ছোটবেলায় আম্মুর থেকে সোনা একটি মজার গল্প।

in আমার বাংলা ব্লগ2 years ago
আস-সালামু আলাইকুম

প্রিয় আমার বাংলা কমিউনিটির ভাইবোন বন্ধুরা,

আশা করি আপনারা সবাই ভাল আছেন আমি আল্লাহর অশেষ রহমতে ভালো আছি।

আজকে আমি আপনাদের মাঝে নিয়ে চলে আসলাম আরো একটি নতুন পোস্ট। আজকে আমি আপনাদের মাঝে একটি মজার গল্প শেয়ার করব। এই গল্পটি মূলত ছোটবেলায় আমার আম্মু আমাকে বলে শুনাতো। আজকে হঠাৎ আবার দেখি আম্মু সেই গল্পটা আমাকে বলল গল্পটা বেশ মজার তাই ভাবলাম আপনাদের মাঝে শেয়ার করা যায়। তো চলুন আর বেশি দেরি না করে শুরু করা যাক।

smiley-g24cc2b2bc_1920.jpg

সোর্স

একজন ব্যক্তি বিকালে তার শ্বশুরবাড়ির যাবে ভেবে রওনা দিল। কিন্তু রাস্তার মাঝে তার একজন বন্ধুর সাথে দেখা হওয়ার কারণে শ্বশুরবাড়ি যেতে দেরি হয়ে গেল। কিন্তু সে যেহেতু শ্বশুরবাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে তাই তার বন্ধুর সাথে তাড়াতাড়ি কথাবার্তা সেরে আবারো শ্বশুরবাড়ি পথে যাওয়া শুরু করল। যে যখন তার শ্বশুরবাড়ির প্রায় কাছে চলে এসেছে তখন সন্ধ্যা হয়ে গেল। কিন্তু সে ছিল রাতকানা তাই সে আর ভালোমতো দেখতে পারছে না,তাই সামনের দিকে যেতেও পারছে না। তারপরও সে অনুমান করে তার শ্বশুরবাড়ির দিকে যেতে লাগলো। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে সে একটা মাঠের ভিতরে পৌঁছে গেল। মাঠের মধ্যে কিছুদূর যেতেই হঠাৎ সে একটা জিনিসের সাথে ধাক্কা খেলো। তারপর উঠে হাত দিয়ে বুঝতে পারল যে এটা একটা গরু। আর হাত দিয়ে দেখতে পারলো যে গরুটার অর্ধেক লেজকাটা। তখন তার মনে পড়লো যে আমার শ্বশুরদেরও তো এমন একটা গরু আছে যেটারও অর্ধেক লেজকাটা। তাই সে ধরেই নিল যে এটাই তার শ্বশুরদের গরু।

তারপর সে একটা বুদ্ধি করল। যেহেতু সে রাতকানা তাই আশপাশ ভালোমতো দেখতে পারছে না। তাই সে ভাবল গরুটা তো বাড়ি চিনে তাহলে তো গরুটাকে তাড়া দিলে সে তো সোজা বাড়ির দিকে যাবে আর আমিও ওর সাথে আমার শ্বশুরবাড়ি পৌঁছে যাব। এই ভেবেই সে গরুটার কাটা লেজ ধরে আস্তে আস্তে তারা দিতে দিতে চলে গেল। যেহেতু গরুটা বাড়ি চিনে তাই গরুটা তার শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে গেল। তবে এটা যেহেতু গরু তাই সে তো গোয়াল ঘরে ঢুকবে। আর ওই ব্যক্তিটা যেহেতু ওর লেজ ধরে ছিল তাই সেও সোজা গরুর সাথে সাথে গোয়াল ঘরে ঢুকে যায়। তবে এখানে আবার গোয়াল টাকে তালের পাতা দিয়ে ঘেরা ছিল। আর ওই তালের পাতার সাথে ওই ব্যক্তির ঘর্ষণ খেলো এবং জোরে আওয়াজ হলো। তখন তার কুটুম মনে করছে যে হয়তো গোয়ালে কোন চোর ঢুকেছে তাই সে সোজা গোয়ালে চলে গেল।

গোয়ালের ভিতরে গিয়ে দেখে তার দুলাভাই। তখন তার কুটুম তাকে জিজ্ঞেস করছে দুলাভাই কখন এলে আর এসে গোয়াল ঘরে কি করছো? কিন্তু সে যে রাতকানা সেটা বললে তো তার সম্মান যেতে পারে এই ভেবে সে বলল আর ভাই ওই কথা শুনিস নি তোমার বোন বলল যে আমাদের বাড়িতে যে গোয়ালটা আছে ওই মাপের একটা গোয়াল আমরাও বানাবো। এজন্য আমি এখানে এসে গোয়ালের মাপ নিচ্ছি। তখন তার কুটুম বলল কালকে সকালেও তো মাপ নিতে পারতে এখন রাত করে মাপ নেওয়ার কি দরকার। যাই হোক তারপর ওই ব্যক্তি বলল ঠিক আছে, কালকে সকালে মাপ নিয়ে নিব এই বলে তার কুটুম তাকে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে যেতে বলল। যাইহোক তারপর ওই ব্যক্তিটি কোনরকমে হাতমুখ ধুয়ে ঘরে উঠে বসলো। তখন তাকে খেতে বসালো। ওই ব্যক্তি শাশুড়ি তাকে খেতে দিচ্ছিল যেহেতু ওইটা তাদের জামাই তাই তার পাতে দুই পিস মাছ দিল।

