আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর একটি অভিজ্ঞতা।।
আস্সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ
হ্যালো আমার প্রিয় বন্ধুরা আজকে আমি আপনাদের সাথে আমার জীবনের সবচেয়ে ভয়ংকর একটি অভিজ্ঞতা শেয়ার করবো। তখন আমার বয়স ছিল উনিশ বছর। সেদিন আমার ভাগ্য যদি আমার সহায় না হতো তাহলে আমার জীবনের ইতিহাসটা অন্য ভাবে লিখা হতো। জানিনা এই সময় আমি কোথায় থাকতাম। যায়হোক চলুন এবার মূল ঘটনা শুরু করি।
তখন সালটা ছিল ২০১৪ সাল। মাসটা সম্ভবত জুন জুলাইতে হবে। এইচ এস সি পরিক্ষা দিয়ে বাড়িতে অবসর সময় পার করতেছি। ঢাকায় এসে ভার্সিটি কুচিং করার প্রস্তুুতি নিচ্ছি। একদিন সকাল বেলা মা আমাকে আর আমার ছোট ভাইকে সাথে নিয়ে খরমপুর মাজার পরিদর্শনের উদ্যেশ্যে বাসা থেকে রওয়ানা দিলেন। আমরা যখন খরমপুর মাজারে পৌছালাম তখন এগারোটা বাজে। জিয়ারত ছাড়া মাজারে অন্য কিছু করা আমার তেমন পছন্দ না। যায়হোক মা ইচ্ছা করেছে মাজারের পাশে মহিলাদের নামাজের জন্য যে জায়গা আছে সেখানে যোহরের নামাজ পড়ে বাড়িতে যাবে। আমি মায়ের সাথে কিছুক্ষন মাজারের আশে পাশে ঘুরাঘুরি করে এক জাগায় গাছের নিচে বসে পড়লাম। মা আর ছোট ভাই আমাকে বললো আমি যেন আশে পাশে থাকি তারা নামাজের জন্য যাচ্ছে। আমি বললাম আচ্ছা ঠিক আছে।
সাপ্তাহের মাঝ মাঝি হওয়ার কারনে মানুষজন তেমন ছিল না। তবে বৃহস্পতিবার আর শুক্রবারে অনেক মানুষের জমায়েত হয়। মা আর ছোট ভাই ভিতরে চলে গেলে আমি মাজারের আশে পাশের দোকান গুলো ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। বেশ কিছুক্ষন ঘুরার পরে একটি দোকানে আমার একটি ছুরি খুবই পছন্দ হলো। তখন আমের মৌসুম ছিল। আম বা ফল খাওয়ার জন্য ছুরিটি আমি কিনে নিলাম। ছুরিটি ছিল চায়না আর কালার ছিল সাদা। খুবই সুন্দর একটি ছুরি যে দেখবে তারই পছন্দ হয়ে যাবে। ছুরিটি ছোট হলেও এত ধারালো ছিল যে গরু ছাগল জবাই করা যাবে।
যোহরের নামাজ শেষে মা আর ছোট ভাই আসলে তাদেরকে সাথে নিয়ে হোটেলে লাঞ্চ করে কিছু কেনা কাটা করে বাড়িতে চলে আসলাম। বাড়িতে এসে ছুরিটি দিয়ে ভালই আম,গাজর ও ফলমূল কেটে খেয়েছি। পরের সাপ্তাহে আমার ঢাকা আসার সব প্রস্তুুতি সম্পূর্ণ হয়ে গেছে। যেদিন ঢাকা আসবো সেদিন আমার চার নাম্বার মামা আমাদের বাড়িতে আসে। আমি ঢাকা আসার সময় আমার ছুরিটি ব্যাগে ঢুকানোর সময় মামা দেখে ফেলে। মামা বলে এটা কি আমি বললাম এটা একটি ছুরি খরমপুর থেকে কিনেছিলাম। মামা বললো এই ছুরিটি নেওয়ার দরকার নেই। রাস্তায় পুলিশ দেখলে ঝামেলা হতে পারে। আমি বললাম আরে আমার ব্যাগে থাকবে, কে দেখবে এই ছুরিটি। মামার কথা অমান্য করে ছুরিটি ব্যাগে নিয়ে নিলাম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে তিশা বাসে চড়ে ঢাকা আসতেছি। রাস্তায় তুলনামূলক ভাবে গাড়ির সংস্যা কম। তাছাড়া দোকানপাট ও কিছু কিছু বন্ধ। যে কয়েকটি দোকান খোলা আছে তাতে মানুষের সংখ্যা খুবই কম। আমাদের বাসটি ভৈরব সেতুতে উঠার আগে একবার পুলিশের বাধাঁর সম্মখিন হয়। তবে সেখানে কিছুক্ষন বাসটি দাড় করিয়ে চেক না করেই ছেড়ে দেয়। ভৈরব পার হয়ে নরসিংদীর মাঝা মাঝি আসার পরে বাসটি আবার পুলিশের বাধাঁর সম্মখিন হয়। আমি আমার সিটের পাশের জনকে জিঙ্গেস করলাম ভাই কি সমস্যা এত ঘন ঘন পুলিশ চেকিং চলছে। তিনি বললেন আগামীকাল আল্লামা দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর রায় আছে। তাই বাসে করে কেউ কোন অস্ত্র নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছে কিনা সে গুলো চেক করছে। তাছাড়া মিসিল মিটিং আন্দোলন হতে পারে। সে জন্য জাগায় জাগায় পুলিশ চেকিং হচ্ছে।
