অভিযান ব্যর্থ
আজ--২৮-পৌষ | ১৪৩০ বঙ্গাব্দ | শুক্রবার | শীতকাল|
আসসালামু ওয়ালাইকুম,আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নাম @jibon47। বাংলাদেশ থেকে। আশা করি আপনারা সবাই ভালো আছেন। আলহামদুলিল্লাহ আমি আপনাদের দোয়ায় ভালোই আছি মাতৃভাষা বাংলা ব্লগিং এর একমাত্র কমিউনিটি [আমার বাংলা ব্লগ] ভারতীয় এবং বাংলাদেশী সদস্যগণ, সবাইকে আমার পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন।
- প্রিয় কমিউনিটি,আমার বাংলা ব্লগ
- অভিযান ব্যর্থ
- আজ-২৮শ পৌষ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
- শুক্রবার
তো চলুন শুরু করা যাক...!
শুভ দুপুর সবাইকে......!!
এখন শীতের মৌসুম আর শীতের মৌসুমে খেজুরের রস খেতে সত্যিই অনেক বেশি ভালো লাগে। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে শীতের মধ্যে খেজুরের রস মুখে দেওয়ার আনন্দটা সত্যিই অন্যরকম আর এই আনন্দটা একমাত্র তারাই অনুভব করতে পারবেন যারা এরকম একটা মুহূর্ত অতিবাহিত করেছেন। এবছর খেজুরের রস খাওয়া হয়েছে মাত্র দুবার বাসায় আসার পর থেকে ভাই ব্রাদারের সঙ্গে খেজুরের রস খেতে গিয়েছিলাম এর আগে সে ব্যাপারে আপনাদের মাঝে নতুন আরেকটা দিন পোস্ট শেয়ার করব। আজকে যেই পোস্ট শেয়ার করব এটা খেজুরের রস খেতে গিয়ে হঠাৎ এরকম ভাবে ব্যর্থ হব সেটা কখনো ভাবিনি। যদিও এই ব্যর্থতা সম্পন্ন আমাদের নিজেদের, আমরা আমাদের নিজেদের কারণেই খেজুরের রস খেতে পারেনি, এই ব্যাপারটা নিয়ে আমি আপনাদের মাঝে একটা পোস্ট শেয়ার করব। গতকাল দুপুর বেলা আমার খালাতো ভাই বাসায় এসেছে যদিও সে চাকরি করে চাকুরী সুবাদে অনেক দূরে থাকে খালাদের বাসা আমাদের বাসা থেকে খুব একটা বেশি দূরে নয়, ৩০০ থেকে ৪০০ মিটার হবে। রাত্রেবেলা আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল।
অনেকদিন পর তার সঙ্গে কথা বলে বেশ ভালই লাগছিল কথা বলার এক পর্যায়ে সে বলছে এ বছর এখন পর্যন্ত খেজুরের রস খাওয়া হয়নি, চল কাল খেজুরের রস খেয়ে আসি সকালবেলা। খেজুরের রসের কথা শুনে আর স্থির থাকতে পারলাম না নিমিষেই মনে পড়ে গেল যে এই শীতের সকালে খেজুরের রস খেতে যে কতটা মজা আর এই মজা আমি কখনোই হাতছাড়া করবো না কোন কিছু চিন্তা না করেই আমি রাজি হয়ে গেলাম। এরপরে আমি বললাম খেজুরের রস কোথায় খাওয়া যায়, সে আমাকে বলল যে পরিচিত আমার একজন আছে যার বাড়ি কিনা এখান থেকে দু কিলো দূরে লোকটাকে আমিও চিনি। দুজনে মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম যে সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে কাঁপতে কাঁপতে চলে যাব সেই বাসায় যেখানে তারা খেজুরের রস গাছ থেকে পেড়ে নিয়ে আসে। পরিকল্পনাটা এমন ছিল যে সরাসরি তার বাসায় গিয়ে উপস্থিত হব যাতে করে খেজুরের রস খাওয়া মিস না হয় এক গ্লাস হলেও আমরা খেজুরের রস খাবো, তাহলে বুঝতেই পারছেন কতটা মনোনিবেশ করেছিলাম।
