পদ্মা নদীর চরে রাত ৩ টায় মাছ ধরার অভিযান [🦊(১০% লাজুক খ্যাঁকের 🦊জন্য বরাদ্দ)🦊]
আজ - ১৮ কার্তিক | ১৪২৮ বঙ্গাব্দ | বুধবার | শরৎকাল|
আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নাম @jibon47। বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
- মাছ ধরার অভিযান
- আজ ১৮ই কার্তিক, ১৪২৮ বঙ্গাব্দ
- বুধবার
তো চলুন শুরু করা যাক...!
শুভ সকাল সবাইকে....!!
লেখাপড়ার কারনে বাড়িতে এখন তেমন একটা থাকা হয় না। আচ্ছা...!! শুধু কি লেখাপড়া করার কারনেই বাড়িতে থাকি নাহ্..!নাহ্, অন্য কোন কারন আছে...! হয়তো বা অন্য কোন কারন আছে। মোট কথা হলো,আমার এখন বাড়িতে থাকতেই ইচ্ছা করে না। একা একা থাকতেই ভালো লাগে। লাইফে এমন একটা সময় পার করছি যেখানে আমি মাঝে মাঝে একাকিত্বের প্রেমে পরি। একাকিত্বের প্রেমে পরাটা আসলে খারাপ কিছু না। যে ব্যাক্তি একা থকতে শিখে যায় তাকে একা করে দেওয়ার ভয় কেউ দেখাতে পারে না। যাইহোক,অনেক বকবক করলাম...! এবার কাজের কথায় আসি
বেশ কিছুদিন পরে এই তো কিছু দিন আগে বাড়িতে গেলাম। যেহেতু মাস শেষ হয়ে গেছে টাকা-পয়সার ব্যাপার-শ্যাপার আছে। আবার ও দিকে আব্বু,আম্মু,আর ছোট বোন মাঝে মাঝেই ফোন দিয়ে বাড়িতে যেতে বলে। তাই সাত-পাঁচ না ভেবেই দুপুরের খাওয়া-দাওয়া শেষ করে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হই। অনেক দিন পরে বাড়িতে যাচ্ছি নিজের কাছে খুবই ভালো লাগছে। যত পথ এগোচ্ছে ততো ভালো লাগছে। একটা সময় বাড়িতে পৌঁছাই। খাওয়া দাওয়া শেষ করে বিকেল এ ঘুম থেকে উঠে চলে যাই সেই ছোট্ট বেলার চিরচেনা খেলার মাঠে। সবার সাথে অনেক সুন্দর একটি মুহুর্ত অতিবাহিত করেছি। হঠাৎ একজন বললো নদীতে পানি শুকিয়ে গেছে, কিছু ছোট ছোট কুবলা/খাদ(পুরের থেকে ছোট আকৃতির গর্ত)। সেখানে প্রচুর মাছ পাওয়া যায়। যদি চাও তাহলে আমরা আজ রাত নদীতে মাছ ধরতে যাবো। এই বিষয় টা নিয়ে আমার মধ্যে অনেক উত্তেজনা কাজ করে।
যদিও আমি মাছ ধরায় তেমন পটু না ভালো পারি না। তবে আমার মনের মধ্যে একটা বিষয় সব সময় কাজ করতেছিল, সেটা হলো, মাছ পাই বা না পাই সেটা বড় কথা নয়। বড় কথা হলো, সবার সাথে পদ্মা নদীর চরে একটি রাত কাঁটাতে পারবো এবং সবাই মিলে অনেক আনন্দ করবো। সারা রাত জেগে থাকবো, গান বলবো,গল্প করবো, জোরে জোরে চিৎকার-চ্যাচামেচি করবো সব মিলিয়ে অনেক মজা করবো সবার সাথে। মাছ ধরা আমার লক্ষ্য ছিলো না আমার লক্ষ্য ছিলো সারা রাত মজা করা ।
ছবিঃ-আমরা ক'জন
যে ভাবা সেই কাজ বাড়িতে আব্বু আম্মুকে বলে আমরা রাত ৯ঃ০০ টার সময় বাসা থেকে রওনা হই পদ্মা নদীর চরে। যদিও তখন মাঠে শিয়াল ছাড়া আর কেউই থাকে না। আমরা দুটো নদীর পার হয়ে আমাদের গন্তব্য স্থলে যাই রাত ১১ঃ৩০ টার সময়। আমার ফোন কাছে ছিল সব সময়। আমি ফোনে গান বাজিয়ে দিয়েছি। খুবই মজা লাগতেছিল। শিশির ভেজা ঘাসের উপর দিয়ে হেঁটে হেঁটে পথ অতিক্রম করছি। আহ্ কি যে একটা অনুভূতি কাজ করতেছিল নিজের মধ্যে সেটা বলে বোঝাতে পারবো না।
