অবিস্মরনীয় ভালোবাসা/পর্বঃ--০৪ [benificiary ১০% @shy-fox]|
আজ - ২৫ আষাঢ় | ১৪২৯ বঙ্গাব্দ | শনিবার | বর্ষাকাল |
আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নাম @jibon47। বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
- ছোট গল্প
- আজ ২৫শ আষাঢ়, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
- শনিবার
তো চলুন শুরু করা যাক...!
শুভ রাত্রি সবাইকে.....!!
আমরা সচরাচর সকলেই গল্প পড়তে অনেক বেশি ভালোবাসি। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজেও ঘরেও পড়তে অনেক বেশি ভালোবাসি আমার নিজের কয়েকটি গল্পের বই রয়েছে যখন অবসর সময় পাই তখনই আমি গল্পের বই গুলো নিয়ে বসে যাই। আর এই গল্প গুলোর মধ্যে ভালোবাসার গল্প পড়তে আমাদের সব থেকে বেশি ভালো লাগে। ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যে গল্পের মাধ্যমে আমরা আমাদের পুরনো স্মৃতি থাকলে সেগুলো জাগ্রত হয় খুব নিমিষেই। যাইহোক আমি আপনাদের মাঝে কয়েকদিন আগে অবিস্মরনীয় ভালোবাসার প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্ব শেয়ার করেছিলাম। প্রথম,দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্বটি আপনারা সকলেই খুব চমৎকারভাবে পড়েছেন এবং অনেক সুন্দর একটি মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিলেন যেটা দেখে আমি অনেক অনুপ্রাণিত হয়ে ছিলাম। আমি আপনাদের বলেছিলাম খুব শীঘ্রই আমি আপনাদের মাঝে অবিস্মরনীয় ভালবাসার চতুর্থ পর্ব শেয়ার করবো ।সেই ধারাবাহিকতা বজায় রেখেই আমি আপনাদের মাঝে চতুর্থ পর্ব নিয়ে হাজির হয়েছি। আশাকরি প্রথম,দ্বিতীয় ও তৃতীয় বারের মতো আপনারা চতুর্থ পর্ব খুবই চমৎকার ভাবে পড়বেন এবং সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে অনুপ্রাণিত করবে। তাহলে চলুন আর বেশি অপেক্ষা না করে গল্প শুরু করি।
তৃতীয় পর্বতে আমি আপনাদেরকে বলেছিলাম যে কণা তার কলেজের আরেকটি ছেলের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে আবদ্ধ হয়ে গিয়েছে এবং তার সঙ্গে সমস্ত রকমের ফোন রেকর্ড এবং ছবি তার ফোনে বিদ্যমান ছিল। যেহেতু তার ফোন নষ্ট হয়ে গিয়েছে এবং সে কনক এর নিকট এসেছে তার ফোন মেরামত করার জন্য। তাই কনক ইচ্ছে করলেই তার ফোনের সকল রকম ডকুমেন্ট দেখে ফেলতে পারে। যাইহোক সেদিন কোন খুবই খুশি ছিল কারণ অনেকদিন পরে এসে তার ছোটবেলার প্রিয় মানুষটিকে খুঁজে পেয়েছে। সে দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যায় এবং বন্ধুদের সঙ্গে খুবই চমৎকার একটি সময় অতিবাহিত করে। তার খুব কাছের এক বন্ধু ছিল বন্ধুর নাম সোহাগ। অন্যান্য দিনের থেকে কনক আজকের একটু বেশি খুশি ছিল সেটা সোহাগ অনেক আগে থেকেই বুঝতে পেরেছে। সোহাগ কনক কে জিজ্ঞেস করে কিরে তোর কি হয়েছে...? আজ হঠাৎ এত খুশি খুশি কেন ব্যাপার কি...? কনক