ভালোবাসার কারণে পিতামাতা সন্তানহারা//পর্ব:--প্রথম

in আমার বাংলা ব্লগ8 months ago

আজ--১৩-ই অগ্রহায়ণ | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | মঙ্গলবার | হেমন্তকাল |



আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নাম @jibon47। বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।


আজ আমি আপনাদের মাঝে এমন একটা পোস্ট শেয়ার করব যে পোস্ট করে আপনাদের সকলের হয়তোবা অনেক বেশি খারাপ লাগবে। মানুষ কিভাবে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে সেটা আমার এই ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে আসে না। যাই হোক আশা করছি আমার এই পোস্ট আপনাদের সবার ভালো লাগবে।



  • প্রিয় কমিউনিটি,আমার বাংলা ব্লগ
  • ভালোবাসার কারণে পিতামাতা সন্তানহারা
  • আজ-১৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  • মঙ্গলবার


তো চলুন শুরু করা যাক...!


শুভ রাত্রি সবাইকে......!!


পৃথিবীতে ভালবাসার উপরে হয়তো বা আর কিছুই নেই। আমি বিশ্বাস করি ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন যতটা জয় করা যায় সেটা অন্য কোন মাধ্যমে কখনোই সম্ভব নয়। পিতা-মাতা আমাদেরকে খুব ছোটবেলা থেকেই ভালোবেসেছে, খুব ছোটবেলা থেকে আমাদেরকে আদর স্নেহ মায়া মমতা ভালবাসা দিয়ে বড় করেছে। একটা পিতা মাতা কখনোই চায় না তার সন্তান তাদের ছেড়ে দূরে সরে চলে যাক। যত কষ্ট দুঃখ হোক না কেন পিতা-মাতা সব সময়ই চায় যে তার সন্তান যেন তার পাশে থাকে সব সময়। এই কষ্টটা একটা পিতা মাতা কখনোই বর্ণনা করে বোঝাতে পারে না যে তার সন্তান তাদের মাঝে আর নেই। সে পৃথিবীতেই আছে কিন্তু তাদের সাথে নেই কোন একটা কারণে হয়তো বা তাদের থেকে অনেক দূরে সরে আছে। নির্দিষ্ট একটা সময় করে হয়তোবা সে আবার ফিরে আসবে কিন্তু তার পিতা-মাতা হয়তোবা তখন আর থাকবে না। আসলে আমরা সন্তানেরা এমনই আমরা পিতা-মাতাকে অনেক রকম ভাবেই কষ্ট দিয়ে থাকি কিন্তু আমরা এটা বুঝতে পারি না যে আমরাও কোন একটা সময় গিয়ে তাদের অবস্থানে দাঁড়াবো। আমরাও তাদের মত কোন একটা সময় গিয়ে পিতা-মাতা হবো। সেই সময়টাতে যদি আমাদের সন্তান এটা আমাদের সঙ্গে এরকম ব্যবহার করে তখন আমাদের কেমন লাগবে...!!

ঘটনাটা কয়েক সপ্তাহ আগের। পলিটেকনিক লাইফে কয়েকটা বন্ধু পেয়েছিলাম যাদের সঙ্গে পলিটেকনিক লাইফ টা খুবই ইনজয় করেছি। এর মাঝে, রকি নামে আমার এক বন্ধু ছিল যার সঙ্গে আমার একটু ভালোবাসার সম্পর্কটা বেশি ছিল। ছেলেটা হিন্দু, হিন্দু হলেও এর সঙ্গে আমার ভাবের আদান-প্রদান অনেক বেশি ছিল। সে সব সময় আমাকে সবদিক দিয়ে অনেক রকম ভাবেই সাপোর্ট করতো আমিও ঠিক তেমনটাই,আমি ওর বাসায় কত গিয়েছি,কত থেকেছি এর কোন হিসাব নেই। আমার আর ওর মাঝে একটাই মিল ছিল, আমার চেহারাটা একটু দেখতে সেই রকির মতই ছিল। যার কারণে আমরা দুজন যখন এক সঙ্গে বসতাম তখন নতুন কোন স্যার যখন ক্লাসে আসতো, ঠিক তখন সেই স্যার আমাদের বলতে তোমরা কি যমজ ভাই নাকি হাহাহা...

