ফিরে দেখা//স্মৃতিচারন মূলক পোস্ট//পর্বঃ--০১

in আমার বাংলা ব্লগlast year

আজ - ০৩ ভাদ্র | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | শনিবার | শরৎকাল |



আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নাম @jibon47। বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।


আজ আমি আপনাদের মাঝে আমার ফেলে আসা দিনগুলোর কিছু স্মৃতি আছে যে স্মৃতিগুলো এখনো স্মৃতির পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা আছে। যে স্মৃতিগুলো আমি কখনোই ভুলে যেতে পারব না এমন অনেক স্মৃতি জমা আছে এই ছোট্ট স্মৃতির পাতায়। সেগুলোর মধ্যে আজ আমি আপনাদের মাঝে আমার সাথে ঘটে যাওয়া, বড় ধরনের একটা দুর্ঘটনা থেকে বেঁচে ফেরার গল্প শেয়ার করব। আশা করছি,আমার এই পোস্ট আপনাদের সবার ভালো লাগবে।



  • প্রিয় কমিউনিটি,আমার বাংলা ব্লগ
  • স্মৃতিচারণ,পর্বঃ--০১
  • আজ ০৩রা ভাদ্র, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  • শুক্রবার


তো চলুন শুরু করা যাক...!


শুভ দুপুর সবাইকে......!!


আমাদের সকলের জীবনে কিছু না কিছু ঘটনা থাকে যে ঘটনাগুলোকে আমরা স্মৃতি হিসেবে নাম দিয়ে থাকি। স্মৃতি হিসেবে আমরা এই কারণেই নাম দিয়ে থাকি কারণ কিছু কিছু মুহূর্ত এবং কিছু কিছু ঘটনা যা আমাদের ছোটবেলার সেই মুহূর্তগুলো মনে করিয়ে দেয়। সকলের জীবনে এমন কিছু কিছু মুহূর্ত ঘটনাটাকে যে ঘটনাটা সে যখন যুবক থেকে বৃদ্ধ হয়ে যায় তখনও কোন একটা সময় সেই ঘটনার কথা তার মনে পড়ে। আর যখন সেই ঘটনার কথা তার মনে পড়ে তখন মনের অজান্তেই ঠোঁটের কোন ছোট্ট একটা হাসি চলে আসে। আর সেই সময় মানুষ হারিয়ে যায় সেই ছোট্টবেলার সেই ঘটনাতে কি ঘটেছিল তার সঙ্গে কেমন কি হয়েছিল এই ব্যাপারটা তার মনে পড়তে থাকে। ঠিক সেই সময়টাতেই মনের অজান্তেই ঠোঁট দিয়ে বের হয়ে আসে, আহ..!! কতইনা ভালো ছিল সেই ছোটবেলার দিনগুলো। বিশেষ করে আমাদের সামনে যখন ছোট ছোট বাচ্চারা সেই একই কাজগুলো করতে থাকে তখন সেই ছোটবেলার কথাগুলো আরও বেশি মনে পড়ে মনে পড়ে যায় সেই দুরন্তপনা ছুটে চলা, মনে পড়ে সেই শিশির ভেজা ঘাসের উপর খালি পায়ে হাটা, মনে পড়ে সেই বিকেল বেলা কানামাছি খেলার কথা। এরকম অনেক অনেক স্মৃতি এবং ঘটনা আমাদের জীবনে আছে যেগুলো আমরা চাইলেও খুব সহজেই মন থেকে ভুলে যেতে পারি না।