তারপর সে খাওয়া শুরু করল কিন্তু কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ করে একটা বিড়াল এসে ওই ব্যক্তির থালা থেকে এক পিস মাছ তুলে নিয়ে চলে গেল। কিন্তু সে যেহেতু রাতকানা তাই সে তো কিছুই দেখতে পারছে না। কিন্তু তার শাশুড়ি তো আর জানে না সে রাতকানা তাই বলে উঠলো যা বিড়ালটা মাছ তুলে নিয়ে চলে গেল। তখন সে জানতে পারলো যে বিড়ালে এসে তার থালা থেকে মাছ তুলে নিয়ে চলে গেছে। তখন সে মনে মনে ভাবল যে এবার যদি বিড়ালটি আসে তাহলে বিড়ালটিকে দেবো এক থাপ্পর। এই ভেবে সে আবারো খেতে শুরু করে দিল। তখন তার শাশুড়ি ভাবল যে জামাই মানুষ তার থালা থেকে এক পিস মাছ বিড়ালে তুলে নিয়ে গেল এই ভেবে সে আরেকপিস মাছ তার থালায় দিতে গেল। যখনই সে মাছটি দিতে গেল তখন তার হাতের চুড়ি গুলো একটু বেজে উঠলো। আর ওই ব্যক্তিটি মনে করছে বিড়ালটি আবার এসেছে।

এই ভেবে সে তার শাশুড়ির গালে থাপ্পড় মেরে দিল।😐 তখন তার কুটুম আবার এই দৃশ্য দেখে রেগে তাকেও মারতে শুরু করে দিল। কারন সে যেই হোক তার মায়ের গায়ে হাত তুলেছে। যাইহোক তারপর মার খেয়ে সহ্য না করতে পেরে পালাতে গিয়ে সোজা তার শ্বশুরের বাড়ির চিটে গুড়ের পাত্রে গিয়ে পড়ল। তার পুরো গায়ে চিটে গুড় লেগে গেল। যাইহোক তারপর সে কোন রকমে চিটে গুড়ের পাত্র থেকে উঠে আবার পালাতে শুরু করে দিল তবে এবার সে গিয়ে পড়ল তুলনা গোলার ভিতরে। যেহেতু তার গায়ে আগে থেকেই চিটে গুড় লেগেছিল। আর এবারে পড়েছে তুলার মধ্যে তাই তার পুরো গায়ে এবার তুলা লেগে গেল। দেখতে অনেকটাই ভেড়ার মতো দেখাচ্ছে।🥴 যাহোক তুলার ভিতর বেশিক্ষণ থাকতে না পেরে সে আবার পালাতে পালাতে সোজা তার শ্বশুরবাড়ির ভেড়ার ঘরে চলে গেল। সেখানে গিয়ে চুপচাপ ঘাপটি মেরে বসে থাকলো।

কিন্তু কিছুক্ষণ পর একটা চোর এসেছে আবার ভেড়া চুরি করতে। যেহেতু রাতের বেলায় সেও ঠিকমতো দেখতে পারছে না। তাই সে হাত দিয়ে দিয়েই দেখছে কোন ভেড়াটা মোটা সেটা নিয়েই পালাবে। তখন তার হাতে ওই ব্যক্তিটি পরল। ব্যক্তিটা একটু স্বাস্থ্যবান ছিল আর তার গায়ে তুলা লেগে ভেড়ার মত হয়ে গেছে। তাই চোরটি ভাবল এটাই সবথেকে মোটা ভেড়া। তাই তখন সে ওই লোকটিকেই কাঁধে করে নিয়ে পালালো।😁 যাইহোক তারপর চরটি ঐ লোকটিকে নিয়ে কিছু দূর যাওয়ার পর একটা ছোট জলাশয় দেখতে পেল। তখন চোরটি বলছে এখানে কি অনেক পানি আছে অনেক পানি থাকলে তো যাওয়া যাবে না। তখন ভেড়া আকৃতির ঐ লোকটি বলছে না ভাই আমি যাওয়ার সময় এদিক দিয়ে গিয়েছিলাম এখানে অল্প পানি। 😁 তখন চোরটি অবাক হয়ে বলছে হ্যাঁ এটা তাহলে একটা মানুষ ছিল। এই বলেই চোরটি ওই ব্যক্তিটি কে তার কাঁধ থেকে ফেলে দিয়ে পালালো। তখন ঐ লোকটি বলছে ভাই নিয়ে যাও আমাকে নিয়ে যাও আমি রাতকানা আমি রাতে ভালোমতো দেখতে পারিনা। কিন্তু সে যেহেতু চোর ছিল তাই আর সে পিছে না ফিরে সোজা পালিয়ে গেল। আর এখানে আমার গল্পও ফুরিয়ে গেল।