পলিটেকনিক লাইফ শেষ করে যে যার মত ব্যস্ত হয়ে গিয়েছে যার কারণে এখন খুব একটা বেশি খোঁজখবর নেওয়া হয় না। শুনেছিলাম ও নাকি ঢাকাতে কোন একটা জায়গায় চাকরি নিয়েছে এর মাঝে ফোনে দু'একবার কথা হয়েছে। সামনাসামনি দেখা হয় না অনেক বছর। বন্ধুত্বের সম্পর্ক যদিও সেটা বছর কয়েক দেখা হয় না তবে মনে হচ্ছে যে প্রায় 5 থেকে 10 বছর ওকে দেখি না।

যাইহোক হঠাৎ করেই সেদিন একটা অন্য নাম্বার থেকে ফোন আসলো তখন রাত্রি নয়টা। ফোনটা রিসিভ কই ওপাশ থেকে কেউ কান্না জড়িত একটা মেয়েলি শব্দে বলল, তুমি কি জীবন বলছো..? আমি হ্যাঁ সূচক শব্দ বললাম, জি আমি জীবন আপনি কে বলছেন। সে আমাকে বলল যে আমি রকির আম্মু।

ukrainian-7277998_1280.jpg

source


ততক্ষণে আমি বুঝে গিয়েছি যে এটা আমার বন্ধু রকির আম্মু। এরপরে আমিই আন্টির খোঁজখবর নেওয়ার পরে আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম আন্টি রকি কোথায়। যদিও আমি রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম কারণ এত রাত্রে আন্টি আমাকে কেন ফোন দিয়েছে..!! আর আমার নাম্বারে বা কোথায় পেল..!! এসব কিছু ভাবতে ভাবতেই আন্টি হাউ মাউ করে কেঁদে উঠলো। আমি ততক্ষণে বুঝতেই পারছিলাম না কি ব্যাপার হঠাৎ করে কি হলো..??আমি কি ভুল কিছু জিজ্ঞেস করে ফেললাম নাকি..!!এরপরে আন্টিকে কিছুটা শান্ত করার পরে আন্টি আমাকে যেটা বলল সেটা শুনে আমি রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছিলাম।

একটা ছেলে কিভাবে এতটা নিষ্ঠুর হতে পারে সেটা আমার বুঝে আসেনা আমি এখন পর্যন্ত এই ব্যাপারটা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আন্টির সঙ্গে আমার প্রায় আধা ঘন্টার বেশি কথা হয়েছিল। এই পুরোটা সময়ের বেশিরভাগ সময়ই আন্টি কান্না জড়িত কন্ঠে কথা বলেছে। এই ব্যাপারটা আমার কাছে সত্যিই অনেক বেশি খারাপ লেগেছে। আর সেই সাথে আমার বন্ধু রকির উপর আমার অনেক বেশি রাগ হচ্ছিল। যাইহোক এবার পুরো ঘটনাতে আসি।

আমার বন্ধু রকি ছিল খুবই শান্ত মনের একজন মানুষ সবসময়ই ঠান্ডা মস্তিষ্কের একজন মানুষ ছিল। সে খুব একটা কথা বলতো না কিন্তু যে কথাটাই বলতো সেটা খুবই জ্ঞানমূলক এবং খুবই দামি। যার কারণে আমি তাকে মাঝে মাঝে নিউটনের নাতি বলে ডাকতাম। যদিও এই ব্যাপারটাও অনেক বেশ মজা পেত,যখন আমি ওকে নিউটনের নাতি বলে ডাকতাম। আমি আপনাদের আগেই বলেছি যে পলিটেকনিক লাইফ শেষ করার পরে বন্ধুর সঙ্গে আমার খুব একটা যোগাযোগ নেই।

