বিয়ের দাওয়াত আর আমাদের খাবারের ভদ্রতা।।
বাংলা ভাষার কমিউনিটি
হ্যালো বন্ধুরা, কেমন আছেন সবাই? আশা করি সবাই ভালো এবং সুস্থ আছেন।
আমাদের সমাজে বিয়ে শুধু একটি পারিবারিক অনুষ্ঠান নয়, বরং আনন্দ, মিলন আর সামাজিকতার অন্যতম বড় ক্ষেত্র। বিয়ের আসর মানেই আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব এবং গ্রামের মানুষজন একসাথে হওয়া। কিন্তু এই আনন্দঘন মুহূর্তে আমরা অনেক সময় এমন কিছু আচরণ করি যা আয়োজকদের জন্য কষ্টকর হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে খাবারের টেবিলে আমাদের কিছু অভ্যাস এখনো পরিবর্তন হয়নি, যা সমাজে একটি নেতিবাচক দৃষ্টান্ত তৈরি করছে।
গত বছর এক আত্মীয়ের বিয়েতে বরযাত্রী হিসেবে যাওয়ার সুযোগ হয়েছিল। শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষে আমরা মেয়ের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিই। সেখানে পৌঁছে দেখি দারুণ সুন্দর সাজানো বিয়ে বাড়ি, চারপাশে উৎসবের আমেজ। সবাই যার যার দায়িত্ব অনুযায়ী খাবারের টেবিলে বসে পড়লো। আমি সবার শেষে গিয়ে এক কোণের টেবিলে বসলাম। পেছনের টেবিলে কয়েকজন মহিলা বসেছিলেন। তাদের কথোপকথন শুনে মনে হলো, যেন বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার জন্য আলাদা কিছু অদ্ভুত নিয়ম কানুন আছে।
তাদের আলোচনা ছিল এমন, আগে আগে খেতে বসতে হবে, না হলে সব আইটেম পাওয়া যাবে না।বিয়েবাড়িতে ঢুকে শরবত, কফি বা চা খাওয়া যাবে না, এগুলো নাকি ক্ষুধা নষ্ট করার ফাঁদ। খাওয়ার সময় ভাত না নেওয়াই ভালো, কারণ এতে গিফটের টাকা উসুল হবে না। মাংস অবশ্যই বেশি নিতে হবে, এমনকি বাচ্চারা না খেলেও তাদের প্লেট ভরে দিতে হবে।
এই ধরনের কথা শুনে আমরা মুচকি হেসেছি বটে, কিন্তু ভেতরে ভেতরে লজ্জাও পেয়েছি। খাবার পরিবেশন শুরু হলে যা চোখে পড়লো তা আরও আশ্চর্যজনক। অতিথিরা সার্ভারের কাছে বলছে এই রোস্টটা নয়, ওই বড়টা দেন, আরো একটা মাংস দিন, বোরহানি দুই গ্লাস দেন ইত্যাদি। শিশুদের প্লেটেও জোর করে মাংস ভরে দেওয়া হচ্ছে, অথচ তারা খেতেই পারছে না। খাওয়া শেষে যখন চারপাশে তাকালাম, দেখি প্রতিটি প্লেটে টাল করে খাবার রয়ে গেছে। মাংস, রোস্ট, বোরহানি, সালাদ সবই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। এত খাবার দিয়ে আবারও এক ব্যাচ অতিথি সুন্দরভাবে খেতে পারতো, অথচ অপচয়ের কারণে তা সম্ভব হলো না।
সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় হলো, যে বাবা মেয়ের বিয়ের আয়োজন করেছেন, তিনি নিজের জমানো টাকা এবং অনেক ক্ষেত্রে ঋণ করে এ আয়োজন করেছেন। তার কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে তৈরি খাবারগুলো অতিথিদের অবহেলায় নষ্ট হয়ে গেল। অথচ যারা খেতে এসেছিল, তারা বুঝলো না এই আয়োজন কতটা কষ্ট করে করা হয়েছে।
আমাদের সমাজে প্রায়ই দেখা যায়, একজনকে দাওয়াত দেওয়া হলে তিনি ছোট ছেলে-মেয়ে কিংবা নাতি-নাতনিকে নিয়েও হাজির হন। কিন্তু আয়োজনের সময় এই শিশুদের জন্য আলাদা করে হিসাব রাখা হয় না। পরে তাদেরও ফুল খাবার পরিবেশন করতে হয়, আর তারা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খেতে পারে না। ফলে খাবার অপচয় হয়, আয়োজক পরিবার অতিরিক্ত চাপের মুখে পড়ে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো এমন আচরণের পরেও অতিথিদের অনেকেই আয়োজকের সমালোচনা করে। বলে খাবারের স্বাদ ভালো হয়নি, এই আইটেমটা পাইনি, পরিবেশন ঠিক হয়নি ইত্যাদি। অথচ ভদ্রতার জায়গা থেকে তারা যদি একটু বুঝে খেতেন, তবে আয়োজক পরিবারকে মানসিক ও আর্থিকভাবে অনেকটা স্বস্তি দিতেন।
বিয়ের আসর আনন্দ ও ভালোবাসার উৎসব। সেখানে অতিথি হয়ে গিয়ে আমাদের দায়িত্বশীল আচরণ করা জরুরি। খাবারের টেবিলে ভদ্রতা, পরিমিতি এবং সম্মান দেখানো শুধু আয়োজকের জন্য স্বস্তি বয়ে আনে না, বরং আমাদের নিজের ব্যক্তিত্বকেও সমৃদ্ধ করে। খাবারকে অপচয় করা একদিকে যেমন পাপ, অন্যদিকে সমাজে অশোভন আচরণের প্রতীক। তাই আসুন, আমরা প্রত্যেকে প্রতিজ্ঞা করি, যেখানেই যাই না কেন, খাবারের টেবিলে ভদ্রতা বজায় রাখব এবং অপচয় কমাবো। সবার শুভ বুদ্ধির উদয় হোক।
সবাইকে ধন্যবাদ। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Click Here For Join Heroism Discord Server
https://x.com/RamimHa74448648/status/1960714518117368139?t=hnRNvQjM2jhYpty8BPUUSg&s=19
যে কোন দাওয়াতে গেলে আসলেই আচরণ করা উচিত। যাতে করে পরবর্তীতে আর কোন সমস্যা না হয়। কিংবা সবাই নিজেকে সংযত রাখতে পারে। আপনার লেখাগুলো পড়ে ভালো লেগেছে ভাই।