ঐ ঘরটিতে রায়হানের ছোট ভাই কান্না করে, রহস্যের দ্বিতীয় পর্ব ।। 10% beneficary for @shyfox ❤️
আসসালামুআলাইকু/ নমস্কার/ আদাব।
কেমন আছেন সবাই। আশা করি সবাই অনেক ভাল আছেন। আজ একটি স্বপ্ন দেখে খুব সকালে আমার ঘুমটা হঠাৎ ভেঙ্গে গেছে। সকাল বলতে ৫টার সময়। পাচঁটা তো সকালই তাই না। ঘুমটা ভেঙ্গে যাওয়ার পরেও অনেক চেষ্টা করলাম আবার ঘুমাতে। কিন্তুু কিছুতেই ঘুম আসতেছিলো না। তাই বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে ওযু করে ফজরের নামাযটা পড়ে নিলাম। তারপর চিন্তা করলাম এখন আর ঘুম আসবে না তার চেয়ে বরং আমার গল্পের রহস্যের দ্বিতীয় পর্বটা লিখে ফেলি। চলুন তাহলে শুরু করি।
প্রথম পর্বের শেষ অংশ ছিল রায়হান তার ছোট ভাইকে তার এক বোনের বাড়িতে রেখে সে অজানা উদ্দেশ্য ময়মনসিংহ থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে আসে। সেখান থেকে হাফিজ সাহেবের বাসায় কাজ শুরু করে। হাফিজ সাহেব রায়হানের সমস্ত কথা বার্তা শুনে রায়হানকে জিঙ্গেস করে তুমি পড়া শুনা করতে চাও কিনা। রায়হান বলে আমি পড়া শোনা করলে আমাকে পড়া শোনার খরচ দিবে কে। তাছাড়া আমি থাকবো কোথায় খাবো কোথায়। হাফিজ সাহেব বলে তুমি যদি ইচ্ছা করো তাহলে আমার বাড়িতে থেকে পড়াশোনা করতে পারো। আমি তোমার পড়াশোনার খরচ বহন করবো। তুমি কাজের ফাকে ফাকে পড়া শোনা চালিয়ে যাবে। তুমি যদি পড়তে চাও আমি তোমাকে সেই সুযোগ করে দিবো।
হাফিজ সাহেবের কথা শুনে রায়হান অনেক খুশি হলো। সে আবার পড়া শোনা করার সিদ্ধান্ত নিলো। হাফিজ সাহেব তিনির এক ছেলেকে ডেকে এনে আমাদের গ্রামের হাইস্কুলে রায়হানকে ভর্তি করে দিতে বললেন। পরেরদিন সকালে দশটার সময় নবম শ্রেণীতে ভর্তি হয়ে রায়হান আমাদের ক্লাসে প্রবেশ করে। বেশ কয়েক মাস যাওয়ার পরে রায়হানের সাথে পরিচয় হলে রায়হানের মুখ থেকে আমরা এসব কথা শুনি। কাজের সময় কাজ আর পড়ার সময় পড়া। এভাবেই রায়হানের দিন গুলো অতিক্রম হতে লাগলো।
দুই বছর পরে দশম শ্রেণীর ফাইনাল পরিক্ষার মাঝা মাঝি সময়ে রায়হান জানায় যে তার ছোট ভাইকে নাকি জ্বীনে নিয়ে গেছে। কোথাও খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমি বললাম তোমার ছোট ভাই তো তোমার বোনের বাড়িতে ছিল। সে বললো গত এক মাস আগে আমার বোন ছোট ভাইকে বড় ভাইয়ার কাছে বাড়িতে রেখে গিয়েছিলো। তাকে বাড়িতে দিয়ে আসার এক মাস হতে না হতেই ছোট ভাইটা হারিয়ে গেল। পরির দিন পরিক্ষা থাকার কারনে সে বাড়িতে যেতে পারে নাই। সে তার ভাইয়ের জন্য অনেক কান্না কাটি করলো। পরিক্ষা শেষ করে সে তার ভাইয়ের খুজে দ্রুত বাড়িতে চলে যায়। প্রায় এক মাস পরে রায়হান ফিরে এসে জানায় যে তার ছোট ভাইয়াকে কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি। আমি জিঙ্গেস করলাম জ্বীন কিভাবে নিয়ে গেল। বাড়ির লোক জন কেউ বলে হারায় গেছে আবার কেউ বলে জ্বীনে নিয়ে গেছে। আমি বললাম কিভাবে কি হলো। রায়হান জানায় তার বাবা মা যে ঘরে থাকতো রাতের বেলা তার ছোট ভাই সেই ঘরেই ঘুমিয়ে ছিল। পরের দিন সকাল বেলা থেকে তাকে আর কোথাও খুজে পাওয়া যায়নি। সন্ধার পরে আর তাকে কেউ কোথাও দেখেনি।
