আমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি // আমার বাংলা ব্লগ প্রতিযোগিতা-২০// [10% ʙᴇɴᴇғɪᴄɪᴀʀɪᴇs ғᴏʀ @sʜʏ-ғᴏx🦊]
আসসালামু আলাইকুম/আদাব |
---|
কিছুদিন পর পর আমার প্রানের কমিউনিটি “আমার বাংলা ব্লগ” প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বর্তমানে ২০ নাম্বার প্রতিযোগিতার আয়োজন চলতেছে। এবারের প্রতিযোগিতার বিষয় শেয়ার করো “তোমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি”। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আমরা প্রত্যেকটা মেম্বারের মনের কোণে লুকিয়ে থাকা হাসি- কান্নার গল্প জানতে পারি। প্রত্যেকটা মানুষের মনের অনুভূতি জানতে পারি। অনেকেই জীবনের এরকম গল্প বলে আনন্দ পায়। অনেকের আবার মনের কোণে জমিয়ে থাকা কষ্টটা একটু হালকা হয়। আমাদেরকে এরকম সুন্দর একটি প্লাটফর্ম তৈরি করে দেওয়ার জন্য আমাদের কমিউনিটির প্রতিষ্ঠাতা #rme দাদাকে আমি আন্তরিকভাবে সাধুবাদ জানাই।
♥ প্রেম ♥ |
---|
প্রত্যেকটা মানুষ বা জাতিগোষ্ঠীর নিকট প্রেমের সংজ্ঞা আলাদা আলাদা হলেও ভাবার্থ একটাই। প্রেম হল ভালোবাসার সাথে সম্পর্কিত একটি উত্তেজনাপূর্ণ রহস্যময় অনুভূতি। প্রেম হল অন্য কোন ব্যক্তির প্রতি কোন ভালোবাসার অনুভূতি, বা কোন দৃঢ় আকর্ষণ। যদিও প্রেমাত্মক ভালোবাসার আবেগ-অনূভূতিগুলো যৌন আকর্ষণের সঙ্গে সম্পর্কিত, তবুও শারীরিক সর্ম্পকের আশা ব্যতিরেকেও প্রেমানুভূতির অস্তিত্ব এখনো টিকে আছে। আজীবন টিকে থাকবে।
♥♥ প্রেমের অনুভূতি ♥♥ |
---|
প্রেমের যেমন কোনো নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই তেমনিভাবে প্রেমের কোন বয়স নেই, কোনো সময় নেই। যেকোনো বয়সে, যে কোন সময়ে, যেকোন উপায়ে মানুষের জীবনে প্রেম আসতে পারে। কে, কিভাবে, কখন, কার কোন বিষয়টি দেখে প্রেমে পড়ে সেটা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। প্রেম যেমন জোর করে হয় না, তেমনি ভাবে কারো প্রেমের স্মৃতি বা অনুভূতি জোর করে ভুলা যায় না। প্রেম হলো স্বর্গীয় বিষয়।
♥♥♥ আমার জীবনের প্রথম প্রেমের অনুভূতি ♥♥♥ |
---|
আমি পঞ্চম শ্রেণী পাশ করে কওমি মাদ্রাসায় ছয় বছর পড়া শোনা করেছিলাম। প্রথম চার পাচঁ বছর মাদ্রাসায় পড়াশোনা ভালই যাচ্ছিল। ২০১১ সালে ৬ষ্ট তম বছরটি আর মাদ্রাসায় শেষ করতে পারি নাই।