honor-1389241_1280.jpg

source

এরপরে আন্টির মুখ থেকে শুনলাম যে, রকি পলিটেকনিক শেষ করার পরেই তার আপুর বাসায় চলে যায় চট্টগ্রামে। চট্টগ্রামে তার দুলাভাইয়ের অনেক বড় একটা ঔষধের ফার্মেসি আছে যেখানে গিয়ে সে তার দুলাভাইয়ের সঙ্গে সেই ওষুধের ফার্মেসিতেই তার দুলাভাইকে সাহায্য করতাম। বেশ ভালো ভাবেই কাটছিল দিন। হঠাৎ করে সেখান থেকে তার এক মেয়ের সঙ্গে পরিচয় হয়। যে মেয়েটার নাম ছিল মায়া রানী। যদিও নামক আর প্রয়োজন বোধ মনে করছি না তবে ঘটনার মূল বিষয়বস্তুটা বোঝার জন্য আমি এখানে নাম ব্যবহার করছি। এই মেয়েটার সঙ্গে নাকি তার খুব ভালো একটা সম্পর্ক হয়ে যায় মূলত তারা একে অপরের প্রেমে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে। এই কথাটা বলছিল রকির আম্মু। আমি তখন মনে মনে ভাবছিলাম যে প্রেম এখন একজন করতেই পারে এটা স্বাভাবিক।

ঠিক তখন আন্টি আমাকে বলছে যে এই মেয়েটা একটা ছেলের মা। তখন আমি রীতিমতো অবাক হয়ে আন্টিকে জিজ্ঞেস করলাম মা মানে..?? রকি, তাহলে কি বিবাহিত কোন মেয়ের প্রেমে আসক্ত। আন্টি তখন বলল হ্যাঁ। আমি তখন বললাম তারপরে কি হল এখনো কোথায় আছে, কি করতেছে। রকি কি আপনাদের বাসায় নাকি এখন..? এত এত প্রশ্ন যখন আমি আন্টির মুখের উপর ছুড়ে দিয়েছিলাম আন্টি তখন অঝোরে কান্না করেই যাচ্ছে। সত্যিই আমার অনেক বেশি খারাপ লাগছিল আন্টির কান্না দেখে। কি করবো ভেবেই পাচ্ছিলাম না। আপনি যদি আমার জায়গা থাকতেন তাহলে আপনি সেই মুহূর্তে কি করতেন...??

যাই হোক, গল্পটা আসলেই অনেক বড় আর এই গল্পটা আমি যদিও প্রথম অবস্থায় শেয়ার করতে চাইনি কিন্তু পরবর্তীতে ভাবলাম যে আপনাদের মাঝে শেয়ার করি। আজকে এখানেই শেষ করছি আমি খুব শীঘ্রই আপনাদের মাঝে দ্বিতীয় পর্ব নিয়ে হাজির হব। সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন, এবং আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবারের সঙ্গেই থাকুন। ধন্যবাদ সকলকে...!!



সমাপ্ত


আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি আপনাদের কাছে আমার এই পোস্ট খুবই ভালো লেগেছে। আমার এই পোস্ট পরে সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন বলে আশা রাখি। আপনার সুন্দর মন্তব্যই আমার কাজ করার অনুপ্রেরণা

বিবরণ
বিভাগজেনারেল রাইটিং
বিষয়জীবন চলার পথে মার্জিত হওয়াটা খুবই জরুরী
পোস্ট এর কারিগর@jibon47
অবস্থান[সংযুক্তি]source

VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Posted using SteemPro Mobile

Sort:  

Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
image.png
please click it!
image.png
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)

The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.