যেন কোন কথাই বলছে না সে শুধু হাসছে আর হাসছে। মনে হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত রকমের সুখ আজ তার মধ্যে পৃথিবীতে দুঃখগুলো যে একটা শব্দ থাকে সেটা যেন উঠে গিয়েছে। এর আগে কখনো সোহাগ কনককে এতটা খুশি দেখেনি এই প্রথম সে তাকে এতটা খুশি দেখছে। যেহেতু তারা দুজন দুজনের খুব কাছের বন্ধু ছিল সেহেতু দুজন দুজনের খুশি দেখে খুবই হাসাহাসি করছিল এবং অনেক রকম তামাশা করছিল। অনেক রাত পর্যন্ত তারা একত্রে আড্ডা দেয় পরবর্তীতে কোন তার বন্ধু সোহাগকে পুরো ঘটনা বলে। ঘটনা শুনে সোহাগ খুবই অবাক দৃষ্টিতে কনকের দিকে তাকিয়ে থাকে কারণ কোন এর আগে কখনোই সোহাগের কাছে এরকম কোন ঘটনা বলেনি। যার কারনে সোহাগ একটু দুঃখ প্রকাশ করেই বলে তোর সঙ্গে আমার এত দিনের পরিচয় কিন্তু আমাকে পর্যন্ত বলার প্রয়োজন বোধ মনে করলি না...!! এটা শোনার পরে কনক সোহাগকে বুঝিয়ে সবকিছু বলে শেষমেষ দুজনে হাত ধরে গল্প করতে করতে যে যার বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করে। রাত্রিবেলা যেন কনকের ঘুমই আসছিল না সে শুধু অপেক্ষা করছিল কখন রাত্রি শেষ হবে সকাল হবে। সকাল হওয়ার সাথে সাথে সে বাজারে ছুটবে। যাই হোক সকল অপেক্ষার অবসাদ ঘটিয়ে একটা সময় ভোরের আলো উদিত হয়। পূর্ব আকাশে সূর্য উদিত হয়ে কনকের ঘরের বেড়ার ফাঁক দিয়ে সূর্যের আলো কনকের চোখে এসে পড়েছে,নিমিষেই কনকের ঘুম ভেঙে গেল। সে ঘুম থেকে তড়িঘড়ি করে উঠে সকালের খাবার খেয়ে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা করে।
যেহেতু কনক এর ছোট্ট একটা ব্যবসা করতো তাই তার যানবাহন হিসেবে ছোট্ট একটা সাইকেল ছিল। সে সচরাচর সাইকেল নিয়েই যাতায়াত করত। সে খুব তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া শেষ করে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা করে সাইকেল নিয়ে। সে এতটাই উত্তেজিত ছিল যে এর আগে কখনো এত জোরে সাইকেল চালিয়ে সে বাজারে যায়নি। পথিমধ্যে তার বন্ধু সোহাগের সঙ্গে দেখা হয় সোহাগ কনকের সাইকেল চালানো দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে যায় এবং বলে, কিরে এত জোরে সাইকেল চালিয়ে কোথায় যাচ্ছিস...? কোন বেশি কথা না বলে শুধু সোহাগকে এতোটুকুই বলে যে আমি আমার দোকানে যাচ্ছি তুই চলে আয়। এই বলে কনক তড়িঘড়ি করে বাজারের উদ্দেশ্যে রওনা করলো। খুব সকাল সকাল সে তার দোকান খুলে প্রথমেই কণার ফোন হাতে নিল। হাতে নিয়ে সে অনুভব করছে এবং মনে মনে ভাবছে এটাই সেই ফোন যে ফোন দিয়ে কনা সকলের সঙ্গে যোগাযোগ করে এটা ভাবতে ভাবতে সে কণার ফোন মেরামতের কাজে মনোযোগ দেয়। যেহেতু কণার ফোনের ডিসপ্লের সমস্যা ছিল সেহেতু কনক নতুন আরেকটি ডিসপ্লে লাগিয়ে দেয়। নিমিষেই কনার ফোন ভালো হয়ে যায়। যেহেতু অনেকদিন বাদে এসে করাকে দেখতে পেয়েছে সে তো তার মধ্যে এক অন্যরকম