শৈশবের কাটানো ঈদ আনন্দ
আজ - ০৮ বৈশাখ| ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | শুক্রবার | গ্রীষ্মকাল |
আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নাম @jibon47। বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
- প্রিয় কমিউনিটি,আমার বাংলা ব্লগ
- শৈশবের ঈদ আনন্দ
- আজ ০৮ই বৈশাখ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
- শুক্রবার
তো চলুন শুরু করা যাক...!
শুভ দুপুর সবাইকে......!!
ঈদ মানে আনন্দ,ঈদ মানে খুশি। মুসলিম বিশ্বের কাছে ঈদ মানে যেন আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। একটা বছরের মধ্যে দুইটা ঈদ মুসলিম বিশ্ব উদযাপন করে, প্রথম ঈদুল ফিতর দ্বিতীয় ঈদুল আযহা। এই দুইটা সময়ে মুসলিম বিশ্ব খুবই আনন্দে মেতে ওঠে। ঈদুল ফিতরের সময়টাতে একমাস রোজা করে মুসলমান ঈদ পালন করে আর ঈদুল আযহার ক্ষেত্রে ঈদের নামাজ শেষ করে কোরবানি দিতে অনেকেই ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ঈদ মানে সকলের কাছেই একটা আনন্দের বিষয় কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যায় যে এমন অনেক পরিবার আছে যাদের কাছে ঈদ মানে তেমন কোন আনন্দের জিনিস না। কারণ তারা দিনমজুরি খেটে খাওয়া মানুষ প্রতিদিন যা আয় রোজগার করে সেটা দিয়ে তাদের সংসার চলে ঈদ উপলক্ষে নতুন করে তাদের বাসায় তেমন কিছুই তৈরি করা বা আয়োজন করা হয় না। শুধুমাত্র তাদের কাছেই ঈদ তেমন একটা খুশির জিনিস না। তবে আমার মনে হয় সমাজের বিত্তবানশালী লোকদের উচিত এ সকল মানুষদের সাথে নিয়ে একত্রে ঈদ উদযাপন করা এতে করে আমাদের সামাজিক বন্ধন আরো বেশি শক্ত হবে।
ছোটবেলায় ঈদ আনন্দটা ছিল একরকম বড় হবার পরে সেই আনন্দটা একদমই পাল্টে গিয়েছে। ছোটবেলার মতো কখনোই আর সেই রকম ভাবে ঈদ উদযাপন করা হয়ে ওঠে না। লক্ষ্য করলে দেখবেন আপনি যখন ছোট ছিলেন তখন আপনার কাছে এটা মনে হতো ইস যদি দু এক মাস পর পরই এরকম ঈদ আনন্দ বা ঈদ আসলো তাহলে কতই না ভালো হতো। সেই সময়টা ছিল শুধু আনন্দ করার। সবথেকে বেশি ভালো লাগতো সেই সময়টাতে যখন রমজান মাস আসতো কিন্তু পরিবারের লোকজন সেহরি খাওয়ার সময় ডাক দিত না। সকালবেলা ঘুম থেকে উঠে অনেকটাই কান্না করতাম অনেকেই কেন সেহরিতে ডাক দেওয়া হয়নি...!! বাবা-মা এটা বলে বুঝ দিত যে এখন খাবার খেয়ে দুপুরবেলা পর্যন্ত যদি খাবার না খায় তাহলে অর্ধেক রোজা হয়ে যাবে হাহাহা।
আমরা তখন কতইনা বোকা ছিলাম তখন ভাবতাম হ্যাঁ এটাই মনে হয় সত্য আমাদেরকে এরকম ভাবেই বোঝানো হতো। একটা মাস এরকম ভাবে কাটানোর পরে ঈদের সময় চলে আসতো। ঈদের সময় আসলেই নিজের আনন্দের যেন শেষ নেই সবাই খুশিতে অনেক বেশি আত্মহারা হয়ে যেতাম।