আমি আমাদের গ্রামের মাদ্রাসায় পড়া শোনা করতাম।২০১১ সালের দিকে পড়া শোনায় তেমন মন বসাতে পারতাম না। কারন বাড়ি থেকে মাদ্রাসায় যাওয়ার পথে একটি মেয়েকে দেখতে পেতাম। মেয়েটা যে আহামরি সুন্দর ছিল তা না। আমার কাছে ভাল লাগতো। কে কখন, কার, কি দেখে প্রেমে পড়ে সেটা বলা যায় না। আমার কাছে তার চুল গুলো খুব ভাল লাগতো। লম্বা লম্বা সিলকি চুল ছিল তার। আমি সর্বপ্রথম তার চুল গুলোই দেখেছিলাম। বলতে গেলে আমি তার চুলের প্রেমে পড়ে গেছিলাম।
আমি সকাল দুপুর আর সন্ধায় তিন তিন ছয়বার মাদ্রাসায় আসা যাওয়া করতাম। বিকাল বেলা আসরের নামাযের পর থেকে মাগরিবের আযান পর্যন্ত একটু দেখার জন্য সাথীর বাসার আশে পাশে ঘুরাঘুরি করতাম। কোনদিন দেখতে পারতাম আবার কোনদিন দেখতে পারতাম না। যেদিন দেখতে পারতাম সেদিন খুব ভাল লাগতো। আর যেদিন দেখতে পারতাম না সেদিন মনটা খারাপ করে মাদ্রাসায় চলে যেতাম।
এভাবে কিছুদিন যাওয়ার পর আমার বোনের বিয়ের তারিখ ঠিক হলো। যেদিন আমার বোনের গায়ে হলুদ সেদিন আমি তাকে আমাদের বাড়িতে দেখতে পেলাম। তাকে দেখে আমার খুব ভাল লাগলো। মনে মনে চিন্তা করলাম আজকে তাকে আমার মনের কথা জানাবো। কিন্তুু বিয়ে শেষ হয়ে গেল আমার মনের কথা আর বলা হয়নি।
সাথী তখন আলিয়া মাদ্রাসায় ক্লাস নাইনে পড়তো। আমি ২০১১ সালে কওমি মাদ্রাসার পড়া শোনা ছেড়ে আলিয়া মাদ্রাসায় তার সাথে ক্লাস নাইনে ভর্তি হলাম। সে যেখানে যেখানে গনিত আর ইংরেজি প্রাইভেট পড়েতো আমিও সেখানে সেখানে প্রাইভেট পড়া শুরু করলাম। প্রতিদিন তার সাথে ক্লাসে আসা যাওয়া করি, প্রাইভেটে আসা যা্ওয়া করি। খুব সুন্দর ভাবে সময় কাটতে লাগলো। এখন পর্যন্ত কেউ জানে না আমি তাকে ভালবাসি এমন কি সে নিজেও জানে না। তবে তার সাথে ভর্তি হওয়ার কারনে হয়তো কিছুটা বুঝতে পেরেছে।
আমাদের ক্লাসে সাজ্জাত নামে একটি ছেলে পড়তো। সে ক্লাসের ফাষ্ট বয় ছিল। সাথী পড়াশোনায় তেমন ভাল স্টুডেন্ট ছিল না। যার ফলে সাজ্জাতের সাথে বেশি বেশি কথা বলতো, অনেক কিছু জানার চেষ্টা করতো। কিন্তুু আমি সাজ্জাতের সাথে তার কথা বলটা পছন্দ করতাম না এবং মেনে নিতে পারতাম না। যার ফলে আমি অংক এবং ইংরেজিতে ভাল করার জন্য দিনরাত পড়া শোনা করতে লাগলাম।
ক্লাসের মধ্যে আমার আরবী এবং বাংলা লেখা সুন্দর হওয়ার কারনে কিছু প্রশংসা শুনতে লাগলাম। প্রাভেটের মধ্য যে অংক গুলো দিতো বাসায় এসে ১৫ থেকে ২০ বার করে অংক গুলো করে মুখস্ত করে ফেলতাম। নতুন হিসাবে আমার সাথে তেনম কেউ কথা বলতো না, আমিও ক্লাসে চুপচাপ থাকতাম কারো সাথে তেমন মিশতাম না। এখন লক্ষ শুধু একটাই কিভাবে সাজ্জাত কে পিছনে ফেলানো যায়। তা নাহলে আমি যার জন্য এখানে আসলাম তাকে আমি পাবো না।