অনুভূতি কাজ করছিল। সে ওনার ফোন একটু চেক করতেই মেসেজ বক্সে গিয়ে সে কিছু মেসেজ দেখে। যে মেসেজগুলো কোনা তার প্রেমিক রাতুলের সঙ্গে করেছিল। সে অনেকগুলো মেসেজ তাদের পরে মেসেজগুলো পড়ে কনক বোবা এবং বধির হয়ে যায়। সে যেটা দেখেছে এটা দেখার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিল না। সে কখনো ভাবি নি যে কণা অন্য কারো সাথে প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে। নিমিষেই তার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে সে কান্না করতে থাকে।
কনক খুবই দুঃখ পায় তার দুঃখটা সত্যিই অনেক বেশি দুঃখজনকই ছিল। সে যাকে ছোটবেলা থেকে এতটা পছন্দ করত সেই মানুষটা এখন অন্য কারো প্রেমিকা এটা ভাবতেই কনক হাউমাউ করে কান্না শুরু করে দেয়। এর মধ্যে কনকের বন্ধু সোহাগ তার দোকানে এসে উপস্থিত হয় সোহাগ কনককে কান্না করতে দেখে এসে বলে কি ব্যাপার কি হয়েছে..?? কান্না করছিস কেন...? সোহাগের এই প্রশ্নের জবাবে কোন তাকে কিছু বলতে পারছে না যেন তার মুখ দিয়ে কোন কথাই বের হচ্ছে না। চোখে মুখে শুধু অশ্রু। শেষমেষ অনেকটা সময় কান্না করার পরে সে সোহাগকে পুরো ঘটনা বলে। ঘটনা শুনে সোহাগ তার বন্ধুকে সান্তনা দেয় সে বলে নিজেকে শক্ত করতে। বিপদে বন্ধু আরেক বন্ধুর পাশে থাকবে এটাই স্বাভাবিক। বিপদে আপদে যদি বন্ধু বন্ধুর পাশে না থাকে তাহলে সেটাকে বন্ধুত্ব বলা চলে না। কিন্তু এক্ষেত্রে সোহাগ তার বন্ধুকে পুরোটা সাপোর্ট দিয়েছে সব সময় তার পাশে থেকেছে। সেদিন সারাটা দিন আর কোন তার দোকানে তেমন একটা কাজ করতে পারেনি। সে সারাটা দিন অলস সময় পার করেছে। সন্ধ্যা মুহূর্তে কনক এবং সোহাগ তারা দুজন দোকানে বসে ছিল। হঠাৎ কণা এবং তার বান্ধবী দোকানে এসে উপস্থিত হয় এবং তাদের ফোন মেরামত করা হয়েছে কিনা এটা জানতে চায়। কনাকে দেখে কনক অবাক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকিয়ে থাকে। কনার দিকে তাকাতেই কনকের চোখে পানি ছল ছল করছে। একটা পর্যায়ে এসে কনক কান্না জুড়ে দিল। হঠাৎ এরকম একটি ছেলের কান্না দেখে তারা দুজন রীতিমতো ঘাবড়ে গিয়েছে। তারা দুজন জানতে চাইলো সে কান্না করছে কেন। সোহাগ তাদের উল্টাপাল্টা বুঝিয়ে বলল তেমন কিছু না। আপনাদের ফোন ঠিক হয়ে গিয়েছে আপনারা নিয়ে যেতে পারেন এই বলে সোহাগ তাদের ফোন দিয়ে দিল। এদিকে কণা কনকের দিকে তাকিয়ে রয়েছে অবাক দৃষ্টিতে। কনক দুঃখ ভরাকান্ত মন এবং অশ্রু জনিত চোখ নিয়ে কণার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। এরকম দৃশ্য দেখে কণার মনের মধ্যে একটা খটকা লেগেছে। সে কিছুতেই বুঝতে পারছে না যে কনক কেন তার দিকে এভাবে তাকিয়ে রয়েছে এবং কেনই বা কান্না করছে। যাই হোক কণা আর সেদিকে না তাকিয়ে ফোন নিয়ে তারা দুজন বাসার উদ্দেশ্যে চলে যায়।