এ কথা বলে এসে আমাদের বাসা থেকে রাত্রিবেলা চলে গেল আমি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম যেহেতু সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠতে হবে তাই খুব দ্রুতই রাতের বেলা ঘুমিয়ে পড়েছিলাম খুব একটা বেশি রাত জাগিনি। আমি তাকে বলেছিলাম যে ভোর সাড়ে পাঁচটার পরে আমি তোকে ফোন দিব তুই উঠে আমাদের বাসায় চলে আসবি। যেমন ভাবে তেমনি কাজ ফোনে অ্যালার্ম দিয়ে রেখেছিলাম এলাম বাজার সঙ্গে সঙ্গেই ঘুম থেকে উঠে আমি তাকে ফোন দিলাম কিন্তু সে ফোন রিসিভ করছে না, এবার তাহলে ভাবুন কেমন ডা লাগে..!! আমি মোটেও ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নই, খেজুরের রস খাবো যেহেতু ভেবেছি সেহেতু খেজুরের রস আজকে খেতে যেতেই হবে সেটা যখনই হোক আমি কন্টিনিউ তাকে ফোন দিতেই থাকলাম। ৫ থেকে ৬ বার ফোন দেওয়ার পরে হঠাৎ ফোনটা রিসিভ করল।
এবার আমি তাকে আচ্ছা মত কিছু কথা শুনিয়ে দিলাম, ঘুম ঘুম চোখে সে বলল ঠিক আছে আমি এখনই উঠে তোদের বাসায় আসছি। ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে শীতের পোশাক পরে তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম বাসার বাহিরে। চারিদিকে ঘন কুয়াশায় ঢেকে পড়েছিল আর গাছের পাতা থেকে টপটপ করে শিশির মাটিতে পড়ছিল, দৃশ্য দেখতে বেশ ভালই লাগছিল। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে হঠাৎ সে এসে আমাকে ডাকাডাকি শুরু করলো। এরপরে আমরা দুজন মিলে সেই বাসার উদ্দেশ্যে রওনা শুরু করলাম হেঁটে হেঁটে। যদিও ইতোমধ্যে সে অনেকটাই দেরি করে ফেলেছে দেরি করে ফেলার কারণে আমি তাকে বারবার বলেছিলাম তোর কারণে হয়তোবা গিয়ে খেজুরের রস পাবো না। কিন্তু সে বারবার বলছিল তুই টেনশন করিস না আমি খুব সকাল বেলায় উঠেছি গিয়ে আমরা খেজুরের রস পাব, কিন্তু ততক্ষণে একটু বেশি দেরি হয়ে গিয়েছিল আমি তাকে বলেছিলাম যে এখন গিয়ে আমরা খেজুর রস আর পাব না শুধু শুধু আমাদের যাওয়াটা বৃথা হবে। কিন্তু সে আমার কথা মানতেন নারাজ সে বলল খেজুরের রস পাই বা না পাই হেঁটে হেঁটে ওই বাসা পর্যন্ত যাব।
যেহেতু সেও নাছোড়বান্দা, আমিও এটাই ভাবলাম যে খেজুরের রস পাই বা না পাই সকালবেলা হাটাহাটি করে আসি। আর আপনারা সকলেই জানেন সকালবেলা হাটাহাটি করে আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী। আমরা প্রায় ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই সেই বাসায় গিয়ে পৌছালাম যদিও বাসাটা একটু রাস্তাঘাট থেকে ভিতরে তাই আমরা মানুষের বাড়ির উপর দিয়েই যাচ্ছিলাম। সকালবেলা এরকম মানুষের বাড়ির পাশ দিয়ে যেতে যেতে ভীষণ লজ্জা লাগছিল এরপরেও রস খাওয়ার নেশা এতটা লেগেছে যে কোন কিছু তোয়াক্কা না করে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিলাম। এরপরে সেই বাসায় গিয়ে রস বিক্রেতার সঙ্গে দেখা করলাম তবে, সেই লোকটা অতি দুঃখের সঙ্গে জানিয়ে দিল যে, রস চুলায় দিয়ে দিয়েছে গুড় তৈরি করার জন্য। কথাটা শুনে রীতিমতো হতাশ হয়ে বসে পড়েছিলাম। এত কষ্ট করে এতদূর পর্যন্ত আসলাম অথচ খেজুরের রস খেতে পারলাম না,হায় আফসোস..!!