এভাবে আমার দিন রাত কাটতে লাগলো। ২০১২ সালের মেট্টিক পরিক্ষা দেওয়ার জন্য টেষ্ট পরিক্ষা নেওয়া হলো, সেই পরিক্ষায় আমি দ্বিতীয় স্থান অর্জন করলাম। স্যার ম্যাডামরা ভালই প্রশংসা করেছিল। সাজ্জাত প্রথম স্থান অর্জন করায় সাথী সবসময় সাজ্জাতের সাথেই কথা বলতো, আমার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলতো না। কিন্তুু আমি তাকে খাইতে, বসতে, ঘুমাতে এমন কি গোসল করতে পুকুরে গেলে পানিতে তাকে দেখতাম। আমি তার জন্য সাজ্জাতের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমে পরেছিলাম।
তিন মাস পর দাখিল (এস এস সি) ফাইনাল পরিক্ষা শুরু হলো। আমি সর্বশক্তি দিয়ে পরিক্ষায় অংশ গ্রহন করলাম। লক্ষ একটাই সাজ্জাত কে পিছনে ফেলানো আর সাথীর দৃষ্টি আমার দিকে ঘুরানো। আমাদের পরিক্ষার শেষদিন রেললাইন দিয়ে হাটাহাটি করেছিলাম। সে সবসময় সাজ্জাতের সাথেই কথা বলার চেষ্টা করতো। আর আমার খুব কষ্ট লাগতো।
আমি অধির আগ্রহে পরিক্ষার রেজাল্টের আশায় দিন গুনতে লাগলাম। যেদিন রেজাল্ট দিবে সেইদিন সকাল বেলা বাড়ি থেকে বাহির হয়ে গেলাম। আমাদের গ্রামে বড় একটি মসজিদ আছে, মোবাইল বন্ধ করে সেই মসজিদে গিয়ে বসে রইলাম। আর আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করতে লাগলাম যেন আমি ফাষ্ট হতে পারি। সারাদিন কিছু খাইনি মসজিদে বসে অপেক্ষা করতে লাগলাম।
অবশেষে ২টার সময় মোবাইল অপেন করলাম। সাথে সাথে মোবাইলে ইংরেজি স্যারের নাম্বার থেকে কল আসলো, স্যার বললো আমি এ+ পেয়েছি। আমি সাজ্জাতের কথা জিঙ্গেস করতে পারলাম না স্যার লাইন কেটে দিলো। আমি অংক স্যারের কাছে ফোন দিলাম। স্যার বললো আমি এ+ পেয়েছি। আমি সাজ্জাতের কথা জিঙ্গাসা করলাম স্যার বললো সাজ্জাত এ পেয়েছে। আমাদের মাদ্রাসায় এ+ একটিই এসেছে আর সেটা আমিই পেয়েছি। আমি আরো কয়েকজন স্যারের কাছে ফোনদিয়ে কন্ফার্ম হয়ে বাসায় আসি। সাথীর কথাও জিঙ্গাসা করেছিলাম সেও পাশ করেছে, ৪.৪৩ পয়েন্টে পেয়েছে।
পরিক্ষায় ফাষ্ট হয়েছি এলাকার সবাইকে মিষ্টি বিতরন করে কয়েকদিন পর মিষ্টি নিয়ে মাদ্রাসায় গেলাম। সবাইকে মিষ্টি মুখ করালাম, সাজ্জাতের মনটা অনেক খারাপ ছিল,সে আমার দেওয়া মিষ্টি খাইনি। সে রাগে ঐ মাদ্রাসা ছেড়ে চট্রগ্রামে চলে গেল। আমি মনে মনে খুশি হয়ে ভাবতে লাগলাম সাথী এখন শুধু আমার, সে তখন আমার সাথে প্রচুর কথা বলতো। প্রায় সব মেয়েরাই তখন আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা করতো কিন্তুু সে আমার সাথে একটু বেশিই দুষ্টামি করতো। হয়তো কুচ কুচ হু গিয়া হে……….