ঠিক এমনই এক ছোটবেলার স্মৃতি অনেকদিন পরে আজ আমার মনে পড়েছে। স্মৃতিটা এখন যখন মনে পড়ে তখন সত্যিই মনে হয় কতই না ভালো ছিল সেই সময়টা। ঘটনাটা ঠিক এমনই ছিল। আচ্ছা বলুন তো ছোটবেলায় সাইকেল চালাতে কে না পছন্দ করে..?? আমার তো মনে হয় সাইকেল চালাতে পছন্দ করত না এইরকম ছেলে খুঁজেই পাওয়া যায় না বর্তমান সময়ে। ছোটবেলায় ছোট্ট একটা সাইকেল থাকা মানে তার অনেক কদর তার ভাব বরাবরই সকলের থেকে অনেক বেশি থাকতো। কারণ তার কাছে এমন একটা জিনিস রয়েছে যে জিনিসটা হয়তোবা অনেকের কাছেই নেই। আপনাদের কার কাছে কেমন লাগতো সেটা আমি জানি না তবে আমার কাছে ছোটবেলায় সাইকেল চালাতে অনেক বেশি ভালো লাগতো যদিও আমার ছোটবেলায় সাইকেল ছিল না।

যেহেতু আমার স্কুল আমার বাসার খুব নিকটেই ছিল তাই আমার বাবা আমাকে সাইকেল কিনে দেয়নি। যদিও অনেক রকম ভাবেই সাইকেল কেনার জন্য বাসায় অনেক রকম ভাবেই বলেছি তবুও তারা আমাকে সাইকেল কিনে দেয়নি সেই সময়টাতে। তবে আমি যখন ক্লাস সেভেনে পড়ি তখন আমার বাবা আমাকে একটা সাইকেল কিনে দিয়েছিল যদিও তখন সাইকেল চালানোর শখ অনেক বেশিই ছিল। যাইহোক আমার বাসার পাশে ফুফাতো ভাইয়ের বাসা। তার একটা ছোট্ট লাল কালারের সাইকেল ছিল সে যদিও আমার থেকে বছর তিনেকের বড় তবে চলাফেরা ঘোরাঘুরি সবকিছু একসাথেই সেই ছোটবেলা থেকেই।

যেহেতু তার ছোট্ট একটা লাল সাইকেল ছিল তাই যখনই সুযোগ পেতাম সাইকেলটা নিয়ে এদিকে ওদিকে ছুটে চলতাম যদিও ভালো চালাতে পারতাম না। ছোটবেলায় ছোট্ট ছেলে পেলে যে রকম ভাবে সাইকেল চালানো শিখে আমিও ঠিক তেমনভাবেই শিখেছিলাম প্রথমে নিচে চালাতাম এরপরে আস্তে আস্তে উপরে চালানো শিখেছিলাম তবে। যেটাকে আমরা গ্রাম্য ভাষায় হাফ প্যাটেল বলে থাকি ঠিক সেরকম ভাবেই চালাতাম।

bike-1015321_1280.jpg

source


মাঝে মাঝে সেই ফুফাতো ভাইয়ের সাইকেলের পেছনে বসে আমরা অনেক দূর-দূরান্তে ঘোরাঘুরি করতাম ভাই আমাকে সাইকেল এর পেছনে বসিয়ে অনেক জায়গায় নিয়ে যেত। আর আমি সুযোগ পেলেই ভাইয়ের সাইকেল নিয়ে একটু চালানোর চেষ্টা করতাম যদিও তেমন ভালো চালাতে পারতাম না। একদিন দুপুর বেলা ভাইয়ের সাইকেল টা দেখি একটা জায়গায় রেখে ভাই হয়তোবা কোথাও চলে গিয়েছে। যদিও সেই সময়টাতে ভাই তেমন একটা সাইকেল দিতে চাইতো না কারণ সেই সময়টাতে সকলেই চাইতো আমি বাদে এই সাইকেল অন্য কেউ যেন না চালায় সেও ঠিক তেমনি ছিল। যেহেতু আমি সাইকেল টা পেয়েই গিয়েছি আর এরকম সুযোগ আমি হাতছাড়া করতে চাইনি। আমার এখনো মনে আছে তখন সেই সময়টা ঠিক এই বর্ষা মৌসুম ছিল। এই বর্ষা মৌসুমে গ্রামের রাস্তাগুলো অনেকটাই কাদা হয়ে যায় এটা আপনারা সকলেই জানেন। যেহেতু আমি তখন ছোট ছিলাম তাই রাস্তায় সাইকেল চালানোর সাহস কখনোই হতো না কারণ বরাবরই বড় বড় গাড়ি চলতো সেই রাস্তা দিয়ে। এজন্য আমি সাইকেলটা নিয়ে মাটির রাস্তার দিকে চলে যাই, আর এই মাটির রাস্তাটা চলে গিয়েছে নদীর দিকে।

