।

এখন বাংলাদেশের সব স্কুল কলেজে অধিকাংশ শিক্ষকই প্রাইভেট পড়ানোর চিন্তায় মগ্ন থাকেন। কলেজের শিক্ষকরাও কোনরকম হাজিরা দেওয়া মত কিছু্ক্ষন ক্লাস করে ব্যাচের পর ব্যাচ প্রাইভেট পড়ায় বা কোচিং এ ক্লাস নেয়। তাদের এই অনৈতিক,লোভ লালসার কারনে তাদেরকে আর কেউই তেমন ভাবে ভালবাসে না, শ্রদ্ধা করেনা। শিক্ষকদের কোচিং বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ছাত্ররা কিছু বললেই,তাদের উপর নেমে আসে বেতের আঘাত। প্রাইভেটে ছাত্র আনার জন্য নম্বর কম দেয়া, শিক্ষার্থীদের মারা, ইচ্ছে করে কঠিণ প্রশ্ন করা, ইত্যাদি নানা কৌশল অবলম্বন করে। শিক্ষকরূপী এসব কোচিং ব্যবসায়ীর হাতে জিম্মি ছাত্র-ছাত্রীর অভিভাবকরা।

০৫। প্রশ্ন ফাঁস করে দেওয়া।

প্রাইভেটে বা কোচিং সেন্টারের মান বাড়ানো ও ছাত্র বাড়ানোর জন্য শিক্ষকরা তাদের কাছে প্রাইভেট পড়ুয়া ছাত্রদের নিকট পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস করে দেয়। এতে ছাত্র ও অভিভাবক প্রথম দিকে খুশি হলেও অন্তর থেকে কখনোই শ্রদ্ধা করেনা। অনেক শিক্ষক নকল সাপ্লাই দেয়, খাতায় নম্বর বেশি দেয়, নোট করে দেয়। এগুলোর মাধ্যমে তাদের সম্মান বাড়ে না বরং আরো কমে। কিন্তুু তারা সেটা বুঝতে পারে না। আর এই কাজটা ছাত্রদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য কত বড় ক্ষতি সেটা তারা নিজেরাও জানে না। তথাকথিত এসব ছাত্র-ছাত্রীরাই সব বিষয়ে ভাল রেজাল্টে করেও বিশ্ববিদ্যালয়ে চান্স পায় না।

০৬। ছাত্রদেরকে শারীরিক ভাবে নির্যাতন করা।

কিছু কিছু শিক্ষক আছে যারা, ছাত্রছাত্রীরা পড়া না দিতে পারলে তাদেরকে প্রচুর মারধোর করেন,শারীরিক ভাবে নির্যাতন করেন। মানসিক শাস্তি দেন। আর এগুলো শিক্ষার্থীদের মনে দীর্ঘস্থায়ী কষ্টের জন্ম দেয় যার ফলে তারা তাদের ক্ষোভ,রাগ,অভিমান জমিয়ে রাখে। পরে যেকোন সময় শিক্ষকদের সাথে বেয়াদবি করতে ধিদাবোধ করে করে না। যার ফল আমরা আগের পোষ্টে দেখে আসলাম।

০৭। চারিত্রিক প্রবলেম।

আগেকার শিক্ষকরা ছিলেন বাবা-মার মত। তারা ছিলেন চরিত্রবান। তাঁদের বিরুদ্ধে কোন শিক্ষার্থীর যৌন হয়রানীর অভিযোগ তেমন শোনাই যেত না। কিন্তু এখন অনেক শিক্ষক আছে, যাদের চারিত্রিক সমস্যা রয়েছে। অনেক শিক্ষক আছে যারা খুব স্মাট,কথায় কথায় ইংরেজি বলে, সবাইকে নীতি বাক্য শোনায়,তিনি এমন করেছেন,তেমন করেছেন অথচ তারাই যৌন নির্যাতনকারী। এরকম কিছু হারামী শিক্ষকের জন্য মানুষ পুরো শিক্ষক জাতিকে অশ্রদ্ধা করে।

০৮। দলবাজি করা।

বর্তমানে প্রায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেই দেখা যায় শিক্ষকেরা অধিক সুবিধা ভোগের জন্য দল বাজি করেন। দলের সাপোর্ট করেন। তাছাড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভিতরে গ্রুপিং করেন। এগুলো প্রতিষ্ঠানের ভিতরে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করে। রাজনৈতিক বা ব্যাক্তিগত সমস্ত কার্যকলাপ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বাউন্ডারির বাহিরে রাখা দরকার।

যায়হোক সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই, এমন কাজ করা যাবে না। যথা সম্ভব কোচিং বানিজ্য থেকে দুরে থাকতে হবে। কোচিং বানিজ্যটা সব থেকে বড় সমস্য। এটা বন্ধ করা গেলে সমস্যা অনেকটাই কমে যেত।

বন্ধুরা কেমন হলো আজকের পোষ্টি, অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। দেখা হবে আবার নতুন বিষয় নিয়ে। ভুল হলে ক্ষমা সুন্দর ‍দৃষ্টি দিবেন। সবাই ভাল থাকবেন,সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।

FNeY1coMNUL9WkErUPeUKmtGszS37qoEdLJEhh8bj8LkMZg4ZnLbSCPtsqdFwbPFaU6vxamfJRhKsAXwWBZmAwtf2KFjktn9asDsnKpUF6cbBcNYFzwcTbFb5dfFf7N5Lt5j8KUqpB64Bhu5yFCR9Qn5uG4sQo8t4PYbc7VJq37PW7258mLRbFTrsBTtbAnos9AJnU46Lv3HqXsN7s.gif

2bP4pJr4wVimqCWjYimXJe2cnCgn9hyaM12S9qnYQP7.gif

2N61tyyncFaFVtpM8rCsJzDgecVMtkz4jpzBsszXjhqan9xBEnshRDSVua5J9tfneqYmTykad6e45JWJ8nD2xQm2GCLhDHXW9g25SxugWCoAi3D22U3571jpHMFrwvchLVQhxhATMitu.gif

7258xSVeJbKkzXhyseBP4PYz11eBDT8sW2oR1a4vfVFS6HTj8TvP47bZQtvjaRu65PSZfJZjCrWPskjnpnnu7RNqCRodb4DorJvt6E66rt9MjZ4n5UFtJBpVQcMSR1NaP7jjSpzSFynvJ.png

Sort:  
 2 years ago 

আজ প্রতিটি স্কুলেই শিক্ষক নিয়োগ দেয়া হয় টাকা নিয়ে তাই ভাল মানের শিক্ষকের অভাবে শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা হতে বঞ্জিত হচ্ছে।

 2 years ago 

আপনি টিক বলেছেন,আপু বর্তমানে ঘুষ আর ক্ষমতার উপরে টিচার নিয়োগ দেওয়া হয়।

 2 years ago 

ছেলেমেয়েদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণ খুবই সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন। তবে সবথেকে আপনার এই গুরুত্বপূর্ণ কথা গুলো, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট করা যাবে না। ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেই, এমন কাজ করা যাবেনা। যথার্থই বলেছেন।♥♥

 2 years ago 

ধন্যবাদ আপু উৎসাহ পেলাম।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 59404.52
ETH 2610.92
USDT 1.00
SBD 2.41