এদিকে কনক তার বন্ধুর কাঁধের উপর মাথা রেখে কান্না করছে অঝোরে। অনেকটা রাত পর্যন্ত তারা দোকানে বসে থাকে তারপরে তারা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা করবে এটা ভেবে দোকানপাট বন্ধ করে দিয়েছে। কনক নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারছে না সে নিজের আবেগ ধরে রাখতে পারছে না অনেকটা সময় কান্না করেই যাচ্ছে। বন্ধুর এরকম দৃশ্য দেখে সোহাগ আর স্থির থাকতে পারছে না সে কনকের মন ভালো করার জন্য তাদের খুব পছন্দের একটি জায়গায় তাকে নিয়ে যায়। তারা দুজন অবসর সময়ে সেই জায়গাটিতেই সময় অতিবাহিত করে। সেখানে গিয়ে তারা তাদের সমস্ত রকমের কথাবাত্রা বলে। কোন তার কাছে ছোটবেলা থেকে আজ অব্দি যা যা হয়েছে সব কিছু সোহাগকে খুলে বলে যেটা শুনে সোহাগ হতভঙ্গ হয়ে যায়। এবং মনে মনে ভাবতে থাকে যে একটা মেয়ের জন্য একটা ছেলে এতকিছু কিভাবে করতে পারে। যাইহোক একটা সময় সোহাগ কনককে তার বাসায় পৌঁছে দিয়ে নিজেও বাসায় চলে যায়। সেদিনের সেই রাত ছিল কনক এক কাছে সব থেকে বেদনাদায়ক একটি রাত। সে সারারাত না ঘুমিয়ে কান্না করতে করতেই কাটিয়ে দেয়। এরকম বেদনাদায়ক রাত এর আগে সে কখনোই কাটাইনি ।সত্যি বলতে সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না যে তার প্রিয় মানুষটি এখন অন্য কারো, অন্য কারো বাগানের ফুটে থাকা রক্তাক্ত গোলাপ। প্রিয় মানুষের অতীতের কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই সে একটা সময় ঘুমিয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে কি হবে সেটা এখন পর্যন্ত লেখকের অজানা....!!
এখানেই আমি আমার অবিস্মরনীয় ভালোবাসার চতুর্থ পর্ব শেষ করছি। খুব শীঘ্রই আমি আপনাদের মাঝে বাকি পর্বগুলো শেয়ার করব ততক্ষণ পর্যন্ত সবাই ধৈর্য ধারণ করুন। সবাই যে যার জায়গা থেকে সুস্থ থাকুন ভালো থাকুন এবং পরিবারের সাথেই থাকুন। সেই সাথে প্রিয় মানুষটিকে হ্যাপি রাখার চেষ্টা করুন সবসময়। ধন্যবাদ সকলকে....!!!
আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আমি আশা করিছি আপনারা সবাই আমার পোষ্ট উপভোগ করবেন এবং আপনারা সবাই আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন
বিভাগ | ছোট গল্প |
---|---|
বিষয় | অবিস্মরনীয় ভালোবাসা,পর্ব চতুর্থ |
গল্পের কারিগর | @jibon47 |
অবস্থান | [সংযুক্তি]source |
এভাবেই সবসময় পাশে থাকবেন আশা করি আপনার জন্য শুভেচ্ছা রইল।
আসলে ভাই আমরা অনেকেই ব্যক্তিগতভাবে বই পড়তে পছন্দ করি। যেমনটি আপনি করে থাকেন ।এছাড়া কনকের বেদনাদায়ক রাতটি সত্যিই একটি বেদনাদায়ক রাত ছিল। যেটি আমাকেও বেদনা দিয়েছে ।ধন্যবাদ আপনাকে।
আপনি খুবই চমৎকার একটি মন্তব্য করেছেন আপনার মন্তব্য আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে বই পড়তে আমি সত্যিই অনেক বেশি ভালোবাসি মন্তব্যের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।