লোকটা আমার পরিচিত না হলেও আমার সেই খালাতো ভাইয়ের খুবই পরিচিত ছিল। আমার খালাতো ভাই তাকে বললাম আপনি চুলার উপর থেকেই একটু রস আমাদের জন্য নিয়ে আসেন আমরা খাবো হাহাহা। সত্যিই আমার অনেক বেশি খারাপ লাগছিল, কিন্তু লোকটা তাকে বলে দিল যে এই রস আপনারা খেতে পারবেন না, গুড় তৈরি করার জন্য এর মধ্যে আনুষাঙ্গিক জিনিসগুলো দেওয়া হয়ে গিয়েছে। আমার খুবই রাগ হচ্ছিল আমার খালাতো ভাইয়ের উপর। আমি তাকে বারবার বলছিলাম তোর কারনেই রস খেতে পারলাম না ঘুম থেকে আর ২০ মিনিট আগে উঠলে এমন ঘটনা ঘটত না। আপনি ব্যাপারটা ভাবুন যে অধীর আগ্রহ নিয়ে আপনি বসে আছেন নির্দিষ্ট একটা সময় পরে গিয়ে আপনি সেই খাবারটা খাবেন কিন্তু নির্দিষ্ট সময় পরে গিয়ে দেখলেন সেই খাবারটা নেই আপনার কেমন লাগবে,আপনি বলুন..??
লোকটা আমাদেরকে জানিয়ে দিল যে আপনারা আগামীকাল আসেন, আগামীকাল এসে খেজুরের রস খেয়ে যাবেন ইচ্ছে মতো কোনো সমস্যা না। কিন্তু আমার খালাতো ভাই যেহেতু আজকে সন্ধ্যেবেলা চলে যাবে তাই আর তার পক্ষে খেজুরের রস খাওয়া হবে না এখান থেকে। আমি তাকে বললাম আমি কয়েকবার খেয়েছি আমার কোন সমস্যা নেই তুই তো আর খাঁটি রস খেতে পারলি না, মূলত আমি তাকে উসকে দিচ্ছিলাম এবং কথার মাধ্যমে কষ্ট দিচ্ছিলাম কারণ তার কারণেই তো খেজুরের রস খেতে পারেনি। কোন কিছু আর না ভেবে তাকে বললাম ঠিক আছে চলো বাসায় যাই,কি আর করার..!! এর পরে আমার খালাতো ভাই বলল যেহেতু এদিকে এসেছি অনেক দিন আসা হয় না চল একটু হেঁটে আসি ওদিক থেকে।
সকালবেলা হাঁটতে হাঁটতে অনেক দূর চলে গিয়েছিলাম, হয়তোবা সকালবেলা আমরা দুজন ৬ থেকে ৭ কিলো পথ হেঁটেছি। কিন্তু একটুও ক্লান্ত বোধ হয়নি সকালবেলা হাটাহাটি করতে যে এতটা মজা এটা আগে কখনোই পাইনি যদিও সকালবেলা হাটাহাটি করা খুব একটা হয়ে ওঠে না। অনেকদিন পরে সকালবেলা হাটাহাটি করতে পেরে নিজের কাছে অনেক বেশি ভালো লাগছিল যদিও প্রচন্ড শীত ছিল কিন্তু আমাদের খুব একটা বেশি শীত লাগছিল না শরীরটা একদম গরম হয়ে গিয়েছিল। হাঁটতে হাঁটতে আমরা একটা পর্যায়ে চলে আসি বাজারে। এরপর আমি তাকে বললাম যেহেতু খেজুরের রস খেতে পারেনি সকালবেলা গরম গরম খিচুড়ি আর ডিম ভাজি তো খেতেই পারি। কিন্তু আমরা সচরাচর যে রেস্টুরেন্ট থেকে খাই বাজারে গিয়ে দেখি সেটা বন্ধ।
এটা দেখে মনটা একদমই ভেঙ্গে গিয়েছিল, আজকে আমাদের ভাগ্যটা এতটাই খারাপ ছিল যে কোন দিক দিয়েই আমরা কোন কিছু করতে পারেনি। রস খেতে গেলাম সেখানেও ব্যর্থ হলাম বাজারে এসে খিচুড়ি আর ডিম ভাজি খাব এসে দেখি রেস্টুরেন্ট বন্ধ, সব মিলিয়ে হতাশ হয়ে অন্য আরেকটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে পরোটা আর মিষ্টি খেয়ে বাসায় চলে এসেছিলাম। আজকের দিনটা সকাল বেলায় কেমন যেন একটু খারাপ ভাবেই কেটেছে। যাইহোক এটাই ছিল আমার আজকের পোস্ট আশা করছি আমার এই পোস্ট আপনাদের ভালো লেগেছে। সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন এবং আমার বাংলা ব্লগ কমিউনিটি পরিবারের সঙ্গে থাকুন। ধন্যবাদ সকলকে...!!