ঈদ আসার আগেই নতুন জামা কাপড় কেনায় অনেক বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়তাম, কিন্তু এখন সবকিছু যেন পাল্টে গিয়েছে কোন কিছুই আর আগের মত নেই। আগের মত নেই সেই ঈদের আনন্দ। সবকিছু কেমন যেন ধোঁয়াশা ধোঁয়াশা মনে হয়।
ঈদের সময়টাতে সব থেকে বেশি আনন্দ করতাম চাঁদ রাত্রে। যেদিন বুঝে যেতাম যে এই রাত পরেই পরের দিন সকালবেলা ঈদ সেদিন কোন লেখাপড়া করতাম না। বাবা মা লেখাপড়ার কথা বললেও বই নিয়ে কখনোই বসতাম না কারণ জানতাম পরের দিন ঈদ আজ কোন লেখাপড়া নেই এটা ভেবেই নিজের কাছে অনেক বেশি ভালো লাগ। সন্ধ্যে হবার সাথে সাথেই পাড়া-প্রতিবেশী বন্ধুদের নিয়ে ছুটে যেতাম নদীর ধারে চাঁদ দেখার জন্য। সন্দেহ হবার পরপরই পশ্চিম আকাশে দেখতে পেতাম চাঁদ তখন যেন আনন্দের শেষ থাকত না সকলে মিলে এত চিৎকার চেঁচামেচি করতাম যে বলে বোঝানো যাবে না। এর পরে সবাই দৌড়ে দৌড়ে যে যার বাসায় চলে যেতাম বাসায় গিয়ে খাওয়া-দাওয়া করে আবার বের হয়ে আসতাম নির্দিষ্ট একটি জায়গাতে যেখানে সবাই মিলে প্রতিদিন বিকেল বেলা খেলাধুলা করতাম। যদিও ছোটবেলায় খেলাধুলা করার স্থান হয় পরের বাসার উঠানে। অনেক আনন্দ করতে করতে এবার শুরু হয়ে যেত মেহেদী নেওয়ার পালা।
ছোটবেলায় মেহেদী নিতে পছন্দ করত না এরকম মানুষ খুব কমই আছে হোক সেটা ছেলে অথবা মেয়ে। যদিও আমাদের সময়ে তখন এরকম বাজারে মেহেদী কিনতে পাওয়া যেত না যদিও কিনা যেত সেটা খুবই কম ছিল তবে সচরাচর সকলে গাছের মেহেদী হাতে লাগাতো। বাসর বড় আপুরা দেখতাম গাছের মেহেদী বেটে হাতে লাগাতো তখন আমরা নিজেরাও বায়না ধরতাম হাতে মেহেদি লাগানোর। হাতে মেহেদি নিয়ে সেই মেহেদী না শুকানো পর্যন্ত কেউই ঘুমাতাম না।
মনে মনে একটা ভয় সব সময় থাকতো এই মেহেদী হাতে নিয়ে যদি ঘুমিয়ে যায় তাহলে মেদে উঠে যাবে হাহাহা। কতইনা সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো কত রকম চিন্তা ভাবনাই করে রাখতাম ঈদ উপলক্ষে। যদিও চাঁদ রাত্রে ঘুমাতে ঘুমাতে অনেকটা রাত হয়ে যেত কিন্তু পরের দিন সকালবেলা খুব ভোরেই ঘুম থেকে উঠতাম।
ঘুম থেকে উঠে একে অন্যের হাতের মেহেদি দেখায় ব্যস্ত হয়ে যেতাম কার হাতের মেহেদির রং কত বেশি সুন্দর হয়েছে। যার হাতের মেহেদির রং একটু গারো হয়েছে সে বাসায় গিয়ে আবার হাতে সরিষার তেল লাগাতো যাতে করে একটু রক্তাক্তবর্ণ ধারণ করে। মূলত এই প্রক্রিয়ার কথা অনেকের মুখেই শোনা যেত।
এরপরে বাসায় এসে গোসল খাওয়া-দাওয়া করে নতুন জামা কাপড় পরাই ব্যস্ত হয়ে পড়তাম। ঈদ উপলক্ষে নতুন জামা কাপড় কিনতে হবে এটা জানা চিরন্তন সত্য। নতুন জামা কাপড় পড়ার আগে আম্মু সাবান দিয়ে গোসল করিয়ে দিত, যে দিনগুলো এখন শুধুই স্মৃতির পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