গন্তব্য স্থলে পৌঁছে দেখে যেখানে আমরা মাছ ধরবো সেখানে এখন ও অনেক পানি। প্রায় ১০-১৫ দিন পরে মাছ ধরতে পারবো। খুবই কষ্ট নিয়ে কিছুক্ষন বসে থাকলাম। তারপরে কেউ বলতেছে চলে যাবো, আবার কেউ বলতেছে আসলাম যেহেতু আজ রাত এখানে থেকে যাবো। সব মিলিয়ে থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো। যেহেতু আমরা রাত্রি যাপন করবো ভেবেই বাসা থেকে বের হয়েছি সেহেতু আমরা একটা ট্রিপল আর সবাই এক এক জন একটা করে কাঁথা নিয়ে গিয়েছি। হঠাৎ একটা সময় আবহাওয়া পরিবর্তন হলো শুরু হয়ে গেলো প্রচুর বাতাস। হার কাঁপানো শীত লাগতেছি। সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম ট্রিপল যেহেতু আছে তাহলে ছোট্ট একটি ঘর তৈরি করি, যাতেকরে,শীত এর হাত থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।
চলুন কি ভাবে ঘর তৈরি করেছি সেটা আপনাদের দেখাই
ধাপঃ-০১
প্রথমে একটা গাছ থেকে কয়েকটি ডাল কেঁটে নিয়ে আসছি
ছবিঃ-গাছের ডাল
ধাপঃ-০২
এবার পাশে অনেক বড় একটি বন এর জমি। সেখান থেকে আমরা সবাই মিলে বন কেঁটে নিয়ে আসছি। বন কাঁটার উদ্দেশ্য হলো বন দিয়ে বেড তৈরি করবো। যাতেকরে,ঘুমাতে কোন সমস্যা না হয়। পিট-এ যেন ব্যাথা না পাই।
ধাপঃ-০৩
এবার ডালের মাথা গুলো দা দিয়ে কেঁটে একটু সুচালো করে নিলাম যাতেকরে সহজেই মাটির মধ্যে পুঁতে ফেলতে পারি।
ছবিঃ- ডাল কাঁটা ও মাটির মধ্যে পুঁতে রাখার দৃশ্য
ধাপঃ-৪
এবার বন গুলো মাটিতে সুন্দর ভাবে বিছায়ে দিলাম।
ছবিঃ-বন বিছানোর দৃশ্য
ধাপঃ-০৫
এবার লম্বা ভাবে দুটো ডাল মাটির মধ্যে পুঁতে দিয়ে মাঝ বরাবর দড়ি দিয়ে বেঁধে দিলাম এবং বাতাসের কারনে যেন ভেঙ্গে না যায় সেই দিকটা লক্ষ্য রেখে দুই ডালের মাঝে আর একটি ডাল পুতে দিলাম শক্ত হওয়ার জন্য।
ছবিঃ-ঘর তৈরির হচ্ছে
ধাপঃ-০৬
এবার ট্রিপল টা দড়ির উপর উঠিয়ে দিলাম এবং চারদিকে দড়ি দিয়ে সুন্দর ভাবে শক্ত করে বেঁধে দিয়েছি যেন বাতাস ঢুকতে না পারে।
ছবিঃ-ঘর তৈরি প্রায় শেষ
ছবিঃ-ঘর তৈরি হয়ে গেছে।
যেহেতু ঘর তৈরি হয়ে গেছে সেহেতু আর কোন চিন্তা নাই। বাসা থেকে চিড়া মুড়ি আর চানাচুর নিয়ে গিয়েছিলাম। ঘরের মধ্যে সবাই বসে খাওয়া দাওয়া শুরু করে দিলাম সেই সাথে নানা গল্প। মাঝে মাঝে আমি গলা ছেড়ে গান বলতেছিলাম। আবার একজন ভুতের ভয় দেখাচ্ছিল।😃
ছবিঃ-গল্পের মুহূর্তে
এভাবে অনেকটা টা সময় পার করার পরে আমাদের সবার একটা সময়ে এসে খুবই শীত অনুভব হচ্ছিল। কি করা যায় ভেবে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ আমরা সবাই বন এর জমি থেকে আবার কিছু বন নিয়ে আসি এবং তাতে আগুন লাগিয়ে দিই শীত দূর করার জন্য। আমরা অনেকটা সময় আগুন পোহাই। চারিদিকে রাতের নিস্তব্ধতা কেউ কোথায়ও নেই। শুধু আমরা ক'জন মাঠের মধ্যে উল্লাস করতেছি। এবার ভেবে দেখুন তো আপনি যদি ওই জায়গা থাকতেন তাহলে কেমন অনুভব করতেন....!!!সেই মজা করতেন তাই নাহ্...!
