বাসায় পানি নেই...তাই এখন পানির গুরুত্ব বুঝতেছি।।

Link

আমরা সবাই জানি যে মানুষের মৌলিক চাহিদা বা অধিকার ৬টি যথা খাদ্য, বাসস্থান, পোশাক, শিক্ষা, চিকিৎসা ও নিরাপত্তা। একটি রাষ্ট্র তার জনগনের জন্য এই বিষয় গুলো নিশ্চিত করে থাকে। এগুলো পেলে দেশের জনগন সুন্দর ভাবে জীবন যাপন করতে পারে। আর যদি এগুলোর মধ্যে কোন একটি না পায় তাহলে জীবন যাপনে ব্যাঘাত ঘটে। আমাদের দেশে সব গুলোর মধ্যেই সমস্যা আছে। মধ্য বৃত্ত ও নিম্ন বৃ্ত্ত মানুষেরা এই অধিকার গুলো ঠিক ভাবে পায় না। অনেক মানুষের বাসস্থান নেই, সঠিক ভাবে চিকিৎসা পায় না,শিক্ষা পায় না,নিরাপত্তাও পায় না। যদি একটি দেশের সরকারি ডিপার্টমেন্ট গুলো দুর্নীতিমুক্ত থাকে তাহলে সে দেশের জনগন এই অধিকার গুলো ঠিক ভাবে পেয়ে থাকে। আমাদের দেশে যে হারে দুর্নীতি হচ্ছে, দেশের জনগন এই অধিকার গুলো কখন ঠিক ভাবে পাবে,সেটা সৃষ্টিকর্তা ছাড়া কেউ জানে না। যায়হোক সে দিকে আর যাচ্ছি না।

চাকরির সুবাদে বর্তমানে আমি নারায়গঞ্জ সদরে অবস্থান করতেছি। এখানে আমি প্রায় দশ বছর যাবৎ বসবাস করতেছি। আর এই দশ বছরে বিভিন্ন বাসায় ভাড়া থেকেছি। যারা ভাড়া বাসায় থাকে তাদের প্রতিদিন অনেক সমস্যা ফেইস করতে হয়। বাসা ভাড়া নেওয়ার আগে বিশেষ করে বিদ্যুৎ,পানি,গ্যাস এই তিনটি বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিতে হয়। কারন এই জিনিষ গুলো আমাদের প্রতি মূহর্তে লাগে। এগুলো ছাড়া মানুষ বাচঁতে পারবে না। এগুলোর মধ্যে কোন একটি না থাকলেই জীবন যাপন বন্ধ হয়ে যায়। আমি বাসা ভাড়া নেওয়ার আগে এই জিনিষ গুলো দেখে শুনেই বাসা ভাড়া নিয়েছি। তারপরও মাঝে মাঝে গ্যাসের সমস্যা করে, এই বিষয়টা নিয়ে আপনাদের সাথে একটি ব্লগও শেয়ার করেছিলাম।

এখন গ্যাসের সমস্যা নেই। তবে গত কাল আবার নতুন একটি সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। গতকাল দুপুর বারোটার দিকে হোমমিনিষ্টার তথা ওয়াফ ফোন করে জানায় যে, বাসায় পানি নেই। রান্না বান্না শেষ হবে তবে ঘরে খাওয়ার পানি প্রয়োজন। জিঙ্গেস করলাম বিদ্যুৎ আছে না কি। জানোলো বিদ্যুৎ আছে তবে পানি নেই। তারপর ফোন দিলাম পাশের ফ্লাটের এক ভাইকে,তিনি জানালেন তার ফ্লাটেরও পানি নেই। তখন বুঝলাম তাহলে মেইন জাগায় প্রবলেম হয়েছে। আমি দুপুরে বাসায় যাওয়ার সময় অফিস থেকে আড়াই লিটার পানি নিয়ে গেলাম। যেহেতো অফিসে পানি আছে,তাই দোকান থেকে পানি কিনে টাকা নষ্ট করার মত লোক আমি নই। তা ছাড়া মাস শেষ পকটের অবস্থা খুবই খারাপ। ধার দেনা করে চলতে হচ্ছে। অলরেডি হোম মিনিষ্টার থেকে দেড় হাজার টাকা ধার নেওয়া হয়ে গেছে। প্রতি মাসেই ধার নেওয়া হয়,আবার সেলারি পেলে ফেরত দিতে হয়,তবে এক্সট্রা কিছু চার্জ দিতে হয়,হে হে হে😉। অফিস থেকে পানি নিয়ে বাসায় প্রবেশ করার আগে,বাড়িওলার কাছে সমস্যা কি সেটা জানার জন্য কলিং বেল চাঁপ দিলাম। দুই তিনবার টিং টিং করে আওয়াজ করার পরে দরজা খুললো বাড়িওয়ার ছোট ছেলে। সে বললো পাম্পে প্রবলেম হয়েছে,মিস্ত্রীর কাছে ফোন করা হয়েছে। সে এসে দেখবে কি হয়েছে। তখন কি আর বলবো,সমস্যা তো হতেই পারে।