এরপরে গোসল খাওয়া-দাওয়া শেষ করে শুরু হয়ে যেত ঈদের সালামি নেওয়ার ধান্দা হাহাহা। যখন সবাই ঈদের সালামি দেওয়ার জন্য ডাক দিত তখন নিজের কাছে এক অন্যরকম ভালো লাগে কাজ করতে কত যে ভালো লাগতো সেটা হয়তো বলে তখনকার সময়ে বোঝাতে পারতাম না। ই সালামি নেওয়া শেষ হয়ে গেলে এবার সকলে মিলে ঈদগায়ে গিয়ে ঈদের নামাজ পড়তাম। যদিও আব্বু কাকুরা নামাজ পড়লে আমরা সবসময়ই ঘোরাঘুরি করতাম এবং খাওয়া দাওয়া করতাম পাশে থাকা দোকানগুলো থেকে। নামাজ কালাম শেষ করে আমরা বাসায় চলে আসতাম আব্বু এবং কাকুরা চলে যেত কবর জিয়ারত করার জন্য। এরপরে বাসায় এসে আবার সেমাই খেতাম তারপরে হয়তোবা কেউ ঘুমিয়ে যেতাম আবার কেউবা বাসায় ভাই-বোনদের সঙ্গে আড্ডা দিতাম। বিকেল হবার সাথে সাথে আবার চলে যেতাম সেই চিরচেনা মিলনায়তন কেন্দ্রে। সেখানে গিয়ে একে অপরের সঙ্গে কুশলাদি বিনিময় করে শুরু হয়ে যেত কে কত টাকা সালামি পেয়েছে। যে যত টাকা বেশি সালামি পেয়েছে সেদিনের জন্য সে ততো বেশি খুশি এ নিয়ে একে অপরের মাঝে কিছুটা তর্ক বিতর্ক শুরু হয়ে যেত।
এভাবেই শেষ হতো শৈশবের কাটানো ঈদ আনন্দ। যে ঈদ আনন্দগুলো এখন শুধুই স্মৃতি যদি কখনো ছোটবেলায় কাটানো ঈদ আনন্দ কথা মনে পড়ে তাহলে ঠোঁটের কোণে এক চিমটি হাসি নিয়ে বলতে হয় কতই না ভালো ছিল সেই দিনগুলো...!! হয়তোবা আর কখনো এরকম দিন ফিরে পাবো না। বাস্তবিকভাবে এটাই সত্য যে সেই দিনগুলোর মত সুন্দর এবং রঙিন দিন আর কখনোই ফিরে পাবো না দিনগুলো স্মৃতির পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখে রাখার মত। এখনকার দিনে ঈদ মানে তেমন একটা আনন্দ নেই প্রতিদিনের মতোই মনে হয়। নতুন করে কোন কিছু যোগ করতে মন চায় না। প্রতিদিন যেভাবে চলছে ঈদের দিনও ঠিক সেরকম ভাবেই চলে হয়তোবা একটু আলাদা।
আমরা হয়তোবা এখন অনেকেই ছোটবেলায় কাটানো সেই ঈদের আনন্দটাকে অনেক বেশি মিস করি। মাঝে মাঝে মনে হয় কেনই বা বড় হলাম কেনই বা এই সকল আনন্দ আমাদের জীবন থেকে হারিয়ে গেল। যদিও সকলের ক্ষেত্রেই একরকম নয় এমন অনেক মানুষ আছে যারা বড় হবার পরেও ঈদ উপলক্ষে অনেক আনন্দ করে থাকে। আনন্দ অনেকেই করে কিন্তু সেই ছোটবেলার মতো অনুভূতি হয়তো বা খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয় ছোটবেলা অন্যরকম বড় হবার পরে সেটা নিমিষেই হারিয়ে যায় হয়তোবা কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই।
এটাই ছিল আমার শৈশবের কাটানো ঈদ আনন্দের কিছু মুহূর্ত যেগুলো আমি আপনাদের মাঝে ধাপে ধাপে শেয়ার করলাম। আশা করছি আপনাদের সকলের খুবই ভালো লেগেছে। আজ আর নয় এখানেই শেষ করছি, সকলেই সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন এবং আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবারের সঙ্গেই থাকুন। ধন্যবাদ সকলকে....!!
আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি আপনাদের কাছে আমার এই পোস্ট খুবই ভালো লেগেছে। আমার এই পোস্ট পরে সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন বলে আশা রাখি। আপনার সুন্দর মন্তব্যই আমার কাজ করার অনুপ্রেরণা
বিভাগ | সাধারণ লেখালেখি |
---|---|
বিষয় | শৈশবের কাটানো ঈদ আনন্দ |
পোষ্ট এর কারিগর | @jibon47 |
অবস্থান | [সংযুক্তি]source |
VOTE @bangla.witness as witness
OR
যদিও আমি সনাতনধর্মাবলম্বী,তারপরেও আমার বন্ধু প্রতিবেশীরা সবাই মুসলিম ধর্মাবলম্বী হওয়ায় আপনার বলা কথা গুলোর সাথে রিলেট করতে পারতেছি। তবে বয়স হওয়ার সাথে সাথে দায়িত্ব চাপে আর সেই সাথে সব আনন্দ ফিকে হয়ে যায়। ছোট বেলার ইদের অনুভূতিগুলো খুব সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন ভাইয়া। ধন্যবাদ সুন্দর অনুভূতি গুলো প্রকাশ করার জন্য।
আপনি সনাতন ধর্মীয় অবলম্বী হওয়ার পরেও ঈদ আনন্দের ব্যাপারটা অনেক বেশি উপলব্ধি করতে পেরেছেন জেনে খুবই ভালো লাগলো। গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
ছোটবেলায় আমরাও যখন সেহেরীতে উঠতে পারতাম না তখন সকালবেলা উঠে অনেক কান্নাকাটি করতাম। আর আমাদেরকে বলতো তোমরা যতবার খাবে ততটাই তোমাদের রোজা হবে। যাই হোক ছোটবেলার আনন্দ গুলোর কথা মনে পড়লে এখনো আসলে অনেক খারাপ লাগে মন চায় সেই ছোটবেলায় ফিরে যাই। তখনকার আনন্দটাই বেশ ভালো লাগতো। ঈদের আগের দিন রাত্রে তো ভালো করে ঘুমই হতো না কখন সকাল হবে কখন নতুন জামা পরবো। আর ঈদের সালামির বিষয়টা আমার কাছে খুবই ভালো লাগতো। যাইহোক অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে ছোটবেলার ঈদ আনন্দ আমাদের মাঝে ভাগ করে নেওয়ার জন্য।
আসলে ছোটবেলার ঈদ আনন্দটা অনেক বেশি সুন্দর ছিল বিশেষ করে সেহরি খাওয়ার মুহূর্তটা এখন বড় হওয়ার পরে খুবই মিস করি। ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য।
শৈশব মানেই স্মৃতিময় ও বেশ আনন্দের উড়ন্ত পাখির মতোই।যেকোনো বড় উৎসব আমাদেরকে আনন্দ দেয় ।আপনার শৈশবে ঈদের অনুভূতি জেনে ভালো লাগলো।তাছাড়া আপনি বায়না ধরতেন হাতে মেহেদি লাগানোর জন্য তখনের আনন্দটা যেন কখনো ফিরে পাওয়া যাবে না, শুধুই স্মৃতি।ধন্যবাদ ভাইয়া।
আসলে শৈশবটা ছিল বাধাহীন এখানে কোন বাধা ছিল না যার কারণে খুবই ভালোভাবে ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে পারতেন কিন্তু বড় হবার সাথে সাথে সেটা অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। ধন্যবাদ আপনাকে।