আস্তে আস্তে সবার চোখে ঘুম চলে আসে আমরা সবাই ঘুমিয়ে যায়। তখন প্রায় রাত ৪ঃ৩০ মতো বাজবে হয় তো। আমি ঘুমাই নি আমি আমার ফোনে ভুত এফ.এম শুনতেছিলাম। ফজরের আযান হওয়ার সাথে সাথে আমরা সবাই সব কিছু নিয়ে স্থান ত্যাগ করি। এবং ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে হাঁটতে থাকি বাসার উদ্দেশ্যে
ছবিঃ-নদী পারাপার
সকাল বেলা নদীর ঘাটে নৌকাটা ছিল। অবশ্য এই নৌকা টা ব্যবহার করেই রাতে নদী পার হয়েছি। সকাল বেলা এই নৌকা ব্যবহার করে আবার এপার আসলাম। আমি নৌকায় মাঝির দায়িত্ব পালন করি। পদ্মা নদীর মাঝি😃
এটাই ছিলো আমার পদ্মা নদীতে মাছ ধরার অভিযান। যদিও মাছ পাই নি। বাসায় আসার পরে আব্বু আম্মু জিজ্ঞেস করছে মাছ কই হ্যাঁ...! এতো মাছ পাইছিস যে নিয়ে আসতেই পারিস নাই...! যেহেতু মাছ পাই নি সবাই তো একটু মজা নেবেই তাইনা...!
আমার জীবনের স্মৃতির পাতায় স্বরণীয় হয়ে থাকবে এই পদ্মা নদীর ধারে কাটানো রাতটা
আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি আশা করিছি আপনারা সবাই আমার পোষ্ট উপভোগ করবেন এবং আপনারা সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন
আমার পরিচয়
আমি জীবন মাহমুদ। আমি একজন ছাত্র। আমি বাংলাদেশে বাস করি। আমি কুষ্টিয়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউট এর মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টের সপ্তম পর্বের অধ্যায়ন রত আছি। আমি ছবি আঁকতে এবং ফটোগ্রাফি করতে ও মাঝে মাঝে গুন গুন করে গান গাইতে খুবই ভালোবাসি। সেই সাথে যে কোনো নতুন বিষয় সম্পর্কে জানতে পছন্দ করি। আমি ভালোবাসি স্টিমাইট প্লাটফর্মে কাজ করতে।
সত্যি ভাইয়া পদ্মা নদীতে মাছ ধরার মজাটাই আলাদা। আমার গ্রামের পাশ দিয়ে বয়ে গেছে পদ্মা নদী। আমরা অনেক সময় অনেক ভাবে আনন্দ করে থাকি পদ্মা নদীতে মাছ ধরার সময়। ধন্যবাদ সুন্দর একটা পোস্ট আমাদের সাথে শেয়ার করার জন্য।
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য
দাদা দেখেই বুঝে যাচ্ছে অনেক আনন্দের সাথে মাছ ধরে কোন বন্ধুদের সাথে রাত কাটিয়েছেন। আমরা যারা শহরে থাকি তাদের জন্য এই আনন্দ ভোগ করা সহজ হয় না। আর আপনাকে দেখে তো মনে হচ্ছে বেশ ঠান্ডা পড়ে গেছে গ্রামে।
হুম একটু একটু ঠান্ডা পরছে, ধন্যবাদ আপনাকে সুন্দর মন্তব্য করার জন্যে
বাহ্ অনেক মজা করেছেন তো।সাপের দেখা পাইছিলেন নাকি?