 8 months ago 

মানুষ ভালবাসার পাগল 🥺।ভালোবাসা পেলে মানুষ সবকিছু ভুলে যায় আর ভালোবাসা দিয়ে মানুষের মন জয় করা যায়।অনেক টাকা পয়সা দিয়েও যেটা হয় না, সেটা কিন্তু ভালোবাসা দিয়ে খুব সহজেই হয়ে যায়। পিতা মাতার অবদান আমাদের কখনোই ভোলার নয়, তারা আদর মায়া-মমতা দিয়ে আমাদের বড় করে তুলেছে। ঠিক কথা বলেছেন আমরা পিতা-মাতাকে অনেক কষ্ট দিয়ে থাকি, যদি আমরা তাদের অবস্থানে আসতে পারি,তখন আমরা সেই কষ্টটা বুঝতে পারি, বুঝেও তখন আর কোন সময় থাকে না।পিতা-মাতা সব সময় আমাদের ভালো কিছু চাই। যতই বন্ধুত্ব থাক না কেন? সময়ের ব্যস্ততার কারণে হাজারো ভালো বন্ধু দূরে সরে যায়। আপনি আপনার বন্ধু রকিকে নিউটনের নাতি বলে ডাকতেন? যাক বেশি ভালো লাগলো তো। খুবই খারাপ লাগলো আন্টির কান্না দেখে এবং রকি কি যে এমন কাজ করবে? কখনোই ভাবতে পারি নাই। আপনার জায়গায় থাকলে ভাইয়া আসলেই আপনার মতই আমি ভেঙ্গে পড়তাম

Posted using SteemPro Mobile

 8 months ago 

মাঝে মাঝে ও এমন কথা বলতো আর এমন এমন কাজ করত যেগুলো দেখে যে কেউ ওকে নিউটনের নাতি বলে আখ্যায়িত করবে। ভালোবাসাটা আমাদের জীবনে খুবই জরুরী হলেও সেটা মা-বাবাকে কষ্ট দিয়ে নয়। চমৎকার একটি মন্তব্য করেছেন পড়ে ভালো লাগলো। ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 8 months ago 

আপনার খুব ভালো কাছের বন্ধুর এমন আচরণ মায়ের প্রতি আপনাকে কষ্ট দিচ্ছে এবং বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে । আসলে ভালোবাসা প্রতি টি মানুষের জীবনে প্রয়োজন কিন্তুু মা,বাবা,পরিবারপরিজন কে ছেরে নয় নিশ্চই।এতো শান্ত,ভালো ছেলের কাছে এসব একদম আশা করা যায় না।পোস্ট টি শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।

 8 months ago 

ভালোবাসা আমাদের জীবনে খুবই জরুরী তাই বলে মা-বাবাকে কষ্ট দিয়ে অপর‌ একজনকে নিয়ে কখনোই ভালো থাকা সম্ভব নয়। কিন্তু আমার বন্ধু সেই দুঃসাহসটা করেছে এটা জেনে খুবই খারাপ লাগছে আমার। গঠনমূলক মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

 8 months ago 

আমি মনে করি টাকা পয়সা, অর্থ দিয়ে যা জয় করা যায় না, তা ভালোবাসা দিয়ে জয় করা যায়। আপনার বন্ধু এরকম একটা মেয়ের প্রেমে আবদ্ধ হবে এটা তো আমি বিশ্বাস করতে পারছি না। মেয়েটা এক সন্তানের মা এটা জেনেই তো অবাক হলাম। আপনার বন্ধুর মায়ের এরকম একটা অবস্থার কথা শুনে খুব খারাপ লাগলো। তিনি অনেক বেশি কান্না করছিলেন বুঝতেই পারছি। আসলে আপনার জায়গায় আমি থাকলে কি করতাম আমি নিজেও জানিনা। যাইহোক আশা করছি পরবর্তীটা তাড়াতাড়ি শেয়ার করবেন।

 8 months ago 

আসলে আমি যখন এই কথাগুলো শুনছিলাম তখন আমার কাছে অনেক বেশি খারাপ লাগছিল, খারাপ লাগছিল এটা ভেবে যে আমার বন্ধু এটা কি করলো তার দ্বারা এরকম কাজ কেমনে সম্ভব হলো। যাই হোক খুব দ্রুতই আমি আপনাদের মাঝে পরবর্তী পর্ব নিয়ে হাজির হব ধন্যবাদ আপনাকে।

Posted using SteemPro Mobile

Coin Marketplace

STEEM 0.19
TRX 0.13
JST 0.028
BTC 64625.84
ETH 3233.39
USDT 1.00
SBD 2.65