এভাবে রায়হান আমাদের গ্রামে থেকেই উচ্চ মাধ্যমিক পরিক্ষা পাশ করে। রায়হান আমাদের সাথে পড়লেও সে বয়সে আমাদের থেকে বেশে কয়েক বছর বড় ছিল। তাই রায়হানের মামারা ২০১৬ সালে রায়হানকে বিয়ে করানোর সিদ্ধান্ত নেই। তার মামার বাড়ির পাশে কোন এক দূর-সম্পর্কের আত্মীয়ের মেয়ের সাথে রায়হানের বিয়ে ঠিক হয়। আমি তখন ঢাকায় থাকতাম। রায়হান আমি আর বাশারকে তাদের বাড়িতে তার বিয়েতে যাওয়ার জন্য খুব রিকুয়েষ্ট করলো। বাশারের কথা তো আপনাদের সাথে বলা হয়নি। আমি রায়হান আর আবুল বাশার আমরা তিনজন খুব ভাল বন্ধু ছিলাম। যে কোন কাজ বা যে কোন জাগায় ঘুরতে গেলেও আমরা তিনজন এক সাথে যেতাম। মানে কলেজ লাইফের সকল কাজের স্বাক্ষী হিসাবে এক জন অপর দুইজনকে সাথে রাখতাম। আমি বাড়িতে গিয়ে বাশারের সাথে যোগাযোগ করে রায়হানের বিয়েতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
ময়মনসিংহ রায়হানের বাসায় যাওয়ার সমস্ত তথ্য রায়হান আমাদেরকে দিয়ে দিলো। আর ফোনে তো যোগাযোগ আছেই।আমরা ট্রেনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে দুপুর ১২ টার দিকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ভৈরব ট্রেন স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। তখন কোন ট্রেনে গিয়েছিলাম সেই ট্রেনের নামটা আমার মনে নেই। ময়মনসিংহের ট্রেন সাধারনত ঢাকা থেকে ভৈরব গিয়ে ইঞ্জিন বা মাথা ঘুরিয়ে ময়মনসিংহের উদ্দেশ্যে যায়। আমারা টিকেট কেটে যথা সময়ে ট্রেনে উঠে সিটে বসে পড়লাম। একটা অথাবা দেড়টার দিকে ট্রেনটা ছেড়ে গিয়েছিলো। ট্রেন ছাড়ার এক থেকে দেড় ঘন্টা পড়ে কলা আর রুটি দিয়ে আমরা লাঞ্চ সেরে নিলাম। গ্রামের পর গ্রাম ব্রিজের পর ব্রিজ পাড়ি দিয়ে ট্রেন চলতে লাগলো। সর্বপ্রথম ময়মনসিংহ যাচ্ছি মনে অন্যরকম একটি অনুভূতি ছিল। যেতে যেতে রাস্তার দুই পাশে অনেক দৃশ্য দেখলাম। যে গুলো এখনো আমার চোখের সামনে ভাসতেছে।
অবশেষে আমরা সন্ধা সাড়ে সাতটার সময় একটি স্টেশনে নামলাম। সেই স্টশনের নামটাও ভুলে গেছি। সাড়ে সাতটা মানে চারদিকে অন্ধকার। আমরা একটি মসজিদে গিয়ে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে হোটেলে গিয়ে হালকা কিছু নাস্তা করলাম। তারপর রায়হানকে ফোন দিলাম। পরের দিন রায়হানের বিয়ে তাই সে বিয়ের বাজার করতে ময়মনসিংহ শহরে গিয়েছে, এখনো আসে নাই। সে বললো আমরা যেখানে নেমেছি সেখান থেকে মটর সাইকেলে করে যেতে হবে। আমরা একটি মটর সাইকেল ভাড়া করলাম। মটর সাইকেলে করে প্রায় এক ঘন্টা সময় অতিক্রম হয়ে গেল এখনো রায়হানের বাড়ি আসে নাই। যাওয়ার সময় কত হাওর বন জঙ্গল পাড়ি দিয়ে যাচ্ছি তার কোন হিসাব নেই। যাওয়ার সময় যেটা লক্ষ করলাম সেটা হলো কোন জাগায় খালি মাঠ আর কিছু জায়গায় অনেক বাশঁ ঝাড় আছে। বাশঁ ঝাড় আর খালি মাঠ আসলে বাশার আমাকে কানে কানে বলে আল্লাহই জানে কোথায় যায়তেছি। আর যেহেতু রানিং গাড়িতে আছি তাই রায়হান কেও ফোন দিতে পারতেছি না। আমি বাশার কে অভয় দিয়ে বলেছিলাম চিন্তা করিস না। আমারা তো ছেলে মানুষই কোন ভয় নাই।
অবশেষ রাত সাড়ে নয়টার সময় মটর সাইকেল থেকে একটি জাগায় নামলাম। চার দিকে শুধু বড় বড় গাছ দেখা যায়। সেখানে তেমন কোন মানুষ নেই। দুই তিনটি দোকান আছে তবে সব গুলো দোকান বন্ধ। আমরা সেখানে নেমে রায়হানকে ফোন দিলাম। সে বললো একটু সামনে দিকে গেলে অটো বা রিকশা পাবো যে কোন একটি দিয়ে আসতে হবে। আমরা প্রায় দশ মিনিট রাস্তা হাটলাম। তারপর একটি রিকশা পেলাম তাকে রায়হানের দেওয়া জায়গার নাম বললাম, সেখানে সে যাবে না। এভাবে কয়েকটা রিকশাকে জিঙ্গেস করলাম তারা কেউ যেতে রাজি হলো না। অবশেষে অনেক রিকুয়েষ্ট করে, আমরা ঢাকা থেকে ব্রাহ্মনবাড়িয়া থেকে এসেছি, আমরা আপনাদের মেহমান, আপনারা যদি হেল্প না করেন তাহলে কিভাবে যাবো, এসব বলে একটি অটোকে রাজি করালাম। রাত তখন দশটা পার হয়ে গেছে। আস্তে আস্তে আমরা সেই রহস্যের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি।
আজ এ পর্যন্তই দেখা হবে দ্বিতীয় পর্বে.....