যেহেতু সাইকেল নিয়ে আমার রাস্তায় ওঠা বারণ ছিল তাই আমি সাইকেলটা নিয়ে আস্তে আস্তে চালাতে চালাতে নদীর রাস্তা ধরে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। একটা কথা বলে রাখি সেদিন অনেকটাই বৃষ্টি হয়েছিল যার কারণে মাটির রাস্তাটা অনেক বেশি পিচ্ছিল হয়ে গিয়েছিল। নদী পাবার আগেই রাস্তার পাশে অনেক বড় একটা পুকুর ছিল সেই পুকুরে মাছ চাষ করা হতো চারিদিকে ভালোভাবেই ঘাট বাধা ছিল। যেহেতু আমি তখন অবধি ভালো সাইকেল চালাতে পারতাম না আমি আস্তে আস্তে করে প্রায় নদীর কাছেই এসে গিয়েছি আর পুকুরটা প্রায় নদীর পাশেই ছিল। নদীর পাশে বসে থাকার জন্য মানুষ বাঁশ দিয়ে বসে থাকার অনেক সুন্দর একটা জায়গা তৈরি করেছিল সেখানে প্রায় সব সময় মানুষ বসে থাকতো আর নদী থেকে ভেসে আসা বাতাস গায়ে লাগাতো।

এরপরে আমি আস্তে আস্তে সাইকেল চালাতে চালাতে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় আমার অদক্ষতার কারণে সাইকেলের সামনের ব্রেক বাঁকা হয়ে যায় আর সোজাসুজি আমি আর সাইকেল দুজনে গিয়ে গড়াতে গড়াতে পড়ে যায় সেই পুকুরের ভেতরে। যদিও আমি তেমন ভালো একটা সাঁতার জানতাম না আমি পুকুরের মধ্যে পড়ে গিয়েছি এতে বিকট এক শব্দের সৃষ্টি হয়েছে। সাইকেলটা গিয়েছে পুকুরের একদম ভিতরে আর আমি পুকুরের কিনারে পড়ে সাইকেলের জন্য কান্না শুরু করে দিয়েছি হাহাহা। পুকুরের মধ্যে পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনে আশেপাশ থেকে মানুষ দ্রুত দৌড়ে এসে আমাকে পুকুর থেকে উঠালো। কিন্তু এদিকে আমার কান্না চলছে কান্না থামার কোন নাম গন্ধ নেই হাহাহা।

compensation-1013177_1280.jpg

source


এদিকে আমার পা অনেকখানি কেটে গিয়েছিল কিন্তু আমার পা কেটে গিয়েছে এটা নিয়ে আমার তেমন কোন মাথা ব্যাথা নেই। আমার পুরো চিন্তা ভাবনা কিভাবে সাইকেল এখন পুকুর থেকে উঠাবো আমি ভাবছিলাম হয়তোবা সাইকেলটাকে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। এরপরে আমার কান্না দেখে সেখানে আমার ছোট কাকু চলে আসে। ছোট কাকু আমার কান্না দেখে খুব দ্রুত পুকুরের মধ্যে নেমে ডুব দিয়ে অনেকটা খোঁজাখুঁজির পরে সাইকেলটা উপরে উঠিয়ে নিয়ে আসে। এদিকে তো আমি ভয়ে ভয়েই আছি বাসায় গেলে কি হবে আজ। বরাবরই আমি আমার আম্মুকে অনেক বেশি ভয় পেতাম ভেবেছিলাম হয়তোবা আজকে আমার নিস্তার নেই প্রচুর মাইর হবে। কিন্তু আমার অনেকখানি পা কেটে যাওয়ার ফলে সেদিন আর আম্মু কিছু বলেনি বরঞ্চ অনেক বেশি আদর করেছিল এবং সেই সাথে বলে দিয়েছিল পরবর্তীতে যেন কখনো আর সাইকেল চালানো না দেখি। এরপর থেকে আমি প্রায় অনেক মাস সাইকেল চালাইনি এই ভয়ে।