আমি পানি নিয়ে বাসায় প্রবেশ করে দেখি বাবু খুব কান্নাকাটি করতেছে। জিঙ্গেস করলাম কি হয়েছে, হোমমিনিষ্টার তথা বাবুর আম্মু জানালো প্রচন্ড গরম,পানির অভাবে বাবুকে গোসল করাতে পারছি না। আর গোসল না করালে কিছু খাচ্ছে না আর ঘুমাচ্ছে ও না। ওয়াশ রুমে গিয়ে দেখি বালতিতে এক ফুটা পানিও নেই। অন্যান্য দিন আমি বালতিতে এক্সট্রা কিছু পানি রাখি। অথচ আজকে পানির দরকার,আজকে রাখি নাই। তখন পানির অভাব বুঝতে পারলাম। আমরা প্রতিদিন কত শত লিটার পানি অপচয় করি। আর আজকে অল্প একটু পানির জন্য বাবুকে গোসল করাতে পারছে না। কি করা যায় চিন্তা করতে লাগলাম। হঠাৎ করে মাথায় আসলো আমাদের বাসায় পাম্পের সমস্যা তাই পানি নেই। কিন্তুু পাশের বাসায় তো সমস্যা নেই। তাদের বাসা থেকে পানি নিয়ে আসা যাক। লজ্জা শরম ভুলে একটি কলসি নিয়ে পাশের বাসার দিকে রওয়ানা দিলাম। সাথে পাশের ফ্লাটের এক ভাইকেও নিয়ে গেলাম। দুই জন মিলে আমাদের বাসা থেকে পূর্ব দিকে চতুর্থ নাম্বার বেল্ডিং এ একজন পরিচিত আপু থাকে। তিনির বাসার দরজায় কড়া নাড়লাম। তিনি দরজা খুলার পরে তার কাছে আমাদের পানি সমস্যার কথা বললাম। তিনি আমার কলসি টা নিয়ে ও তিনির বাসা থেকে একটি কলসি দিয়ে দুই কলসি পানি দিলেন। আমি পানি পেয়ে তিনিকে ধন্যবাদ দিয়ে পানির কলসি নিয়ে হাটতেছি আর ভাবতেছি পৃথিবীর কত দেশের মানুষ মাইলের পর মাইল হেটে পানি নিয়ে আসে। পানির জন্য কত কষ্ট করে। অথচ আমরা সহজে পানি পেয়ে যায়, তাই পানির গুরুত্ব ‍বুঝি না।

পানি নিয়ে বাসায় যাওয়ার পর প্রথমে বাবুকে গোসল করানো হলো। তারপর আমরা খাবার খেতে বসলাম। খাবার খেতে খেতে আবার অফিসে যাওয়ার সময় হয়ে গেলো। গতকাল কোন রেস্ট নিতে পারি নাই। দ্রুত অফিসের দিকে পা বাড়ালাম। সন্ধা সাতটার সময় বাসা থেকে ফোন দিয়ে জানালো তখনও পানি আসে নাই। অফিস থেকে বের হয়ে ধীরে ধীরে বাসার দিকে গেলাম। গিয়ে দেখি তখন নিচ থেকে পাম্প তুলা হয়েছে। পাম্পের কয়েল পুড়ে গেছে। ঐদিকে আবার বাড়িওলার শ্বশুর শ্বাশুড়ি দুইজন অসুস্থ জরুরী ভাবে হাসপাতালে নিয়ে গেছে। বাড়িওলা আবার হাসপাতালে চলে গেছে। আর দিক দিয়ে নতুন পাম্প কিনে এনে লাগাতে হবে। তারপর পানি আসবে। এটা সাবমারসিবল পাম্প,অনেক নিচে বসাতে হয়।

রাতেও অন্য বাসা থেকে পানি এনে সবাই রান্না বান্না করেছে। গতকাল বড় মানুষ কেউ গোসল করে নাই। এই গরমের মধ্যে গোসল ছাড়া ঘুমানো কি কষ্ট সেটা যে এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে সে বুঝবে। এখন দেখা যাক কখন নতুন পাম্প আনে আর কখন পানি পাওয়া যায়। যতক্ষন পানি না আসে ততক্ষন ধার দেনা করেই চলতে হবে। যখন পানি ছিল তখন গুরুত্ব বুঝি নাই। এখন পানি নেই এখন হারে হারে পানির অভাব বুঝতেছি। সবাই পানির অপচয় বন্ধ করি। পানি খুবই মূল্যবান একটি জিনিষ। আর যারা শহরে থাকেন তারা অবশ্যই কিছু পানি রিজার্ভ রাখবেন। তাহলে আমার মত পানির সমস্যায় পড়তে হবে না।

আমি একজন বাংলাদেশের সাধারন নাগরিক। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকাতে আমার বসবাস। সিম্পল আমার স্বপ্ন সিম্পল আমার জীবন। স্টিমিট আমার জীবনের একটি অংশ, আমার বাংলা ব্লগ আমার পরিবার। বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়া বলতে আমি স্টিমিটকেই চিনি। ভ্রমন করা, ফটেগ্রাফি করা আর বই পড়া আমার স্বপ্ন। আমি বিশ্বাস করি মানুষের জীবনে উত্তান পতন আছেই। সর্বপরি কাজ করতে হবে লেগে থাকতে হবে, তাহলেই একদিন সফলতা আসবে,এটাই আমি বিশ্বাস করি। সবাইকে ধন্যবাদ।।