আমার পোষ্ট দেখার জন্য আপনাদের অনেক ধন্যবাদ। আশা করছি আপনাদের কাছে আমার এই পোস্ট খুবই ভালো লেগেছে। আমার এই পোস্ট পরে সুন্দর মন্তব্যের মাধ্যমে আমাকে অনুপ্রাণিত করবেন বলে আশা রাখি। আপনার সুন্দর মন্তব্যই আমার কাজ করার অনুপ্রেরণা
বিভাগ | জেনারেল রাইটিং |
---|---|
বিষয় | অভিযান ব্যর্থ |
পোস্ট এর কারিগর | @jibon47 |
অবস্থান | [সংযুক্তি]source |
আমি জীবন মাহমুদ, আমার ইউজার নেম @jibon47। আমি মাতৃভাষা এবং মাতৃভূমিকে অনেক বেশি ভালোবাসি। আব্বু আম্মু আর ছোট বোনকে নিয়েই আমার পরিবার। এই তিনজন মানুষকে কেন্দ্র করেই আমার পৃথিবী।একসাথে সবাইকে খুশি করা তো সম্ভব নয়, তারপরও আমি চেষ্টা করি পরিবারের সবাইকে খুশি রাখার। আমি হৃদয় থেকে ভালবাসি সৃষ্টিকর্তা ও তার সকল সৃষ্টিকে।আমি বর্তমানে সোনারগাঁও ইউনিভার্সিটিতে মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্ট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং লেখাপড়া করছি। আমি গান গাইতে, কবিতা লিখতে, এবং ভাই ব্রাদারের সঙ্গে ঘোরাঘুরি করতে অনেক বেশি ভালোবাসি। সত্যি বলতে আমি প্রচন্ড রকমের অভিমানী, হতে পারে এটা আমার একটা বদ অভ্যাস। "আমার বাংলা ব্লগ" আমার গর্ব,"আমার বাংলা ব্লগ" আমার ভালোবাসা। আমার নিজের ভেতরে লুকায়িত সুপ্ত প্রতিভাকে বিকশিত করার লক্ষ্যে "আমার বাংলা ব্লগে" আমার আগমন। এই স্বল্প মানব জীবনের প্রতিটা ক্ষণ আমার কাছে উপভোগ্য। আমি মনে করি, পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি।
@jibon47
VOTE @bangla.witness as witness
OR
Thank you, friend!
I'm @steem.history, who is steem witness.
Thank you for witnessvoting for me.
please click it!
(Go to https://steemit.com/~witnesses and type fbslo at the bottom of the page)
The weight is reduced because of the lack of Voting Power. If you vote for me as a witness, you can get my little vote.
যেমন আপনি তেমন আপনার নাছোড়বান্দা খালাতো ভাই হা হা হা। বিষয়টা এমন যে আপনাদের একমাত্র লক্ষ্য সকালবেলা গিয়ে খেজুরের রস খাবই। তবে হ্যাঁ খেজুরের রস খাওয়ার পাশাপাশি সকালবেলা তো বেশ ভালো হাঁটাহাঁটি করেছেন যেটা স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
আমারও খেজুরের রস খাওয়ার সেই রকম নেশা। কিন্তু এখন যে সময় তাতে করে খেজুরের রস খাওয়া খুবই বিপজ্জনক। খেজুরের রস খেতে হলে অবশ্যই তা জাল করে নিতে হবে তাত রস ছাড়া কাঁচা রস খাওয়া মোটেও স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী নয়। আপনি যে আসলেই নাছর বান্দার বিষয়টা আপনার পোস্ট পড়েই বুঝতে পারলাম। যে করেই হোক রস খেতেই হবে।