এরপরে ভাইয়ের সাইকেল খুবই কম চালাতাম তবে মাঝে মাঝে যখন চালাতাম তখন সেটা ছিল স্কুলের ফিল্ডে। কারণ মনের মধ্যে একটা ভয় বরাবরই কাজ করতো যে রাস্তায় চালালে হয়তোবা আবার কোন এক পুকুরের মধ্যে ফেলে দেব। এর পরে আস্তে আস্তে অনেক ভালোই পরিপক্ক ভাবে সাইকেল চালানো শিখে গিয়েছিলাম,তারপর থেকে আরও কয়েকবার এক্সিডেন্ট করেছি তবে সেই রকম ভাবে আর কখনো ভয় কাজ করেনি।

সাইকেল এক্সিডেন্ট নিয়ে আমার আরো কিছু স্মৃতি আছে যে স্মৃতিগুলো আমি পরবর্তীতে আবার হয়তো আপনাদের মাঝে কোন একটা পোষ্টের মাধ্যমে শেয়ার করব। এটাই ছিল আমার ছোটবেলার সেই স্মৃতি যেটা অনেকদিন বাদে আজ মনে পড়েছে। আশা করছি আমার এই পোস্ট পড়ে আপনাদের সকলের অনেক বেশি ভালো লেগেছে। আজ আর নয় এখানেই শেষ করছি। সকলেই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবারের সঙ্গেই থাকুন। ধন্যবাদ সকলকে....!!



সমাপ্ত


আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি আপনাদের কাছে আমার এই পোস্ট খুবই ভালো লেগেছে। আমার এই পোস্ট পরে সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন বলে আশা রাখি। আপনার সুন্দর মন্তব্যই আমার কাজ করার অনুপ্রেরণা

বিবরণ
বিভাগজেনারেল রাইটিং
বিষয়স্মৃতিচারণ, পর্ব:--০১
পোস্ট এর কারিগর@jibon47
অবস্থান[সংযুক্তি]source

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Sort:  
 last year 

আসলে ছোটবেলাতে সাইকেল চালাতে প্রায়ই সকলেই পছন্দ করে থাকে। আমার স্কুল দূরে হবার কারণে আমি ছোট থেকেই সাইকেল হাতে পেয়েছিলাম। আপনারা যেভাবে অ্যাক্সিডেন্ট করে পুকুরের মধ্যে পড়ে গিয়েছেন আমি এই ধরনের অ্যাক্সিডেন্ট কোন সময় করেছিলাম না।

 last year 

আপনি তো সাইকেল নিয়ে দেখছি বেশ কয়েকবার অ্যাকসিডেন্টও করে ফেলেছেন ভাই ।আর এদিকে আমি সাইকেল চালানো শিখতেই পারলাম না, পড়ে যাওয়ার ভয়ে। ছোট ছিলেন বলে তখন নিজের পায়ের কথা না চিন্তা করে ,সাইকেলের জন্যই কান্না করেছিলেন, হা হা হা।

আমিও আপনার মত আর অন্য সকলের মত হাফ প্যাটেলেই প্রথমে সাইকেল চালানো শিখেছিলাম। হা হা হা...তারপর ধীরে ধীরে বেশ দক্ষ হয়ে গেছি। আপনি তো আপনার আম্মুকে বেশ ভালই ভয় পান ভাই, এটা অবশ্য একটা ভালো দিক বলে আমি মনে করি। যাইহোক ,আপনার উপর দিয়ে বেশ বিপদ গেছিল সেদিন সাইকেল সহ জলের মধ্যে পড়ে গিয়ে। বেশ ভালো লাগছিলো আপনার পোস্ট পড়তে।

Coin Marketplace

STEEM 0.17
TRX 0.14
JST 0.028
BTC 58482.75
ETH 2615.94
USDT 1.00
SBD 2.42