তো প্রিয় আমার বাংলা কমিউনিটির ভাই বোন বন্ধুরা, এই ছিল আমার আজকের পোস্ট। আজকের গল্পটি আপনাদের কাছে কেমন লেগেছে অবশ্যই কমেন্টে জানাবেন। আজকের মত এটুকুই। আবারো খুব শীঘ্রই নতুন কোন পোস্ট নিয়ে হাজির হবো আপনাদের মাঝে ইনশা-আল্লাহ। ততক্ষণ সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন নিজের খেয়াল রাখবেন।

আল্লাহ হাফেজ
Sort:  
 2 years ago 

গল্পটি পড়ে আমার ভীষণ ভালো লেগেছে। আমরা ছোটবেলায় আম্মুর কাছ থেকে এভাবে অনেক গল্প শুনতাম। তবে সময়ের ব্যবধানে এখন আর তা শোনা হয় না। গল্পটি যেমন হাস্যকর তেমন আনন্দদায়ক। আপনার লেখার উপস্থাপনাটা খুব ভাল ছিল যার জন্য পড়তেও বেশ ভালো লাগলো। যাই হোক ফুফু আপনার কাছে খুব সুন্দর গল্প শুনিয়েছে দেখছি।

 2 years ago (edited)

আসলে ভাই গল্পটি বেশ মজার ছিল তাই গল্পটি আপনাদের মাঝে শেয়ার করলাম।

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 2 years ago 

গল্পটি পড়ে আমি হাসতে হাসতে শেষ। আমরাও ছোটবেলায় অনেক গল্প শুনতাম বিশেষ করে আমার নানীর কাছে। নানি যখন আমাদের বাসায় বেড়াতে আসতেন তখন অনেক রাত অব্দি তার সাথে আমরা গল্প করতাম এবং সে আমাদেরকে সুন্দর সুন্দর গল্প শুনাতো। আপনার গল্প টি বেশ মজার ছিলো।

 2 years ago 

গল্পটি লিখে আপনাদেরকে একটু মজা দিতে পেরেছি জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্যটি করার জন্য।

 2 years ago 

আপনার গল্পটা পড়ে অনেক হাসি পেয়েছিল,আসলে রাতকানা তো একেবারে রাতকানা।যাইহোক কথায় আছে না মিথ্যা বলা মহাপাপ।আসলে লোকটি যদি প্রথম বলে দিত তাহলে হয়তো এমন সমস্যায় পড়তে হতো না। তারপর আবার শাশুড়ির গালে থাপ্পর মারা। যাইহোক অবশেষে চোরের কোলে চড়ে নদী পার হতে গিয়ে ধরা পরল।ধন্যবাদ

 2 years ago 

গল্পটির মাধ্যমে আপনাদেরকে একটু আনন্দ দিতে পেরেছি জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে মন্তব্যটি করার জন্য।

 2 years ago 

আপনার গল্প পড়ে খুবই ভালো লাগলো। খুব সুন্দরভাবে গল্পটি আমাদের মাঝে উপস্থাপন করেছেন। আসলে আগের দিনে আমাদের দাদী নানীরা নানারকম গল্প শুনে ঘুম বানাতো। এখন তো আধুনিক প্রযুক্তি সময়ে মোবাইলে কার্টুন দেখে বাচ্চারা ঘুমিয়ে পড়ে। গল্পটি কিন্তু খুবই চমৎকার ছিলো। বিশেষ করে শেষ অংশ বেশ অসাধারণ ছিলো এত সুন্দর গল্প আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ জানাই।

 2 years ago 

আপনার মন্তব্যটি পেয়ে ভাল লাগলো । ধন্যবাদ ভাই আপনাকে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে মন্তব্যটি করার জন্য।

 2 years ago 

আপনার গল্পটি পড়ে বেশ মজা পেলাম। সত্যি রাতকানা হলে মানুষের কত অসুবিধা। কিন্তু আসলে মূল কথা হচ্ছে সে শ্বশুরবাড়িতে রাতকানা কথাটা বলে দিলেই হতো। শেষ পর্যন্ত শাশুড়ির গায়ে হাত দিল। তারপর একটা জায়গা থেকে একটা জায়গায় গিয়ে পড়লো পালাতে গিয়ে। শেষ পর্যন্ত চোরের খপ্পরে পড়ল। চোরটা কিনা ভেড়া ভেবে মানুষকে নিয়ে পালাচ্ছিল। সত্যিই আমি গল্পটা পড়তে পড়তে শুধু হাসছিলাম।

 2 years ago 

আপনাদেরকে গল্পটির মাধ্যমে একটু মজা দিতে পেরেছি জেনে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপু আপনাকে সুন্দর ভাবে গুছিয়ে মন্তব্যটি করার জন্য।

Coin Marketplace

STEEM 0.18
TRX 0.16
JST 0.031
BTC 62991.12
ETH 2685.43
USDT 1.00
SBD 2.55