১৮০ টাকার সাইকেল

in আমার বাংলা ব্লগ5 months ago

আজ--১৭ ফাল্গুন | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | শুক্রবার | বসন্তকাল |



আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নাম @jibon47। বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।


আজ আমি আপনাদের মাঝে আমার এক বন্ধুর জীবনে ঘটে যাওয়া ১৮০ টাকার সাইকেলের গল্প শেয়ার করব, আশা করছি এই ১৮০ টাকার সাইকেল এর গল্পটা আপনাদের সবার ভালো লাগবে।



  • প্রিয় কমিউনিটি,আমার বাংলা ব্লগ
  • ১৮০ টাকার সাইকেল
  • আজ-১৭ফাল্গুন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
  • শুক্রবার


তো চলুন শুরু করা যাক...!


শুভ সন্ধ্যা সবাইকে......!!


আপনারা হয়তোবা আজকে আমার পোস্টের টাইটেল দেখে রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছেন। হয়তোবা ভাবছেন যে ১৮০ টাকার সাইকেল এটা আবার কেমন বা এটা কিভাবে সম্ভব। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি আপনাদের সমস্ত রকমের চিন্তাধারা বদলে দেব। বেশ কিছুদিন আগে ভার্সিটিতে বসে বন্ধুদের সঙ্গে গল্প করছিলাম সেদিন অবশ্য আমাদের একটা ক্লাস ছিল কিন্তু স্যার না থাকার কারণে আমরা পুরো সময়টা রুমের মধ্যে বসে বসে গল্প করছিলাম। যদিও আমি খুব একটা বেশি কথা বলি না তবে মাঝে মাঝে দু থেকে তিনজন খুব ভালো বন্ধু আছে তারাই একসঙ্গে বসে গল্প করি। গল্প করার একপর্যায়ে আমার এক বন্ধু আমাকে বলল যে আমার বাবা একদিন আমাকে খুব মেরেছিল। তার এই কথাতে আমরা সবাই মিলে একসাথে প্রশ্ন করলাম কিসের জন্য মেরেছিল তুমি কি করেছিলে। কেউ কেউ আবার ফাজলামি করে বলছিল তুমি কি কোন মেয়েকে বিয়ে করে নিয়েছিলে সেই সময়টাতে যার কারণে তোমাকে এত মাইর দিয়েছিল। এই কথা বলাতে বন্ধুটা কিছুক্ষণ চুপ থেকে একটু হাসি দিয়ে বলল না না সেরকম কিছু না, এর পিছনে যথেষ্ট একটা কারণ রয়েছে এবার আমরা সকলে মিলে তার কাছে জানতে চাই তাহলে বল। একথা শোনার পরে সে বলল যে সে ২০০৮ সালের কথা। ২০০৮ সালে আমার চাচা চেয়ারম্যান ছিল। চেয়ারম্যান থাকার কারণে বিভিন্ন জায়গায় আমার বাবার আর আমার চাচার যাওয়া লাগত।

এই যেমন কোথাও কোন সালিশ বা কোন ব্যাপারে কথা বলার জন্য অনেক দূর দূরান্তেই যাওয়া লাগত মূলত যেকোনো ধরনের সমস্যাতে আমার চাচা আমার বাবাকে সাথে করে নিয়ে যেত কিন্তু সেই সময় আমার চাচা আর আমার বাবার কারোরই মোটরসাইকেল ছিল না। মোটরসাইকেল না থাকার কারণে আমার বাবা সেই সময়ে ১৬ হাজার টাকা দিয়ে একটা সাইকেল কিনেছিল। সেই সময়টাতে আমি খুবই ছোট হয়তো বা ক্লাস থ্রি অথবা ফোর-এ লেখাপড়া করতাম সঠিক মনে নেই। যদিও আমি তখন খুবই ছোট ছিলাম তারপরেও নতুন সাইকেল বাবা কিনেছে এটা দেখে আমি খুবই খুশি ছিলাম এবং আমি মাঝে মাঝে টুকটাক চালানোর চেষ্টা করতাম তবে খুব একটা ভালো পারতাম না। কিন্তু আমি ছোটবেলায় খুবই দুষ্ট ছিলাম আমার দুষ্টুমির লিমিট টা অনেক বেশি ছিল এতটাই বেশি ছিল যে বাসা থেকে বাবা চাচারা মাঝেমাঝেই আমাকে মারধর করত। একথা শোনার পরে পাশ থেকে একজন বলল এখনো তুমি কোন অংশে দুষ্টুমি কমাওনি, এখনো মাঝে মাঝে খুব বেশি পাগলামি করো এটা শুনে আমরা সকলেই সে-কি হাসি।