এভাবে রাত্রিযাপন অনেক এডভেঞ্চার হয়ে থাকে।তবে দুঃখের বিষয় মাছ নিয়ে বাড়ি আসতে পারেননি।
খুবই কষ্ট
হাহাহাহা...... মাছ পাননি তাহলে তো আপনার অভিযান টাও বৃথা হয়ে গেলো। দেখে বোঝা যাচ্ছে ভাই সারারাত অনেক কষ্ট করেছেন। কিন্তু সম্ভবত আড্ডা মেরেছেন খালি। তাই মাছ পাননি। অসংখ্য ধন্যবাদ আমাদের মাঝে শেয়ার করার জন্য।
জ্বী ভাই প্রচুর এনজয় করেছি,কিন্তু মাছ পাই নি😭
খুবই ইন্টারেস্টিং একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন ভাই। অনেক রাতে সবাই মিলে মাছ ধরার মজাই আলাদা। যদি আমার এ ধরনের সুযোগ কখনো হয়নি। তবে উপলব্ধি করা যায় যে, মুহূর্তগুলো অনেক আনন্দঘন। ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনাকে ও ধন্যবাদ ভাই
আপনার পোস্ট টি পড়ে আমার নিজেরি মাছ ধরতে ইচ্ছে হচ্ছে😁। যদিও ঢাকার বাইরে কখনও যাইনি। অনেক ইনজয় করলাম আপনার ব্লগ টি।
ধন্যবাদ আপু,মাছ খাওয়ার থেকে মাছ ধরতে বেশি মজা লাগে। কিন্তু আমরা মাছ পাই নি, সারা রাত এনজয় করেছি
অনেক ইচ্ছা ছিল আপনার মতই একটি রাত পদ্মার চরে কাটাবো। যেহেতু পদ্মা নাদী আমাদের খুব কাছেই অবস্হিত। যাই হোক এখন পর্যন্ত হয়ে ওঠে নি। আপনার পোষ্ট টি পড়ে আবারো সেই ইচ্ছা জাগলো। খুব সুন্দর একটা সময় কাটিয়েছেন । ভাল থাকবেন শুভেচ্ছা রইল।
ধন্যবাদ আপনাকে গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য
আমি মাছ খেতে বেশি একটা পছন্দ করি না কিন্তু ধরতে খুবই পছন্দ করি। আর যদি হয় রাতের বেলা তাহলে তো আমি এক পায়ে রাজি। আপনাদের মাছ ধরার অভিযান দেখেই বুঝা যাচ্ছে আপনারা কতটা ইনজয় করেছেন।
জ্বী ভাইয়া অনেক এনজয় করেছি
বাড়িতে থাকতে এমন অভিজ্ঞতা আমারও ছিল। গভীর রাতে একটি লাইট এবং হাতে একটি ছোটো জাল নিয়ে বন্ধুরা এবং পাড়াতো কাকারা মিলে যেতাম মাছ ধরতে।
দিনগুলো আজ শুধুই স্মৃতি। তবে আপনার এই সুন্দর এবং আনন্দঘন মুহূর্ত গুলো দেখে পুরনো দিনের স্মৃতিগুলো মনে পড়ে গেল।
বেশ ভালো লাগলো গল্পটি পড়ে
অসংখ্য ধন্যবাদ ভাই। গঠনমূলক মন্তব্য করার জন্য
আপনার প্রতিও রইল অনেক অনেক শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। কমিউনিকেশন বজায় রাখার জন্য ভালোবাসা অবিরাম। পাশে থাকলে পাশে পাবেন
ইনশাআল্লাহ আছি ভাই
খুশি হলাম।
আমি এমন ভাবে কখনো বাইরে রাত কাটানি। আপনার অনেক ভালো অভিজ্ঞতা হয়েছে মনে হচ্ছে। আমার ও ইচ্ছে আছে এমন ভাবে বাইরে রাত কাটানোর। আপনার পোস্ট টা পড়ে আমি মুগ্ধ। আপনার জন্য শুভ কামনা রইলো।
ধন্যবাদ ভাই, আপনাকেও একদিন নিয়ে যাবো