ছেলেদের নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয় ।। ১০% লাজুক খ্যাঁকের জন্য।।
০৭ই সেপ্টেম্বর-২০২২
২৩ই ভাদ্র-১৪২৯
তাহার থেকে বেশি সুন্দর আমারা মানব কুল।
আজ আছো কাল নেই এটাই চির সত্য
দিন শেষে ফল পাবে হওনা যতই শক্ত।
হ্যালো বন্ধুরা কেমন আছেন সবাই। সবাইকে আরো একটি নতুন দিনের শুভেচ্ছা। মানুষ ঘুমালে নাকি অর্ধেক মৃত্যুবরন করে ফেলে,চোখ খুললে জীবিত,না খুললে মৃত। যায়হো সৃষ্টিকর্তার কাছে হাজার হাজার লাখ লাখ শুকরিয়া আদায় করি, তিনি দয়া করে আরো একটি নতুন সকাল দেখিয়েছেন। প্রতি দিনের মত আজকেও আপনাদের সামনে আসার একটিই কারন,আর সেটি হলো নিজের মনের ভাব,অভিজ্ঞতা,দিন রাতের কাজকর্ম আর নিজের চিন্তা চেতনা আপনাদের মাঝে প্রকশ করা। চলোন তাহলে সমসাময়িক কালে ঘটে যাওয়া অনাকাংক্ষিত,মর্মান্তিক একটি ঘটনা সেয়ার করি।
কিছুদিন আগে ফোনে আমার এক খালতো ভাইয়ের সাথে আমার কথা হয়। সে গ্রামেই থাকে। তাদের বাড়ি আর আমাদের বাড়ি পাশাপাশি। মানে আমার খালাকে আমাদের গ্রামেই বিয়ে দেওয়া হয়েছে। যার কারনে বাড়িতে গেলেই আগে খালার বাসা হয়ে তারপর আমাদের বাসায় যেতে হয়। তো সব কথা শেষ হওয়ার পর, সে একটি কথা বললো যেটা শুনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুুত ছিলাম না।
কথাটা হলো আমাদের হাইস্কুলের হাসিব স্যারকে না কি কয়েকজন ছাত্র-ও কিছু বাহিরের ছেলে পেলে মিলে অনেক মেরেছে। এমন মার মেরেছে যে স্যার এখন হাসপাতালে সুয়ে সুয়ে মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়তেছে। এমরকম অনাকাক্ষিত ঘটনা কিভাবে ঘটলো,কেন ঘটলো এর কারনটা জানা দরকার। চলোন কারনটা জেনে আসি।
হাসিব স্যার আমাদের হাইস্কুলের ম্যাট্থ টিচার। স্যার নবম এবং দশম শ্রেনীর অংক ক্লাস করেন। মাঝে মাঝে অষ্টম শ্রেনীতেও অংক ক্লাস করেন। আমাদের স্কুলের ক্লাস সকাল নয়টায় শুরু হলেও হাসিব স্যার মাঝে মাঝে দশটা,সাড়ে দশটা এমনকি এগারটার সময়ও স্কুলে আসেন। আমাদের স্কুলে সাধারনত প্রধান প্রধান বিষয় গুলো যেমন বাংলা, অংক, ইংরেজি এগুলো এক ঘন্টা করে ক্লাস নেওয়া হয়। যেহেতু এগুলো কঠিন বিষয় তাই, একটু বেশি সময় পড়ানো হয়।
হাসিব স্যার ক্লাসে এসে সর্বপ্রথম তিনি সকাল থেকে এ পর্যন্ত কি কি কাজ করেছেন, আগে সেটার বর্ননা দেন।। তিনি সকালে বাজারে গেছেন, টাটকা বড় ধরনের একটি রুই মাছ কিনছেন, দুধ বাজারে গিয়ে দুধ পাননি, তার আত্নীয় এটা করছে,ওটা করছে, তিনি ভার্সিটিতে পড়ার সময় কি করেছেন, কলেজে পড়ার সময় কি করেছেন, এটা সেটা ব্লা ব্লা ব্লা ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব বলতে বলতেই তিনি ৩০ থেকে ৩৫ মিনিট কাটিয়ে ফেলেন। তারপর বোর্ডে একটি অংক করে বলেন এটা সবাই খাতায় তুলে ফেল। কেউ তুলতে পারোক আর না পারোক প্রথম ধাপ মুছে দ্বিতীয় ধাপ শুরু করেন, তারপর তৃতীয় ধাপ করেন। মানে কেউ বুঝোক আর না বুঝোক তিনির অংক তিনি করতেই থাকেন,করতেই থাকেন। ২০,২৫ মিনিটে দুই তিনটি অংক করে চলে যান।
