লাশ আঞ্জুমান মফিদুলে পাঠিয়ে দেন- প্রথম পর্ব ।10% beneficary for @shyfox ❤️
হ্যালো প্রিয় ভাইয়েরা কেমন আছেন সবাই। কেমন কাটছে আপনারদের সময়। ঘড়ির কাটা আটকে রাখতে পারি কিন্তুু সময়কে আটকে রাখতে পারি না। কখন যে বয়সটা ফাকিঁ দিয়ে চলে যাচ্ছে বুঝতেই পারতেছি না। অর্থের পিছনে, সম্পদের পিছনে ছুটছি, ছুটতে ছুটতে একদিন দেখবো জীবনের বেলা শেষ। কখন কোথায় কি ঘটে বলা যায় না। চলুন আপনাদের সাথে বাস্তব জীবনের একটি ঘটনা সেয়ার করি।
২০১৪ সালে ইন্টার পরিক্ষা দিয়ে ২০১৫ সালে আমি ঢাকায় আসি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার কোচিং করার জন্য। ঢাকাতে বসবাস করে আমার এমন কোন আত্বীয়স্বজন নাই। যার কারনে আমার এক স্যার তিনির এক সাবেক ছাত্রের সাথে আমার পরিচায় করিয়ে দিলেন। স্যারের ঐ সাবেক ছাত্র তখন ঢাকার মগবাজারে এক রুমের একটি বাসা নিয়ে থাকতো। ঐ ছাত্রের নাম ছিল ইয়াসিন। আমি উনাকে ইয়াসিন ভাইয়া বলে ডাকতাম। সে খুব ভাল ছাত্র, এসএসসিতে এ+ পেয়েছিল। ইয়াসিন ভাইয়া থাকতো ঢাকার মগবাজার রেল ক্রসিং এর পূর্ব পাশে। আমি সর্বপ্রথম উনার বাসায় উঠেছিলাম।
আমি গ্রাম থেকে সকালে রওয়ানা হয়ে বিকালের দিকে ঢাকা পৌছে যায়। বিকালে খাওয়া দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়লাম। সন্ধার পরে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে চার পাশটা ঘুরে ভাল করে দেখলাম। আমি যে বাসায় উঠেছি তার উত্তর পাশে একটি মসজিদ আছে। আমাদের বাসা থেকে মসজিদে যেতে দুই মিনিট সময় লাগে। আমি সবসময় ঐ মসজিদেই নামায পড়তাম। আমি যাওয়ার কিছু দিন পড়ে একজন বয়স্ক লোক একটি কাঁথা একটি বালিশ আর একটি পুরাতন ব্যাগ নিয়ে মসজিদের বারান্দায় অবস্থান নেয়। কয়েকদিন পর জানতে পারলাম যে সে ঢাকা শহরের একজন স্থায়ী বাসিন্দা। রাজধানী শহর ঢাকাতে তার দুইটি পাচঁ তলা বাড়ি আছে। একটি বাড়ি ঢাকার ফার্মগেট এলাকায় আর একটি বাড়ি ঢাকার উত্তরাতে। তার বড় বড় তিন জন ছেলে রয়েছে। বড় ছেলেটি বাবার বিজনেসটি দেখাশোনা করে,দ্বিতীয় ছেলেটি চাকরী করে। আর সবার ছোট যে ছেলেটি সে পড়াশোনা করতে আমেরিকা গিয়ে সেখানেই বিয়ে শাদী করে সেটেল হয়ে গেছে।
বয়স্ক ভদ্রলোকটি ১৯৮২ সালে চট্রগ্রাম থেকে ঢাকা এসে বিজনেস শুরু করেছিলেন। সেই বিজনেস দিয়েই ঢাকা শহরে দুইটি বাড়ি সহ অনেক টাকার মালিক হয়েছেন। ২০০৯ সালে উনার স্ত্রী পরলোক গমন করেন। স্ত্রী মারা যাওয়ার কয়েক বছর পরে নিজের বিজনেস বড় ছেলেকে দিয়ে সে বাসায় অবসর জীবন যাপন করতে ছিলেন। উনি বড় ছেলের সাথে ফার্মগেইটের বাসায় থাকতেন। দ্বিতীয় ছেলেটা উত্তরার বাসায় থাকতো। ভদ্র লোকের অবসরকালীন জীবনটা তেমন ভাল যাচ্ছিল না। তিনি লক্ষ করলেন তার ছেলে রাতে ঠিক ভাবে বাসায় ফিরে না। আর যেদিন বাসায় ফিরতো সেদিন নেশা করা অবস্থায় রাত তিনিটা চারটার দিকে বাসায় ফিরতো। বাসায় যে ছেলের বউ আছে সেও রাত বিরাতে বাসায় ফিরে। কে কখন কোথায় যায়, না যায়, কোথায় থাকে,কোথায় খায়, না খায় কেউ বলতে পারে না।