এরপরে আবার কিছুক্ষণ তার পাগলামি নিয়ে আমরা গল্প করলাম সে কেমন কেমন পাগলামি করে। সত্যি বলতে আমার সেই বন্ধু দেলোয়ার অনেকটাই অন্য টাইপের ছেলে সে সবসময়ই পুরো ক্লাস মাতিয়ে রাখে একা একাই। এবং যতরকমের দুষ্টুমি সেই দুষ্টুমিতে তার চরিত্র থাকে সবথেকে বেশি। এখন একটা ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলে যদি ক্যান্টিন থেকে পানি নিয়ে এসে সবার গায়ের উপরে পানি ছিটিয়ে দেয় তাহলে এই ব্যাপারটাকে আপনারা কখনোই ম্যাচিউরড বা সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ বলবেন না, সে মাঝে মাঝে আমাদের সঙ্গে এমনটাই করে ক্যান্টিন থেকে পানি নিয়ে এসে গায়ের উপরে ছিটিয়ে দেয়। তো তাহলে বুঝতেই পারছেন যে তার এই বয়সে এসেও যদি এতটা দুষ্টুমি ভর করে তাহলে ছোটবেলায় কতটা দুষ্টুমি করতে পারে।

black-163595_1280.jpg

source

যাইহোক এরপর আমরা আবার তার কাছে জিজ্ঞেস করি এরপরে কি হলো সেটা বল, একথা শোনাতে এসে আমাদেরকে বলে যে আমি একদিন সাইকেল নিয়ে স্কুলে গিয়েছিলাম। স্কুল থেকে আসার পথে রাস্তায় দেখতে পাচ্ছিলাম যে এক লোক ভ্যানে করে বাদাম ভাজা নিমকি ভাজা এবং সন্দেশ টাইপের কিছু বিক্রি করছে। এটা দেখে আমার খুবই খেতে মন চাইছিল কিন্তু সত্যি বলতে আমার কাছে তখন একটা টাকা ছিল না কি করবো ভেবেই পাচ্ছিলাম না। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ করেই মাথার মধ্যে কি যেন হয়ে গেল আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম যে এই সাইকেলটা আমি এই ভাংড়ি দোকানদারের কাছে বিক্রি করে দেব। যেমন ভাবনা ঠিক তেমনি কাজ আমি সেই ভাংড়ি ওয়ালা দোকানদারের কাছে আমার সাইকেলটা ১৮০ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিলাম। এবার তাহলে আপনারা বুঝতেই পারছেন যে সে কতটা উন্মাদ টাইপের একটা ছেলে ছিল যে ১৬ হাজার টাকার সাইকেল সে ১৮০টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে শুধুমাত্র সন্দেশ খাবে বলে। যদিও প্রথম অবস্থায় আমরা তার এই কথা বিশ্বাস করিনি কিন্তু সে এমন কিছু কথা আমাদেরকে শুনিয়েছে যেটা শোনার পরে আমরা মানতে বাধ্য হয়েছি। বরাবরই আমি একটু প্রশ্ন করার ক্ষেত্রে আগ্রহ প্রকাশ করি আমি তারপরে তাকে জিজ্ঞেস করলাম এরপরে তোমার বাবা তোমাকে কিছু বলেছিল না..??

সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকার পরে বলল যে আগে আমার গল্প শেষ হবে তারপরে প্রশ্ন করবে ঠিক আছে এরকম ভাবে আগেই প্রশ্ন করবা না,আমার রাগ হয়। এরপরে আমি তাকে বললাম ওকে ঠিক আছে তুমি বল আমি শুনছি। এরপরে সে আমাকে বলল যে ১৮০ টাকায় সাইকেল বিক্রি করে দিয়ে আমি বাসায় চলে গিয়েছি এরপরে আমার বাবা আমাকে জিজ্ঞেস করেছে সাইকেল কই। এ কথা শোনার পরে আমি বলে দিয়েছি যে আমি সাইকেল বিক্রি করে দিয়েছি। এ কথা শুনে আমার বাবা তোর রীতিমতো অবাক হয়ে গিয়েছে এর পরে আমাকে প্রথমেই মারধোর করেনি ভালোমতো বুঝিয়েছে বাবা হয়তো বা ভেবেছিল আমি তার সঙ্গে ফাজলামি করছি। কিন্তু যখন আর আমি কোনোভাবে সাইকেলের সন্ধান দিতে পারছিলাম না তখন সকলেই বিশ্বাস করে নেয় যে আমি ১৮০ টাকায় সাইকেল বিক্রি করে দিয়েছি। এটা শুনে আমার বাবা আমাকে বেধড়ক পিটিয়েছিল। এতটা পিটুনি আমি আমার জীবনে কখনো খাইনি আর কেউ তার সন্তানকে এরকম ভাবে মারতে পারে সেটা আমার জানা ছিল না।