তারপর পরেরদিন স্যার যখন ক্লাসে আসেন তখন সব ছাত্র-ছাত্রীরা চুপ করে বসে থাকে। ক্লাসে তখন কেউ কথা তো অনেক দুর, টু শব্দটিও করে না। সবাই নিস্তবদ্ধ নিরব ভুমিকা পালন করে। সবার ভিতরে একটাই চিন্তা কখন কাকে অংক করতে ব্লাক বোর্ডে ডাকে। স্যার জোর গলা দিয়ে বলে গতকালকে তিনটি অংক করিয়েছি। যাকে ডাকবো সে এসে বোর্ডে অংক করবা। কিভাবে করবে গতকালতো ঠিক ভাবে খাতায় অংক তুলতেই পারে নাই। দুইতিন জন গাদা মার্কা স্টুডেন্টকে জিঙ্গেস করবে, যখন কেউ পারবে না, তখন তিনির ছেলে প্রশংসা মেয়ের প্রশংসা শুরু করেন। তিনির ছেলে অনেক ব্লিলিয়ান্ট, মেয়ে মেডিকেলে পড়ে, তাদেরকে অংক দেওয়ার সাথে সাথে দুই মিনিটেই সলিউশন করে ফেলে। তিনি তাদেরকে নিজের হাতে গড়ে তুলেছেন, তারা সবাই তিনির কথা মত চলে, তাই সব অংক পারে। তোমরা কিছু পারো না। সব গাদার দল। প্রাইভেট না পড়লে সবাই ফেল করবা।
এইযে এত কাহিনী করলো সব কিছুই এই প্রাইভেট পড়ানোর জন্য। ঐযে উপরে বললাম স্কুলে লেইট করে আসে,তার কারন হলো এটা। উনার একটি কোচিং সেন্টার আছে। সেখানে সকাল বিকাল প্রাইভেট পড়ায়। প্রাইভেট পড়াতে পড়াতে মাঝে মাঝে লেইট হয়ে যায়। আবার একটি কিন্ডার গাটের্নও চালাই।
তিনির কাছে যারা প্রাইভেট পড়ে তাদেরকে দেখেন এক নজরে,আর যারা প্রাইভেট না পড়ে তাদেরকে দেখেন অন্য নজরে। যারা প্রাইভেট পড়ে না,আবার স্কুলে অংকও পারে না তাদেরকে এমন মাইর মারে, সে সাতদিন আর স্কুলে আসার নাম নেই না। এমনি একজন ছাত্র যার নাম ইকরাম। সে স্কুলে তেমন আসে না,আবার স্যারের কাছে প্রাইভেটও পড়ে না। একদিন অংক না পারায় স্যার নাকি তাকে অনেক মেরেছে। যার জন্য সে তার চাচাতো ভাই, আর এলাকার কিছু রাজনৈতিক পাতি নেতা মিলে স্যারকে অনেক মেরেছে। যেটা ঘটনাটা কখনো কল্পনা করতে পারি নাই। সেই ঘটনাই ঘটলো।
এ ঘনটনা শুনার পর থেকে মনটা খারাপ। বর্তমানের ছেলে-পেলের কত বড় সাহস, বত বড় বেয়াদব। কোন কিছু করার আগে একটু চিন্তাও করে না যে, কি করতেছি,তার ফলা ফল কি হবে। তারা ভাবে বিচার শালিশ হলে পা ধরে ক্ষমা চেয়ে নিবে,ব্যাস সব শেষ। কিন্তুু তার ভবিষ্যৎ কি হবে সেটা নিয়ে আমি ভাবছি। ছেলে পেলেরা এত সাহস কোথায় পায়, এত বয়াদব কি করে হলে, এমন প্রশ্ন আমার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। যদি এসব প্রশ্নের উত্তর পায়, তাহলে আপনাদের সাথে সেয়ার করবো। আজ এ পর্যন্তই । ভাল থাকবেন,সুস্থ থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।
ছাত্রদের কাজটি উচিৎ হয়নি। তাদের প্রধান শিক্ষকের কাছে নালিশ করা দরকার ছিল।আর স্যার দের এই সমস্যা এখন প্রচুর বেড়ে গেছে।আমি নিযে কয়েকটা স্টুডেন্ট বাদ দিয়েছি শুধু মাত্র তারা স্কুলের স্যারের কাছে প্রাইভেট না পড়ার কারনে তাদের উপর অনেক চাপ দেওয়া হয়।
জী ভাইয়া বর্তমানে প্রাইভেট সমস্যাটা চরম। তারপর ছাত্রদের কাজটি একেবারে ঠিক হয়নি। ধন্যবাদ ভাইয়া।
শিক্ষককে মারধর করা ছাত্রদের এটা খুবই অন্যায় একটি কাজ। ওই সমস্ত কুলাঙ্গার ছাত্রদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনি ব্যবস্থার মাধ্যমে তাদেরকে শাস্তির আওতায় আনা উচিত। বর্তমান আমাদের দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো স্থানীয় পাতি নেতা। যত প্রকারে অঘটন হচ্ছে এদের হাত দিয়ে। তবে আমি শিক্ষকের মারধর করার বিষয়ে তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি। এমন ঘটনা যেন আর কোথাও না ঘটে। স্যারের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।