ধন্যবাদ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Thank you, friend!
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmd7of2TpLGqvckkrReWahnkxMWH6eMg5upXesfsujDCnW/image.png)
![image.png](https://steemitimages.com/640x0/https://cdn.steemitimages.com/DQmWDnFh7Kcgj2gdPc5RgG9Cezc4Bapq8sQQJvrkxR8rx5z/image.png)
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
যদিও আপনার গল্পটা প্রথম পর্ব আমার পড়া হয়নি। কিন্তু এই পর্বটা একদম ভালোভাবেই পড়েছি।কিভাবে একটা ছেলে মানে রায়হানের ছোট ভাই, এইভাবে ঘর থেকে উধাও হয়ে যেতে পারে। বিষয়টা বুঝলাম না। কিন্তু আপনারা যখন রায়হানের বিয়েতে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন। তখন মোটরসাইকেলে করে যখন যাচ্ছিলেন আমার ভীষণ ভয় লাগছিল। না জানি কোথা থেকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। তবে যেহেতু একটা অটো রাজি হয়েছে যেতে ভালোই হলো। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রহস্যটা কি? এটা জানার খুবই আগ্রহ রয়েছে।
জিনেরা রায়হানের ছোট ভাইকে কেন নিবে।সব রেখে আপনারা কেন রাতের দিকেই নামলেন আমারও পোস্ট পড়েই ভয় লাগছে।রায়হান তো আপনাদের এগিয়ে নিয়ে যেত পারতো,অন্তত একটা রিক্সা ঠিক করে রাখত।যাই হোক পরবর্তী পর্বে কি ঘটবে তার অপেক্ষায়। ধন্যবাদ
রহস্যময় একটি গল্প। রায়হানের উধাও হওয়া ব্যাপারটা আসলে ই অন্যরকম। ভয় ভয় লাগছে। এবং আপনাদের রাত্রেবেলা বের হওয়া ব্যাপারটাও একটু ভয় লাগছে। যাই হোক শেষে কি হলো তা জানার অপেক্ষায়। তৃতীয় পর্বের অপেক্ষায় রইলাম ভাইয়া।
ভাই আপনার গল্প পড়ে তো মাথা ঘুরাচ্ছে। এতো রহস্য নয় যেন জিনের রাজ্যের দিকে প্রবেশ করছি।
গল্পটা দারুন লিখেছেন জানিনা গল্পের মাঝে কি অপেক্ষা করছে। তবে আমার তো এখনই ভয় লাগছে। আগামী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম, শুভকামনা রইল আপনার জন্য।
বেশ ভয়ংকর ছিল রাত্রি বেলায় এরকম অভিজ্ঞতা কখনো হয়নি তবে লোকজন কম থাকলে রাত্রিবেলায় এমনিতেই অনেক ভয় লাগে। তারপরে নতুন জায়গা চারদিকে অন্ধকার একটু ভয় লাগবে এটাই স্বাভাবিক। যাইহোক পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম। আপনারা আদেও সেই বাড়িতে পৌঁছাতে পেরেছেন কিনা সেটা জানার ইচ্ছা জেগেছে।
ভাই আপনার গল্প লেখার স্টাইল টি দারুন হয়েছে। সারাক্ষণই গা শিরশির করছে,এই বুঝি কিছু হয়।আশা করি পরের পর্বে কিছু একটা হবে।আর ছোট ভাইয়ের গায়েব হওয়াটা বেশ আশ্চর্য করছে।পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।