angry-6320448_1280.jpg

source

এরপরে আবারো আমি তাকে জিজ্ঞেস করি পরে কি আর সাইকেল ফেরত পেয়েছিলে..?? আবার সে কিছুটা ভুরু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে বলল গল্পটা শেষ হোক। আবার আমরা সবাই একটু হেসে তাকে বললাম ঠিক আছে তুমি গল্প শেষ কর। এরপরে সে আমাদেরকে জানায় যে তার বাবা এবং চাচা যেহেতু এলাকার খুবই গণ্যমান্য এবং প্রভাবশালী মানুষ ছিল যার কারণে অনেকেই তাদের চিনতো। আবার তার চাচা যেহেতু চেয়ারম্যান তাহলে বুঝতেই পারছেন তাদের কিছুটা হলেও পরিচিত ছিল সেই এলাকায়। কোন একটা সন্ধানের মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছে যে তার ছেলে যার কাছে সাইকেলটা ১৮০ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছে সে তার পাশের থানার মানুষ। সেদিন রাতের বেলায় তার চাচা এবং তার বাবা চলে যায় সেই ক্রেতার কাছে যার কাছে তার ছেলে সাইকেলটা বিক্রি করে দিয়েছিল। সেখানে গিয়ে তারা সাইকেল চালাতে সেই লোকটা আর তাকে সাইকেল দিতে চায় না পরবর্তীতে অনেক রকম কথা কাটাকাটি করে শেষ পর্যন্ত সেই সাইকেল ক্রেতাকে ৩০০০ টাকা বেশি দিয়ে সাইকেল টা ফিরিয়ে নিয়ে এসেছিল।

একটা জিনিস যতই আমাদের নিজের হোক যখন আমরা সেই জিনিসটা কারো কাছে বিক্রি করে দেই এবং পরক্ষণেই যদি সেই জিনিসটা আমরা কিনতে চাই আর সেই ক্রেতা যদি একই দামে দিতে না চায় তাহলে কিছুই করার থাকে না। যেহেতু সেই ক্রেতা সাইকেলটা ১৮০ টাকায় কিনেছিল সে চাচ্ছিল দেশে সাইকেল বিক্রি করবে না পরবর্তীতে অবশ্য ৩০০০ টাকায় বেশি নিয়ে তারা সাইকেলটা ফেরত দিয়েছিল। গল্পটা শুনে সত্যিই রীতিমতো অবাক হয়েছিলাম এবং ভেবেছিলাম এ আবার কেমন উন্মাদ যে নিজের বাবার সাইকেল পর্যন্ত বিক্রি করে দেয়। আমি জানি আপনারা এই গল্পটা পড়ে অনেকটাই অবাক হবেন কিন্তু এটাই সত্যি এবং বাস্তব।

যাই হোক এটাই ছিল আমার আজকের পোস্ট আশা করছি আমার এই গল্পটা আপনাদের সকলের কাছে অনেক বেশি ভালো লেগেছে। আজ আর নয় এখানেই শেষ করছি, আবার দেখা হবে নতুন কোন পোস্টে নতুন ভাবে নতুন রূপে। ততক্ষণ পর্যন্ত সকলেই ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবারের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ সকলকে...!!



সমাপ্ত


আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি আপনাদের কাছে আমার এই পোস্ট খুবই ভালো লেগেছে। আমার এই পোস্ট পরে সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন বলে আশা রাখি। আপনার সুন্দর মন্তব্যই আমার কাজ করার অনুপ্রেরণা

বিবরণ
বিভাগজেনারেল রাইটিং
বিষয়১৮০ টাকার সাইকেল
পোস্ট এর কারিগর@jibon47
অবস্থান[সংযুক্তি]source


এটাই আমি..!!

IMG-20231204-WA0004-02.jpeg

আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নেম @jibon47। আমি মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমিকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আব্বু আম্মু আর ছোট বোনকে নিয়েই আমার পরিবার। এই তিনজন মানুষকে কেন্দ্র করেই আমার পৃথিবী।একসাথে সবাইকে খুশি করা তো সম্ভব নয়, তারপরও আমি চেষ্টা করি পরিবারের সবাইকে খুশি রাখার। আমি হৃদয় থেকে ভালবাসি সৃষ্টিকর্তা ও তার সকল সৃষ্টিকে।আমি বর্তমানে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং লেখাপড়া করছি। আমি গান গাইতে, কবিতা লিখতে, এবং ভাই ব্রাদারের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতে অনেক বেশি ভালোবাসি। সত্যি বলতে আমি প্রচন্ড রকমের অভিমানী, হতে পারে এটা আমার একটা বদ অভ্যাস। "আমার বাংলা ব্লগ" আমার গর্ব,"আমার বাংলা ব্লগ" আমার ভালোবাসা। আমার নিজের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে "আমার বাংলা ব্লগে" আমার আগমন। এই স্বল্প মানব জীবনের প্রতিটা ক্ষণ আমার কাছে উপভোগ্য। আমি মনে করি, পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি।



সবাইকে অসংখ্য ধন্যবাদ
@jibon47



VOTE @bangla.witness as witness


witness_vote.png

OR

SET @rme as your proxy

witness_proxy_vote.png

Coin Marketplace

STEEM 0.21
TRX 0.13
JST 0.030
BTC 67167.83
ETH 3499.47
USDT 1.00
SBD 2.81