ছেলে তার নিজের মত চলে আর বউ তার নিজের মত চলে। স্বামী স্ত্রীর সাথে তেমন যোগাযোগ নেই। এসব নিয়ে প্রায় সময় ভদ্র লোক তার ছেলে ও ছেলের বউকে শাষন করা চেষ্টা করতেন। কিন্তুু ভদ্র লোকের কথা ছেলে ও ছেলের বউ কেউ কর্নপাত করত না। একদিন দুইদিন এমন করে যখন প্রায় পাচঁ ছয় মাস অতিক্রম হলো তখন ছেলে ও ছেলের বউ ভদ্র লোককে তাদের বোঝো মনে করতে লাগলো। তাদের উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপনে ডিস্টার্ব মনে করতে লাগলো। ছেলে এবং ছেলের বউ ভদ্র লোককে আর সহ্য করতে পারলেন না। তারা ভদ্রলোককে বাসা থেকে বের করে দেওয়ার চিন্তা ভাবনা করতে লাগলো।
ভদ্র লোক এসব কথা শুনে মনে অনেক কষ্ট নিয়ে উত্তরার বাড়িতে দ্বিতীয় ছেলের কাছে চলে যাওয়ার সিধান্ত নেন। একদিন সকাল বেলা ফজর নামায পড়ে উত্তরার উদ্যেশে রওয়ানা হন। সকাল প্রায় আটটার দিকে উত্তরার বাড়িতে গিয়ে হাজির হলেন। বাসার কলিং বেইল চাপলেও ভিতর থেকে কেউ দরজা খুলছে না। অনেক্ষন পর দ্বিতীয় ছেলের বউ এসে বিরক্তিকর ভাব নিয়ে দরজাটা খুলে। দরজাটা খুলে যখন শশুরকে দেখলো তখন বিরক্তির সাথেই বললেন বাবা আপনি এত সকাল সকাল এসে ডিস্টার্ব করছেন কেন। বিকালের দিকে আসলেও তো পারতেন। যায়হোক কেন এসেছেন বলেন। ভদ্রলোক ছেলের বউয়ের এসব কথা শুলে শুধু বললেন তোমার হাজবেন্ড কোথায়..? ছেলের বউ বললো উনি এখন ঘুমাচ্ছে। ভদ্র লোক বললো তোমার হাজবেন্ডকে ঘুম থেকে ডেকে পাঠাও গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা আছে। আমি অপেক্ষা করতেছি। ছেলের বউ গিয়ে তার স্বামীকে ডেকে পাঠালো।
ছেলে ঘুম ঘুম ভাব নিয়ে চোখ মুছতে মুছতে বাবার কাছে এসে বললো এত সকাল সকাল কি গুরুত্বপূর্ণ কথা বলো। ভদ্রলোক বড় ছেলে ও তার বউয়ের সব কার্যকলাম দ্বিতীয় ছেলের কাছে বললো। আর এটাও বললো যে তিনি এখন থেকে উত্তরার বাসাতেই থাকবেন। ছেলে এসব কথা শুনে বললো বাবা ভাইয়া ভাবি কি করে না করে এসব তোমার দেখার দরকার নেই। তুমি তোমার মত থাকবা, খাওয়ার সময় খাবা আর ঘুমের সময় ঘুমাবা। ভাইয়া ভাবিকে ডিস্টার্ব করবা না। আর উত্তরার বাসায় তুমি কোথায় থাকবা তুমি বরং ফার্মগেট চলে যাও। একথা বলে ছেলে তার রুমে চলে গেল। ভদ্র লোক মনের মাঝে অনেক কষ্ট নিয়ে এখান থেকেও বের হয়ে গেল। রাস্তায় দাড়িয়ে কিছুক্ষন চিন্তা করলো কোথায় যাবে। উত্তরা থেকে গাড়িতে চড়ে বাংলাদেশের পার্লামেন্ট সংসদ ভবনের পিছনে শহীদ জিয়া উদ্যানে একটি নিরিবিলি জায়াগা বসলেন।