বাসটি দাড়ানোর সাথে সাথে দুইজন পুলিশ বাসে উঠে যাত্রীদের শরীর এবং ব্যাগ চেক করা শুরু করলো। দরজার পাশে দ্বিতীয় সারিতে একটি ছেলের কাছে তিনটি বিদেশি গ্যাস লাইট পেয়েছে। একজন পুলিশ সাথে সাথে গ্যাস লাইট সহ ছেলেটিকে নিচে নামিয়ে নিয়ে গেল। এই দৃশ্যটি দেখার পরে আমার কলিজায় আর পানি নেয়। আমি পারছি না আমার ব্যাগটি জানালা দিয়ে বাহিরে ফেলে দিতে।কারন আমিতো জানি আমার ব্যাগের ভিতরে কি আছে। মামার কথা অমান্য করে ব্যাগে ছুরি নিয়ে ঢাকায় যাচ্ছি। মামার কথা খুব মিস করছি। সাথে সাথে মাথায় একটি বুদ্ধি এলো ছুরিটি ব্যাগ থেকে বের করে পেন্টের পকেটে নিয়ে নিলাম। কিন্তু পুলিশ তো শরীরও চেক করছে। ছরিটি সিটের নিচে রাখলে আবার দেখে ফেলে না কি সেই চিন্তাও করলাম। পকেট থেকে বের করে ডান পাশের কোমরে রাখলাম।
অবশেষে পুলিশ চেক করতে করতে আমার কাছে চলে আসলো। আমি বসেছিলাম বাসের শেষের দুইটি সিটের আগের সিটে। তখন আমি প্রতি সেকেন্টে তিন চার বার করে আল্লাহকে ডাকছি। পুলিশ এসে প্রথমে আমার ব্যাগ চেক করলো। ব্যাগে কিছু না পেয়ে আমার শরীর চেক করা শুরু করলো। আমার ডান পাশের কোমরে ছুরিটা ছিল। পুলিশ আমার বাম পাশের কোমরে হাত দিয়ে পিছনের সিটে চলে গেল। তখন আমি আল্লাহর কাছে হাজার হাজার শুকরিয়া আদায় করলাম।
আমাদের বাস থেকে যেই ছেলেটিকে নামিয়ে নিয়ে গেছে তাকে ছাড়াই বাস ছেড়ে দিতে চাইলো। সবাই ড্রাইভারকে বললো সেই ছেলেটির জন্য একটু দাড়াতে। চার থেকে পাচঁ মিনিট দাড়ানোর পরে একজন পুলিশ ইশারা দিয়ে বাসটিকে চলে যেতে বলে। তারপর বাসটি চলে আসে। আমি পিছন দিক থেকে অনেকটা পথ ছেলেটির দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ছেলেটি হয়তো শখ করে গ্যাস লাইট গুলো গ্রাম থেকে শহরে নিয়ে যাচ্ছে। এগুলোর জন্য পুলিশ তাকে আটকিয়ে দিলো,বিষয়টা কিছু বোঝলাম না। বাসটি ছেড়ে আসার দশ মিনিট পরে রাস্তার পাশে জঙ্গলের মধ্যে আমি আমার ছুরিটি ছুরে ফেলে দিয়েছিলাম। তারপর মাধবদী এসে আবার বাসটিতে পুলিশ চেকিং পড়ে। তবে তখন সবাইকে তল্লাসি করে নাই। জাষ্ট দুই একটি ব্যাগ চেক করে ছেড়ে দিয়েছে। সেদিন আমি এত ভয় পেয়েছিলাম যে ভাষায় বলে প্রকাশ করা যাবে না।
বন্ধুরা আজ এ পর্যন্তই। আজকে এখানে থেকে বিদায় নিতে হচ্ছে। আবার দেখা হবে নতুন কোন বিষয় নিয়ে। আশা করি আমার এই ঘটনাটি থেকে আপনারা কিছুটা হলেও শিক্ষা নিতে পারবেন। আর যত বিপদই আসুক না কেন বিচলিত হওয়া যাবে না। নিজের উপর আত্নবিশ্বাস রাখতে হবে। মাথা ঠান্ডা করে বিপদ থেকে উদ্ধার হওয়ার রাস্তা খুজে বের করতে হবে। সবাই ভাল থাকবেন। সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।।
আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।
Bangla Witness কে সাপোর্ট করতে এখানে ক্লিক করুন
এখানে ক্লিক করো ডিসকর্ড চ্যানেলে জয়েন করার জন্য
Support @heroism Initiative by Delegating your Steem Power
250 SP 500 SP 1000 SP 2000 SP 5000 SP
Thank you, friend!


I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
এমনই হয় ভাইয়া। মুরুব্বিদের কথা না শুনলে এমনই হয়। কি দরকার ছিল সেদিন মামার কথা অমান্য করার? সেদিন যদি মামার কথা অমান্য না করতেন তাহলে তো আর এত ভয় পেতে হতো না। সে যাইহোক ছুটি ফেলে দিয়ে বেশ ভালোই করেছেন। ভাগ্যিস আপনার দুই পকেট চেক করেনি। আর যেন ভবিষ্যতে এমন করবেন না।
জী আপু সেই দিন আল্লহর রহমতে বেচেঁগেছিলাম। তা না হলে আজকে যে কোথায় থাকতাম আমি নিজেও জানি না। ধন্যবাদ আপু।