সে আলিম (এইচ এস সি) ঐ মাদ্রাসায় ভর্তি হলো। আমিও অন্য জাগায় ভাল অফার পেয়েও গেলাম না ঐ মাদ্রাসায় রয়ে গেলাম। এখন সে পরিক্ষায় সময় আমার পাশে বসে, আমি লেখার সময় খাতার উপরে বাম হাতটি দিয়ে ডেকে রাখতাম। আর সে তার হাত দিয়ে আমার হাতটি সরিয়ে দিতো। তার হাতের স্পর্শ আমার কাছে কত যে ভাল লাগতো সেটা আমি ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। প্রত্যেকটা পরিক্ষায় কয়েক শত বার আমি তার হাতের স্পর্শ পেতাম। তার সাথে এইচএসসির ২ টা বছর অনেক কথা হয়েছে,অনেক দুষ্টামি করেছি কিন্তুু একটি বারের জন্যও বলতে পারিনি আমি তাকে কতটা ভালবাসি।
দুইজনে একসাথে একই কলেজে অনার্সে ভর্তি হলাম। অনার্সের প্রথম দুই বছর তার সাথে আমি অনেক সময় কাটিয়েছি, আমি তখন ঢাকা থাকতাম , প্রত্যেক মাসে চার থেকে পাচঁবার তার সাথে মিট করতাম,ঘুরতাম, শপিং করতাম,আইসক্রিম,ফুচাক সহ কোর খাবার বাদ রাখি নাই যেটা তার সাথে সেয়ার করি নাই। কিন্তুু তখনও তাকে ভালবাসি বলতে পারি নাই। আর সেও বলে নাই। সে হয়তো সব কিছু ফেন্ড হিসাবেই নিয়েছিল।
দুই বছর পর হঠাৎ কয়েকদিন তার মোবাইল বন্ধ পেলাম। ২০১৮ সালের জুলাই মাসের ২০ তারিখ শুক্রবারে তার বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয়। সে বিয়ের তিনদিন আগে একটি হলুদ পাঞ্জাবি পাঠিয়ে বিয়ের দাওয়াত দিয়েছিল। আমি তখন ঢাকায় ছিলাম। তার বিয়ের কার্ড পেয়ে আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। সোজা বাসায় এসে সুয়ে পড়লাম। সেদিনের পর থেকে ও কমপক্ষে একহাজারের মত কল দিয়েছিলো আমি একটি কলও রিসিপ করি নাই। বৃহস্পতিবারে রাতে মোবাইলটা অফ করে চারটি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। দুইদিন আমি কি খেয়েছি কি করেছি কিছু মনে নেই। শনিবারে বিকালে আমার এক অফিসের কলিগ বাসায় এসে আমাকে ঘুম থেকে উঠালো। তাকে নাকি আমাদের বাসা থেকে ফোন করে আমার বিষয়ে জানাতে আর আমার মোবাইল অন করতে বলেছে।
আমি মোবাইলটা অন করে সর্বপ্রথম একটি ম্যাসেজ পড়লাম। ম্যাসেটি ছিল...
আরে বা! আপনিও প্রেমের সুন্দর একটা অনুভূতি আমাদের মাঝে শেয়ার করেছেন দেখছি। আসলে যৌবনের টান আসলে সবার মাঝে প্রেম প্রেম ফিলিংস চলে আসে, তাই অনেকেই প্রেম করে ব্যর্থ হয় আবার অনেকেই সাকসেস। তবে বেশ ভালো লাগলো আপনার ঘটনাটি পড়ে।
ধন্যবাদ ভাইয়া খুশি হলাম আপনার কমেন্ট পড়ে।
কাউজে প্রচন্ড ভালোবেসে ও মুখে না বলার মাঝেও একটি অনুভূতি কাজ করে তবে আমি মনে কাউকে ভালোবাসলে সেটা বলা উচিত। ভালো লাগলো আপনার প্রেমের অনুভূতি পড়ে। ধন্যবাদ
জী ভাইয়া না বলতে পারার জন্য আজকে তাকে হারিয়েছি। ধন্যবাদ ভাইয়া।
আপনার পুরো পোস্টটি পড়ে খুব ভালো লাগলো। আপনি খুব সুন্দর করে প্রথম প্রেমের কাহিনী আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আপনার লেখা বেশ দুর্দান্ত হয়েছে। এত চমৎকার পোস্ট শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা রইল।
ধন্যবাদ ভাইয়া আপনার কমেন্ট পড়ে অনেক ভাল লাগলো।