ভাইয়া, আপনি ঠিক বলেছেন ঘড়ির কাঁটা ধরে রাখা যায় কিন্তু সময় ধরে রাখা যায় না।ভাইয়া,আপনার লেখা বাস্তব জীবনের গল্পটি পড়ে সত্যিই অনেক খারাপ লেগেছে।যে বৃদ্ধ বাবা-মা তার সন্তানদের ভালোর জন্য জীবনের অর্ধেকটা সময় কাটিয়ে দেয়। সেই সন্তানরা যখন বড় হয় বাবা-মায়ের কোন কথাই শোনে না, বৃদ্ধ বাবা-মাকে বোঝা মনে করে।তাই হয়তো ওই ভদ্রলোক মনের কষ্টে তার সবকিছু হারিয়ে পথে ঘুরে বেড়াচ্ছে।ভাইয়া,দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ধন্যবাদ।।
জীবন বড়ই বেদনাদায়ক। এমন অনেক ঘটনাই ঘটে আমাদের সমাজে। টাকার পেছনে ছুটতে ছুটতে একসময় কাছের মানুষ আর কেও থাকেনা। এই ভদ্রলোক যাদের জন্য সব করেছেন তারাই তাকে বোঝা মনে করল। আহারে.....
হৃদয় স্পর্শ করা একটা ঘটনা।সমাজ এসব ঘটনা এখন যেন অহরহ ঘটছে।মানুষের মধ্যে মানবতা নেই বললেই চলে।খুব খারাপ লাগে এসব ঘটনা দেখলে।বড়লোক ও ভদ্রলোকদের এ ঘটনাগুলো বেশি ঘটে।দ্বিতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম....
খুবই দুঃখজনক ঘটনা। আসলে ভদ্রলোক ছেলেদের শিক্ষা দিয়ে মানুষ করেছেন কিন্তু ছেলেরা সুশিক্ষায় শিক্ষিত হতে পারেননি তাই আজ বাবার এই অবস্থা। শুধু টাকা পয়সা থাকলেই মানুষের সুখ হয়না সুখ শান্তি হলো ঈশ্বরের আশীর্বাদ স্বরুপ যা সকলের ভাগ্যে হয়না। ঘটনাটি পড়ে চোখে জল চলে আসলো। বাবা মা সন্তান কে ছোট থেকে বড় করে কত কষ্ট করে শেষ বয়সে তারা একটু শান্তিতে থাকবে অথচ সেই সন্তনেরা বৃদ্ধ বাবা মাকে অবহেলার চোখে দেখে এটা কেমন আচরণ আমি বুঝিনা। ঈশ্বর এরকম সন্তান যেনো কোন বাবা মার না হয়। পরবর্তী গল্পের অপেক্ষায় রইলাম।
একদম ঠিক বলেছেন অর্থের পেছনে ছুটে কখন দিন চলে যায় আসলে বোঝা যায় না। বৃদ্ধ লোকটির কথাগুলো পড়ে ভীষণ খারাপ লাগলো। এত টাকা পয়সা আর এত বাড়ি দিয়েও লোকটি এত কষ্ট পাচ্ছে। বড় ছেলে বউকে ভালো কথা বলতে তারা লোকটিকে সহ্য করতে পারল না। আরেকটি বাড়িতে যাওয়াতে ওই ছেলেমেয়ে ও একই কথা বলল। শেষ পর্যন্ত আমার মুখটি কোথায় যাবে এটা জানার ভীষণ আগ্রহ রইলো। যদিও আপনার টাইটেলটি পড়ে অনেকটা ভয় লেগেছে।
আগে যৌথ পরিবার ছিল, তখন সুখ দুঃখে সবাই সবার পাশে থাকত।বড়দের সম্মান শ্রদ্ধা ছিল।এখন যৌথ পরিবার ভেঙ্গে একক পরিবার হওয়ায় সবাই সবার মত।ভাই ভাইয়ের খোজ নেয় না।দিন দিন সমাজের খুব বাজে অবস্থা হচ্ছে।ভদ্রলোকের জন্য খুবই খারাপ লাগছে।এত কিছু থাকার পরেও তার বলতে গেলে কিছুই নেই।অনেক ভাল লিখেছেন ভাইয়া।